Ajker Patrika

শিমুল সালাহ্উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

শিমুল সালাহ্উদ্দিন
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ৩১
শিমুল সালাহ্উদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

তোমার দিকে যাওয়া

কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই
হাঙরের ঘাঁই, শিরদাঁড়া ভাঙে যেন হাওয়াই মিঠাই—
দিকহারা ঢেউ পাহাড় হয়ে আসে, ভাসায় সব ঠাঁই
বন্ধুর পথ ঠিকানা তোমার—নাই নাই নাই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই

বাস্তবের চেয়ে ভারী জল—আমরণ সাঁতরাই
ধরে আসে গলা, মোচড়ায় সরল তলপেট
সমস্ত জগৎ যেন বাঁধ; বাঁধা—সামনে দাঁড়ায়
হড়কে যায় পা পর্বতারোহীর, পপাত ধরণিতল
পিছলাই, উপত্যকায় পড়ি—ধপ্পাস্ যারপরনাই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই

অশরীর যায় কেটে কেটে, বাতাসে বর্শার ফলা
গল গল করে গলা থেকে বেরোয় রক্তের ফুল
অনিচ্ছার কুম্ভ দাঁড় করায় তোমাকে দৃশ্যের আড়ালে
মাংসের খোঁড়ল ডেকে তোলে আত্মার অমিত চড়াই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!

বিপন্ন শব্দাবলীতে ভরে যায় সমস্ত পৃথিবী, এ দুনিয়া
নরক যেন, মনে হয় এ ভ্রমণ এক অশেষ বিশেষ
মানুষের সবুজ সম্ভ্রম খসে খসে পড়ে—শূন্য হাওয়া
ধূসর জিভ বুলিয়ে যায় সমস্ত রন্ধ্রে, মুষল বৃষ্টির—
যানহীন পথ, নিভু ল্যাম্পপোস্ট, আকাশ ফাটা বজ্র-বাজখাঁই
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!

মরণ ছাড়া এ যাওয়া আসার কী নাম দেবো রাই!
কত যে আঁধার সাঁতার পারায়ে তোমার দিকে যাই!

সাইকেডেলিক বৃষ্টি

যেসব কথা ভুলে গেলে ভালো থাকা যায়,
মাঝরাতের এই বৃষ্টি পায়ে-পায়ে
           ফিরিয়ে আনছে তাদের।
পিচঢালা পথে ফেটে পড়ছে বৃষ্টির জল,
পরান পুটে ব্যথা, বাদল

তোমার দূরত্বের খোঁড়া অজুহাত উপেক্ষা করে
মধ্যরাতের শহরে নেমেছে বৃষ্টি,
ভেজা পথ কেটে কেটে সোডিয়াম দিচ্ছে আলো

সিক্ত শহরের পথে জলরঙের আদলে ভাসমান তুমি,
তোমার স্বামী সন্তান সংসারের ব্যস্ততা
নাকচ হয়ে যাচ্ছে উসকানিমূলক আবহাওয়ায়

ঘাড়ের কাছে, শিথানের আরশিতে এসে দাঁড়ালে—ভেজা চুল,
অথচ প্রেমের বদলে আমার ঘুম পাচ্ছে

মৃত্যুদিনেরও মৃত্যু হওয়ার মতো আমার নাম,
তোমার চুল থেকে ঝরে পড়ছে,
                        মেঝেতে—    
গলে যাচ্ছে মাঝরাতের রাস্তা, উঠোন, ঘর...!

প্যারাসমনিয়া

তন্দ্রার ওপার থেকে অস্ফুট ঠোঁটে
গোঙানি-নালিশে কারে তুমি ডাকো!

সমস্ত রাত্রির রেনুমাখা সোনামুখে
      তোমার স্বপ্নে স্বপ্নে আঁকো আর কার মুখ!

অথচ আবার ডাকো তুমি,
        অপুষ্ট শব্দের, অস্ফুট সেই ভাষা
        মুঞ্জিত চোখে গোঙানির কী কষ্ট!

প্রথমে এলো ডান পা নিতম্বে আমার,
এরপর যৌথ খামারের সমস্ত শর্ত মেনে
                   গ্রীবাতে গেঁথে দিলে ঘাড়

গ্রীবার খুব কাছে কান, তাতে প্রাণাচ্ছন্ন
সেই নড়বড়ে-ঠোঁট, বিড়বিড় করা গোঙানি-নালিশ,
          লালামদিরায় ভিজে একশা বালিশ
অনন্তকাল চলা এক কাঠগড়ায় হয়েছে প্রমাণ
                      খুন আমিই করেছি
আসামির মতো তাকাই দশদিকে—

পিনপতন নীরবতায় স্তব্ধ আদালতগৃহ, শূন্য চোখ
সমান্তরাল সময়ে তোমার ঘুমন্ত মুখ, আশাবরি ঠোঁট
তাতে লিখিত গোঙানি-নালিশের ব্যাকরণ, আমার ব্যর্থতা-পাঠ

তুমি যায় না তাকানো
এমন নিকটে আমার, মুখ টেনে আনো।

হেমন্তের প্রার্থনা

সকল দুয়ার রুদ্ধ যখন করো
মন ভেতরে তখন বসা আমি
আমার বুকে হাপড় ওঠে নামে
নামতো জানো ঠিক অন্তর্যামী

যমুনা বয় দুইধরণের স্রোতে
দুজন মানুষ সংসারেও থাকে
দুদিক তাকায় দুজন প্রতিদিন
ঘুমের ভেতর জড়িয়ে তবু রাখে

জড়িয়ে রাখা দাঁড়িয়ে থাকা পথে
ঘোরের ভেতর ঘোরহীনতা ঘোরে
জগৎজুড়ে নেই যে তুমি তবু
তোমার কথা জগৎজুড়ে ওড়ে।

উড়ো কথা ধরতে গিয়ে আমি
লাফ দিয়েছি দৌড়ে গেছি আর
হোঁচট খেয়ে ভুলে সুর-বাহার
এখন আমি সত্যি অসুরকামী।

অসুর বধের কাব্য জানো তুমি
ধ্বংস করো নিজের অবিশ্বাস
আমার চোখে ছোঁয়াও স্তনমূল
ফুটবে বুকে অভ্রমাখা কাশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত