সায়মা জাহান
লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যিক ১৯৯৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার আর ২০০৩-২০০৪ সালে পোয়েট লোরিয়েট পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর কবিতার উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে কেবল বৌদ্ধিক দিকই নয়, বরং কিছু চিত্রাবলি, রূপকল্প কেমন করে যেন খুব নিভৃতেই জায়গা করে নেয় মনে। তিনি যখন মানুষের জীবন নিয়ে কবিতায় চিত্রকল্প ব্যবহার করছেন, আমি ভাবছি, এটা কি ফুলের জীবন নিয়ে বলছেন! আর তাঁর পৌরাণিক কাহিনির অসামান্য ব্যবহার বিভিন্ন কবিতায় মুগ্ধ তো করেই, পাশাপাশি সেই সব পৌরাণিক চরিত্রকে নতুন করে পরিচয় করিয়েও দেয়। তাঁর সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বেশ মনোগ্রাহী। ব্যক্তিজীবন ভীষণভাবে ব্যক্ত হয়েছে তাঁর কবিতায়, তাই কবিতাগুলো আমাদের হয়ে ওঠে খুব সহজে। তিনি ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
নোবেলখ্যাত এই মানুষটি আজ ছেড়ে গেলেন পৃথিবীর মায়া। তাঁর স্মরণে মনিকা জাহানের অনুবাদে থাকছে ভূমিকাসহ একগুচ্ছ কবিতা।
কানাগলি
আমি বললাম, ‘শোন, দেবদূত, আমাকে এই ক্ষুদ্রতা থেকে আলাদা করো।’
বিচ্ছিন্ন করো ঘৃণা থেকে, এই অবিচলিত আহার তালিকার গালাগাল থেকে,
যা আসলে খাদ্যশস্য, ভদকা আর টমেটোর
রসে সমন্বিত।
তুমি যে প্রেমের বীজ বপন করেছ
এই সব সস্তা অলংকারের মাধ্যমে।
সেখানে থেকে যাওয়াটা
থাকতে না চাওয়ার তীব্র বাসনা উদ্রেককারী।
আমি তার রক্তশূন্যতার প্রবণতায়
চার মাস যাবৎ খাবার তৈরি করলাম।
এবং এই দুশ্চরিত্রদের সাথে
মানসম্পন্ন সহাবস্থান করলাম। কিন্তু ও আমার প্রিয়, যদি এখন আমি তোমার হাত
তোমার চুল স্বপ্নে দেখি
তবে তা হলো সেই জ্বলজ্বলে কানাগলি।
আমি মনে করি তা যেন দাবার মতো।
মনের বিরুদ্ধে মন।
লাল পপি
একটা মন আর অনুভূতি
থাকাই কেবল
যথেষ্ট তো নয়:
ওহ, আমার তো তা
আছে তবে,
তা আমায়
কেবলই শাসন করে।
স্বর্গে আমার
আছেন স্রষ্টা
যিনি অরুণ
আলোকচ্ছটায়
নিজেকে করে উদ্ভাসিত
তাতে হৃদয়ে
আমার অনল
যেমনি অনল
জ্বলজ্বল
তাঁর উপস্থিতি।
হৃদয় ধারণ করার মতন
গৌরব আর আছে কোথা?
ও ভাইয়েরা বোনেরা,
তোমরাও ছিলে কি আমারই মতন,
অনেক আগে যখন তোমরাও ছিলে মানুষ?
নিজেকে কখনো
দিয়েছ কি অনুমতি
শুধু একবার মুক্ত হওয়ার,
যে আর কখনোই হবে না মুক্ত?
কেননা, আমি তা-ই বলছি
যা করছ তোমরা।
আর আমিই বলছি
কেননা, আমিও এখন বদ্ধ।
সকাল নয়টায় স্বগতোক্তি
এই ক্যান্টাবাইলে আসা
নয় তুচ্ছ কোনো বিষয়।
তার জ্বরের সাথে
বাস করা শুরু
সেই ষোলো বছর আগে।
আর এই ষোলো বছর যাবৎ
অপেক্ষায় শুধু বসে থাকা
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
হাসি ছিল মুখে।
জানো, স্বপ্ন ছিল
হয় মরণ হোক
অথবা ও আবার
আমারই প্রেমে পড়ুক।
অন্য কারওর পায়ের
মোজার মতন ঘুরে দাঁড়াক।
ভেবেছি সে আছে।
ভেবেছি তার অনুপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে।
আর আজ সে একটা ডিম পোচের মতন
মৃত চোখে তাকিয়ে থাকল।
তার টোস্টটিও অস্পৃশ্য হয়েই আছে।
[বি. দ্র. কেন্টাবাইল এক ধরনের সংগীত, যা যন্ত্রানুষঙ্গের সাহায্যে মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করতে ব্যবহার করা হয়। ]
একটি উপকথা
দুজন নারী এল
এক দাবি নিয়ে
জ্ঞাননিষ্ঠ এক
রাজার পদতলে।
নারী দুজন
অথচ শিশু
মাত্র একজন।
রাজা নিলেন বুঝে
কেউ একজন তো
নিশ্চয়ই করছে মিথ্যাচার।
এবারে তিনি
যা বললেন, তা হলো
শিশুটিকে করা হোক
দ্বিখণ্ডিত;
তবে কাউকেই
যেতে হবে না আর
শূন্য হাতে।
তিনি তরবারি হাতে
হলেন উদ্যত।
ঠিক তখন
দুই নারীর একজন
স্বত্বত্যাগ করলেন:
এটাই ছিল ইশারা
এ অধ্যায়ের।
ধরো,
দেখলে তুমি তোমার মাকে
দুই কন্যার মাঝে
দ্বিখণ্ডিত হতে:
তখন তাকে বাঁচাতে
আর নিজেকে ধসাতে
তুমি কী করতে পারো—
তিনি তখন নেবেন চিনে
কে ছিল সত্যি
যে মায়ের দ্বিখণ্ডিত
হওয়ার বেদনা
পারেনি নিতে মেনে।
‘ইথাকা’,
প্রেমিকের বেঁচে থাকাটাই
মুখ্য নয়। সে তো প্রেমিকার
মনেই বেঁচে থাকে। সে তার প্রেমিকার
প্রেমের একাগ্রতার সুরে
অবিরাম সাদা কাফনের মতো
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েই থাকে।
সে তো দুজন মানুষ ছিল।
সে একাধারে দেহ এবং স্বর ছিল, সহজ
চৌম্বকাবিষ্ট একজন জীবন্ত মানুষের, এবং তারপর
স্বপ্ন আর ছবি উদ্ঘাটিত হতে লাগল
যা সেই নারীর প্রেমেই আকৃতি পায়,
আক্ষরিকতায় বিশ্বাসী হলভর্তি করে
বসে থাকা মানুষের সামনে।
তুমি যে দুঃখ করো
প্রবঞ্চক সমুদ্র তাকে
চিরতরে নিয়ে যেতে
চেষ্টা করছে,
কেবল প্রথম মানুষটাকেই
নিতে পেরেছে,
যে আদতে আমার স্বামী ছিল, তোমার অবশ্যই
এই মানুষগুলোর জন্য দুঃখ করা উচিত: কেননা
তারা তো জানে না যে
তারা যা দেখছে তা-ই সব নয়;
তারা এ-ও জানে না যে যখন কেউ এভাবে
ভালোবাসে, তখন কাফনের কাপড়ও
বিয়ের গাউনে পরিণত হয়।
লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যিক ১৯৯৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার আর ২০০৩-২০০৪ সালে পোয়েট লোরিয়েট পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর কবিতার উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে কেবল বৌদ্ধিক দিকই নয়, বরং কিছু চিত্রাবলি, রূপকল্প কেমন করে যেন খুব নিভৃতেই জায়গা করে নেয় মনে। তিনি যখন মানুষের জীবন নিয়ে কবিতায় চিত্রকল্প ব্যবহার করছেন, আমি ভাবছি, এটা কি ফুলের জীবন নিয়ে বলছেন! আর তাঁর পৌরাণিক কাহিনির অসামান্য ব্যবহার বিভিন্ন কবিতায় মুগ্ধ তো করেই, পাশাপাশি সেই সব পৌরাণিক চরিত্রকে নতুন করে পরিচয় করিয়েও দেয়। তাঁর সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বেশ মনোগ্রাহী। ব্যক্তিজীবন ভীষণভাবে ব্যক্ত হয়েছে তাঁর কবিতায়, তাই কবিতাগুলো আমাদের হয়ে ওঠে খুব সহজে। তিনি ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
নোবেলখ্যাত এই মানুষটি আজ ছেড়ে গেলেন পৃথিবীর মায়া। তাঁর স্মরণে মনিকা জাহানের অনুবাদে থাকছে ভূমিকাসহ একগুচ্ছ কবিতা।
কানাগলি
আমি বললাম, ‘শোন, দেবদূত, আমাকে এই ক্ষুদ্রতা থেকে আলাদা করো।’
বিচ্ছিন্ন করো ঘৃণা থেকে, এই অবিচলিত আহার তালিকার গালাগাল থেকে,
যা আসলে খাদ্যশস্য, ভদকা আর টমেটোর
রসে সমন্বিত।
তুমি যে প্রেমের বীজ বপন করেছ
এই সব সস্তা অলংকারের মাধ্যমে।
সেখানে থেকে যাওয়াটা
থাকতে না চাওয়ার তীব্র বাসনা উদ্রেককারী।
আমি তার রক্তশূন্যতার প্রবণতায়
চার মাস যাবৎ খাবার তৈরি করলাম।
এবং এই দুশ্চরিত্রদের সাথে
মানসম্পন্ন সহাবস্থান করলাম। কিন্তু ও আমার প্রিয়, যদি এখন আমি তোমার হাত
তোমার চুল স্বপ্নে দেখি
তবে তা হলো সেই জ্বলজ্বলে কানাগলি।
আমি মনে করি তা যেন দাবার মতো।
মনের বিরুদ্ধে মন।
লাল পপি
একটা মন আর অনুভূতি
থাকাই কেবল
যথেষ্ট তো নয়:
ওহ, আমার তো তা
আছে তবে,
তা আমায়
কেবলই শাসন করে।
স্বর্গে আমার
আছেন স্রষ্টা
যিনি অরুণ
আলোকচ্ছটায়
নিজেকে করে উদ্ভাসিত
তাতে হৃদয়ে
আমার অনল
যেমনি অনল
জ্বলজ্বল
তাঁর উপস্থিতি।
হৃদয় ধারণ করার মতন
গৌরব আর আছে কোথা?
ও ভাইয়েরা বোনেরা,
তোমরাও ছিলে কি আমারই মতন,
অনেক আগে যখন তোমরাও ছিলে মানুষ?
নিজেকে কখনো
দিয়েছ কি অনুমতি
শুধু একবার মুক্ত হওয়ার,
যে আর কখনোই হবে না মুক্ত?
কেননা, আমি তা-ই বলছি
যা করছ তোমরা।
আর আমিই বলছি
কেননা, আমিও এখন বদ্ধ।
সকাল নয়টায় স্বগতোক্তি
এই ক্যান্টাবাইলে আসা
নয় তুচ্ছ কোনো বিষয়।
তার জ্বরের সাথে
বাস করা শুরু
সেই ষোলো বছর আগে।
আর এই ষোলো বছর যাবৎ
অপেক্ষায় শুধু বসে থাকা
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
হাসি ছিল মুখে।
জানো, স্বপ্ন ছিল
হয় মরণ হোক
অথবা ও আবার
আমারই প্রেমে পড়ুক।
অন্য কারওর পায়ের
মোজার মতন ঘুরে দাঁড়াক।
ভেবেছি সে আছে।
ভেবেছি তার অনুপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে।
আর আজ সে একটা ডিম পোচের মতন
মৃত চোখে তাকিয়ে থাকল।
তার টোস্টটিও অস্পৃশ্য হয়েই আছে।
[বি. দ্র. কেন্টাবাইল এক ধরনের সংগীত, যা যন্ত্রানুষঙ্গের সাহায্যে মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করতে ব্যবহার করা হয়। ]
একটি উপকথা
দুজন নারী এল
এক দাবি নিয়ে
জ্ঞাননিষ্ঠ এক
রাজার পদতলে।
নারী দুজন
অথচ শিশু
মাত্র একজন।
রাজা নিলেন বুঝে
কেউ একজন তো
নিশ্চয়ই করছে মিথ্যাচার।
এবারে তিনি
যা বললেন, তা হলো
শিশুটিকে করা হোক
দ্বিখণ্ডিত;
তবে কাউকেই
যেতে হবে না আর
শূন্য হাতে।
তিনি তরবারি হাতে
হলেন উদ্যত।
ঠিক তখন
দুই নারীর একজন
স্বত্বত্যাগ করলেন:
এটাই ছিল ইশারা
এ অধ্যায়ের।
ধরো,
দেখলে তুমি তোমার মাকে
দুই কন্যার মাঝে
দ্বিখণ্ডিত হতে:
তখন তাকে বাঁচাতে
আর নিজেকে ধসাতে
তুমি কী করতে পারো—
তিনি তখন নেবেন চিনে
কে ছিল সত্যি
যে মায়ের দ্বিখণ্ডিত
হওয়ার বেদনা
পারেনি নিতে মেনে।
‘ইথাকা’,
প্রেমিকের বেঁচে থাকাটাই
মুখ্য নয়। সে তো প্রেমিকার
মনেই বেঁচে থাকে। সে তার প্রেমিকার
প্রেমের একাগ্রতার সুরে
অবিরাম সাদা কাফনের মতো
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েই থাকে।
সে তো দুজন মানুষ ছিল।
সে একাধারে দেহ এবং স্বর ছিল, সহজ
চৌম্বকাবিষ্ট একজন জীবন্ত মানুষের, এবং তারপর
স্বপ্ন আর ছবি উদ্ঘাটিত হতে লাগল
যা সেই নারীর প্রেমেই আকৃতি পায়,
আক্ষরিকতায় বিশ্বাসী হলভর্তি করে
বসে থাকা মানুষের সামনে।
তুমি যে দুঃখ করো
প্রবঞ্চক সমুদ্র তাকে
চিরতরে নিয়ে যেতে
চেষ্টা করছে,
কেবল প্রথম মানুষটাকেই
নিতে পেরেছে,
যে আদতে আমার স্বামী ছিল, তোমার অবশ্যই
এই মানুষগুলোর জন্য দুঃখ করা উচিত: কেননা
তারা তো জানে না যে
তারা যা দেখছে তা-ই সব নয়;
তারা এ-ও জানে না যে যখন কেউ এভাবে
ভালোবাসে, তখন কাফনের কাপড়ও
বিয়ের গাউনে পরিণত হয়।
নোবেলজয়ী পেরুভিয়ান সাহিত্যিক মারিও বার্গাস যোসা শুধু কথাসাহিত্যের জন্যই নন, মানবিকতা ও বিশ্ব রাজনীতির প্রতি গভীর মনোযোগের জন্যও পরিচিত। বাংলাদেশে এসিড হামলার শিকার নারীদের নিয়ে তাঁর লেখা হৃদয়বিদারক প্রবন্ধ ‘Weaker sex’ প্রমাণ করে, কীভাবে যোসার কলম ছুঁয়ে গিয়েছিল বাংলার পীড়িত নারীদের কান্না ও সংগ্রাম।
৫ দিন আগেনোবেলজয়ী পেরুভিয়ান সাহিত্যিক মারিও বার্গাস যোসা মারা গেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার পেরুর রাজধানী লিমায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তাঁর ছেলে আলভারো বার্গাস যোসা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগেমৃত্তিকাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলমগীর হাইয়ের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, ৫ নম্বর গ্যালারিতে চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়।
৬ দিন আগেজর্জ দুহামেল ১৮৮৪ সালের ৩০ জুন প্যারিসের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল ছিল না। তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। সব মিলিয়ে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়; যা তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লে নতেয়্যাখ দু হ্যাভখ (Le Notaire du Havre) এ ফুটে ওঠে।
৬ দিন আগে