রাফাত মিশু

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে। সেই পরম্পরায় নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ভূষিত হয়েছেন এবং মৃত্যুর পর তাঁর সমাধি এই বাংলাদেশের মাটিতেই সংরক্ষিত আছে। ফলে বাংলাদেশে নজরুল-বিচার কেবল সাহিত্য-শিল্প-নন্দনের মাপকাঠি দিয়ে চলে না এবং সেটা হয়ওনি। এর সঙ্গে অনিবার্যভাবে জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা এবং জাতীয় চেতনার রূপান্তর। নজরুল তো সেই ১৯৪২ সালেই নির্বাক হয়ে যান। এর আগে সবাক নজরুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, খেলাফত আন্দোলন, স্বরাজসহ প্রায় প্রতিটি জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন এবং নিজের অবস্থান অকুণ্ঠভাবেই প্রকাশ করেছেন স্লোগানে, গানে, কবিতায়, কথাসাহিত্যে—সর্বত্র। বেঁচে থাকার পুরোটা সময় চেতনশীল থাকলে নিশ্চয়ই চল্লিশের দশকের দ্বিজাতিতত্ত্ব-ভিত্তিক পাকিস্তান আন্দোলন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, বিভাগ-পরবর্তী ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতি এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি তাঁর অবস্থানের জানান দিতেন। তিনি সেই সুযোগ পাননি। কিন্তু পাঠক-অনুরাগীদের কাছে নজরুল যেমন নানা মাত্রিক ইতিবাচকতার মধ্য দিয়ে, বিপ্লবী চেতনার মধ্য দিয়ে গৃহীত হয়েছেন, তেমনি বিভিন্ন আমলের শাসকগোষ্ঠীও নানাভাবে নজরুলকে বিবেচনায় এনেছে। বিশেষত পাকিস্তান-পর্বের আইয়ুবি কালো দশকে নজরুলের কবিতা ও গানে নানা ধরনের কাটাছেঁড়া ও শব্দ পুনঃস্থাপনের যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তা থেকে নজরুলপাঠে রাজনীতি সাপেক্ষতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একাত্তর-পরবর্তীকালে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসা, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া, জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া, তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা—একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা—এ সবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিবেচনার ফলাফল। ফলে নজরুলসাহিত্যের চর্চা, তার প্রসার এবং জাতীয় জীবনে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়-আশয় রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। তাই রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলো এখানে জাতীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের নানান গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মধ্যে তাঁর শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ রাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কীভাবে গড়ে নিতে চায়, তার অনেকখানি এই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যেকোনো রাষ্ট্রের ইতিহাসপাঠের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পাঠ্যপুস্তকের স্বরূপ ও রূপান্তর অন্বেষণের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সেই বিবেচনায় রাষ্ট্র কীভাবে নজরুলকে, অর্থাৎ তার জাতীয় কবিকে পেতে চায়, তা জানার জন্য পাঠ্যপুস্তকে নজরুল কীভাবে আছেন সেটি বুঝে নেওয়া জরুরি।
কাজী নজরুল এক অর্থে সব্যসাচী লেখক। গান-কবিতা-ছড়া-উপন্যাস-গল্প-প্রবন্ধ-পত্র-অভিভাষণ—সবই লিখেছেন। এসব রচনার মধ্যে নজরুলের সমকালের অভিঘাত আছে, আছে শিল্পসৃজনের বহুস্তরিক কলাকৌশল, তত্ত্ব ও মতবাদের ঘনিষ্ঠতা। তেমনি বর্তমানে দাঁড়িয়ে শতবর্ষকাল আগের নজরুলকে দেখার মধ্য দিয়ে বর্তমানের চোখটিও যুক্ত হয়ে যায় অনিবার্যভাবে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় পাঠ্যপুস্তককে যে চোখ দিয়ে পাঠ করানো হয়, তা কেবল ব্যক্তি অথবা সমষ্টির থাকে না; সেটি মূলত রাষ্ট্রেরই চোখ হয়ে ওঠে। অন্য যেকোনো পাঠের মতো নজরুলপাঠও তাই কেবল অতীতের বিষয় হয়ে থাকে না। স্বাধীন বাংলাদেশের আগে-পরে নজরুল ও নজরুলসাহিত্য পাঠ্যতালিকায় সব সময়ই কমবেশি ছিল। শিল্পের তাত্ত্বিকদের কাছে নজরুল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় গৃহীত হয়েছেন—কখনো কম, কখনো বেশি; কখনো শুরু, কখনো গুরু। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে শিশু থেকে তরুণ সবাই নজরুলসাহিত্যের কিছু দিক সম্পর্কে অবহিত থেকেছে। ফলে বাংলাদেশের সাক্ষর-শিক্ষিতদের চেতনাস্রোতে নজরুলের অবস্থান বেশ স্থায়ী। কিন্তু নজরুলপাঠ তো বড় বিষয়; পাঠ্যপুস্তকে নজরুলের সব সৃজনকর্ম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভবও নয়। তাই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে নজরুল কীভাবে, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কত পরিমাণে উপস্থিত থাকছেন, তা জানার মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে নজরুলের একটি প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহুধারায় বিভক্ত, সেগুলো নিয়ে আছে নানা বিতর্ক—বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্র সেটা নয়। এখানে কেবল বাংলাদেশের পুস্তক প্রণয়নসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে নজরুলরচনার পরিচয় ও সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের কার্যকারণ বোঝার চেষ্টা করা হবে। ২০২২ সালে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকই বর্তমান আলোচনার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চোখ ও নজরুলচেতনার মধ্যে একটি দৃষ্টিভঙ্গিগত সাদৃশ্য, বৈচিত্র্য ও বিপ্রতীপতা অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
প্রথম থেকে দ্বাদশ—এই বারোটি শ্রেণির আবশ্যিক হিসেবে বাংলা বিষয়ের বই প্রণয়ন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নামক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি শ্রেণির বাংলা বইয়ে নজরুলকৃত সাহিত্যকর্মকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের নাম অভিন্ন—‘আমার বাংলা বই’। প্রথম শ্রেণির বইয়ে আছে কাজী নজরুলের ‘ঝিঙে ফুল’ (১৯২৬) কাব্যগ্রন্থভুক্ত জনপ্রিয় শিশুতোষ ছড়া ‘প্রভাতী’র কিছু অংশ; অর্থাৎ সবার পরিচিত ‘ভোর হলো/দোর খোল/খুকুমণি ওঠরে!’ যদিও পাঠ্যবইয়ে কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘ভোর হলো’। হয়তো প্রথম শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের ‘প্রভাতী’র র-ফলা পাঠের জটিলতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ে আছে ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি। সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি।’ এর নামকরণ করা হয়েছে ‘আমি হব’। এটি মূলত নজরুলের ‘সাত ভাই চম্পা’র প্রথম অংশ। তৃতীয় শ্রেণিতে আছে বিখ্যাত রণসংগীত হিসেবে পরিচিত ‘সন্ধ্যা’ (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থের ‘নতুনের গান’ কবিতার প্রথম অংশ: ‘চল্ চল্ চল্’। চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে আছে ‘ঝিঙে ফুল’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘মা’ কবিতা: ‘যেখানেতে দেখি যাহা/মা-এর মতন আহা/একটি কথায় এত সুধা মেশে নাই...’। পঞ্চম শ্রেণিতে নজরুলের ‘সংকল্প’ কবিতা (অগ্রন্থিত) অর্থাৎ ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,’ কবিতার সংক্ষেপিত রূপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই ‘চারুপাঠ’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরও একটি বহুল পঠিত ছড়া-কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’। সপ্তম শ্রেণির ‘সপ্তবর্ণা’য় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাম্যবাদী (১৯২৫) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘কুলি-মজুর’ কবিতার সংক্ষেপিত রূপ। সপ্তম শ্রেণির ‘আনন্দপাঠ’ (দ্রুতপঠন) নামক বইয়ে নজরুলের ‘জাগো সুন্দর’ নামক নাটিকা আছে; যদিও এর মূল নাম ‘জাগো সুন্দর চিরকিশোর’। অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে কাজী নজরুলের দুটি রচনা স্থান পেয়েছে: একটি প্রবন্ধ ‘ভাব ও কাজ’ (যুগবাণী), অপরটি কবিতা ‘নারী’ (সাম্যবাদী)। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত ‘বাংলা সাহিত্য’ বইয়ে নজরুলের তিনটি রচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে: প্রবন্ধ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ (যুগবাণী), কবিতা ‘দোলন-চাঁপা’ (১৯২৩) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ এবং কবিতা ‘মানুষ’ (সাম্যবাদী); এগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের যেকোনো দুটি পাঠ্য। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ‘সাহিত্যপাঠ’ বইয়েও তিনটি নজরুলরচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে: একটি প্রবন্ধ ‘রুদ্রমঙ্গল’ (১৯২৭) গ্রন্থভুক্ত ‘আমার পথ’ এবং দুটি কবিতা ‘অগ্নি-বীণা’ (১৯২২) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘বিদ্রোহী’ ও ‘সাম্যবাদী’। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে কাজী নজরুল রচিত ‘শোন শোন ইয়া ইলাহী আমার মোনাজাত’ সূচক ‘হামদে ইলাহী’ সংযোজিত হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, নজরুলের রচনাসম্ভার আয়তনে অনেক বড়। নজরুলরচনার কী কী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তার তালিকা হবে অসীমের মতো দীর্ঘ। কী কী রাখা যেত, সেটাও অনেকখানি আপেক্ষিক। তাই নজরুলকৃত যেসব রচনা পাঠ্যপুস্তকভুক্ত হয়েছে, সেসব কী রূপে ও কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেটাই এই আলোচনায় মুখ্যতা পাবে। নজরুলের সাহিত্যকর্ম যে সব পর্যায়ে পাঠ্যভুক্ত আছে, এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্র নজরুলকে পাঠ করতে আগ্রহী। প্রাথমিক শ্রেণি পর্যায়ে নজরুলের যেসব ছড়া ও কবিতাজাতীয় রচনা পাঠ্যভুক্ত হয়েছে, সেসবের পাঠ সহৃদয়তা তৈরি, ছন্দ ও শ্রুতিমাধুর্য, ভাষার বর্ণ-শব্দ-উচ্চারণে সাবলীলতা সম্পর্কে শিশুদের পরিচিতকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিচেতনা, কর্তব্যবোধ, মাতৃভক্তি, জ্ঞানের প্রতি কৌতূহল—এই বিষয়গুলোও ওইজাতীয় রচনার সঙ্গে জড়িত। মাধ্যমিক শ্রেণিতে কবিতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবন্ধ। নজরুলের সাংগীতিক কাব্যবোধের সঙ্গে মনন ও চিন্তার যুক্তিশৃঙ্খলা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অবহিত হয় প্রবন্ধপাঠের মাধ্যমে। এই পর্বে নজরুলের বেশির ভাগ প্রবন্ধ গ্রহণ করা হয়েছে যুগবাণী (১৯২২) প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে। যুগবাণীর বেশির ভাগ প্রবন্ধ ‘দৈনিক নবযুগ’ (১৯২০) পত্রিকার সম্পাদকীয় হিসেবে রচিত হয়েছিল। পুরো প্রবন্ধগ্রন্থে তৎকালের অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের উত্তাপ এবং নজরুলের বিপ্লবী অবস্থান অনুধাবন করা যায়। ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ ছড়ানোর অভিযোগে যুগবাণী একসময় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত হয় (১৯২২)। যদিও পাঠ্যপুস্তকে বিপ্লবাত্মক কোনো প্রবন্ধ নির্বাচন করা হয়নি। মানুষকে কর্মমুখী করে তোলা, তার সদর্থক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো এবং সেই সূত্রে নজরুলের কর্মমুখরতা সম্পর্কে জানানোর জন্য প্রবন্ধগুলো নির্বাচন করা হয়ে থাকতে পারে। কবিতার ক্ষেত্রে নজরুলের নিজস্ব ধাঁচের সাম্যবাদী চিন্তা, মানবমুখিতা, শোষণহীন সমাজ, লিঙ্গসমতা, বৈষম্যমুক্তি গুরুত্ব পেয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে, অর্থাৎ সাধারণ বাংলা শিক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নজরুলের যুগচিহ্নিত কবিতা ‘বিদ্রোহী’; পুরোটা নয়, সংক্ষেপিত। পাঠ্যপুস্তকে অনেক সময় বড় রচনাকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জনা করা হয় মূলত শিক্ষার্থীদের পঠনপরিধি, বয়সের সঙ্গে সংগতি রক্ষা এবং আধুনিক বানান সমন্বয়ের বিষয় বিবেচনায় রেখে। একই বিবেচনায় হয়তো প্রাথমিক শ্রেণি পর্যায়ে কিছু কবিতার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও কবিতার মূল নাম জানাটাও শিক্ষার একটি অংশ। কিন্তু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মতো পরিণত পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বাংলা সাহিত্যের বইয়ে ‘বিদ্রোহী’র মতো গুরুত্বপূর্ণ কবিতা কেন সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশ করা হলো, তা ভাবনার দাবি রাখে। আর কবিতাটি যেভাবে বইয়ে মুদ্রিত রয়েছে, তাতে কবিতার মাত্রা-তাল-লয় ও ছন্দবোধ অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিপর্ব, স্তবকবিন্যাস—এই বিষয়গুলো নেই হয়ে গেছে। আর সংক্ষিপ্তকরণের নামে যা যা ছেঁটে ফেলা হয়েছে, তা আরও ভাবিয়ে তোলে। আমরা সবাই জানি, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা নজরুলের ‘আমিত্ব’বোধের জাগরণের আগ্নেয়গিরিসম সৃষ্টি। এখানে যে বিদ্রোহ উপস্থিত আছে, তার রূপ নানামাত্রিক ও বহুকৌণিক। এই বিদ্রোহ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ; অশুভ শক্তি, জড়তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং উপনিবেশ-শৃঙ্খলিত শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি-আকাঙ্ক্ষায় নজরুলের এই বিদ্রোহ। নজরুল তাঁর বিদ্রোহের স্বরূপ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নিজের ধর্মগত ঐতিহ্য ও জাতিগত সংস্কৃতি দুই জায়গা থেকেই উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। সে কারণে তাঁর পুরাণ-চেতনায় ঘটে পশ্চিম এশীয় ও ভারতীয় চেতনার দারুণ মিথস্ক্রিয়া; অনেকে দুই প্রবণতাকে মুসলিম ঐতিহ্য ও হিন্দু ঐতিহ্য বলেও চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু আমরা যখন পাঠ্যবইয়ের ‘বিদ্রোহী’ পড়ি, তখন কিছু প্রসঙ্গের সচেতন অবলুপ্তি নজরুলের স্বরূপ চিনতে বাধাগ্রস্ত করে। যেমন মূল পাঠের সপ্তম-অষ্টম-নবম পঙ্ক্তিতে আছে—‘ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, /উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাত্রীর’। মূল পাঠেই ‘আরশ’ শব্দটি যে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি, তা বোঝাতে একে উদ্ধরণ চিহ্নের (‘’) মধ্যে রাখা হয়েছে। আর এই ‘খোদার আরশ’ যে ঔপনিবেশিক শক্তির ক্ষমতাকেন্দ্র, আক্ষরিক ইসলাম ধর্মের আল্লাহর আরশ নয়, তা নজরুল-সমকালেই সাহিত্যপাঠকেরা শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। অথচ পাঠ্যবইয়ে সেই পঙ্ক্তি বাদ পড়ে গেল। ‘বিদ্রোহী’ অগ্নিবীণার শতবর্ষে এসে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হয় এক আপসী পরিস্থিতির। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আরও একটি পঙ্ক্তি বাদ হয়ে গেছে—‘আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন!’ এটিও আজ কারোর অজানা নয় যে, এই ভগবান ব্রিটিশ শোষকেরই রূপক। সবাই জানলেও রাষ্ট্র ঝুঁকি নিতে চায় না। আর তাই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পাঠ্যবইয়ে জায়গা পেলেও নজরুলের বিদ্রোহী সত্তার পূর্ণরূপ অনেকটাই অধরা থেকে যায়। হয়তো রাষ্ট্র এমন এক বিদ্রোহী নজরুলকে পরিচিত করাতে চায় যে ‘সীমিত মাত্রার বিদ্রোহী’, সে চায় না কোনো বিপ্লবীকেও। রাষ্ট্র তার পূর্বসূরি বিপ্লবীদের ইতিহাসের আবদ্ধ মলাটের মধ্যে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বাংলা সাহিত্যে নজরুলই সম্পূর্ণত অসাম্প্রদায়িক ও আপসহীন কবি। কিন্তু রাষ্ট্রের চোখে আমরা যে নজরুলকে পাঠ করি, তার স্বরূপটিও অনেকখানি রাষ্ট্রসাপেক্ষ থেকে যায়। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মনস্তত্ত্ব ও চারিত্র্যও টের পাওয়া যায়। এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। পাকিস্তান পর্বে নজরুলের কবিতায় ‘সজীব করিব মহাশ্মশান’-এর বদলে ‘সজীব করিব গোরস্থান’-এর বহুল প্রচলন, শ্যামাসংগীত নিষিদ্ধকরণ, কেবল হামদ-নাত পরিবেশন—এসবও রাষ্ট্রকৃত বিষয়ই ছিল। তার বিপরীতে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের ফসলই আমাদের বর্তমানের বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তককে হতে হবে অসংকোচ, দ্বিধাহীন ও প্রাগ্রসর। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে নজরুলপাঠ ও রাষ্ট্রের চোখে নজরুল—এই দুইয়ের মধ্যে থাকবে না কোনো নীতিগত বিপ্রতীপতা—এ-ই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে। সেই পরম্পরায় নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ভূষিত হয়েছেন এবং মৃত্যুর পর তাঁর সমাধি এই বাংলাদেশের মাটিতেই সংরক্ষিত আছে। ফলে বাংলাদেশে নজরুল-বিচার কেবল সাহিত্য-শিল্প-নন্দনের মাপকাঠি দিয়ে চলে না এবং সেটা হয়ওনি। এর সঙ্গে অনিবার্যভাবে জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা এবং জাতীয় চেতনার রূপান্তর। নজরুল তো সেই ১৯৪২ সালেই নির্বাক হয়ে যান। এর আগে সবাক নজরুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, খেলাফত আন্দোলন, স্বরাজসহ প্রায় প্রতিটি জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন এবং নিজের অবস্থান অকুণ্ঠভাবেই প্রকাশ করেছেন স্লোগানে, গানে, কবিতায়, কথাসাহিত্যে—সর্বত্র। বেঁচে থাকার পুরোটা সময় চেতনশীল থাকলে নিশ্চয়ই চল্লিশের দশকের দ্বিজাতিতত্ত্ব-ভিত্তিক পাকিস্তান আন্দোলন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, বিভাগ-পরবর্তী ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতি এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি তাঁর অবস্থানের জানান দিতেন। তিনি সেই সুযোগ পাননি। কিন্তু পাঠক-অনুরাগীদের কাছে নজরুল যেমন নানা মাত্রিক ইতিবাচকতার মধ্য দিয়ে, বিপ্লবী চেতনার মধ্য দিয়ে গৃহীত হয়েছেন, তেমনি বিভিন্ন আমলের শাসকগোষ্ঠীও নানাভাবে নজরুলকে বিবেচনায় এনেছে। বিশেষত পাকিস্তান-পর্বের আইয়ুবি কালো দশকে নজরুলের কবিতা ও গানে নানা ধরনের কাটাছেঁড়া ও শব্দ পুনঃস্থাপনের যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তা থেকে নজরুলপাঠে রাজনীতি সাপেক্ষতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একাত্তর-পরবর্তীকালে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসা, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া, জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া, তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা—একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা—এ সবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও বিবেচনার ফলাফল। ফলে নজরুলসাহিত্যের চর্চা, তার প্রসার এবং জাতীয় জীবনে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়-আশয় রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। তাই রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলো এখানে জাতীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের নানান গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মধ্যে তাঁর শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ রাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কীভাবে গড়ে নিতে চায়, তার অনেকখানি এই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যেকোনো রাষ্ট্রের ইতিহাসপাঠের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পাঠ্যপুস্তকের স্বরূপ ও রূপান্তর অন্বেষণের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সেই বিবেচনায় রাষ্ট্র কীভাবে নজরুলকে, অর্থাৎ তার জাতীয় কবিকে পেতে চায়, তা জানার জন্য পাঠ্যপুস্তকে নজরুল কীভাবে আছেন সেটি বুঝে নেওয়া জরুরি।
কাজী নজরুল এক অর্থে সব্যসাচী লেখক। গান-কবিতা-ছড়া-উপন্যাস-গল্প-প্রবন্ধ-পত্র-অভিভাষণ—সবই লিখেছেন। এসব রচনার মধ্যে নজরুলের সমকালের অভিঘাত আছে, আছে শিল্পসৃজনের বহুস্তরিক কলাকৌশল, তত্ত্ব ও মতবাদের ঘনিষ্ঠতা। তেমনি বর্তমানে দাঁড়িয়ে শতবর্ষকাল আগের নজরুলকে দেখার মধ্য দিয়ে বর্তমানের চোখটিও যুক্ত হয়ে যায় অনিবার্যভাবে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় পাঠ্যপুস্তককে যে চোখ দিয়ে পাঠ করানো হয়, তা কেবল ব্যক্তি অথবা সমষ্টির থাকে না; সেটি মূলত রাষ্ট্রেরই চোখ হয়ে ওঠে। অন্য যেকোনো পাঠের মতো নজরুলপাঠও তাই কেবল অতীতের বিষয় হয়ে থাকে না। স্বাধীন বাংলাদেশের আগে-পরে নজরুল ও নজরুলসাহিত্য পাঠ্যতালিকায় সব সময়ই কমবেশি ছিল। শিল্পের তাত্ত্বিকদের কাছে নজরুল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় গৃহীত হয়েছেন—কখনো কম, কখনো বেশি; কখনো শুরু, কখনো গুরু। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে শিশু থেকে তরুণ সবাই নজরুলসাহিত্যের কিছু দিক সম্পর্কে অবহিত থেকেছে। ফলে বাংলাদেশের সাক্ষর-শিক্ষিতদের চেতনাস্রোতে নজরুলের অবস্থান বেশ স্থায়ী। কিন্তু নজরুলপাঠ তো বড় বিষয়; পাঠ্যপুস্তকে নজরুলের সব সৃজনকর্ম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভবও নয়। তাই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে নজরুল কীভাবে, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কত পরিমাণে উপস্থিত থাকছেন, তা জানার মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে নজরুলের একটি প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহুধারায় বিভক্ত, সেগুলো নিয়ে আছে নানা বিতর্ক—বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্র সেটা নয়। এখানে কেবল বাংলাদেশের পুস্তক প্রণয়নসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে নজরুলরচনার পরিচয় ও সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের কার্যকারণ বোঝার চেষ্টা করা হবে। ২০২২ সালে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকই বর্তমান আলোচনার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চোখ ও নজরুলচেতনার মধ্যে একটি দৃষ্টিভঙ্গিগত সাদৃশ্য, বৈচিত্র্য ও বিপ্রতীপতা অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
প্রথম থেকে দ্বাদশ—এই বারোটি শ্রেণির আবশ্যিক হিসেবে বাংলা বিষয়ের বই প্রণয়ন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নামক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি শ্রেণির বাংলা বইয়ে নজরুলকৃত সাহিত্যকর্মকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের নাম অভিন্ন—‘আমার বাংলা বই’। প্রথম শ্রেণির বইয়ে আছে কাজী নজরুলের ‘ঝিঙে ফুল’ (১৯২৬) কাব্যগ্রন্থভুক্ত জনপ্রিয় শিশুতোষ ছড়া ‘প্রভাতী’র কিছু অংশ; অর্থাৎ সবার পরিচিত ‘ভোর হলো/দোর খোল/খুকুমণি ওঠরে!’ যদিও পাঠ্যবইয়ে কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘ভোর হলো’। হয়তো প্রথম শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের ‘প্রভাতী’র র-ফলা পাঠের জটিলতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ে আছে ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি। সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি।’ এর নামকরণ করা হয়েছে ‘আমি হব’। এটি মূলত নজরুলের ‘সাত ভাই চম্পা’র প্রথম অংশ। তৃতীয় শ্রেণিতে আছে বিখ্যাত রণসংগীত হিসেবে পরিচিত ‘সন্ধ্যা’ (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থের ‘নতুনের গান’ কবিতার প্রথম অংশ: ‘চল্ চল্ চল্’। চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে আছে ‘ঝিঙে ফুল’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘মা’ কবিতা: ‘যেখানেতে দেখি যাহা/মা-এর মতন আহা/একটি কথায় এত সুধা মেশে নাই...’। পঞ্চম শ্রেণিতে নজরুলের ‘সংকল্প’ কবিতা (অগ্রন্থিত) অর্থাৎ ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,’ কবিতার সংক্ষেপিত রূপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই ‘চারুপাঠ’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরও একটি বহুল পঠিত ছড়া-কবিতা ‘ঝিঙে ফুল’। সপ্তম শ্রেণির ‘সপ্তবর্ণা’য় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাম্যবাদী (১৯২৫) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘কুলি-মজুর’ কবিতার সংক্ষেপিত রূপ। সপ্তম শ্রেণির ‘আনন্দপাঠ’ (দ্রুতপঠন) নামক বইয়ে নজরুলের ‘জাগো সুন্দর’ নামক নাটিকা আছে; যদিও এর মূল নাম ‘জাগো সুন্দর চিরকিশোর’। অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে কাজী নজরুলের দুটি রচনা স্থান পেয়েছে: একটি প্রবন্ধ ‘ভাব ও কাজ’ (যুগবাণী), অপরটি কবিতা ‘নারী’ (সাম্যবাদী)। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত ‘বাংলা সাহিত্য’ বইয়ে নজরুলের তিনটি রচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে: প্রবন্ধ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ (যুগবাণী), কবিতা ‘দোলন-চাঁপা’ (১৯২৩) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ এবং কবিতা ‘মানুষ’ (সাম্যবাদী); এগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের যেকোনো দুটি পাঠ্য। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ‘সাহিত্যপাঠ’ বইয়েও তিনটি নজরুলরচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে: একটি প্রবন্ধ ‘রুদ্রমঙ্গল’ (১৯২৭) গ্রন্থভুক্ত ‘আমার পথ’ এবং দুটি কবিতা ‘অগ্নি-বীণা’ (১৯২২) কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘বিদ্রোহী’ ও ‘সাম্যবাদী’। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে কাজী নজরুল রচিত ‘শোন শোন ইয়া ইলাহী আমার মোনাজাত’ সূচক ‘হামদে ইলাহী’ সংযোজিত হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, নজরুলের রচনাসম্ভার আয়তনে অনেক বড়। নজরুলরচনার কী কী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তার তালিকা হবে অসীমের মতো দীর্ঘ। কী কী রাখা যেত, সেটাও অনেকখানি আপেক্ষিক। তাই নজরুলকৃত যেসব রচনা পাঠ্যপুস্তকভুক্ত হয়েছে, সেসব কী রূপে ও কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেটাই এই আলোচনায় মুখ্যতা পাবে। নজরুলের সাহিত্যকর্ম যে সব পর্যায়ে পাঠ্যভুক্ত আছে, এ থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্র নজরুলকে পাঠ করতে আগ্রহী। প্রাথমিক শ্রেণি পর্যায়ে নজরুলের যেসব ছড়া ও কবিতাজাতীয় রচনা পাঠ্যভুক্ত হয়েছে, সেসবের পাঠ সহৃদয়তা তৈরি, ছন্দ ও শ্রুতিমাধুর্য, ভাষার বর্ণ-শব্দ-উচ্চারণে সাবলীলতা সম্পর্কে শিশুদের পরিচিতকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিচেতনা, কর্তব্যবোধ, মাতৃভক্তি, জ্ঞানের প্রতি কৌতূহল—এই বিষয়গুলোও ওইজাতীয় রচনার সঙ্গে জড়িত। মাধ্যমিক শ্রেণিতে কবিতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবন্ধ। নজরুলের সাংগীতিক কাব্যবোধের সঙ্গে মনন ও চিন্তার যুক্তিশৃঙ্খলা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অবহিত হয় প্রবন্ধপাঠের মাধ্যমে। এই পর্বে নজরুলের বেশির ভাগ প্রবন্ধ গ্রহণ করা হয়েছে যুগবাণী (১৯২২) প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে। যুগবাণীর বেশির ভাগ প্রবন্ধ ‘দৈনিক নবযুগ’ (১৯২০) পত্রিকার সম্পাদকীয় হিসেবে রচিত হয়েছিল। পুরো প্রবন্ধগ্রন্থে তৎকালের অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের উত্তাপ এবং নজরুলের বিপ্লবী অবস্থান অনুধাবন করা যায়। ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ ছড়ানোর অভিযোগে যুগবাণী একসময় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত হয় (১৯২২)। যদিও পাঠ্যপুস্তকে বিপ্লবাত্মক কোনো প্রবন্ধ নির্বাচন করা হয়নি। মানুষকে কর্মমুখী করে তোলা, তার সদর্থক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো এবং সেই সূত্রে নজরুলের কর্মমুখরতা সম্পর্কে জানানোর জন্য প্রবন্ধগুলো নির্বাচন করা হয়ে থাকতে পারে। কবিতার ক্ষেত্রে নজরুলের নিজস্ব ধাঁচের সাম্যবাদী চিন্তা, মানবমুখিতা, শোষণহীন সমাজ, লিঙ্গসমতা, বৈষম্যমুক্তি গুরুত্ব পেয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে, অর্থাৎ সাধারণ বাংলা শিক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নজরুলের যুগচিহ্নিত কবিতা ‘বিদ্রোহী’; পুরোটা নয়, সংক্ষেপিত। পাঠ্যপুস্তকে অনেক সময় বড় রচনাকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জনা করা হয় মূলত শিক্ষার্থীদের পঠনপরিধি, বয়সের সঙ্গে সংগতি রক্ষা এবং আধুনিক বানান সমন্বয়ের বিষয় বিবেচনায় রেখে। একই বিবেচনায় হয়তো প্রাথমিক শ্রেণি পর্যায়ে কিছু কবিতার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও কবিতার মূল নাম জানাটাও শিক্ষার একটি অংশ। কিন্তু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মতো পরিণত পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বাংলা সাহিত্যের বইয়ে ‘বিদ্রোহী’র মতো গুরুত্বপূর্ণ কবিতা কেন সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশ করা হলো, তা ভাবনার দাবি রাখে। আর কবিতাটি যেভাবে বইয়ে মুদ্রিত রয়েছে, তাতে কবিতার মাত্রা-তাল-লয় ও ছন্দবোধ অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিপর্ব, স্তবকবিন্যাস—এই বিষয়গুলো নেই হয়ে গেছে। আর সংক্ষিপ্তকরণের নামে যা যা ছেঁটে ফেলা হয়েছে, তা আরও ভাবিয়ে তোলে। আমরা সবাই জানি, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা নজরুলের ‘আমিত্ব’বোধের জাগরণের আগ্নেয়গিরিসম সৃষ্টি। এখানে যে বিদ্রোহ উপস্থিত আছে, তার রূপ নানামাত্রিক ও বহুকৌণিক। এই বিদ্রোহ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ; অশুভ শক্তি, জড়তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং উপনিবেশ-শৃঙ্খলিত শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি-আকাঙ্ক্ষায় নজরুলের এই বিদ্রোহ। নজরুল তাঁর বিদ্রোহের স্বরূপ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নিজের ধর্মগত ঐতিহ্য ও জাতিগত সংস্কৃতি দুই জায়গা থেকেই উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। সে কারণে তাঁর পুরাণ-চেতনায় ঘটে পশ্চিম এশীয় ও ভারতীয় চেতনার দারুণ মিথস্ক্রিয়া; অনেকে দুই প্রবণতাকে মুসলিম ঐতিহ্য ও হিন্দু ঐতিহ্য বলেও চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু আমরা যখন পাঠ্যবইয়ের ‘বিদ্রোহী’ পড়ি, তখন কিছু প্রসঙ্গের সচেতন অবলুপ্তি নজরুলের স্বরূপ চিনতে বাধাগ্রস্ত করে। যেমন মূল পাঠের সপ্তম-অষ্টম-নবম পঙ্ক্তিতে আছে—‘ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, /উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাত্রীর’। মূল পাঠেই ‘আরশ’ শব্দটি যে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি, তা বোঝাতে একে উদ্ধরণ চিহ্নের (‘’) মধ্যে রাখা হয়েছে। আর এই ‘খোদার আরশ’ যে ঔপনিবেশিক শক্তির ক্ষমতাকেন্দ্র, আক্ষরিক ইসলাম ধর্মের আল্লাহর আরশ নয়, তা নজরুল-সমকালেই সাহিত্যপাঠকেরা শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। অথচ পাঠ্যবইয়ে সেই পঙ্ক্তি বাদ পড়ে গেল। ‘বিদ্রোহী’ অগ্নিবীণার শতবর্ষে এসে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হয় এক আপসী পরিস্থিতির। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আরও একটি পঙ্ক্তি বাদ হয়ে গেছে—‘আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন!’ এটিও আজ কারোর অজানা নয় যে, এই ভগবান ব্রিটিশ শোষকেরই রূপক। সবাই জানলেও রাষ্ট্র ঝুঁকি নিতে চায় না। আর তাই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পাঠ্যবইয়ে জায়গা পেলেও নজরুলের বিদ্রোহী সত্তার পূর্ণরূপ অনেকটাই অধরা থেকে যায়। হয়তো রাষ্ট্র এমন এক বিদ্রোহী নজরুলকে পরিচিত করাতে চায় যে ‘সীমিত মাত্রার বিদ্রোহী’, সে চায় না কোনো বিপ্লবীকেও। রাষ্ট্র তার পূর্বসূরি বিপ্লবীদের ইতিহাসের আবদ্ধ মলাটের মধ্যে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বাংলা সাহিত্যে নজরুলই সম্পূর্ণত অসাম্প্রদায়িক ও আপসহীন কবি। কিন্তু রাষ্ট্রের চোখে আমরা যে নজরুলকে পাঠ করি, তার স্বরূপটিও অনেকখানি রাষ্ট্রসাপেক্ষ থেকে যায়। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মনস্তত্ত্ব ও চারিত্র্যও টের পাওয়া যায়। এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। পাকিস্তান পর্বে নজরুলের কবিতায় ‘সজীব করিব মহাশ্মশান’-এর বদলে ‘সজীব করিব গোরস্থান’-এর বহুল প্রচলন, শ্যামাসংগীত নিষিদ্ধকরণ, কেবল হামদ-নাত পরিবেশন—এসবও রাষ্ট্রকৃত বিষয়ই ছিল। তার বিপরীতে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের ফসলই আমাদের বর্তমানের বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তককে হতে হবে অসংকোচ, দ্বিধাহীন ও প্রাগ্রসর। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে নজরুলপাঠ ও রাষ্ট্রের চোখে নজরুল—এই দুইয়ের মধ্যে থাকবে না কোনো নীতিগত বিপ্রতীপতা—এ-ই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে
২৬ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে
২৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে
২৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) কেন বড় কবি, সেটি এখন আর কোনো অমীমাংসিত বিষয় নয়। বাংলা কবিতার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলা জনাঞ্চলের আর্থরাজনৈতিক পটভূমিতেও কাজী নজরুলের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান আছে
২৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে