জোবায়ের রাজু

ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।

ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।

জোবায়ের রাজু

ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।

ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।


জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২২ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।


ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি
১৬ জুলাই ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২২ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।


ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি
১৬ জুলাই ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২২ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।


ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি
১৬ জুলাই ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।


ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি
১৬ জুলাই ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২২ দিন আগে