Ajker Patrika

প্রথমবার বুকার জিতল কন্নড় ভাষার সাহিত্য, পেলেন বানু মুশতাক

অনলাইন ডেস্ক
বুকার পুরস্কার হাতে বানু মুশতাক। ছবি: এক্স
বুকার পুরস্কার হাতে বানু মুশতাক। ছবি: এক্স

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের লেখিকা, আইনজীবী ও সমাজকর্মী বানু মুশতাক তাঁর ছোটগল্প সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’—এর জন্য আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন। কন্নড় ভাষায় লেখা প্রথম বই হিসেবে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেল ‘হার্ট ল্যাম্প।’ বইটির গল্পগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দীপা ভাসথি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন দশকে লেখা মুশতাকের ১২টি ছোটগল্পের সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প।’ এটি দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের জীবনসংগ্রামকে মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরেছে।

পুরস্কার গ্রহণ করে মুশতাক পাঠকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই বইটি এই বিশ্বাস থেকে জন্ম নিয়েছে যে, কোনো গল্পই ছোট নয়। মানুষের অভিজ্ঞতার বুননে প্রতিটি সুতোই সম্পূর্ণতার ওজন বহন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে পৃথিবী আমাদের প্রায়শই বিভক্ত করার চেষ্টা করে সেখানে সাহিত্য শেষ পবিত্র স্থানগুলোর একটি, যার মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের মনের গভীরে প্রবেশ করতে পারি।’

প্রথম ভারতীয় অনুবাদক হিসেবে আন্তর্জাতিক বুকার জেতা দীপা ভাসথি আশা প্রকাশ করেছেন, এই জয় কন্নড় এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ভাষা থেকে আরও অনুবাদকে উৎসাহিত করবে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার এক পর্যালোচনায় ‘হার্ট ল্যাম্প’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে সাহিত্য সংস্কৃতির চমককে তুলে আনে, সেখানে হার্ট ল্যাম্প প্রান্তিক জীবনযাপন, অলক্ষিত পছন্দ এবং কেবল টিকে থাকার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তার ওপর মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এটাই বানু মুশতাকের নীরব শক্তি।’

মুশতাক কর্ণাটক রাজ্যের একটি ছোট শহরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। তাঁর আশপাশের বেশির ভাগ মেয়ের মতোই তিনিও স্কুলে উর্দু ভাষা ও কোরআন অধ্যয়ন করতেন। তবে তাঁর সরকারি চাকরিজীবী বাবা তাঁর জন্য আরও বেশি কিছু চেয়েছিলেন। আট বছর বয়সে তিনি তাঁকে একটি কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন, যেখানে শিক্ষার মাধ্যম ছিল রাজ্যের সরকারি ভাষা কন্নড়।

মুশতাক কন্নড় ভাষায় পারদর্শী হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এই ভিন্ন ভাষাই তাঁর সাহিত্যিক প্রকাশের ভাষা হয়ে ওঠে। স্কুলে থাকাকালীনই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তাঁর সহপাঠীরা যখন বিয়ে করে সন্তান লালন-পালন করছিলেন, তখন তিনি কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মুশতাকের লেখা প্রকাশিত হতে কয়েক বছর লেগে যায়। এটি তাঁর জীবনের এক বিশেষ চ্যালেঞ্জিং সময়ে ঘটেছিল। ২৬ বছর বয়সে নিজের পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করার এক বছর পর স্থানীয় ম্যাগাজিনে তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। তবে তাঁর দাম্পত্য জীবনের প্রথম বছরগুলোতে সংঘাত ও কলহ ছিল।

ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সব সময় লিখতে চেয়েছি, কিন্তু লেখার মতো কিছু ছিল না। কারণ হঠাৎ করে, প্রেমের বিয়ের পর আমাকে বোরকা পরতে এবং ঘরোয়া কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে বলা হয়েছিল। ২৯ বছর বয়সে আমি প্রসবোত্তর হতাশায় ভুগতে থাকা একজন মা হয়েছিলাম।’

দ্য উইক ম্যাগাজিনকে দেওয়া অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কীভাবে তাঁকে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর, এক মর্মান্তিক প্রতিরোধ তাঁকে মুক্তি দেয়। তিনি বলেন, ‘একবার, চরম হতাশায় আমি নিজের গায়ে সাদা পেট্রল ঢেলে দিয়েছিলাম গায়ে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ভাগ্যক্রমে, তিনি (স্বামী) সময়মতো টের পেয়েছিলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে দেশলাই কেড়ে নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের সন্তানকে আমার পায়ের কাছে রেখে অনুনয় করেছিলেন, আমাদের ছেড়ে যেও না।’

হার্ট ল্যাম্প—বইয়ে বানু মুশতাকের নারী চরিত্রগুলো এই প্রতিরোধ ও সামাজিক অনড় অবস্থার প্রতিচ্ছবি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পর্যালোচনা অনুসারে, ‘মূলধারার ভারতীয় সাহিত্যে মুসলিম নারীদের প্রায়শই রূপক হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যারা নীরব ভোগান্তির শিকার বা অন্যের নৈতিক যুক্তির অংশ। কিন্তু মুশতাক দুটোই প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর চরিত্রগুলো সহ্য করে, আপস করে এবং মাঝে মাঝে প্রতিরোধও করে। তবে এমনভাবে নয় যা শিরোনাম হয়, বরং এমনভাবে যা তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।’

পেশাগত জীবনে মুশতাক একটি স্থানীয় ট্যাবলয়েডে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এক দশক পর সাংবাদিকতা ছেড়ে তিনি পরিবারে অবদান রাখতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

কয়েক দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে বানু মুশতাক প্রচুর লিখেছেন—যার মধ্যে ৬টি ছোটগল্প সংকলন, একটি প্রবন্ধ সংকলন এবং একটি উপন্যাস রয়েছে। তীক্ষ্ণ লেখার কারণে তিনি ঘৃণার শিকারও হয়েছেন। দ্য হিন্দু পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০০০ সালে মসজিদে নারীদের প্রার্থনার অধিকারের পক্ষে মতামত প্রকাশের পর তিনি ফোনে হুমকির শিকার হন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারি করা হয় এবং একজন তাঁকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছিল, তবে তাঁর স্বামী তাঁকে সে যাত্রায় রক্ষা করেছিলেন।

তবে এসব ঘটনা মুশতাককে বিচলিত করতে পারেনি। তিনি দৃঢ় সততার সঙ্গে লেখা চালিয়ে গেছেন। দ্য উইক ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত পুরুষতান্ত্রিক ধর্মীয় ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। এই বিষয়গুলো এখনো আমার লেখার কেন্দ্রবিন্দু। সমাজ অনেক পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু মূল সমস্যাগুলো একই রয়ে গেছে। যদিও প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়, তবুও নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মৌলিক সংগ্রামগুলো অব্যাহত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত