Ajker Patrika

একজন আদি চলচ্চিত্রের আদ্যাক্ষর

স্বজন মাঝি 
একজন আদি চলচ্চিত্রের আদ্যাক্ষর

‘সভ্যতার ইতিহাস হচ্ছে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রামের ইতিহাস’, চেক সাহিত্যিক মিলান কুন্দেরার এই মন্ত্রবাক্য বিস্মৃতির বিরুদ্ধে আমাদের স্মৃতিচর্চাকে উৎসাহিত করে। বিস্মৃতির ছাইয়ে চাপা শত বছর আগের একজন মানুষ, হীরালাল সেনকে নিয়ে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করতে গিয়ে আমার এই ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটেছিল। যে চলচ্চিত্রকারের কোনো চলচ্চিত্র আমাদের হাতে নেই, অথচ তাঁর জীবন ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে সত্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আছে পরবর্তী প্রজন্মের কালানুক্রমিক প্রচেষ্টা, যা আমাদের সামনে মানুষটির অবয়ব নির্মাণের সুযোগ রাখে আজও। 
 
দুনিয়ার চলচ্চিত্র মানচিত্রে বাংলা যে এক প্রাচীনতম চলচ্চিত্রদেশ, সে খবর কয়জন রাখে বলুন! বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৮৮৯ সালে ‘কিনেটোগ্রাফ’ আবিষ্কার করার পর, মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের মাঝে বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান ডেইলি নিউজে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় এ ভূখণ্ডে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর প্রথম খবর। প্রকাশিত সংবাদমতে, কলকাতার ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটের এক সাহেবি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে অভিজাত শ্রেণির মানুষের জন্য ১ রুপিতে চলচ্চিত্র দেখানো হয়। 
 
কলকাতা হাইকোর্টের অখ্যাত আইনজীবী চন্দ্রমোহন সেনের ছেলে হীরালাল সেন তখন সর্বভারতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদকজয়ী আলোকচিত্রশিল্পী। হীরালাল সেন যে সময় আলোকচিত্রে মুনশিয়ানা অর্জন করছেন, ঠিক একই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে চলচ্চিত্রের জন্মলগ্ন চলছে। ১৮৯৪ সালে ‘কিনেটোস্কোপ’ যন্ত্র প্রবর্তিত হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রের প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। ১৮৯৫ সালের নভেম্বরে জার্মানিতে প্রদর্শিত হয় ‘বায়োস্কোপ’ এবং ডিসেম্বরে ফ্রান্সে প্রদর্শিত হয় ‘সিনেমাটোগ্রাফ’। 
ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে কিনেটোস্কোপ প্রদর্শনীর পরে কলকাতায় বায়োস্কোপ আসে, এর কিছু পর ‘সিনেমাটোগ্রাফ’ যন্ত্র। হীরালালের ছেলে বৈদ্যনাথ সেন বলেছেন, তাঁর বাবা ১৮৯৬ সালে প্রথম চলচ্চিত্র করেছেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কোনো স্বদেশির চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস। হীরালাল সেন শুধু প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি, ১৮৯৮ সালে ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম চলচ্চিত্র সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর হীরালাল সেন প্রতিষ্ঠিত ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ বর্তমান বাংলাদেশের ভোলা জেলায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। 
হীরালাল সেন যখন ১৮৯৬ সালে বাংলায় বসে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের স্বদেশি নির্মাতাদের বাইরে অন্যান্য জায়গায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ১৮৯৬ সালে, তবে অজ্ঞাতনামা নির্মাতা কোনো আফ্রিকান নন। এরপর জাপানে শিরো আসানো ১৮৯৮, মেক্সিকোতে সালভাদোর তাসচেনো ১৮৯৮, চীনে রেনে কিংতাই ১৯০৫, মিসরে নাম না জানা একজন ১৯০৭ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এসব প্রাপ্ত তথ্যমতে, হীরালাল সেন হচ্ছেন চলচ্চিত্রের জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে বাদবাকি দুনিয়ার প্রথম কোনো স্বদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা। 
 
কলকাতায় কবে প্রথম চলচ্চিত্র এসেছে, বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত। চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তা কালীশ মুখোপাধ্যায় বলেছেন স্টিফেন্সের কথা, যিনি ১৮৯৬-৯৭ সালের দিকে কলকাতায় চলচ্চিত্র আনেন। চলচ্চিত্র আবির্ভাব গ্রন্থে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে স্টিফেন্স ও হাডসন নামে দুই সাহেব কলকাতায় চলচ্চিত্র নিয়ে আসেন। শঙ্কর ভট্টাচার্যের রঙ্গালয়ের ইতিহাসভিত্তিক বইয়ের সূত্র দিয়ে নিত্যপ্রিয় ঘোষ জানিয়েছেন, ১৮৯৭ সালের ১৯ জানুয়ারি হাডসন কলকাতায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। 
 
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘রঙ্গালয়ের ইতিহাসের উপাদান’ গ্রন্থের কোথাও স্টিফেন্সকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শঙ্কর ভট্টাচাযের্র রঙ্গালয়ের ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থে স্টিফেন্সের কথা বাদ পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। কারণ, শঙ্কর ভট্টাচার্য শুধু থিয়েটারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন, সুতরাং চলচ্চিত্রের সব বিষয় তাঁর গ্রন্থে গুরুত্ব পায়নি। বিশেষ করে থিয়েটারের বাইরে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের খবর তাঁর গবেষণায় উঠে আসেনি। আর কালীশ মুখোপাধ্যায়ের বয়ানে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট, স্টিফেন্স স্টার থিয়েটারের বাইরে মাঠে-ময়দানে তাঁবু টানিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেছেন। তাই হয়তো এসব মাঠ-ময়দানের প্রদর্শনীর খোঁজ শঙ্কর ভট্টাচার্যের গ্রন্থে উল্লেখ নেই। আর স্টিফেন্সের স্টার থিয়েটারের প্রদর্শনীর খোঁজ শংকর ভট্টাচার্যের বইতে না থাকার আরও একটি কারণ, তিনি মূলত স্টেটসম্যান পত্রিকার বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করেছেন। সুতরাং সহজেই বোঝা যাচ্ছে, অন্যান্য সমকালীন পত্রিকার তথ্য তাঁর বইতে স্থান পায়নি। 
 
কালীশ মুখোপাধ্যায় ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় তথ্যের সূত্র উল্লেখ না করলেও, ইতিহাস বিশ্লেষণ করে আমরা বরং ১৮৯৬ সালে স্টিফেন্সের মাধ্যমে কলকাতায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন হওয়ার তথ্যে যৌক্তিকতা খুঁজে পাই। ১৯২৩ সালে ভারতী পত্রিকায় সৌরেন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণমূলক রচনা প্রকাশিত হয়, যেখানে কলকাতার প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অন্তর্নিহিত ইতিহাস রয়েছে। ‘শিবসুন্দর’ ছদ্মনামে তাঁর রচনা ‘বাঙলা বায়োস্কোপ’ প্রবন্ধে ১৮৯৬ সালে মি. স্টিফেন্সের কলকাতায় প্রথম চলচ্চিত্র (বায়োস্কোপ) প্রদর্শনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 
 
মূলধারার চলচ্চিত্র ইতিহাসে লুমিয়রদের কোম্পানির মুম্বাইয়ে ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে আরও বলা হয়েছে, লুমিয়েরদের প্রতিনিধি মরিস সেস্তেয়ার মুম্বাইয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর জাপান হয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন। এখন কথা হচ্ছে, মরিস সেস্তেয়ার মুম্বাইতে চলচ্চিত্র (সিনেমাটোগ্রাফ) প্রদর্শন করলেন অথচ তৎকালীন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার রাজধানী কলকাতায় এলেন না কেন? আবার স্টিফেন্সও লুমিয়েরদের প্রতিনিধি ছিলেন না, কারণ, স্টিফেন্সের চলচ্চিত্র যন্ত্রের নাম ছিল ‘বায়োস্কোপ’, সিনেমাটোগ্রাফ নয়। 

এখানে লক্ষণীয় বিষয়, এই বায়োস্কোপ-এর প্রবর্তক ছিলেন জার্মান ভ্রাতৃদ্বয়, যাঁরা লুমিয়েরদের আগে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেছেন জার্মানির বার্লিন শহরে। কিন্তু প্রাধান্যশীল চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জার্মান ভাইদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সে আলোচনায় আপাতত না-ই গেলাম। এ পর্যায়ে কলকাতায় চলচ্চিত্র আগমনের ইতিহাসে স্থির থাকি। তাহলে কি ইতিহাসটা এমন: মরিস সেস্তেয়ার ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই যখন লুমিয়েরদের সিনেমাটোগ্রাফ নিয়ে হাজির হয়েছেন মুম্বাইতে, সে সময় (বা তার আগে থেকে) কলকাতায় জার্মান ভাইদের বায়োস্কোপ নিয়ে অবস্থান করছিলেন স্টিফেন্স! আমরা কিন্তু ইতিমধ্যে আবিষ্কার করেছি ১৮৯৫ সালের শেষের দিকে কলকাতায় প্রথম কিনেটোস্কোপ (চলচ্চিত্র) প্রদর্শনের খবর। 
 
যে কারও মনে সহজ জিজ্ঞাসা জাগতে পারে, তাহলে মূলধারার চলচ্চিত্র ইতিহাসে কলকাতা এবং হীরালাল সেনের চলচ্চিত্রের ইতিহাস বাদ পড়ল কী করে? আমরা এর যৌক্তিক উত্তর সন্ধান করেছি। আমরা জানি, ভারতের চলচ্চিত্র-ইতিহাস লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয়েছে ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রকাশিত রঙ্গাচারিয়া প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্র তদন্ত ও উন্নতি করার লক্ষ্যে মাদ্রাজের বিশিষ্ট আইনজীবী দেওয়ান বাহাদুর রঙ্গাচারিয়ার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ১৯২৭ সালে। 
 
১৯২৮ সালের মে মাসে কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে। রঙ্গাচারিয়া কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন থেকেই পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাস লেখা হয়। রঙ্গাচারিয়া প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেল, এই কমিটি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করেনি। অথচ এই অপূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনকে এতকাল ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের আকরিক তথ্যভান্ডার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সে সময় রঙ্গাচারিয়া কমিটি যদি কলকাতার চলচ্চিত্র ইতিহাসকে ওই প্রতিবেদনে সংযুক্ত করত তবে উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সূচনাপর্ব নিয়ে এত ধূম্রজাল তৈরি হতো না। 
 
কলকাতায় চলচ্চিত্রের গোড়ার ইতিহাসের সঙ্গে হীরালাল সেনের চলচ্চিত্র ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। কলকাতার সাধারণ মানুষ বায়োস্কোপই প্রথম দেখেছে। আর তাইতো চলচ্চিত্রের প্রতিশব্দ হিসেবে এখানকার মানুষেরা বায়োস্কোপ শব্দটিকে আজও ব্যবহার করে থাকেন। হীরালাল সেনও বায়োস্কোপে আকৃষ্ট ছিলেন, তাইতো আমরা দেখতে পাই, তাঁর কোম্পানির নামের সঙ্গে বায়োস্কোপ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। 
 
হীরালাল সেন স্টিফেন্সের বায়োস্কোপ দেখে ক্ষান্ত হননি। প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের ভাষ্যমতে, স্টিভেনসনকে (স্টিফেন্সকে) সেলামি দিয়ে বায়োস্কোপে চলচ্চিত্র ধারণ করেছেন। কিরণময় রাহা তাঁর ‘বেঙ্গলি সিনেমা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, স্টিফেন্স ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বরে কলকাতায় ঘোড়দৌড় ও রেলওয়ের চলমান দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। 
 
যেহেতু আমরা এখনো নিশ্চিত নই স্টিফেন্স ঠিক কবে বায়োস্কোপ নিয়ে কলকাতায় এসেছেন, আর ঠিক কবে থেকে কলকাতায় চলচ্চিত্র ধারণ শুরু করেছেন, তাই প্রভাত মুখোপাধ্যায় ও কিরণময় রাহার দেওয়া এই তথ্যযুগল থেকে এটা স্পষ্ট, হীরালাল সেন ওই সময় (ডিসেম্বর ১৮৯৬) বা তার আগে স্টিফেন্সকে সেলামি দিয়ে চলচ্চিত্র (একচুয়েলিটি) ধারণ করেছিলেন, যেভাবে সে সময় চলচ্চিত্র নির্মিত হতো। হীরালালের ছেলে বৈদ্যনাথ সেনও একই সালের (১৮৯৬) কথা উল্লেখ করে গেছেন। 
 
আগেই উল্লেখ করেছি, কালীশ মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈদ্যনাথ সেন জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ১৮৯৬ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। কালীশ মুখোপাধ্যায় যদিও তাঁর ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধে এবং ১৯৬৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত গ্রন্থে হীরালালের চলচ্চিত্র নির্মাণের এ তথ্য গ্রহণ করতে পারেননি, তখন পর্যন্ত তিনি জানতেন হীরালাল সেন ১৯০৩ সালে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সে সময় কালীশ মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রকাশের পর রামপতি দত্ত জানালেন, হীরালাল সেন ১৯০০ সালে ক্লাসিক থিয়েটারে নিজের নির্মাণ করা বায়োস্কোপ দেখিয়েছেন। 
 
রামপতি দত্তের এ তথ্য পেয়ে কালীশ মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণা জারি রাখেন। তিনি ১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত আরেক প্রবন্ধে এবং ১৯৭২ সালে তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে ১৯০০ সালে হীরালাল প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন বলে জানান। পরবর্তীকালে কালীশ মুখোপাধ্যায়, গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ, অনুপম হায়াৎ, সৈকত আসগর, সজল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখক-গবেষক থিয়েটারনির্ভর ইতিহাসের আশ্রয় নিয়ে ১৮৯৮ সালে হীরালালের চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে গেছেন। যথাযথ গবেষণার অভাবে বৈদ্যনাথ-প্রদত্ত তথ্য তখনো কেউ গ্রহণ করেননি। 
 
কালীশ মুখোপাধ্যায় লিখছেন—
 ‘১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে স্বর্গগত হীরালাল সেন আলীবাবা চিত্র তোলেন বলে বৈদ্যনাথ সেন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে এই উক্তি সমর্থনযোগ্য নয়। বৈদ্যনাথ বাবু সাধারণ ধারণা থেকেই এ কথা বলেছেন আমার বিশ্বাস।’ 
 
সে সময়ে কালীশ মুখোপাধ্যায়ের এমন অবিশ্বাস হওয়ার ঘটনা অমূলক ছিল না। তখন পর্যন্ত ভারতীয় গবেষকদের জানা ছিল না ফরাসি সিনেমাটোগ্রাফ-এর আগে জার্মান বায়োস্কোপ-এর ইতিহাস। এবং সেই বায়োস্কোপ কলকাতায় প্রদর্শনের ইতিহাস। বৈদ্যনাথের তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ, তখন পর্যন্ত এসব তথ্য অনাবিষ্কৃত থাকা। 
 
বৈদ্যনাথ সেনের তথ্যেও ভ্রান্তি একটা ছিল। তিনি ১৮৯৬ সালে ‘আলীবাবা’ চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। অথচ ‘আলীবাবা নাটক’ (যা থেকে হীলালাল সেন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন) প্রথমবারের মতো থিয়েটারে আসে ১৮৯৭ সালে। বাবার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের সাল (১৮৯৬) ঠিকঠাকভাবে উল্লেখ করলেও, হীরালালের ছেলে চলচ্চিত্রের নাম বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। গুলিয়ে ফেলার কারণ, হীরালাল সেনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের নাম আলীবাবা (১৯০৩)। নরেন দেব, কালীশ মুখোপাধ্যায়, প্রভাত মুখোপাধ্যায় ও পরবর্তী গবেষকগণ গুলিয়েছেন অন্য আরেক জায়গায়, সেটা হচ্ছে ‘স্টিফেন্স/স্টিফেনস’ এবং ‘ষ্টিভেনসন/স্টিফেনসন’ নামে। এখন আমরা সে আলোচনায় পদার্পণ করছি। 
 
প্রভাত মুখোপাধ্যায় তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘নরেন দেবের বক্তব্য অনুযায়ী হীরালাল প্রথম দিনই স্টার থিয়েটারে বায়োস্কোপ দেখেছিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই বায়োস্কোপের কর্তা স্টিভেনসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরই হীরালাল উঠেপড়ে লেগে যান টাকার ব্যবস্থা করতে, আর বাবা চন্দ্রমোহন টাকা দিতে অস্বীকৃত হওয়ায় টাকাটা দেন তাঁর মা। ওই টাকা তিনি স্টিভেনসনকে সেলামি দিয়ে তাঁর নির্দেশনায় প্রথম ছবি করেন ‘ফ্লাওয়ার অব পার্সিয়া’ অপেরার একটি নৃত্যদৃশ্য। 
 
বর্তমানে আমরা জানি, মি. স্টিফেন্স ও জে. জে. স্টিভেনসন দুজন আলাদা ব্যক্তি। কলকাতায় মি. স্টিফেন্সের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ১৮৯৬ সালের দিকে, সে সময় তিনি বায়োস্কোপ নিয়ে আসেন। জে. জে. স্টিফেনসনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ১৮৯৭-৯৮-এর দিকে এবং তারও পরে ১৮৯৯ সালের দিকে টি. জে. স্টিভেনসন নামে আরেক ব্যক্তি রয়্যাল বায়োস্কোপের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। 
 
তবে বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে, বৈদ্যনাথের দেওয়া তথ্যকে (প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের সাল ১৮৯৬) গ্রহণ করে নিচ্ছি, হীরালাল ১৮৯৬ সালে চলচ্চিত্র করেছেন। সে সময় স্টিফেন্সকে সেলামি দিয়ে তাঁর ক্যামেরায় হীরালাল সেন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন, স্টিভেনসনকে সেলামি দিয়ে নয়। ফ্লাওয়ার অব পার্সিয়া (১৮৯৮) কিংবা আলীবাবা (১৯০৩) নয়, এ সময় নির্মাণ করেন নাম না জানা অন্য কোনো চলচ্চিত্র। স্টিফেন্সের বায়োস্কোপ যন্ত্রে হাতেখড়ি বলে পরবর্তীকালে হীরালাল নিজের কোম্পানির নামের সঙ্গে বায়োস্কোপ শব্দটি জুড়ে দিয়েছেন। কলকাতায় চলচ্চিত্র আগমনের ইতিহাস এবং হীরালাল সেনের চলচ্চিত্রযাত্রার শুরুর ইতিহাস এক সূত্রে গাঁথা। এ ব্যাপারে আমরা বিদ্যমান ইতিহাস পুনর্গঠন করার প্রস্তাব রাখছি। 
 
সেকালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বিজ্ঞানের শিক্ষক ফাদার লাফো প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রাগ্রসর ছিলেন। বিশ্ববিজয়ী বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন এই ফাদার লাফোরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের প্রদর্শন ব্যবসায়ী জে. জে. স্টিভেনসনকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানান। স্টিফেন্স চলে যাওয়ার পর, হীরালাল সেন জে. জে. স্টিভেনসনের কাছে গিয়ে তেমন কোনো সহযোগিতা লাভ করেন না। পরে বিদেশি পত্রিকার বিজ্ঞাপন ঘেঁটে লন্ডনের ১৫০ নম্বর গ্রেজইন রোডের ‘জন রেঞ্জ অ্যান্ড সন্স’ কোম্পানি থেকে হীরালাল চলচ্চিত্র সরঞ্জামাদি আনান এবং ১৮৯৭ সালের শেষাশেষি নিজের ক্যামেরায় চলচ্চিত্রচর্চা শুরু করেন। 
 
 ১৮৯৮ সালে হীরালাল সেন রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি খোলেন। সে বছরই বাংলাদেশের ভোলায় এসডিও কার্যালয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। এখানে হীরালাল সেনের নির্মিত জানা-অজানা সব চলচ্চিত্রের নাম উপস্থাপন করা গেল না। সৈকত আসগর প্রদত্ত তথ্যমতে, ৪৩টি চলচ্চিত্রের নাম পাওয়া যায়। তবে কোনো কোনো গবেষকের মতে, ছোট-বড় মিলিয়ে তিনি শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এই সৃষ্টিশীল মানুষটির জীবনের শেষের দিনগুলো কেটেছে চরম সংকটের মধ্যে। তিনি অসুস্থতার মধ্যে লোকের ছবি এঁকে, বাড়ি বিক্রি করে, ক্যামেরা বন্ধক রেখে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করেছেন। 
 
হীরালালের অবয়ব নির্মাণ করতে গিয়ে একদিকে আমরা যেমন পাই বিস্মৃতিকে পুঁজি করে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাধান্যশীল অংশের অনীহা, অন্যদিকে পাই নানা মানুষের সত্যাগ্রহী চেষ্টা। এসব অনীহার পেছনে বিরাজ করে, এক ধরনের সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ও জাতীয়তাবাদী অন্তর্দ্বন্দ্ব। বিপ্রতীপে, বিস্মৃতির আড়াল থেকে মানুষের স্মৃতি খোঁজার নিরন্তর সাধনা আমাদের উৎসাহিত করে নতুন পাঠ আস্বাদনে। 
 
(স্বজন মাঝি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা, দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন হীরালাল সেনের ওপর পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত