অনুবাদ—মনিকা জাহান
কবি পরিচিতি: চার্লস বুকোস্কি একজন জার্মান আমেরিকান কবি, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অসংগতি যেমন উঠে এসেছে তার কবিতায় আর লেখনীতে, একইভাবে জীবনকে নিয়ে, নিজেকে নিয়ে তাঁর যে অদ্ভুত বিদ্রূপ, তাচ্ছিল্য রয়েছে তা সত্যিই আমাদের নিজের অস্তিত্ব, আর অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর লেখাগুলো মনে হয় যেন সাধারণ আর দরিদ্র মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে ঘিরেই আবর্তিত। সম্পর্ককে সব রকম দিক থেকে ঝালাই করে দেখার সাহস খুব বিরল। এই করুণ আর মর্মান্তিক সত্যকে তিনি তাঁর জীবনে আর কবিতায় অতিক্রম করে গেছেন অবলীলায়। বিশেষ করে প্রেমকে তিনি এত নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন যে মাঝে মাঝেই তাঁর প্রেমের কবিতা পড়ে কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে থাকতে হয়। কেননা তাঁর কবিতা পড়লে পাঠককে তাঁর জীবন, প্রেম, সম্পর্ক নিয়ে যাবতীয় গতানুগতিক ধারণার মূলে প্রশ্ন ছুড়তে হয়। সত্যিকার অর্থেই সততা আর বিশ্বস্ততার সঙ্গে যদি আমরা জীবন আর প্রেমকে গভীরতায় উপলব্ধি করি, তবে তো এই পুরোনো খোলস থেকে বের হতেই হবে। তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর যাপিত জীবন এবং লেখার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তবে তিনি এমন ঋণাত্মক খ্যাতিও উদযাপন করতেন। নোটস অব এ ডার্টি ওল্ড ম্যান তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য লেখা। আজকের পত্রিকার শিল্প-সাহিত্য বিভাগের আজকের আয়োজনে থাকছে চার্লস বুকোস্কির তিনটি কবিতা। অনুবাদে—মনিকা জাহান
ঘুমন্ত নারী
রাতে বিছানায় বসে তোমার নাক ডাকা শুনি
বাসস্টেশনে তোমার সাথে দেখা
আর এখন অবাক হই
তুমি হয়তো জানোই না।
অসুস্থ রকমের ধবধবে ফর্সা
আর বাচ্চাদের মতো ছুলী দাগ
যেন পৃথিবীর কিছু অপরিহার্য দুঃখের মতো
যা বাতিটিও পারেনি দূর করতে
তোমার ঘুমের মধ্যে।
আমি তোমার পদযুগল দেখতে পাচ্ছি না
তবে তারা সবচেয়ে সুন্দরতম
এমনই আমার বিশ্বাস।
তুমি কার?
তুমি কি সত্যি?
আমি ফুলের কথা, প্রাণীর কথা আর পাখির কথা ভাবি
তারা ভালোর চেয়েও কিছুটা বেশি
আর নিশ্চিতভাবেই সত্য।
নারীকে তার সত্তার বিষয়ে
সাহায্য করতে অপারগ তুমি
কিছু একটা হয়ে উঠতে নির্ধারিত আমরা
মাকড়সা, বাবুর্চি অথবা হাতি
যেন একেকটা চিত্রকর্ম হয়ে
গ্যালারিতে ঝুলে আছি আমরা
আর এখন পেছন দিকটায় টান পড়েছে
চিত্রকর্মের
আর এর বাঁকানো কনুইয়ে
আমি অর্ধেকটা মুখ দেখি
একটা চোখ আর প্রায় একটা নাক
আর বাকি তুমিটুকু লুকোনো
দৃশ্যের আড়ালে
তবে তুমি যে যুগোপযোগী
আর একটি আধুনিক জীবন্ত কর্ম
আমি তা জানি।
সম্ভবত চিরকালের জন্য নয়
তবু আমরা ভালোবেসেছি
দয়া করে নাক ডাকতে থাকো।
মৎস্যকন্যা
আমাকে গোসলখানায় আসতে হয়েছিল কিছুর জন্য
আর আমি টোকা দিলাম
আর তুমি টাবে ছিলে
তুমি তোমার মুখ আর তোমার চুল পরিষ্কার করছিলে
আর আমি তোমার শরীরের ওপরের অংশ দেখলাম
আর স্তন বাদ দিলে
তোমাকে পাঁচ অথবা আট বছরের বালিকার মতো দেখতে
তুমি জলের ভেতরে মোলায়েম আর আনন্দিত ছিলে
লিন্ডা লি।
তুমি নির্যাস ছিলে না শুধু ওই
মুহূর্তের
বরং আমার সমস্ত মুহূর্তেরা
সেখানে
তুমি স্বাচ্ছন্দ্যে গোসল করছিলে গজদন্তে
যদিও সেখানে কিছু ছিল না
আমি তোমাকে বলতে পারি এমন।
আমি যা চেয়েছি তা পেয়েছি গোসলখানায়
কিছু
আর আমি বেরিয়ে এলাম।
ভালোবাসা
আমি বয়স্ক যুগলদের দেখেছি
দোলান চেয়ারে বসে আছে
একে অপরকে জুড়ে থাকে
অভিনন্দন আর উদযাপনে
একসাথে পঞ্চাশ বা ষাট
বছরের
কে থাকত
এত আগে থেকে
কোনো কিছুর স্থায়ী বন্দোবস্তে
ভাগ্য
ভয় আর
পরিস্থিতি ছাড়া
যা তাদের বাধ্য করেছে,
আর আমরা যেমন তাদের বলি
তারা কী সুন্দর
তাদের মহান আর টেকসই
ভালোবাসা
কেবলমাত্র তারাই
আসলে জানে
কিন্তু আমাদের বলতে পারে না
যে তাদের প্রথম
সাক্ষাৎ
থেকে
এটা এমন বোঝায়নি
যে সব
যেন
মৃত্যুতে অপেক্ষা করছে
এখন।
এটা প্রায়
একই।
কবি পরিচিতি: চার্লস বুকোস্কি একজন জার্মান আমেরিকান কবি, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অসংগতি যেমন উঠে এসেছে তার কবিতায় আর লেখনীতে, একইভাবে জীবনকে নিয়ে, নিজেকে নিয়ে তাঁর যে অদ্ভুত বিদ্রূপ, তাচ্ছিল্য রয়েছে তা সত্যিই আমাদের নিজের অস্তিত্ব, আর অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর লেখাগুলো মনে হয় যেন সাধারণ আর দরিদ্র মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে ঘিরেই আবর্তিত। সম্পর্ককে সব রকম দিক থেকে ঝালাই করে দেখার সাহস খুব বিরল। এই করুণ আর মর্মান্তিক সত্যকে তিনি তাঁর জীবনে আর কবিতায় অতিক্রম করে গেছেন অবলীলায়। বিশেষ করে প্রেমকে তিনি এত নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন যে মাঝে মাঝেই তাঁর প্রেমের কবিতা পড়ে কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে থাকতে হয়। কেননা তাঁর কবিতা পড়লে পাঠককে তাঁর জীবন, প্রেম, সম্পর্ক নিয়ে যাবতীয় গতানুগতিক ধারণার মূলে প্রশ্ন ছুড়তে হয়। সত্যিকার অর্থেই সততা আর বিশ্বস্ততার সঙ্গে যদি আমরা জীবন আর প্রেমকে গভীরতায় উপলব্ধি করি, তবে তো এই পুরোনো খোলস থেকে বের হতেই হবে। তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর যাপিত জীবন এবং লেখার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তবে তিনি এমন ঋণাত্মক খ্যাতিও উদযাপন করতেন। নোটস অব এ ডার্টি ওল্ড ম্যান তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য লেখা। আজকের পত্রিকার শিল্প-সাহিত্য বিভাগের আজকের আয়োজনে থাকছে চার্লস বুকোস্কির তিনটি কবিতা। অনুবাদে—মনিকা জাহান
ঘুমন্ত নারী
রাতে বিছানায় বসে তোমার নাক ডাকা শুনি
বাসস্টেশনে তোমার সাথে দেখা
আর এখন অবাক হই
তুমি হয়তো জানোই না।
অসুস্থ রকমের ধবধবে ফর্সা
আর বাচ্চাদের মতো ছুলী দাগ
যেন পৃথিবীর কিছু অপরিহার্য দুঃখের মতো
যা বাতিটিও পারেনি দূর করতে
তোমার ঘুমের মধ্যে।
আমি তোমার পদযুগল দেখতে পাচ্ছি না
তবে তারা সবচেয়ে সুন্দরতম
এমনই আমার বিশ্বাস।
তুমি কার?
তুমি কি সত্যি?
আমি ফুলের কথা, প্রাণীর কথা আর পাখির কথা ভাবি
তারা ভালোর চেয়েও কিছুটা বেশি
আর নিশ্চিতভাবেই সত্য।
নারীকে তার সত্তার বিষয়ে
সাহায্য করতে অপারগ তুমি
কিছু একটা হয়ে উঠতে নির্ধারিত আমরা
মাকড়সা, বাবুর্চি অথবা হাতি
যেন একেকটা চিত্রকর্ম হয়ে
গ্যালারিতে ঝুলে আছি আমরা
আর এখন পেছন দিকটায় টান পড়েছে
চিত্রকর্মের
আর এর বাঁকানো কনুইয়ে
আমি অর্ধেকটা মুখ দেখি
একটা চোখ আর প্রায় একটা নাক
আর বাকি তুমিটুকু লুকোনো
দৃশ্যের আড়ালে
তবে তুমি যে যুগোপযোগী
আর একটি আধুনিক জীবন্ত কর্ম
আমি তা জানি।
সম্ভবত চিরকালের জন্য নয়
তবু আমরা ভালোবেসেছি
দয়া করে নাক ডাকতে থাকো।
মৎস্যকন্যা
আমাকে গোসলখানায় আসতে হয়েছিল কিছুর জন্য
আর আমি টোকা দিলাম
আর তুমি টাবে ছিলে
তুমি তোমার মুখ আর তোমার চুল পরিষ্কার করছিলে
আর আমি তোমার শরীরের ওপরের অংশ দেখলাম
আর স্তন বাদ দিলে
তোমাকে পাঁচ অথবা আট বছরের বালিকার মতো দেখতে
তুমি জলের ভেতরে মোলায়েম আর আনন্দিত ছিলে
লিন্ডা লি।
তুমি নির্যাস ছিলে না শুধু ওই
মুহূর্তের
বরং আমার সমস্ত মুহূর্তেরা
সেখানে
তুমি স্বাচ্ছন্দ্যে গোসল করছিলে গজদন্তে
যদিও সেখানে কিছু ছিল না
আমি তোমাকে বলতে পারি এমন।
আমি যা চেয়েছি তা পেয়েছি গোসলখানায়
কিছু
আর আমি বেরিয়ে এলাম।
ভালোবাসা
আমি বয়স্ক যুগলদের দেখেছি
দোলান চেয়ারে বসে আছে
একে অপরকে জুড়ে থাকে
অভিনন্দন আর উদযাপনে
একসাথে পঞ্চাশ বা ষাট
বছরের
কে থাকত
এত আগে থেকে
কোনো কিছুর স্থায়ী বন্দোবস্তে
ভাগ্য
ভয় আর
পরিস্থিতি ছাড়া
যা তাদের বাধ্য করেছে,
আর আমরা যেমন তাদের বলি
তারা কী সুন্দর
তাদের মহান আর টেকসই
ভালোবাসা
কেবলমাত্র তারাই
আসলে জানে
কিন্তু আমাদের বলতে পারে না
যে তাদের প্রথম
সাক্ষাৎ
থেকে
এটা এমন বোঝায়নি
যে সব
যেন
মৃত্যুতে অপেক্ষা করছে
এখন।
এটা প্রায়
একই।
সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকর্মকে ‘বুর্জোয়া’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হয় চীনে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেকসপিয়ারের সব সাহিত্যকর্ম—যেমন হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, ওথেলো ইত্যাদি—চীনে নিষিদ্ধ হয়, কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট আদর্শের ‘সঠিক রাজনৈতিক
১৩ দিন আগেকবি নজরুল ইসলামের বহুল পরিচিতি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে, কিন্তু নজরুল উঁচুমার্গের ‘সাম্যবাদী কবি’ও বটেন। নজরুলের সাম্যচিন্তা তাঁর জীবনের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত। তাঁর শৈশব-কৈশোরের জীবন-অভিজ্ঞতা, তাঁর যৌবনের যাপিত জীবন তাঁকে বাস্তব পৃথিবীর দারিদ্র্য, অসমতা ও অসাম্যের সঙ্গে পরিচিত করেছে অত্যন্ত নগ্নভাবে...
১৩ দিন আগেবাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
১৩ দিন আগেনজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
১৪ দিন আগে