অনীক রহমান

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী
অনীক রহমান

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা একাডেমিক পাঠেও দুর্লভপ্রায়।
এদিকে নগর সংস্কৃতিতে পণ্যায়ন আর বিনোদনবাদিতার প্রভাব প্রকট। নাগরিক উঠোনে নতুন নতুন সংগীত বাজার মাৎ করে চলেছে। এর সমান্তরালে লোকায়ত জীবনের পাঠ, প্রাণ, প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগ ক্রমশ অপস্রিয়মাণ। এই জনপদের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংগীতের সপ্রাণ উপস্থিতি আজ দূরের গল্প বলে ভ্রম হয়!
এই ভাঙনের সুর, অভিঘাত, বিবর্তিত পথরেখা নিয়ে শঙ্কা, হাহাকারও বুঝি ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, বিশ শতক জুড়ে রাজনৈতিক পালাবদল, ঔপনিবেশিক যুগের অবসান, দেশভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা গান অল্প সময়ের ব্যবধানে দিক বদলেছে গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সমান্তরালে। এতসব বাঁক পেরিয়ে কীভাবে, কত দূর এগোল বাংলা গান? বাংলা গানের পরিপূর্ণ ইতিহাসটা কী লেখা হলো ঠিকঠাক? বাংলাদেশ পর্বে এসে কী নবতর চিন্তার বিকাশ ঘটল? এমন অজস্র প্রশ্নের গুঞ্জরণের প্রেরণায় গীতল আলাপ গ্রন্থভুক্ত হলো লেখালেখির উঠানের ‘সংগীত সংখ্যা’য়। এই সংখ্যায় সংগীত, সংগীততত্ত্ব বা বাংলা গান নিয়ে সমকালীন পাঠের কিছু নমুনা পাবেন পাঠক।
বাংলা গান কী? কত দূর বাংলা গান? কাদের গান? কবে থেকে বাংলা গান? হাজার বছরে কত স্রোত এসে মিলেছে এইখানে? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গ্রামোফোন রেকর্ড যুগকে আলাপের প্রাক বিন্দু ধরে বিবিধ আলাপ বিস্তার করা হয়েছে। এই আলাপে প্রাজ্ঞজনের সঙ্গে নবীন লেখকের জিজ্ঞাসা উপস্থাপন সাধুবাদযোগ্য। প্রায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে বিচিত্র লেখা গ্রন্থবদ্ধ হওয়ার পরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝি বাদ পড়ে গেল, যেমন ব্যান্ড সংগীত বা সিনেমার গান বিষয়ক আলাপ এখানে অনুপস্থিত।
গানের সুরে ও স্বরে ভাবের আলাপ এবং ভবের আলাপ বহমান স্থান থেকে স্থানে, এক যুগ থেকে অন্য যুগে। বাংলা গান তাই বাংলার ভাব, ইতিহাস আর মানুষের বয়ান। দরবারি জলসা হতে উঠানে গানের আসরে পৌঁছোনোর কালে গানের মেজাজ ও চেহারা বদল হয়েছে যেমন করে, আজ রেকর্ড প্লেয়ারে, কনসার্টে কিংবা টেলিভিশনে গান পরিবেশনকালে পলিশ চলছে নানান কায়দায়, নানান মতলবে। এই সব সমীকরণ সরল নয়। আধুনিক-অনাধুনিক, শ্লীল-অশ্লীল, কেন্দ্র-প্রান্ত এই সব অজস্র বাইনারি ক্রিয়াশীল আছে বাজারে এবং বাইরেও। নানান মতবাদ আর শুদ্ধচারিতার জিকির যেমন আছে তেমনি আছে ‘গেঁয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ বর্গকে নাক সিটকানোর প্রবণতা। এই সব প্রবণতাকে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ‘উঠান’ আলাপটুকু সীমায়িত করেছে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারাটিকে কেন্দ্রে রেখে। তবে আলোচনার সূত্রেই বিভিন্ন লেখা বিস্তৃত হয়েছে ঢের বিশদ বৃত্ত ধরে, তা বলাই বাহুল্য।
ড. নূরুল আনোয়ারের বিশদ এবং দুর্লভ তিনটি রচনা পরিমার্জিতরূপে প্রকাশিত অজিত দাশের সম্পাদনায়। কামালউদ্দিন কবিরের রচনায় ‘বাংলার গীতরঙ্গ’ এর পরিচয় পাঠের প্রস্তাবনা শুধু সংগীত নয় বরং এই জনপদের সংস্কৃতির নমুনা পাঠের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাবে। ড. জিনবোধি ভিক্ষু’র রচনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একবারে বাংলা গানের প্রাক পর্বে। ভক্তি আন্দোলনে গান কতটা কৃত্য আর ভাবের বাহন, শিখ ধর্মের আলোকে তারই সূত্র সন্ধান করেছেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। সংগীত তত্ত্বমূলক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান, গৌরাঙ্গ হালদার ও তাসনিয়া ইসলাম। একই সঙ্গে পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন রাফসান গালিব।
‘নজরুল ও অজয় ভট্টাচার্য: সাংগীতিক পরম্পরা’ শীর্ষক রচনায় মাসুদ রহমান অজয় ভট্টাচার্যকে আলাপে হাজির করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়মোচন করেছেন বলা চলে। বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর দুর্লভ সাক্ষাৎকার, কবি ফরহাদ মজহার ও পালাকার সুনীল কর্মকারের আলাপচারিতা, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, ভূপতি ভূষণ বর্মা এবং কৃপাসিন্ধু রায় সরকারের সাক্ষাৎকার সমকালীন পাঠকের জন্য আগ্রহ জাগানিয়া সংযোজন। বিগত শতকের উত্তাল চল্লিশ, গণনাট্য সংঘ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের গানের কথা উঠে এসেছে কঙ্কণ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী, অমল আকাশ, শামীম আমিনুর রহমান, বীথি ঘোষ প্রমুখের রচনায়। আমাদের সংগীতের ইতিহাসে বিলুপ্তির চিহ্ন কতিপয় পাঠ করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস, রুখসানা কাজল, সুকন্যা দত্ত, সেলিম মণ্ডল, নিরুপমা রহমান, পাভেল পার্থ, সিলভানুস লামিন প্রমুখ।
বাংলাদেশে অন্য ভাষাভাষী মানুষের সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ সমধিক এবং তারই সূত্রে অশ্রুত অনেক গানের কথা প্রামাণ্য আকারে সংকলিত হলো এই সংখ্যায়, এটা বিশেষ তৃপ্তির বিষয়। অজস্র গুণী সংগীতকার, ভাটিয়ালি, কীর্তনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংগীত অনালোচিত থাকলেও স্বল্পশ্রুত বা প্রায় অপঠিত ধারার সংগীত, গীতিকবি সম্পর্কিত রচনা বাংলা গানের স্বরূপ পাঠে নতুন রসদ জোগাবে নিশ্চয়ই। মোস্তাক আহমাদ দীনের স্বাদু গদ্যে ‘ফকির ইয়াছিনের আত্ম পরিভ্রমণ’, শিল্পী আকাশ গায়েনের বয়ানে ‘বাউল আবদুর রহমান’ পরিচয়, আসিফ আল নূরের লেখায় ‘মজলিশপুর হাওরে মরমি অনুরণন: মামুদ জান’, ওয়াহিদ সুজনের রচনায় ‘উকিল মুন্সী’ এবং বঙ্গ রাখালের লেখায় ‘পাগলা কানাই’ শীর্ষক রচনায় লোকায়ত গানের এক অসীম ভুবনের সন্ধান মিলবে। মরমি, বিচ্ছেদী, ভাব গান বাংলা গানের অমূল্য সম্পদ অথচ বড্ড অনাদরে আছে। মাইজভান্ডারি গানের প্রাক পর্বের গীতিকবিদের পরিচয় এবং তাঁদের কীর্তির নমুনা পাঠে দাউদুল ইসলামের আন্তরিক প্রয়াস পাঠকের সামনে হাজির করেছে এক অশ্রুত ইতিহাস। কবিয়াল বিজয় সরকার, সাধক মনমোহন দত্তকে ঘিরে প্রণীত আলাপেও এসেছে বাংলার ভাবান্দোলনের জমিন।
লোকায়ত এই সংগীত যেমন প্রায় ব্রাত্য হয়ে আছে, নগরের জনপ্রিয় ঘরানার গানও একাডেমিক আলাপে তেমনি ব্রাত্য প্রায়। নইলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের সংগীত চর্চা কোনো ডিসকোর্স আকারে হাজির নেই কেন? আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির এবং আসলাম আহসানের রচনায় এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার প্রয়াস লক্ষণীয়। থিয়েটারের সংগীত বিষয়ক আয়োজনে শুভাশিস সিনহার রচনায় নাট্যজন এস এম সোলায়মানের ‘গোলাপজান’ নির্মাণ বিষয়ক বহু স্তরিত পাঠ, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী এবং শিল্পী দেবলীনা ঘোষের বয়ানে থিয়েটারের সংগীতের আদ্যোপান্ত উঠে এল স্বকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। গানের মোড়কেই একটি জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গল্প হাজির থাকে। আহমেদ বাবলু এবং রজত কান্তি রায়ের ভিন্নধর্মী লেখায় একবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা পাবেন। সংগীত বিষয়ক পাঠের সামাজিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে নজর ফেরানোর তাগিদে একটি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে কাবেরী সেনগুপ্তার লেখায়।
সামগ্রিকভাবে বিগত শতকে বাংলা গানের চলনটিকে প্রতিনিধিত্বশীল চিহ্ন পাঠের মাধ্যমে বোঝাপড়ার প্রাথমিক প্রয়াস এই সংগীত সংখ্যা। বাংলা গানের সুবিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় এই ঢাউস পত্রিকাটিও নিতান্তই সমুদ্র হতে এক কলস পানি তুলে আনবার মতো উদ্যোগ বটে। তবে অনালোচিত সংগীতভুবনে বৌদ্ধিক আলাপের বিস্তার ঘটানোর এ প্রস্তাবনা নতুন দিনের পাঠক, শিল্পী, সংগীতপ্রেমীদের ভাবনায় সামান্য আলোড়ন তৈরি করতে পারলে এই বন্ধ্যাকালের নীরবতা ঘুচে যেতে পারে হয়তোবা। এই গীতল আলাপের উঠানে স্বাগতম।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা এ
২৫ জুলাই ২০২৩
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা এ
২৫ জুলাই ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা এ
২৫ জুলাই ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

বাংলা গান, বাংলাদেশের গানের ভূগোল, ইতিহাস ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিবিড় পাঠমূলক প্রয়াস সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একপ্রকার গরহাজির। বিভিন্ন অনিয়মিত প্রকাশনার সূত্র ধরে বাংলা গানের একটা সুসংহত পরিচয় নির্মাণ করা দুরূহ। এই জনপদের সংগীতের সমূহ বিকাশের নেপথ্যে আর্থসামাজিক সংযোগ পাঠের প্রস্তাবনা এ
২৫ জুলাই ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৭ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১২ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৮ দিন আগে