Ajker Patrika

বিশ্ব চলচ্চিত্রের কয়েকটি আয়না

সৈকত দে
বিশ্ব চলচ্চিত্রের কয়েকটি আয়না

১ 
আমাদের জীবন আয়নাজীবন। আয়না আমাদের উল্টো করে দেখায় আমাদের সত্যি চেহারা, উল্টো আমাদের দেখায় সোজা করে। নারীর কাছে আয়না নিভৃত আশ্রয়। নির্জন বন্ধু নারীর এই আয়না, সারা জীবনের সঙ্গে জড়ানো বিশ্বস্ত সঙ্গী। আধুনিক বিবাহব্যবস্থার শিকার, নিজস্ব ভূমি থেকে  শিকড় উৎপাটিত কন্যা যখন পরিবার অথবা নিজের নির্ধারিত জীবনসঙ্গীর কাছে যায়, পরিবারের দেওয়া সাজের বাক্সে থাকে আয়না। বিয়ের আগের ও পরের জীবনের যোগসূত্র নারীর কাছে আয়না। তার একান্ত কান্না, আন্তরিক হাসি—সবকিছুর একমাত্র দর্শক আয়না। নারীর রূপের মধ্যে অরূপের সন্ধান পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো আয়নাই পেয়েছে। পুরাণে নার্সিসাসের কথা আছে। রূপমুগ্ধ এক মানুষ। তিনি সভ্যতার প্রথম সেলিব্রেটেড শিল্পী, এই সেলিব্রেশন নিজের কাছেই, নিজের অবিনশ্বর সত্তার কাছে। আত্মমগ্নতা, বলা ভালো আত্মরতি শিল্পীর পক্ষে কতটা বিপদের, পুরাণ আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মানবসভ্যতাকে প্রকৃতি প্রথম উপহার দিয়েছে সুর আর তারপর আয়না। পৃথিবীর তিন ভাগ জল। জল মূলত আয়না। আকাশ আর মাটির যোগাযোগের চিহ্ন জলের বুকে। মানুষ পাখির ডাক থেকে, জলের ধাবমান শব্দ থেকে সংগীতের সুর নিয়েছে। 

ইশারাভাষা থেকে মানুষ গিয়েছে গুহাচিত্রে আঁকার দিকে আর পাখির ডাক থেকে নিতে চেয়েছে সুরের দিকটা। শিল্পসন্ধানী মানুষের প্রয়োজন হয়েছে প্রকৃতিকে, নিজের চারপাশে দেখা জগৎকে নিজের মতো করে অনুবাদ করার। তখন এল ‘মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোকে’র কথা, আলোর অদৃশ্য রেখাকে মানুষ ধরল দৃশ্যমান রেখায়। আর রেখার সূত্রমালা জন্ম দিল নানা রকম আকৃতির আয়নার। গোল, লম্বাটে, চার কোনা আয়নার আকৃতির বিচিত্র বিবর্তন নিয়েই এখন অসংখ্য বই রচিত হয়ে গিয়েছে। বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’ নামক মহৎ গ্রন্থটিতে শরীর ব্যবহারের ইতিহাসে আয়নাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শরীর অন্য শরীরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আনন্দ বিকিরণে, বিচ্ছুরণে সক্ষম। আয়না বাসনাকেও বিবর্ধিত চেহারায় দেখায়। মোগল সম্রাটদের আবাসস্থল, শয্যাকক্ষ আয়নায় সজ্জিত ছিল। ‘সিটি অব উইমেন’ চলচ্চিত্রে আমাদের অনেকেরই মনে আছে, আয়নাবহুল সেই বিখ্যাত দৃশ্যের কথা। মোগল, রাজপুত নারীদের ইতিহাসে অনুচ্চারিত আনন্দ-বেদনার গল্প আমরা পেতে পারতাম, যদি আয়নার ভাষা আমরা বুঝতে পারতাম। মোগল মিনিয়েচার চিত্রেও আয়নার উপস্থিতি সাবলীল। ইউরোপের ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের তুলি সম্ভবত প্রথমবারের মতো বুঝতে পেরেছে আয়নার ভাষা, এই শিল্পীরাই মানুষের সাথে আয়নার যোগাযোগের প্রকৃত চেহারাটি হয়তো খুঁজে পেলেন। আমরা ক্লদ মোনের পদ্ম সমারোহ তো ভুলে যাইনি। পৃথিবীর সমূহ জলভাগ আকাশকে এইভাবেই তো প্রেমের চিঠি, সংরাগের চিঠি লিখেছে। 

২ 
সুফি সাধকেরা নিজের ভেতরটাকেই আয়নার মতো স্বচ্ছ করে তুলতে চেয়েছেন। ঈশ্বরের সাথে নিজেদের লুপ্ত করে ফেলতে চেয়েছেন। ইশক বা প্রেমের চূড়ান্ত পরিস্থিতি এই—পরস্পরে লীন হয়ে যাওয়া। পরস্পরের যে আলাদা সত্তা, স্রষ্টা ও তাঁর সৃজন, বাসনাকারী ও প্রার্থনার লক্ষ্য—এই দুইয়ের মধ্যে কোনো ফারাক নেই সুফিদের কাছে। সুফি সাধকদের উল্টো দিকের চেহারা আছে আমাদের রূপকথায়। আমরা জানি, এই মর্ত্যপৃথিবীর সকল রূপকথা, লোককথা পরস্পর সংযুক্ত, উড়ন্ত ঘোড়া এক লহমায় ঘুরে আসতে পারে সারা দুনিয়া। আয়নায় নিজের মুখ দেখা সেই নিষ্ঠুর রাজকন্যার কথাও আমাদের ছেলেবেলার বেড়ে ওঠার সাথে যুক্ত, ‘বল তো আয়না, কে বেশি সুন্দরী?’, আয়নার উত্তরের সাথে সাথে আমাদের চেনাজানা রূপকথার গল্প শুরু হয়ে যায়। আয়নার আছে শ্রেণিচরিত্র, যেমন সুয়োরানি আর দুয়োরানি, এই দুইয়ের আয়নার চরিত্র দুই রকম। আরব্য রজনীর গল্পে আয়নার ভূমিকা অবিসংবাদিত। আয়না এখানে বার্তাবাহক। প্রাচ্যের আর পাশ্চাত্যের রূপকথার মধ্যে আয়নার প্রয়োগ একই রকম। ছোট হাত-আয়নার পেছনে চিত্রনায়িকাদের ছবি কত একলা যুবকের বন্ধু হয়েছিল সেই ষাট-সত্তর দশকের দিনগুলোতে। বিনোদনের এত উপায় বা পদ্ধতি যখন ছিল না, তখন আয়না কিংবা চোখ সম্বল করে কেবল প্রকৃতি দেখে যাওয়া আমাদের পূর্বপুরুষের আনন্দের উপকরণ ছিল। আমাদের দাদারা দাদিদের এক টুকরো রঙিন আয়না দিলেই দাম্পত্য সম্পর্কে মধুর রসের সঞ্চার করতে পারতেন; কেননা সেই কাচের টুকরোয় থাকত নবযুবকের ভালোবাসা। গ্রামের মেলায় কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতের সাথে ছোট আয়না এখনো অনেক অকথিত ইতিহাসের জন্ম দিতে পারে। 
৩ 
সুইডিশ নির্মাতা ইংমার ব্যারিম্যানের কথায় আসা যাক। তিনি আক্ষেপ করছিলেন একবার, ‘হোয়াট ডু আই সে, উইথ মাই ক্লাউন অ্যাক্ট, হোয়াইল দ্য ওয়ার্ল্ড ইন বার্নিং?’, এই জ্বলতে থাকা নশ্বর অস্তিত্বের সাথে তিনি বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন মঞ্চনাটক এবং সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে। ছেলেবেলায় মা-বাবার যে পিটুনির ট্রমা, তা তাঁকে বড়বেলাতেও ছেড়ে যায়নি, ঘুমের মধ্যেও এসব স্মৃতি তাঁকে আক্রান্ত করত। কাজের মধ্য দিয়েই তিনি এই পরিস্থিতি অতিক্রমের চেষ্টা করেছিলেন। পঞ্চাশের দশকেই তিনি বিশ্ব সিনেমার পরিচিত মুখ, কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘সামার উইথ মনিকা’, তেপ্পান্ন সালের সিনেমা, মুক্তির পর কেউ কেউ একে চিহ্নিত করলেন আধুনিক সিনেমার জন্মদিন বলে। ক্যামেরার দিকে সোজা তাকিয়ে কথা বলার প্রথা তাঁর আগে ছিল না তো। বছরে চারটে মঞ্চনাটক আর গ্রীষ্মে একটা সিনেমার রুটিনে বেশ কিছুদিন থাকার পর ব্যারিমান পড়লেন অস্তিত্বের সংকটে। ‘পারসোনা’ চলচ্চিত্রের আগে দেখা গেল মনের এই জটিলতা। এই সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘...আর আমি কেবল এইমাত্র বলতে পারি, পারসোনা একটা অতি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জন্মেছে, একধরনের সত্যের সংকটের মধ্য থেকে। শেষ পর্যন্ত আমার মনে হলো, নীরবতাই একমাত্র সত্য হতে পারে।’ মিথ্যার জগৎ নির্মাণ আর সত্যের প্রতি আমর্ম বাসনা ব্যারিমানের কাজ ও সমগ্র জীবনের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ‘তিনি সত্য না বলায় একধরনের পেশাগত গর্ব অনুভব করতেন’—কথাটা বলছেন ব্যারিমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আমরা জানি, আয়না আমাদের সত্য বলে না। ব্যারিম্যান অন্য, হাতে গোনা মহৎ পরিচালকদের মতোই ছিলেন আয়নামানুষ। তিনি বলেন, ‘আমি অনুভব করতে পারি, সংযোগের একটা অনিবার্য প্রয়োজন থেকেই আমার ফিল্মগুলো জন্মায়।’ একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প সব সময়ই একটা আয়না। এবং তোমাকে অবশ্যই শিখতে হবে আয়নাটা কেমন করে ধরতে হয়। যদি তুমি ভয়ে কাঁপতে থাকো, আয়না আউট অব ফোকাস হয়ে যাবে।’ স্বপ্ন ব্যারিম্যানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর চরিত্রদের স্বপ্ন তাড়া করে, নিপীড়িত হওয়ার স্মৃতি কিংবা ভয়। 

স্বপ্ন সব সময়ই বিপদের। স্বপ্ন দেখা বিপদের জিনিস। এ জন্যই দুঃস্বপ্ন এমনি স্বপ্নের চেয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং, ওই বিপদের কারণেই। স্বপ্নের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া পুরোটাই তো অবচেতনের আয়না। আমরা যা দেখি সচেতন জাগরণে, স্বপ্ন সেসব দেখায় আমাদের। আমাদের চূড়ান্ত অর্থহীন কল্পনা কিংবা স্বপ্নেরাও তাই অর্থের বাইরে যেতে পারে না। আমাদের নিশ্চয়ই ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ’-এর বৃদ্ধ অধ্যাপককে মনে আছে। পারসোনা সিনেমার প্রথম নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সিনেমাটোগ্রাফ’। এই সিনেমা ছেষট্টির অক্টোবরে মুক্তি পায়, অস্তিত্বের অসহ ভার থেকে ব্যারিম্যান উদ্ধার পান। প্রসঙ্গত, লিভ উলম্যানের একটা স্মৃতিচারণার অংশবিশেষের দিকে আমরা মনোনিবেশ করতে পারি, ‘শুটিংয়ের সময়, আমি ভাবতাম, লোকটা সব সময়ই ক্যামেরার পাশে, সে সব সময়ই আমাকে দেখেই চলেছে।...তারপর এক বিকেলে আমি আর ইংমার হাঁটতে হাঁটতে এক পাথরের ওপর বসলাম, এইখানটাতেই পরে তিনি বাড়ি বানিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন তখন, “লিভ, আই হ্যাড আ ড্রিম লাস্ট নাইট। আই ড্রেমট দ্যাট দ্য টু অব আস ওয়্যার পেইনফুলি ম্যারিড।” শেষ শব্দ দুটোর সঠিক অভিঘাত বাংলায় আনতে অক্ষম বলে ইংরেজিটাই তুলে দিলাম। পেইনফুলি ম্যারিড এই দম্পতি, পরবর্তী পাঁচ বছর অত্যন্ত সুখে পরস্পরের সাথে কাটান। তারপর তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নিজেদের যৌথ মালিকানাধীন আয়না একদিন ভেঙেচুরে যায় পৃথিবীর দম্পতিদের। 
৪ 
জাফর পানাহির ‘দ্য মিরর’ চলচ্চিত্রের কন্যাশিশুটিকে কার কার মনে আছে? ক্লাস টুয়ের মেয়েটিকে নিতে মা আসেননি একদিন, সে বাড়ি ফেরার জন্যে সিনেমার অর্ধেকজুড়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সমান্তরালে চলছে সাউথ কোরিয়া আর ইরানের ফুটবল খেলা। অর্ধেক সিনেমা যেতে যেতে, মেয়েটি যখন নগরের রাস্তায় আর বাসে, ট্যাক্সিতে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন একসময় আমরা দেখলাম, এটা আসলে সিনেমা, বাস থেকে কন্যা নেমে আসে অভিনয়ে অসম্মতি জানিয়ে, কেননা পুরো সিনেমাজুড়ে সে কাঁদতে চায় না, উদ্বিগ্ন থাকতে চায় না। পরিচালক তখন বাস্তবের শিশুটির বাড়ি ফেরাটির চিত্রায়ণ করতে থাকেন। সিনেমা আর বাস্তব এখানে একাকার। আয়না নাম এইখানে সুন্দর হয়ে ওঠে, সিনেমার দুটো অংশ পরস্পরের প্রতিফলন। আমাদের স্বপ্নদৃশ্যের মতো। গত জন্মের প্রেমিকারাও এখানে ফিরে আসতে পারে, ফিরে আসতে পারে চলে যাওয়া বউ, আপনি সুন্দর সংসার পেতে বসতে পারেন, কোনো একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে আমরা দেখি, একা ঘরে শুয়ে আছে আমার সহনাগরিক। আয়না এক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে আয়না এক ভিন্ন মাত্রা, অন্য স্তরের কথা বলে। আন্দ্রেই তারকোভস্কির ‘মিরর’ নিজের জীবনের সর্বাধিক প্রতিফলিত করেছে। নিজের জীবনের স্মৃতিকথা, নিজের বেড়ে ওঠা বলতে ওঠা বলতে গিয়ে তিনি ‘আয়না’ নামটি বেছে নিয়েছেন। অতটা বিখ্যাত নয় কবি আন্দ্রেই তারকোভস্কির সুপুত্র আন্দ্রেই বাবার কবিতা এই চলচ্চিত্রে এমনভাবে ব্যবহার করেন, কখনো কখনো বিভ্রম জাগে, এটা বাবাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নয় তো! আমাদের অবাক লাগে, যখন দেখি মা আর স্ত্রী চরিত্রে একই অভিনেত্রী অভিনয় করছেন। তারকোভস্কির দিনপঞ্জি ঘাঁটতে গেলে এই রহস্যের তল পাওয়া যাবে। এই রহস্য আগ্রহীদের জন্য তোলা থাক। যারা দিনপঞ্জিযাত্রায় যাব, তারাই উপলব্ধি করতে পারব বিশ্ব চলচ্চিত্রে আয়না রহস্যের অম্লমধুর রস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত