ফারজানা লিজা

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।
ফারজানা লিজা

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে ফোন এল গাড়ি চলে এসেছে, ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছেন। রুমমেটদের বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেলাম। নির্ঝর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছে। সকাল সকাল রাস্তা একদম খালি ছিল। ২ নম্বর গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো ত্রিদিব দাদার সঙ্গে। উনি ইন্ডিয়া হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন নাম না-জানা আরও দুজন বিওআইডি মেম্বার। ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল সাদা আর ব্লু কম্বিনেশন টি-শার্ট পরিহিত একঝাঁক তরুণ।
অনেকে চলে এসেছেন। কিছু সময় বাদে আমাদের গ্রুপলিডার রুদ্র দাদা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বললেন, গ্রুপের পাঁচজন একসঙ্গে গিয়ে বোর্ডিং পাস নেবেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমাকে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রুপ মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি আরও দুজন। বসে অপেক্ষা করছিলাম আর উত্তম কুমার দাদার সঙ্গে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম।। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, মঞ্চনাটক করেন। সিলেট জেলায় বেশ সুনাম আছে তাঁর। আরও পরিচিত হলাম তারকা সমতুল্য সজল দাদার সঙ্গে। তিনি নিউজ ২৪ টেলিভিশনে কাজ করেন। বেশ হাস্যরসাত্মক একজন মানুষ। পাশাপাশি ব্লগ করেন, ১০০ জন ডেলিগেটের মধ্যে অনেকেই দেখলাম ব্লগ করেন।
দেখা হলো সুর্মি আর নন্দিতার সঙ্গে। এই দুজন আমার সঙ্গে শুরু থেকেই আছে। সবার সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছিলাম। চারজন মেম্বার চলে এসেছেন, বাকি রইল নম্রতা বর্মন দিদি। উনার জন্য এখন অপেক্ষা। বাকি গ্রুপের সবাই আস্তে আস্তে বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন করছেন। পরিচিত হলাম সৌমিত্র দাদার সঙ্গে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বেশ ভালো একজন মানুষ। এর সঙ্গে বিমানে জানালার পাশে সিট পাওয়ার একটা বিশেষ টেকনিক শিখিয়ে দিলেন। ১০টা বাজার অনেক পরে এলেন নম্রতা বর্মন দিদি। ওনাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করলেন না। ভাবছিলাম হয়তো ফ্লাইট মিস করবেন কি না। অবশেষে পাঁচজন গেলাম বোর্ডিং পাস নিতে। সৌমিত্র দাদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বলবে, তোমার প্রথম বিমান ভ্রমণ, যেন জানালার পাশে সিট দেয়। অফিসারকে বলার পর উনি বলেন, দুঃখিত, ইতিমধ্যে সব সিট বুক হয়ে গেছে, আরও আগে এলে দেওয়া যেত।
মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল, আর দিদির ওপর অনেক রাগ লাগছিল। উনি লেট করে না এলে আমি জানালার পাশে সিটটা পেতাম। ইমিগ্রেশন সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেক লম্বা লাইন, একাধিক ফ্লাইটের মানুষ একসঙ্গে। অনেক সময় বাদে আমার পালা এল, ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্টটা এগিয়ে দিলাম। উনি ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সবশেষে একটা সিল বসিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটা আমি অনেক সিনেমার আর শর্ট ভিডিওতে দেখেছি। আজ নিজেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি। সামনে এগিয়ে গেলাম, আশপাশে সব বিওআইডি মেম্বার। ওই পাশে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিমান। এত কাছ থেকে আগে কখনো বিমান দেখিনি। বিমানবন্দরের ভেতরে আসা হয়নি। সবাই ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন, সিঙ্গেল ছবি, গ্রুপ ছবি নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আমিও কিছু তুলেছি। শেষবার মাকে ফোন দিয়ে দোয়া ও বিদায় নিলাম। ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে, সবাই লাইন ধরে নিচে নামতে থাকলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কতগুলো বাস, সেই বাস একদম বিমানের সামনে গিয়ে থামল। টার্মিনাল থেকে বিমান অনেক দূরে থাকে, বৃষ্টি হয়েছিল, পানি জমে আছে। বাস থেকে নেমে সবাই সিঁড়ি ধরে বিমানে উঠছে। প্রথমবার বিমানে উঠছি, অন্য রকম অনুভূতি। জানি না বাকিদের কেমন লাগছে। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে নাম্বার দেখে সিট খুঁজে বের করলাম। আমি সুর্মি আর সুপ্তা আপু একসঙ্গে বসলাম। সুপ্তা আপু বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের এক রত্ন। সবাই সিটে বসার পর এয়ার হোস্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন। বিমানজুড়ে শুধু বিওআইডি মেম্বারদের দেখা যাচ্ছে, ফাঁকে ফাঁকে অন্য যাত্রী। বিমানের ভেতরে এক অন্য রকম উৎসবমুখর পরিবেশ। ১০০ জন একসঙ্গে থাকলে এমনই হওয়ার কথা। অনেক সময় পর বিমান রানওয়েতে এল। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বিমান কেঁপে উঠল আর প্রচণ্ড গতিতে সামনে যেতে লাগল। সবাই পেছনের দিকে ঝুঁকে সিটের সঙ্গে চুম্বকের মতো লেগে আছে। আমি ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মুহূর্তে বিমান বাতাসে ভাসছে, উত্তরার বড় বড় বিল্ডিং ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাদা তুলার মতো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। সুপ্তা আপু আমার এক্সাইটেড দেখে বললেন, ‘তুমি কি জানালার পাশে বসবা?’ আমি বললাম, জি আপু, আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। আপু বললেন, ঠিক আছে বিমান পুরোপুরি ওপরে উঠুক, যখন সিটবেল খুলতে বলবে তখন এসো। আমি তখন অনেক খুশি হয়ে পড়েছিলাম। উনার হাতে দুইটা পাসপোর্ট, কত দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিমান পুরোপুরি ওপরে ওঠার পর আমাকে জানালার পাশে বসতে দিলেন।
আকাশটা গাঢ় নীল, এখন আর কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না, নিচে বড় বড় মেঘের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যটা চোখে পড়ছিল, প্রচণ্ড তাপ। ইতিমধ্যে জানালার গ্লাসটা গরম হয়ে গেছে। আমার জায়গাটা ছিল ঠিক উইংসের ওপর। তাকিয়ে থেকে বিমানের মেকানিজমটা চিন্তা করছিলাম।
কোনোভাবে মাথায় ঢুকছিল না। সামনে, পেছনে, পাশে সব আমাদের বিওআইডি ডেলিগেটস। তাদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সবাই সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, বিমানের ভেতরটা সত্যিই বেশ আমেজ লাগছিল। সবাইকে একটা ওয়েলকাম ড্রিংকস দিল, প্রায় ১০ মিনিট পর দুপুরের খাবার সার্ভ করল। আমরা তিনজন একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। লাঞ্চ আইটেমটা একটু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বেশ বড় আর সুন্দর। সবাই লাইন ধরে ইমিগ্রেশন সেন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ইংরেজি আর হিন্দি মিলে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের জন্য ইন্ডিয়া হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন, সবাইকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছিল। বেশ সুন্দর একটা অনুভূতি। পাঁচটা গ্রুপের জন্য তিনটা এসি বাস দেওয়া হয়েছে, গ্রুপ অনুযায়ী বাসে ওঠা হলো। আমি আর সুর্মি এক নাম্বার বাসে। বাসে করে বিমানবন্দর থেকে রওনা হলাম। চারপাশটা অনেক সুন্দর। রাস্তাগুলো বেশ পরিচ্ছন্ন আর চওড়া। বাসের ভেতরে সবাই অনেক আনন্দ-উল্লাস করছেন, বিনয় দাদা আর সাহস ভাই দুজনে গান ধরেছেন। বাকিরা সবাই সুর দিচ্ছেন। গানে গানে মুখরিত বাস। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ইন্ডিয়া হাইকমিশনারের এক দাদা। তিনিও গান গাইছিলেন, বাংলা না বোঝার জন্য শুধু হিন্দি গানের সঙ্গে সুর দিচ্ছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায়।
এটা জাদুঘর বলতে পারেন। পুরোনো ভবনের পাশে উঠেছে নতুন ভবন। ভেতরটা খুবই সুন্দর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভারত ইতিহাসের বেশ কিছু নিদর্শন ছবি, ভিডিও, প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মতো। দিল্লির তিন মূর্তি ভবন আগে, যা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন নাম পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরা হয়েছে এ সংগ্রহশালায়। সংগ্রহশালাটি প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়ে চার বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি, যা ভারতে সংবিধান ও প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা স্থান পেয়েছে। এই সংগ্রহশালা প্রধানমন্ত্রীদের জীবন ও অবদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের গল্প বলবে—তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান, দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা সবাইকে জানানোর জন্য। সংগ্রহশালা বিভিন্ন তথ্য প্রসার ভারতী দূরদর্শন, ফিল্ম মিডিয়া, সংসদ টিভি, দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর বিভিন্ন সাহিত্যে নিদর্শন প্রধানমন্ত্রীদের চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী, উপহার, বিভিন্ন সম্মাননা, মুদ্রা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ডিসপ্লে বোর্ডে নানা তথ্য প্রদর্শনী আছে। হলোগ্রাম মাল্টিমিডিয়া সংগ্রহ সংঘটিতে মোট ৪৩টি প্রদর্শনশালা আছে। অসম্ভব সুন্দর একটা সংগ্রহশালা। বাইরে বেরিয়ে দেখি বেলা ডুবে যাচ্ছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই বের হতে হবে, বিওআইডির ব্যানার দিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখি খোলা মাঠে ময়ূর হাঁটছে, আশপাশে গাছগুলোতে অনেক ময়ূর। এত কাছ থেকে আগে কখনো ময়ূর দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে!
সবাই আস্তে আস্তে বাসে উঠতে লাগলেন। আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য হোটেল সুরিয়া। বাসে বসেই বিকেলের নাশতা করা হলো। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভালোই ট্রাফিক থাকে। আবার শুরু হলো গানের পালা। সাহস ভাই গান ধরেন, বাকিরা সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আমি কাচঘেরা জানালা দিয়ে দেখছি অচেনা এক নতুন শহরের রঙিন সব বাতি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্রেন্ড কলোনি হোটেল সুরিয়াতে। হোটেলের কর্মকর্তা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই মিলে লবিতে বসলাম। বিশাল বড় একটা হলরুম। হোটেল কর্তৃপক্ষ আর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের সেবাদানে মহাব্যস্ত।
পাশেই ছিল ডিনারের আয়োজন। গোলটেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম, একটা অন্য রকম আমেজ কাজ করছিল। ডিনারে বিশাল আয়োজন, নাম না-জানা অনেক খাবার। লাইন ধরে আস্তে আস্তে খাবার নেওয়া শুরু করলাম। খাবারের স্বাদ অনেক ভিন্ন, আমাদের বাঙালি স্বাদ একদমই নেই। নাহ্! খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা ভেজিটেবল সুপ ছিল, বেশ ভালো খেতে। দুই বাটি খাওয়া হলো, এনার্জি স্টোর করার জন্য যথেষ্ট।
খানিক বাদে ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে কে কোন রুমে। এক রুমে দুজন নাম ডেকে সামনে নেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে রুমের কি কার্ড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে রুমমেট আশা আপু। সুর্মির সঙ্গে মুক্তা, সুর্মি আমার সঙ্গে থাকতে চায়, মুক্তা আবার তার বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে থাকতে চায়। এখন দেখা যাচ্ছে তিন রুমে মোট ছয়জন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বিষয়টা কোনোভাবেই অথরিটিকে জানানো যাবে না। ছয়জনের সঙ্গে নানা আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একজন করে চেঞ্জ করব। অবশেষে আমি আর সুর্মি এক রুম। ইফফাত আর মুক্তা এক রুমে যাবে। দুজন অন্য রুমে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় লাগল এই সিদ্ধান্ত নিতে। নানাভাবে কনভেন্স করতে হলো, এমন সমস্যা আরও অনেকেরই হচ্ছিল। রুমটা মূলত সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে রুমের ভেতরে যাওয়া গেল। বেশ পরিপাটি একটা রুম, টিভি দেখা, চা-কফি খাওয়া, ঠান্ডা প্রায় সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। জিনিসপত্র বের করে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। বাসায় মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। আগামীকাল সকালে আগ্রা যাওয়া হবে। অনেক দূরের পথ, সকাল সকাল ওঠা লাগবে, ক্লান্ত শরীর নরম বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের সমুদ্রে তলিয়ে গেলাম...।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে
২১ ডিসেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে
২১ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে
২১ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

ক্রিং ক্রিং সকাল সাতটার অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। বিওআইডির টি-শার্ট পরা ম্যান্ডেটরি ছিল। এত সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুধু তিনটা খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা শেষ করলাম। ইতিমধ্যে
২১ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে