আহমেদ ইবনে আরিফ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।
আহমেদ ইবনে আরিফ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক?
এই দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়
এই পর্যালোচনার শুরুতেই আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ বা প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।
সিপাহি বিদ্রোহের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নামগুলো এখানে লক্ষণীয়—বাহাদুর শাহ জাফর, মৌলভি আহমদুল্লাহ শাহ, বখত খান। এই মুসলমান নেতাদের আধিক্য ও ভূমিকার কারণে ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহের মূল প্ররোচক হিসেবে দায়ের বোঝাটা সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ওপরেই চাপিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ মুসলমানদের চাকরি, জমি, শিক্ষা—সবকিছুতে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
মুসলমানরা মোগল আমলে প্রশাসনিক পদে থাকা সত্ত্বেও সিপাহি বিদ্রোহ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কাজে মুসলমানদের নিয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেখা যায়, বাংলায় নবাবি আমলে উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী মুসলিম শ্রেণি থাকলেও, ১৮৬০-এর পরের দশকে তাদের সরকারি চাকরির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।
বিদ্রোহে জড়িত থাকার দায়ে ও সন্দেহে ভারতজুড়ে মুসলমান জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে। নবাব ওয়ালিদ খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী খানপুর এস্টেটের মুসলিম জমিদারদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়। তার মধ্যে এক আবদুল লতিফ খানই ছিলেন খানপুর এস্টেটের ২২৫টি গ্রামের মালিক, যাঁকে নির্বাসন দেওয়া হয় আন্দামানে। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয় বারকাগড় এস্টেটের রাজাকে। এভাবে বুলন্দ শহর, উত্তর প্রদেশ, বারকাগড় এস্টেট, রাঁচি, ঝাড়খন্ড, দিল্লি কিংবা আওধ অঞ্চলে মুসলমান জমিদারেরা জমিদারি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের জায়গায় ব্রিটিশ অনুগত হিন্দু জমিদারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মুসলমানেরা উর্দু, ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মুসলমান পরিবারগুলোর মধ্যে ইংরেজিকে ‘কাফেরি শিক্ষা’ ভাবার প্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে পিছিয়ে দেয়। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দুরা জায়গা করে নিলেও মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
এখানেই সুপ্ত রয়েছে আজকের রবীন্দ্র-দ্বন্দ্বের বীজ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে মুসলমানরা একটা সংখ্যালঘু আইডেনটিটির মধ্যে পড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবে বরেণ্য হলেও সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়; পাশাপাশি তিনি ছিলেন তৎকালীন হিন্দু জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যদিও তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই সে সময়ের মুসলমান সমাজ, যারা তখন ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে সংখ্যালঘু আইডেনটিটির ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে, তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ‘হিন্দু অভিজাত’ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এটিই ক্রমান্বয়ে জনমতে রূপ নেয়।
পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। দেশভাগের মূল ভিত্তিই ছিল বিজাতিতত্ত্ব—হিন্দু ও মুসলমান আলাদা জাতি। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে। ফলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণই ছিল অগ্রাধিকার। এটি মূলত উর্দু-ভাষাভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য না হলেও, বাংলা-ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি জটিল বিষয় হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ জনমানসে একদিকে ‘হিন্দু জমিদার’ হলেও আরেকদিকে ছিলেন কসমোপলিটন মানবতাবাদী। তাঁর লেখায় ঈশ্বর-ভাবনা, প্রেম, প্রকৃতি, মানবতাবোধ ইসলামি চেতনার পরিপূরক না হওয়ায় তাঁকে কোণঠাসা করার বন্দোবস্তই ছিল তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতা। জাতিভিত্তিক আইডেনটিটি পলিটিকসের এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও গানকে ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক আধিপত্যের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী অনেক রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
ফলস্বরূপ, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেন্সরশিপ। এগুলোকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসংগীত।
এই সবকিছুর গোড়ায় ছিল পাকিস্তানের ‘ইসলামি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার নীতি।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উত্থান এই দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই ভূখণ্ডে পাকিস্তান আধিপত্য বিরোধিতার স্তম্ভ ছিল মূলত দুটি—সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদ। এর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সেক্যুলার ক্যাননের মুখপাত্র। ফলে রাষ্ট্র গঠিত হয়ে গেলেও ইসলামপন্থীরা তাঁকে প্রতিপক্ষই ভাবতে থাকে।
সাংস্কৃতিক বিভাজন ও রবীন্দ্রনাথ পুনঃপাঠ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যদিও একটি সম্মিলিত ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লে সাহিত্য পরিমণ্ডলে হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিত্বই বৃহৎ আকারে প্রকাশ পায়। সে সময়কার বরেণ্য সাহিত্যিকদের লেখায়, চরিত্রায়ণে, সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনায় হিন্দু চরিত্র, সংস্কৃতির প্রাধান্য প্রকট হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে সংখ্যানুপাতিকভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে মুসলমানেরাই ছিল সংখ্যায় বৃহত্তর। উপর্যুপরি, বাংলা সাহিত্যের সাংস্কৃতিক বিভাজনে দুটি পরস্পরবিরোধী মডেল গড়ে ওঠে। এর একটি বঙ্গ হিন্দু সেক্যুলারিজম, অন্যটি ইসলামি চেতনা ও বাঙালি মুসলমানের আইডেনটিটি পলিটিকস।
বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবেই একটি দ্বৈত পরিচয়ে বেড়ে উঠেছে; একদিকে সে বাঙালি, অন্যদিকে মুসলমান। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া; সেখান থেকে ১৯৪৭-এ মুসলিম পরিচয়ে রাষ্ট্রগঠন; ১৯৭১-এ আবার বাঙালি পরিচয়ে সামনে আসা। এগুলোর সঙ্গে অন্তর্নিহিত আইডেনটিটি পলিটিকসের নানা দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই টানাপোড়েনের জন্ম নেয়। কারণ, রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন বাঙালি পরিচয়ের প্রতিনিধি, আরেকদিকে ইসলামি চেতনার সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে ‘না-সম্পৃক্ত’।
আজকের বাংলাদেশে এই দ্বৈত আইডেনটিটির সংঘর্ষ তাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দুই স্তরেই রবীন্দ্রনাথকে আবার নিয়ে এসেছে কাঠগড়ায়। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ সে ক্ষেত্রে এই জমিনের আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন্দ্রনাথ কি সেটা হতে চেয়েছিলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে এই লেখার শুরু থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্লেষণ জরুরি। সে জন্যে রবীন্দ্রনাথের ‘ন্যাশনালিজম’ বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন ভারতের এলিট হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবতেন, সেগুলো কিছুটা ফুটে ওঠে এই বইয়ে।
এখানে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের দুঃখজনকভাবে অবনমিত অবস্থায় থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘The Mohammedan community is in a deplorable condition of degradation.’। তৎকালীন মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছেন, ‘The Mussalmans are a separate community and they are in such a backward state, educationally and socially, that their case requires special consideration.’ এখানে মুসলমানদের প্রতি আলাদা যত্নবান হওয়ার আহ্বান রয়েছে। তা ছাড়া, তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মানেই যে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য মুছে যাওয়া নয়, সে বিষয় উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘They have had their imperial period, their memories of self-respect are still alive’; এবং এ কারণেই তিনি মুসলমানদের উত্তরণের পথে জোর দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘The Muslims of India stand today isolated, and the sooner we face the fact the better for us all.’ এবং এর দায় কার, এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই ফ্যাক্টেই ফেরত গিয়েছেন, যেখান থেকে এই লেখার শুরু, ‘The responsibility for the Muslim backwardness lies not entirely on them; much of it has been due to British policies after 1857.’
রবীন্দ্রনাথ বনাম মুসলিম চেতনার দ্বন্দ্ব স্রেফ ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন নয়। এটা ইতিহাস, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক হেজেমনির প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিপক্ব বাংলাদেশ গড়তে রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে পাঠ করা জরুরি। একজন ‘হিন্দু কবি’ হিসেবে নয়, বরং একজন মানবিক ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধি হিসেবে।
কারণ, দিন শেষে এই দেশের বহুত্ববাদ বানচাল করে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মতামতকে জয়ী করার চেয়ে আমাদের বৈচিত্র্য ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আর এই ‘হরমনি’ অর্জন করতে হলে রবীন্দ্রনাথকে এই আইডেনটিটি পলিটিকসের হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের কোনো মোকাম হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তার চেয়ে এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে নিজ ধারার সাহিত্য বিকাশে মনোযোগ দিলেই হয়তো গড়ে উঠবে একটি নতুন বাঙালি মুসলমান চেতনা, যেখানে ইসলামি আত্মপরিচয় ও বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সংঘর্ষের বদলে সৃষ্টি হবে একটা অতি প্রয়োজনীয় সহাবস্থান।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ ঘণ্টা আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
০৬ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগে