প্রমথ চৌধুরী

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক প্রমথ চৌধুরী। তাঁর অনেক অগ্রন্থিত লেখা এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা লেখাপত্র বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন মলয়েন্দু দিন্দা। তাঁর সংগৃহীত লেখাগুলো মন ফকিরা থেকে, প্রথম প্রকাশ পেয়েছে প্রমথ চৌধুরীর দুটি বই অগ্রন্থিত রচনা-১, অগ্রন্থিত রচনা-২ নামে। সেখান থেকেই প্রমথ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে দুষ্প্রাপ্য ৩টি লেখা আজও প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পুনঃপাঠ হিসেবে তুলে দেওয়া হলো আজকের পত্রিকার সাহিত্য পাতায়।
নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে। আমার মন এত দূর নমনীয় নয় যে যে-দিকে বাঁকাতে চাই, তখনই সে দিকে তাকে বাঁকাতে পারি। এখন যদি অনুমতি করেন তো আমার লেখার একটু পরিচয় দিই।
আমি এককালে পদ্যও লিখেছি, কিন্তু কেউ আমাকে কবি বলে ভুল করেনি। আমার রচিত সনেটগুলিকে লোকে experiment হিসেবেই ধরে নিয়েছে, আর যদি সে experiment successful হয়ে থাকে, তা হলেও তা experiment মাত্র। অতএব কোন সম্পাদকই আমাকে কবিতা লেখবার ফরমায়েশ করেন না, বিশেষত যখন lisp in numbers করবার তরুণ-তরুণী অসংখ্য আছেন।
আমি গল্পও লিখেছি, কিন্তু সে সব গল্পের মান্য আছে, আদর নেই। অর্থাৎ অনেক লেখক সে গল্পের তারিফ করেন, কিন্তু বাজারে তার কাটতি নেই। তাই আশা করি, সম্পাদক মহাশয়রা আমার কাছে গল্প চান না। এ জ্ঞান তাদের আছে যে গল্প লেখা আমার পক্ষে অনায়াসসাধ্য নয়। কোন কালেই আমি হাত ঝাড়লেই গল্প বেরোত না। আর এ বয়সে প্রেমকে নূতন নূতন সাজে বার করা আমার পক্ষে অসাধ্য। ও-বস্তুকে যে-সাজই পরাই না কেন, তার ভিতর থেকে প্রেমের চিরকেলে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে। আর প্রেম বাদ দিয়ে গল্প লেখা, সে সোনা ফেলে আঁচলে গেরো দেওয়া।
সাহিত্যসমাজে জনরব এই যে আমি একজন ক্রিটিক। এ খ্যাতি যে আমার আছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অর্থাৎ যা আমি করিনি, তার জন্যই আমি বিখ্যাত। বাংলায় সমালোচনার অর্থ পুস্তক সমালোচনা। আর আমার যত দূর মনে পড়ে আমি অদ্যাবধি মাত্র দুইখানি বইয়ের সমালোচনা করেছি। এক ‘চিত্রাঙ্গদা’র, আর সম্প্রতি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’র! প্রথমখানি কাব্য, আর দ্বিতীয়খানি ভ্রমণ-কাহিনী। চিত্রাঙ্গদা’র সমালোচনা দীর্ঘ ও মহাপ্রস্থানের পথের সমালোচনা হ্রস্ব। এর কারণ আমার বিশ্বাস যে, চিত্রাঙ্গদা অনেক কথার ভার সয়, আর মহাপ্রস্থানের পথে তা সয় না।
প্রথম সমালোচনা সম্বন্ধে জনৈক নবীন সমালোচক এই মত প্রকাশ করেছেন যে, তাতে অনেক কথা আছে, কিন্তু আসল কথা নেই। সম্ভবত এ দোষ সে সমালোচনার আছে। অনেক কথা বলবার দোষ এই যে, বকতে বকতে আসল কথা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আসল কথাটি যে কী, তা নবীন ভাবুক মহাশয় অনুগ্রহ করে পাঠকসমাজকে বলে দেননি। এর থেকে অনুমান করছি যে, এ কাব্যের যে একটি moral আছে, সে বিষয়ে আমি অজ্ঞ বা উদাসীন। কাব্য মাত্রেরই অন্তরে একটি বা একাধিক moral থাকে। এর কারণ কবি মাত্রেই মানুষ—আর মানুষ মাত্রেই ’moral’ চিন্তার অধীন। ফল-মূল-পাতার অন্তরে যে ওষুধ আছে, তা আমরা সকলেই জানি। আর সম্ভবত সেইটিই হচ্ছে ও-সকলের সারবস্তু—কারণ মানুষের মহা উপকারী বস্তু। তা হলেও ফলমূল পিষে আর পাতা নিংড়ে বিষ কিংবা অমৃত বার করা কাব্যরসিকের কাজ নয়, কারণ আলঙ্কারিক ভিষক নন। কাব্যামৃত বলে সংস্কৃতে একটা কথা আছে, কিন্তু এ অমৃত মকরধ্বজ নয়।
মহাপ্রস্থানের পথের সম্বন্ধে যে বেশি কিছু লিখিনি, তার কারণ ও গ্রন্থের লম্বা সমালোচনা করলে সেটা হত, মহাত্মা গান্ধি যাকে বলেন, Himalayan error। আমাদের মতো ক্ষুদ্রাত্মা লেখকদের পর্বতপ্রমাণ ফাঁকা কথা বলবার অধিকার নেই।
ভালো কথা, আমি কলম ধরে প্রথমেই একখানি প্রসিদ্ধ সংস্কৃত কাব্যের (জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’-এর) সমালোচনা করি। তার পূর্বে আমি কখনও সাদা কাগজের গায়ে বাংলা-কালির আঁচড় কাটিনি। তখন আমি কলেজের ছাত্র; সুতরাং সে প্রবন্ধ যে একাডেমিক পদ্ধতিতে লেখা হয়েছিল, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সে প্রবন্ধটি সেকালের ’ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, অবশ্য তার অনেক ছাঁটকাট করে। আমি এই কাটাকুটিতে খুব সন্তুষ্ট হইনি। কারণ আমি সেকালেও আমার লেখার উপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে প্রসন্ন হতুম না। আমার লেখার জন্য যে একমাত্র আমিই দায়ী, সে জ্ঞান সে বয়েসেও আমার ছিল। আর এ জ্ঞানও আমার ছিল যে, পাঠকের নিন্দা-প্রশংসা কোন লেখার কপালে জুটবে অথবা জুটবে না, তা নির্ভর করে কলমের লেখার উপরে নয়; কপালের লেখার উপরে।
উক্ত লেখাটির প্রতি আমার একটু মায়া ছিল, কারণ সেটি আমার আদি লেখা। তাই তার manuscript-টি আমি সযত্নে রক্ষা করি, এবং বহু কাল পরে সেটি ‘সবুজ পত্র’-এ পুনঃপ্রকাশিত করি। এখন সেটি পড়ে দেখতে পাই, সেই লেখাটিতে আমার লেখার দোষগুণ সবই সমান বর্তমান। আমার লেখার দোষ এই যে, আমার মন সব সময়ে অপরের মতের পশ্চাদ্ধাবন করে না; আর তার গুণ এই যে, আমি যা বলতে চাই তা বাংলায় বলতে পারি—এমনকি সাধু ভাষাতেও। যদিচ আমার মনের ভাষা বিদেশি। উক্ত প্রবন্ধের এ স্থলে উল্লেখ করবার প্রয়োজন এই যে, আমার যদি সত্য-সত্যই critical faculty থাকে, আমার এই আদি লেখাতেই তা পরিস্ফুট হয়েছে।
আর এই দীর্ঘজীবনে কাব্য সম্বন্ধে আমার মতামতের বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটেনি। ইংরেজি ভাষায় criticism-এর অর্থ শুধু সাহিত্য সমালোচনা নয়। যদি তা হয় তো Renan-কে ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অগ্রগণ্য critic বলে ইউরোপের লোকে শ্রদ্ধা করত না; কেননা তিনি কখনও কোন পুস্তক সমালোচনা করেননি। অবশ্য Biblical Criticism-কে কেউ আর সাহিত্য সমালোচনা বলেন না।
ইংলন্ডের জনৈক বড় critic, Mathew Arnold তো সাহিত্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন criticism of life। এ কথার অর্থ নিয়ে ইংলন্ডের সাহিত্য সমাজে বহু আলোচনা হয়েছে। অবশ্য এ গোলযোগ ঘটেছিল criticism কথাটা নিয়ে। আধুনিক ফরাসি সমালোচকরা বলেন, সাহিত্য হচ্ছে meditation of life। এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ শুনিনি। এর থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপে সাহিত্য মানবজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ শুনিনি। এর থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপে সাহিত্য মানবজাবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
মানুষের মন শুধু সাহিত্যের গণ্ডিবদ্ধ নয়। ধর্ম, পলিটিকস প্রভৃতির সঙ্গে সে মনের যোগাযোগ আছে। বাঙালিদের মনও যে এ সব বিষয় থেকে আলগা নয়, তার প্রমাণ নিত্য তাদের কথাবার্তায় পাওয়া যায়। আমিও অবশ্য নানা বিষয়ে নানা কথা বলেছি, যেমন সামাজিক লোকে নিত্য বলেন। সে সব বলা-কওয়া হচ্ছে আসলে স্ব-সমাজের সঙ্গে কথোপকথন। তবে আমার কথা একটু ভেবে বলা আর একটু গুছিয়ে বলা। সে হচ্ছে এই সব বড়-বড় বিষয়ে শুধু টীকাটিপ্পনী, এক কথায় criticism। এ হিসেবে আমি অবশ্য এক রকম সমালোচক। সে সব কথায় কার কী ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে জানিনে। তবে এইটুকু জানি যে, জীবনের প্রতি, অতএব সাহিত্যের প্রতি আমাদের জাতির critical attitude আজও জন্মায়নি। আজও আমরা পরের কথার পিছনে প্রশ্নচিহ্ন দিতে শিখিনি। সেই জন্য বাংলায় আজও সমালোচনা-সাহিত্য গড়ে ওঠেনি। আমাদের সাহিত্যসমাজে এই criticial বুদ্ধি উদ্বুদ্ধ করবার বোধ হয় একটি সহজ উপায় আছে। প্রতি লেখক যদি নিজের লেখার দোষগুণ নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে শেখেন, তা হলে অপরের লেখাও খুব সম্ভবত সুবিচার করতে শিখবেন। কারণ সকল criticism-এর ভিত্তি হচ্ছে আত্ম-criticism।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক প্রমথ চৌধুরী। তাঁর অনেক অগ্রন্থিত লেখা এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা লেখাপত্র বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন মলয়েন্দু দিন্দা। তাঁর সংগৃহীত লেখাগুলো মন ফকিরা থেকে, প্রথম প্রকাশ পেয়েছে প্রমথ চৌধুরীর দুটি বই অগ্রন্থিত রচনা-১, অগ্রন্থিত রচনা-২ নামে। সেখান থেকেই প্রমথ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে দুষ্প্রাপ্য ৩টি লেখা আজও প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পুনঃপাঠ হিসেবে তুলে দেওয়া হলো আজকের পত্রিকার সাহিত্য পাতায়।
নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে। আমার মন এত দূর নমনীয় নয় যে যে-দিকে বাঁকাতে চাই, তখনই সে দিকে তাকে বাঁকাতে পারি। এখন যদি অনুমতি করেন তো আমার লেখার একটু পরিচয় দিই।
আমি এককালে পদ্যও লিখেছি, কিন্তু কেউ আমাকে কবি বলে ভুল করেনি। আমার রচিত সনেটগুলিকে লোকে experiment হিসেবেই ধরে নিয়েছে, আর যদি সে experiment successful হয়ে থাকে, তা হলেও তা experiment মাত্র। অতএব কোন সম্পাদকই আমাকে কবিতা লেখবার ফরমায়েশ করেন না, বিশেষত যখন lisp in numbers করবার তরুণ-তরুণী অসংখ্য আছেন।
আমি গল্পও লিখেছি, কিন্তু সে সব গল্পের মান্য আছে, আদর নেই। অর্থাৎ অনেক লেখক সে গল্পের তারিফ করেন, কিন্তু বাজারে তার কাটতি নেই। তাই আশা করি, সম্পাদক মহাশয়রা আমার কাছে গল্প চান না। এ জ্ঞান তাদের আছে যে গল্প লেখা আমার পক্ষে অনায়াসসাধ্য নয়। কোন কালেই আমি হাত ঝাড়লেই গল্প বেরোত না। আর এ বয়সে প্রেমকে নূতন নূতন সাজে বার করা আমার পক্ষে অসাধ্য। ও-বস্তুকে যে-সাজই পরাই না কেন, তার ভিতর থেকে প্রেমের চিরকেলে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে। আর প্রেম বাদ দিয়ে গল্প লেখা, সে সোনা ফেলে আঁচলে গেরো দেওয়া।
সাহিত্যসমাজে জনরব এই যে আমি একজন ক্রিটিক। এ খ্যাতি যে আমার আছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অর্থাৎ যা আমি করিনি, তার জন্যই আমি বিখ্যাত। বাংলায় সমালোচনার অর্থ পুস্তক সমালোচনা। আর আমার যত দূর মনে পড়ে আমি অদ্যাবধি মাত্র দুইখানি বইয়ের সমালোচনা করেছি। এক ‘চিত্রাঙ্গদা’র, আর সম্প্রতি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’র! প্রথমখানি কাব্য, আর দ্বিতীয়খানি ভ্রমণ-কাহিনী। চিত্রাঙ্গদা’র সমালোচনা দীর্ঘ ও মহাপ্রস্থানের পথের সমালোচনা হ্রস্ব। এর কারণ আমার বিশ্বাস যে, চিত্রাঙ্গদা অনেক কথার ভার সয়, আর মহাপ্রস্থানের পথে তা সয় না।
প্রথম সমালোচনা সম্বন্ধে জনৈক নবীন সমালোচক এই মত প্রকাশ করেছেন যে, তাতে অনেক কথা আছে, কিন্তু আসল কথা নেই। সম্ভবত এ দোষ সে সমালোচনার আছে। অনেক কথা বলবার দোষ এই যে, বকতে বকতে আসল কথা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আসল কথাটি যে কী, তা নবীন ভাবুক মহাশয় অনুগ্রহ করে পাঠকসমাজকে বলে দেননি। এর থেকে অনুমান করছি যে, এ কাব্যের যে একটি moral আছে, সে বিষয়ে আমি অজ্ঞ বা উদাসীন। কাব্য মাত্রেরই অন্তরে একটি বা একাধিক moral থাকে। এর কারণ কবি মাত্রেই মানুষ—আর মানুষ মাত্রেই ’moral’ চিন্তার অধীন। ফল-মূল-পাতার অন্তরে যে ওষুধ আছে, তা আমরা সকলেই জানি। আর সম্ভবত সেইটিই হচ্ছে ও-সকলের সারবস্তু—কারণ মানুষের মহা উপকারী বস্তু। তা হলেও ফলমূল পিষে আর পাতা নিংড়ে বিষ কিংবা অমৃত বার করা কাব্যরসিকের কাজ নয়, কারণ আলঙ্কারিক ভিষক নন। কাব্যামৃত বলে সংস্কৃতে একটা কথা আছে, কিন্তু এ অমৃত মকরধ্বজ নয়।
মহাপ্রস্থানের পথের সম্বন্ধে যে বেশি কিছু লিখিনি, তার কারণ ও গ্রন্থের লম্বা সমালোচনা করলে সেটা হত, মহাত্মা গান্ধি যাকে বলেন, Himalayan error। আমাদের মতো ক্ষুদ্রাত্মা লেখকদের পর্বতপ্রমাণ ফাঁকা কথা বলবার অধিকার নেই।
ভালো কথা, আমি কলম ধরে প্রথমেই একখানি প্রসিদ্ধ সংস্কৃত কাব্যের (জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’-এর) সমালোচনা করি। তার পূর্বে আমি কখনও সাদা কাগজের গায়ে বাংলা-কালির আঁচড় কাটিনি। তখন আমি কলেজের ছাত্র; সুতরাং সে প্রবন্ধ যে একাডেমিক পদ্ধতিতে লেখা হয়েছিল, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সে প্রবন্ধটি সেকালের ’ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, অবশ্য তার অনেক ছাঁটকাট করে। আমি এই কাটাকুটিতে খুব সন্তুষ্ট হইনি। কারণ আমি সেকালেও আমার লেখার উপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে প্রসন্ন হতুম না। আমার লেখার জন্য যে একমাত্র আমিই দায়ী, সে জ্ঞান সে বয়েসেও আমার ছিল। আর এ জ্ঞানও আমার ছিল যে, পাঠকের নিন্দা-প্রশংসা কোন লেখার কপালে জুটবে অথবা জুটবে না, তা নির্ভর করে কলমের লেখার উপরে নয়; কপালের লেখার উপরে।
উক্ত লেখাটির প্রতি আমার একটু মায়া ছিল, কারণ সেটি আমার আদি লেখা। তাই তার manuscript-টি আমি সযত্নে রক্ষা করি, এবং বহু কাল পরে সেটি ‘সবুজ পত্র’-এ পুনঃপ্রকাশিত করি। এখন সেটি পড়ে দেখতে পাই, সেই লেখাটিতে আমার লেখার দোষগুণ সবই সমান বর্তমান। আমার লেখার দোষ এই যে, আমার মন সব সময়ে অপরের মতের পশ্চাদ্ধাবন করে না; আর তার গুণ এই যে, আমি যা বলতে চাই তা বাংলায় বলতে পারি—এমনকি সাধু ভাষাতেও। যদিচ আমার মনের ভাষা বিদেশি। উক্ত প্রবন্ধের এ স্থলে উল্লেখ করবার প্রয়োজন এই যে, আমার যদি সত্য-সত্যই critical faculty থাকে, আমার এই আদি লেখাতেই তা পরিস্ফুট হয়েছে।
আর এই দীর্ঘজীবনে কাব্য সম্বন্ধে আমার মতামতের বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটেনি। ইংরেজি ভাষায় criticism-এর অর্থ শুধু সাহিত্য সমালোচনা নয়। যদি তা হয় তো Renan-কে ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অগ্রগণ্য critic বলে ইউরোপের লোকে শ্রদ্ধা করত না; কেননা তিনি কখনও কোন পুস্তক সমালোচনা করেননি। অবশ্য Biblical Criticism-কে কেউ আর সাহিত্য সমালোচনা বলেন না।
ইংলন্ডের জনৈক বড় critic, Mathew Arnold তো সাহিত্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন criticism of life। এ কথার অর্থ নিয়ে ইংলন্ডের সাহিত্য সমাজে বহু আলোচনা হয়েছে। অবশ্য এ গোলযোগ ঘটেছিল criticism কথাটা নিয়ে। আধুনিক ফরাসি সমালোচকরা বলেন, সাহিত্য হচ্ছে meditation of life। এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ শুনিনি। এর থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপে সাহিত্য মানবজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ শুনিনি। এর থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপে সাহিত্য মানবজাবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
মানুষের মন শুধু সাহিত্যের গণ্ডিবদ্ধ নয়। ধর্ম, পলিটিকস প্রভৃতির সঙ্গে সে মনের যোগাযোগ আছে। বাঙালিদের মনও যে এ সব বিষয় থেকে আলগা নয়, তার প্রমাণ নিত্য তাদের কথাবার্তায় পাওয়া যায়। আমিও অবশ্য নানা বিষয়ে নানা কথা বলেছি, যেমন সামাজিক লোকে নিত্য বলেন। সে সব বলা-কওয়া হচ্ছে আসলে স্ব-সমাজের সঙ্গে কথোপকথন। তবে আমার কথা একটু ভেবে বলা আর একটু গুছিয়ে বলা। সে হচ্ছে এই সব বড়-বড় বিষয়ে শুধু টীকাটিপ্পনী, এক কথায় criticism। এ হিসেবে আমি অবশ্য এক রকম সমালোচক। সে সব কথায় কার কী ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে জানিনে। তবে এইটুকু জানি যে, জীবনের প্রতি, অতএব সাহিত্যের প্রতি আমাদের জাতির critical attitude আজও জন্মায়নি। আজও আমরা পরের কথার পিছনে প্রশ্নচিহ্ন দিতে শিখিনি। সেই জন্য বাংলায় আজও সমালোচনা-সাহিত্য গড়ে ওঠেনি। আমাদের সাহিত্যসমাজে এই criticial বুদ্ধি উদ্বুদ্ধ করবার বোধ হয় একটি সহজ উপায় আছে। প্রতি লেখক যদি নিজের লেখার দোষগুণ নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে শেখেন, তা হলে অপরের লেখাও খুব সম্ভবত সুবিচার করতে শিখবেন। কারণ সকল criticism-এর ভিত্তি হচ্ছে আত্ম-criticism।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

নূতন কাগজের নূতন সম্পাদকরা, যখন আমাকে তাদের কাগজের পৃষ্ঠা-পূরণ করতে অনুরোধ করেন, তখন আমি উভয় সংকটে পড়ি। কেন, সে কথা আমি বহু বার বলেছি। আসল কথা, এ ক্ষেত্রে কী লিখব ভেবে পাইনে। আর নূতন সম্পাদকরাও কী লিখতে হবে, তা বলে দেন না। যদি দিতেন, তা হলে আরও মুশকিলে পড়তুম। কারণ, ফরমায়েশি লেখা আমি লিখতে পারিনে।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে