Ajker Patrika

বিলম্বিত ট্রেনে যেভাবে রাউলিংয়ে মাথায় আসে হ্যারি পটারের প্লট

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩২
হ্যারি পটারের লেখক জে কে রাউলিং। ছবি: সংগৃহীত
হ্যারি পটারের লেখক জে কে রাউলিং। ছবি: সংগৃহীত

ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডনে বাড়ি ফিরছিলেন জে কে রাউলিং। কোনো কারণে সেদিন ট্রেনটি ছাড়তে বেশ দেরি করছিল। আর ওই ট্রেনেই রাউলিংয়ের কাছে ধরা দেয় তার অনবদ্য সৃষ্টি ‘হ্যারি পটার’। রাউলিং বলেন, হঠাৎই তাঁর কল্পনার জগতে এক জাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন বালকের দেখা পান তিনি। হুট করে মাথায় চলে আসে প্লট। তবে, সেদিনই প্রথমবার তার কাছে কোনো কলম ছিল না। তাই সঙ্গে সঙ্গে লিখে ফেলতে পারছিলেন না তিনি। বিলম্বিত ওই ট্রেনে বসে তাই হারিয়ে গিয়েছিলেন কল্পনায়। যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন হ্যারিকে।

রাউলিং বলেন, ‘হ্যারি পটার আর হগওয়ার্টস হঠাই আমার মাথায় চলে আসে। প্লট আর চরিত্র মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঠিক করে ফেলি এটা লিখতেই হবে। অসাধারণ এক রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম।’

লেখক বলেন তিনি শুরু থেকেই ঠিক করে ফেলেছিলেন যে হ্যারি পটার সাত খণ্ডের একটি সিরিজ হতে চলেছে। তবে, প্লট মাথায় আসার পরে হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম খণ্ড হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন লিখতে রাউলিংয়ের সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছরে বদলে যায় তাঁর জীবনের অনেককিছু। নিজের মাকে হারান তিনি। লন্ডন ছেড়ে পারি জমান পর্তুগাল। বিয়ে করেন, জন্ম দেন নিজের কন্যা সন্তানকে। এই পাঁচ বছরের মধ্যেই আবার হয়ে যায় তাঁর বিচ্ছেদও।

পরে, মেয়েকে নিয়ে তিনি পাড়ি জমান স্কটল্যান্ডের এডিনবরা। এত ঘটনার মধ্যে তিনি হ্যারি পটারের মাত্র তিনটি অধ্যায় লিখতে পেরেছিলেন। এডিনবরা তিনি ফরাসি ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। আর অবসর পেলেই বসে যেতেন লিখতে। লেখা শেষ হলে তিনি বেশ কয়েকটি এজেন্সির কাছে প্রথম তিন অধ্যায় পাঠান।

তাঁর এজেন্ট ক্রিস্টোফার লিটল বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠাতে শুরু করে। তবে, বেশির ভাগ প্রকাশকই পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দেয়। বইটি প্রকাশ করার জন্য একটি প্রকাশনা খুঁজে পেতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। অবশেষে ১৯৯৭ সালের জুনে ব্লুমসবারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয় হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন।’

রাউলিংয়ের প্রকৃত নাম জোয়ান রাউলিং। তবে, প্রকাশক প্রতিষ্ঠান তাকে পরামর্শ দেয় পুরো নাম না দিয়ে নামটা ছোট করে দিতে, যাতে সহজে দেখেই না বোঝা যায় যে বইটির লেখক একজন নারী। তাদের ভাষ্য ছিল—ছেলেরা হয়তো একজন নারী লেখকের লেখা জাদুবিদ্যার বই পড়তে উৎসাহিত হবে না। পুরুষ পাঠকদের আকর্ষণ করতে লেখকের নাম যেন কিছুটা নিরপেক্ষ শোনায়, সেটাই ছিল প্রকাশকের যুক্তি। পরে, বইটিতে রাউলিংয়ের নাম ছাপা হয়—‘জে কে রাউলিং।’ জোয়ান থেকে জে, আর তাঁর দাদির নাম ক্যাথলিন থেকে কে নিয়ে তাঁর নতুন নাম হয় জে কে রাউলিং।

প্রকাশ হওয়ার পর কিশোর থেকে যুবক—সবার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হ্যারি পটার। বিশ্বজুড়েই শুরু হয় উন্মাদনা। এরপর বই থেকে সিনেমা, মঞ্চ নাটক সব ধরনের সংস্করণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হ্যারি পটার।

প্রথম বইটি প্রকাশের পর মোট সাত খণ্ডের এই সিরিজ লিখতে রাউলিংয়ের সময় লাগে আরও ১০ বছর। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে পটার সিরিজ। আছে অডিও বুক সংস্করণ এমনকি ব্রেইল ভার্সনও।

আজ উন্মাদনা তৈরি করা এই সিরিজের লেখকের জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের ইয়েটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরাসি ভাষা ও প্রাচীন সাহিত্যে (ক্লাসিকস) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বর্তমানে স্কটল্যান্ডে বসবাস করছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত