মলয় বালা

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।
মলয় বালা

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১০ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে...
২৪ ডিসেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে...
২৪ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে...
২৪ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১০ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে...
২৪ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১০ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
২১ দিন আগে