ফারজানা লিজা
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা, পূর্ণতা, স্বচ্ছতা, সজীবতা। আমার বরাবরই বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে ভালো লাগে। বৃষ্টির ফোঁটা যখন টিনের চালে বা গাছের পাতায় পড়ে, সুন্দর একটা শব্দ হয়। শব্দটা সংগীতের মধুর বাদ্যযন্ত্র থেকে কোনো অংশে কম নয়।
ছাতা হাতে বের হয়ে গেলাম। ভাষানটেক বাজার থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত সিএনজি করে চলে এলাম। মিরপুর দশ চত্বরে অপেক্ষা করছিল আমার এক জুনিয়র আর কে সোহান। ওর সঙ্গেই বুট ক্যাম্পে যাব। আর কে সোহান ধালাদের প্রতিষ্ঠাতা। এটা মূলত একটা ব্র্যান্ড। যেটা আমাদের বাংলাদেশের লোকাল, ট্র্যাডিশনাল এবং হেরিটেজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিলুপ্তের হাত থেকে রক্ষা করা। এটা ই-কমার্স বেস্ড একটা স্টার্টআপ বিজনেস।
মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১ তারপর মিরপুর-১ থেকে ধানমন্ডির বাসে উঠলাম।
কলাবাগান বাস থেকে নামার মুহূর্তে একটা মেইল এল। শব্দটা কানে এসেছে। সঠিক লোকেশনটা না জানার কারণে ভুল করে কলাবাগান চলে এসেছি। তারপর আবার বাসে উঠে ধানমন্ডি ২৭-এর দিকে রওনা হলাম। ধানমন্ডি মিডাস টাওয়ার ইএমকে সেন্টার। কাক স্নান করে পৌঁছালাম। সকল প্রকার চেকিং শেষ করে প্রোগ্রামে উপস্থিত হলাম। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে মেইল আসছে। মুহূর্তেই অনেক এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য মেইল করেছে। বিষয়টা এরকম যে, আমাদের সবার পাসপোর্ট ঠিক আছে কিনা, যাদের পাসপোর্ট আছে তাদের আগামী তিন মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকা লাগবে। আর যাদের নেই, তাদের অতি দ্রুত পাসপোর্ট করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাসপোর্টের স্ক্যান কপি মেইল করতে বলা হয়েছে।
আমি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাসপোর্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়নি। আগামী ২০৩০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ। আদৌ কি আমার বিদেশ ভ্রমণ হবে? নাকি কোনো রকম ভিসা ছাড়াই আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে? ভাবতে ভাবতে প্রোগ্রামের স্পিকার চলে এসেছে। সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলাম। প্রোগ্রামটা মূলত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছে বা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। আমার আশপাশে এত এত নারী উদ্যোগতা তাদের দেখে বেশ ভালোই লাগছিল। তথাকথিত সমাজের চৌকাঠ পেরিয়ে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তাদের যদি সর্বোচ্চ সহায়তা ও সুযোগ দেওয়া হতো আমি বিশ্বাস করি নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং জিডিপি এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছে। কিছু সময় রেস্ট করে টিউশনে চলে গেলাম। নন্দিতা হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করেছে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আমার মেইল আসছে কি না, উত্তরে বললাম আসছে। সে জানাল, তারও আসছে। কিন্তু তার তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি, কী করবে এখন?
‘কবে করতে দিয়েছিলে?’
নন্দিতা বলল, ‘অনেক আগে, অডিশনের পরেই।’
‘টেনশন করব না। ২৬ তারিখ তো শেষ দিন। তার আগে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।’
‘তুমি কি স্ক্যান কপি মেইল করেছ?’
আমি বললাম, ‘না সারা দিন আজ বাইরে ছিলাম। শেষ দিন তো ২৬ তারিখ। আজকে ১৪ তারিখ, অনেক সময় বাকি। এর মধ্যেই করে দেব।’
নন্দিতা মেয়েটা অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। তার সঙ্গে কথা শেষ করে সুর্মিকে এসএমএস করলাম—কী অবস্থা তোমার, মেইল পেয়েছ?
সুর্মি বলল, ‘হ্যাঁ আপু, তুমি পেয়েছ?’
‘হ্যাঁ। নন্দিতাও মেইল পেয়েছে, কিন্তু ওর তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি।’
সুর্মি বলল, ‘আপু, আমারও হয়নি।’
আমি বললাম, ‘যত দ্রুত সম্ভব করে স্ক্যান কপি মেইল কর। আমার মনে হয় যাদের মোটামুটি সিলেক্ট করার মতো তাদের ভেরিফিকেশন মিল করেছে। যদি পাসপোর্ট ঠিক থাকে তাহলে হয়তো ফাইনাল সিলেকশন করে ফেলবে।’
সুর্মি বলল, ‘সম্ভবত আমারও তাই মনে হয়।’
‘যত দূর জানি, বিগত বছরগুলোয় যারা সিলেক্ট হয়েছিল তাদের মাঝে অনেকেরই পাসপোর্ট ঠিক না থাকার কারণে যেতে পারিনি। আল্লাহ ভরসা টেনশন কর না।’
খানিক বাদে আমার বান্ধবী সামিরা এসএমএস করল। সে লিখল, ‘মেইল আসছে তোর?’
‘হে দোস্ত, পাসপোর্ট মেইল করতে বলল।’
‘মেইলটা আমাকে ফরওয়ার্ড কর তো।’
‘করেছি, চেক কর।’
সামিরা বলল, ‘না আমার এমন কোনো মেইল আসেনি। হবে না আমার, গুড লাক দোস্ত।’
‘অপেক্ষা কর, হাজার হাজার মেইল সেন্ড করেছে। নেবে তো মাত্র ১০০ জন, মেইল ফরওয়ার্ড করতে তো একটু সময় লাগবে।’
সামিরার সাথে কথা শেষ করে গ্রুপে এসএমএস চেক করলাম। যারা যারা মেইল পেয়েছে সবাই শেয়ার করছে। এই নিয়ে গ্রুপে তুমুল আলোচনা। অডিশনের দিন ত্রিদিব দাদা বলেছিলেন আপনারা নিজেদের মাঝে কথা বলে নেটওয়ার্কিং বাড়ান। আর আমাদের নেটওয়ার্কিং গতি ফাইভ-জি ইন্টারনেটের থেকেও বেশি। মুহূর্তেই ১০০ জনের বেশি মেম্বার নিয়ে গ্রুপ খোলা হয়ে গেছে। আর সেই গ্রুপে চলে রাত দিন নানা আলোচনা।
সময় গড়িয়ে তিন-চার দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো পাসপোর্ট স্ক্যান কপি মেইল করা হয়নি। তখনই ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে মেইল করে দিলাম। একটা বিষয় ভাবলাম পাসপোর্টের মতো জঘন্য একটা ছবি দিয়ে কীভাবে মানুষ ভেরিফাই করে? আমার বর্তমান চেহারার সঙ্গে পাসপোর্টের চেহারার কোনো মিল নাই।
আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। পাসপোর্টের ছবি তোলার দিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম যখন রেডি ১ ২ ৩ বলবে, তখন একটা হাসি দেব। ওমা বলে হয়েছে গেছে, উঠে আসেন। কখন ছবি তুলল টেরই পেলাম না।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে ২৬ তারিখ। সুর্মি সঙ্গে কথা হলো সে পাসপোর্ট পেয়েছে। ইতিমধ্যে মেইল করে দিয়েছে। নন্দিতার সঙ্গে কথা বললাম বেচারি এখনো পায়নি আজ রাত ১২টায় শেষ সময়। ২৭ সেপ্টেম্বর আবার নন্দিতা এসএমএস করল। তার পাসপোর্ট পাইছে। আমি বললাম কোনো সমস্যা নাই এখনই ছবি তুলে মেইল করে দে। উত্তর সে বলল অলরেডি করে দিছি। বেশ দেখা যাক কী হয়, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অন্য এক স্টুডেন্টকে পড়াতে এসেছি। খানিক বাদে দেখি বিওয়াইডি ২২ গ্রুপে অনেক এসএমএস আসছে। মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখি ফাইনাল সিলেকশনের মেইল সবাই স্ক্রিনশট দিয়ে গ্রুপে দিয়েছে। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহ আল্লাহ করে মেইলে ঢুকলাম। দেখি কোনো মেইল আসেনি। মুহূর্তেই মনের আকাশে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম, আমি তো অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো হয়ে যাবে। ভারত ভ্রমণ নিয়ে কত চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন দেখলাম। আর এখন হলো না। ভাবতে ভাবতে মেইলটা একটু রিফ্রেস করতেই সামনে চলে এল ‘ফাইনাল সিলেকশন ফর বাংলাদেশ ইয়থ ডেলিগেশন-২০২২ প্রোগ্রাম’। চোখ দুটো কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। ইয়াহু বলে একটু চেয়ার আপ করলাম। আমার পিচ্চি স্টুডেন্ট বলে উঠল আপু কী হয়েছে? আমি বললাম আমার ইন্ডিয়া যাওয়া কনফার্ম। আমি সিলেক্ট হয়েছি। এই পিচ্ছি বরাবরই আমাকে অনেক অনেক বেশি কোশ্চেন করে। আজ আমার রক্ষা নেই। আমার সঙ্গে সেও চেয়ার আপ করা শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে কাছের মানুষদের ফোন দিয়ে সুখবরটা জানাতে লাগলাম। মাথায় এল সুর্মি আর নন্দিতার কথা।
তখনই সুর্মিকে নক দিলাম কী খবর।
সে বলল, ‘আপু, আলহামদুলিল্লাহ, সিলেক্ট হয়েছি। তুমি?’
‘আমিও।’ সুর্মি দেখি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড।
‘নন্দিতাদির খবর জান?’
‘না। এখন ওরে নক দিয়ে দেখি।’
নন্দিতাকে নক দিলাম, বলল ওর হয়নি। আমি আবারো তাকে আশ্বাস দিলাম একটু অপেক্ষা কর, ওয়েটিং লিস্ট থেকে অনেককে ডাকে।
সে বলল, ‘আমার মনে হয় আর হবে না।’
মেয়েটার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। ভেবেছিলাম তিনজন একসঙ্গে যেতে পারব।
ভিসার জন্য আবেদন করার সময় দিয়েছে ৩ তারিখ। যে যেখান থেকে আবেদন করুক ৩ তারিখ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে অনলাইন ভিসার আবেদন ফরম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ। রুমে ফিরে এসে বিষয়টা রুমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করলাম আর আমার পরিবারকে জানালাম। সবাই অনেক খুশি আমার পরিবার বরাবরই আমাকে সাপোর্ট করে আসছে। ২০১৬ সালের যখন অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রথমবারের মতো বাসা, পরিবার ছেড়ে আসি, মা বিদায় বেলা বলে দিয়েছিল আমরা তোমাকে কোনো কিছুতে না করি না, যখন যা করতে চেয়েছ সুযোগ দিয়েছি। আজকের পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হবে, যা কিছুই কর না কেন একটা কথা মাথায় রেখ, তোমার কোনো কাজের জন্য যেন তোমার বাবা বা পরিবারের অসম্মান না হয়। তোমাকে অনেক স্বাধীনতাই দেওয়া হচ্ছে। মা-এর সেই কথাটা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি আমার পরিবারের সম্মান যেন অটুট থাকে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই কোনো কাজ করার আগে নিজ পরিবারের কথা একবার হলেও ভেবে দেখা উচিত।
দিনশেষে পরিবারই ভরসা।
বিষয়টা আমার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক প্রায় সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিল। একটা বিষয় চিন্তা করলাম আপনি যখন ভালো কিছু করবেন বা কোনো কাজে সফল হবেন তখন চারপাশ থেকে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। যাকে আপনি চিনেনও না সেও আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। কিন্তু আপনি কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার হাতটা ধরে তুলে দাঁড়ানোর মানুষ খুব কমই পাবেন। জীবন যুদ্ধে চলার পথে উঠে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়ার মতো একটা মানুষ সবার জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন। সব কাজ শেষে রাতের বেলায় বসলাম অনলাইন ভিসা আবেদন করতে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভিসা আবেদন করব। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা আবেদনে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। অনেক জটিল প্রসেস। অনেক ইনফরমেশন দিতে হচ্ছে। টেকনিক্যাল সমস্যা আর সার্ভার ডাউন থাকার কারণে আমি তিনবার চেষ্টা করার পর সফলভাবে আবেদন করতে সক্ষম হই।
একটা বিষয় খুব কষ্টকর। যেমন আমি ভিসা আবেদনের জন্য দুইটা বা তিনটা স্টেজ পার করে পরের স্টেজে গেলাম কোনো কারণে সাবমিট হচ্ছে না। রিলোড দেওয়ার পর আবার প্রথম টেস্ট থেকে শুরু করতে হয়। এই বিষয়টা খুবই বেদনাদায়ক ও কষ্টকর। আবার সব ইনফরমেশন শুরু থেকে দিতে হয়। এটা শুধু ভিসা আবেদনের জন্য না সব ক্ষেত্রেই হয়।
রুমমেটকে বিষয়টা বলার পর সে বলে এত প্যারা নেওয়ার দরকার কী? দোকানে গিয়ে আবেদন করে এলেই তো হয়। আমার সব কাজ আমি নিজে নিজে করি। প্রয়োজনে আশপাশের মানুষদেরও কাজ করে দেই।
আজ ৩ অক্টোবর। সকাল ১০টার মধ্যে ইন্ডিয়া ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আমার এরিয়া থেকে অনেকটাই কাছে তারপরও সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম। রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, রাস্তা ভেজা, পানি জমে আছে। যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে আমি রীতিমতো অবাক! মেইন গেটের একটু পর থেকে লম্বা লাইন। বাইরে তখন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। লাইন ধরে ভেতরে গেলে আজকে আর আবেদন করা সম্ভব না। আর ভিজে একাকার হয়ে যাব। লাইন ছেড়ে একদম ভিসা সেন্টারে গেটে চলে এলাম। একটু বুদ্ধি করে বিওয়াইডি মেম্বার বলে পরিচয় দেওয়ায় সোজা ভেতরে চলে আসার পারমিশন দিল। সিকিউরিটি চেকিং শেষ করে ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকে চোখ কপালে উঠে গেল। হাজার হাজার মানুষ, দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সুর্মিকে ফোন দিয়ে দেখা করলাম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি সবার হাতে পাসপোর্ট। কারও হাতে একাধিক। সুর্মিকে জিজ্ঞেস করলাম পাসপোর্টও কি জমা দেওয়া লাগবে? সঙ্গে থাকা এক বড় ভাই বলল হ্যাঁ অবশ্যই, পাসপোর্ট না দিলে আপনার ভিসা কোথায় দেবে? তখন পর্যন্ত ভিসা কী জিনিস না জানা আমি, না দেখা আমি! মাথায় বাজ পড়ল। বড় ভাই বলল, আপনার বাসা কোথায়?
‘ক্যান্টনমেন্টে ভাই।’
কাছেই তো আছে দ্রুত গিয়ে নিয়ে আসুন। আমার সিরিয়াল ৪৭, এখন চলে ৯ নাম্বার। আমার সিরিয়াল আসার আগে চলে আসা লাগবে। বের হওয়ার রাস্তাটা এতটাও সহজ ছিল না। অনেক মানুষের ধাক্কাধাক্কি খেয়ে শেষে যমুনা ফিউচার পার্কের বাইরে এলাম। সময় বাঁচানোর জন্য পাঠাও রাইড নেওয়ার চিন্তা করলাম। ভাড়া চেয়ে বসল ৩৫০ টাকা। ১০-১৫ মিনিট আগে ইসিবি চত্বর থেকে এলাম ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এত চাইলে তো হবে না।
বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। আমার হোস্টেলে যেতে না যেতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ড্রাইভার মামাকে বললাম, মামা আমি আবার যাব। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন। আমি যাব আর আসব। এ সময় ড্রাইভার ছেড়ে দেওয়াটা চরম বোকামি হবে। আমার এরিয়াতে কিছুই পাওয়া যায় না। রিকশায় উঠতে গেলেও ২০ মিনিট পথ হেঁটে তারপর উঠা লাগে।
দ্রুত ওপরে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে এলাম। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ড্রাইভার মামাকে ক্যান্টিনে নিয়ে কফি খাওয়ালাম। স্টাফ আঙ্কেল জিজ্ঞেস করছিল, কী হয়? আমার কোনো আত্মীয় কি না। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। উনার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কেটে গেল প্রায় ৪০ মিনিট। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। আবার ওপরে গিয়ে রুম থেকে একটা ছাতা নিয়ে এলাম। সুর্মিকে ফোন দিলাম ওর কাজ শেষ বাসার দিকে রওনা হবে।
খানিক বাদে মামাকে বললাম, মামা চলেন এভাবে বসে থাকলে চলবে না। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বের হলাম, বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস। ড্রাইভার মামার সামনের দিক পুরোটাই ভিজে গেছে। এত বাতাস ছাতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খুব কষ্ট করে যমুনা ফিউচার পার্কে চলে এলাম। ড্রাইভার মামাকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
শপিংমলের গেট এখনো খোলেনি, আরও ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। একটু চিন্তা করে দোতলায় চলে গেলাম। এদিকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেক রিকোয়েস্ট করে ভেতরে ঢুকলাম। আমার শরীর অর্ধেক ভেজা, জুতা-মোজা ভিজে অনেক ভারী হয়ে গেছে। হাঁটার সময় একটা শব্দ হচ্ছিল, কী এক বিব্রতকর অবস্থা।
ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকলাম, সিরিয়াল চলছে কেবল ৩৯। যাক আমি ভালো সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। লাইনে দাঁড়ালাম আশপাশে শুধু বিওআইডি শোনা যাচ্ছে, বুঝতে পারলাম সবাই বিওআইডি মেম্বার। পরিচিত কেউ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলে পরিচিত হলাম ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে। সরকারি আইন ও বিচার বিভাগে কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করতে আসছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না এত মানুষ থাকবে। কেউ ট্যুরিস্ট ভিসা, কেউ চিকিৎসা ভিসা, কেউ ফরেন ভিসা, নানা ভিসার লোকজন এসেছে। অনেক সময় বাদে ভিসার সব রকম কাজ সম্পন্ন করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বের হলাম।
ভিসা কবে দেবে কেউ জানে না, গ্রুপে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। মানে গ্রুপে এমন হয়ে গেছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছেই। আমাদের যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করেছে ১২ থেকে ১৯ অক্টোবর। ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট হবে ১১ অক্টোবর। গত ছয় অক্টোবর ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের ইনভাইটেশন মেইল আসছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বনানী শেরাটন হোটেলে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের প্রোগ্রাম। বিষয়টা মোটেও পছন্দ হলো না ১০ তারিখ হওয়ার কথা ছিল সেটা পরিবর্তন করে ১১ তারিখ করা হলো, ১২ তারিখ যাত্রা, ফ্লাইট কখন তাও জানি না। জিনিসপত্র গোছানোর একটা বিষয় আছে। কত কেজি পর্যন্ত নিতে পারব? কী কী জিনিস নেওয়া যাবে, অনেক তথ্য জানা বাকি। সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে লাগেজটা মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছি।
১১ তারিখের মধ্যে অফিস ও হোস্টেল থেকে ছুটি নেওয়ার কাজ শেষ করলাম। অফিস থেকে সাত দিন, হোস্টেল থেকে আট দিন ছুটি পাওয়া গেল।
সময়ের পালা বদল করে চলে এল ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের দিন। সকাল থেকেই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। গত রাতে অফিসের সব কাজ করে জমা দিয়ে দিয়েছি। অনেকটা রিলাক্স লাগছে। হোস্টেলের বন্ধুবান্ধব-জুনিয়ররা বেশ চেয়ার আপ করছে। এমন একটা বিষয় না জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। বিকেল পাঁচটার দিকে একটু ফিটফাট হয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় খুব বেশি ট্রাফিক না থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। নন্দিতাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন পর্যন্ত আসছে, সামনে তাকিয়ে দেখি সে ভেতরে আসছে একসঙ্গে ইভেন্টে পৌঁছালাম। বেশ লম্বা একটা লাইন। অনেক মানুষ আসছে, সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইয়েরা যার যার মতো ফুটেজ নিতে ব্যস্ত।
ভিসা সেন্টার থেকে দেওয়া টিকিট জমা দিলে ত্রিদিব দাদা হাতে পাসপোর্টটা দিয়ে দিলেন। পাশের টেবিল থেকে তন্ময় দাদা একটা আইডি কার্ড, কোট ব্যাচ, এল সাইজ একটা টি-শার্ট আর বিওইডির লোগো দেওয়া ব্যাগ দিয়ে ভেতরে যেতে বললেন। পাশেই ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের বড় ব্যানারের ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। আমি জিনিসগুলো ব্যাগের ভেতরে রেখে আগে পাসপোর্টটা খুলে দেখতে শুরু করলাম। ভিসা জিনিসটা দেখতে কেমন! সেদিন এ জিনিসটার জন্য অনেক দৌড় দৌড়াতে হলো। দেখার পর আমার রিঅ্যাকশন, ও এটা দেখতে এমন! তাহলে গলা কাটা ভিসা দেখতে কেমন? আমার কৌতূহলী মন।
পেছন থেকে সুর্মি ডাকছে আগে ফারজানা আপু পাসপোর্ট রেখে এদিকে আসো ছবি তুলি। সঙ্গে নন্দিতাকে ডেকে নিয়ে গেলাম। বেচারি মানুষের এত এত ছবি তোলা দেখে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এত ছবি তুলে কী করবে। ফটোসেশন শেষে আসন গ্রহণ করলাম। কারণ ওই দিকে ইসরাত পায়েল আপু মাইক্রোফোনে আসন গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছেন।
একটা সারিতে আমি, সুর্মি আর নন্দিতা সঙ্গে বসলেন শামা মাকিং আপু। নামটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। উনি মারমা সম্প্রদায়ের ট্র্যাডিশন ড্রেস থামি পরে এসেছে। সিল্ক কাপড়ের হালকা সবুজ আর পেস্ট রঙের একটা খুব সুন্দর থামি পরেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। তার মেকআপটা বেশ সুন্দর ছিল। ব্লোন্ডিংটা বেশ সুন্দর হয়েছে। অনেকেই আছে মেকআপ করলে সাদা সাদা লাগে। কিন্তু উনাকে একদম ন্যাচারাল লাগছে। আমি শুরুতেই উনার মেকআপের প্রশংসা করেছি। পরিচয় পর্বে আমার পরিচয় দিলাম। তুমি করে বলব নাকি আপনি করে বলব এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এইচএসসি ব্যাচ জিজ্ঞেস করলে বললেন ২০০৮। আঙুল গুনে দেখছিলাম আরে বাবা অনেক সিনিয়র। আমি ভেবেছিলাম কাছাকাছি বা ব্যাচমেট হয়তো হবে। নন্দিতা আর সুর্মি দেখি উনার সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হচ্ছে। আমি ভাবলাম এমন অনন্য প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে অ্যাড না হওয়াটাই বরং বেমানান। ১২ হাজার ফলোয়াড় রেখে আমাদের অ্যাড করছেন। উনার আইডি খুঁজে না পাওয়ায় নিজের ফোনটা দিয়ে বললেন এখান থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দাও। আপুটা বেশ বিনয়ী। কণ্ঠাটা অনেক শ্রুতিমধুর। মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর শ্রুতিমধুর কণ্ঠ কিন্তু অনেক পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনক আমার কোনোটাই নেই। সঙ্গে থাকা সুর্মি এক আবৃত্তিশিল্পী দুই-চারটা কথা বললেই মনে হয় আমাকে নিয়ে কোনো কবিতা আবৃত্তি করছে।
ট্র্যাডিশনাল ড্রেস পরে আরও এসেছিলেন তেজশ্রী চাকমা আপু। উনাকেও বেশ সুন্দর লাগছিল। আমাদের সবার থেকে বিভিন্ন ড্রেস পরাতে উনাদের বেশ চোখে পড়ছিল। প্রথমবারের মতো দেশের অনন্য প্রতিভাবান ১০০ জনের সঙ্গে দেখা হলো। এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ইভেন্টে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথমবার তাঁকে সামনা-সামনি দেখলাম। আরও ছিলেন আমার প্রিয় একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ। প্রীতম হাসান, অর্ণব, চিরকুটের সুমি আপু, অবন্তী সিথি আপুসহ আরও অনেক তারকা। আরও ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নারী ফুটবলাররা। নানা আলোচনা কথাবার্তা ও কালচারাল প্রোগ্রাম শেষে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট শেষ হলো। ডিনারের আয়োজন ছিল। সবার সঙ্গে কথা কম বেশি কথা বলা হলো। সবাই ব্যস্ত তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে। পাঁচটা গ্রুপ করে গ্রুপ মেম্বারদের আলাদা করা হলো, ফ্লাইটের টাইম কাল দুপুর ১২টা। সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে সবাইকে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে বলা হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে ফাইনাল চেকিং দিয়ে লাগেজ লক করে দিলাম। কাল সকালে এক স্বপ্নযাত্রার উদ্দেশে শুয়ে পড়লাম। (চলবে).....
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা, পূর্ণতা, স্বচ্ছতা, সজীবতা। আমার বরাবরই বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে ভালো লাগে। বৃষ্টির ফোঁটা যখন টিনের চালে বা গাছের পাতায় পড়ে, সুন্দর একটা শব্দ হয়। শব্দটা সংগীতের মধুর বাদ্যযন্ত্র থেকে কোনো অংশে কম নয়।
ছাতা হাতে বের হয়ে গেলাম। ভাষানটেক বাজার থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত সিএনজি করে চলে এলাম। মিরপুর দশ চত্বরে অপেক্ষা করছিল আমার এক জুনিয়র আর কে সোহান। ওর সঙ্গেই বুট ক্যাম্পে যাব। আর কে সোহান ধালাদের প্রতিষ্ঠাতা। এটা মূলত একটা ব্র্যান্ড। যেটা আমাদের বাংলাদেশের লোকাল, ট্র্যাডিশনাল এবং হেরিটেজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিলুপ্তের হাত থেকে রক্ষা করা। এটা ই-কমার্স বেস্ড একটা স্টার্টআপ বিজনেস।
মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১ তারপর মিরপুর-১ থেকে ধানমন্ডির বাসে উঠলাম।
কলাবাগান বাস থেকে নামার মুহূর্তে একটা মেইল এল। শব্দটা কানে এসেছে। সঠিক লোকেশনটা না জানার কারণে ভুল করে কলাবাগান চলে এসেছি। তারপর আবার বাসে উঠে ধানমন্ডি ২৭-এর দিকে রওনা হলাম। ধানমন্ডি মিডাস টাওয়ার ইএমকে সেন্টার। কাক স্নান করে পৌঁছালাম। সকল প্রকার চেকিং শেষ করে প্রোগ্রামে উপস্থিত হলাম। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে মেইল আসছে। মুহূর্তেই অনেক এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য মেইল করেছে। বিষয়টা এরকম যে, আমাদের সবার পাসপোর্ট ঠিক আছে কিনা, যাদের পাসপোর্ট আছে তাদের আগামী তিন মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকা লাগবে। আর যাদের নেই, তাদের অতি দ্রুত পাসপোর্ট করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাসপোর্টের স্ক্যান কপি মেইল করতে বলা হয়েছে।
আমি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাসপোর্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়নি। আগামী ২০৩০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ। আদৌ কি আমার বিদেশ ভ্রমণ হবে? নাকি কোনো রকম ভিসা ছাড়াই আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে? ভাবতে ভাবতে প্রোগ্রামের স্পিকার চলে এসেছে। সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলাম। প্রোগ্রামটা মূলত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছে বা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। আমার আশপাশে এত এত নারী উদ্যোগতা তাদের দেখে বেশ ভালোই লাগছিল। তথাকথিত সমাজের চৌকাঠ পেরিয়ে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তাদের যদি সর্বোচ্চ সহায়তা ও সুযোগ দেওয়া হতো আমি বিশ্বাস করি নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং জিডিপি এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছে। কিছু সময় রেস্ট করে টিউশনে চলে গেলাম। নন্দিতা হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করেছে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আমার মেইল আসছে কি না, উত্তরে বললাম আসছে। সে জানাল, তারও আসছে। কিন্তু তার তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি, কী করবে এখন?
‘কবে করতে দিয়েছিলে?’
নন্দিতা বলল, ‘অনেক আগে, অডিশনের পরেই।’
‘টেনশন করব না। ২৬ তারিখ তো শেষ দিন। তার আগে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।’
‘তুমি কি স্ক্যান কপি মেইল করেছ?’
আমি বললাম, ‘না সারা দিন আজ বাইরে ছিলাম। শেষ দিন তো ২৬ তারিখ। আজকে ১৪ তারিখ, অনেক সময় বাকি। এর মধ্যেই করে দেব।’
নন্দিতা মেয়েটা অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। তার সঙ্গে কথা শেষ করে সুর্মিকে এসএমএস করলাম—কী অবস্থা তোমার, মেইল পেয়েছ?
সুর্মি বলল, ‘হ্যাঁ আপু, তুমি পেয়েছ?’
‘হ্যাঁ। নন্দিতাও মেইল পেয়েছে, কিন্তু ওর তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি।’
সুর্মি বলল, ‘আপু, আমারও হয়নি।’
আমি বললাম, ‘যত দ্রুত সম্ভব করে স্ক্যান কপি মেইল কর। আমার মনে হয় যাদের মোটামুটি সিলেক্ট করার মতো তাদের ভেরিফিকেশন মিল করেছে। যদি পাসপোর্ট ঠিক থাকে তাহলে হয়তো ফাইনাল সিলেকশন করে ফেলবে।’
সুর্মি বলল, ‘সম্ভবত আমারও তাই মনে হয়।’
‘যত দূর জানি, বিগত বছরগুলোয় যারা সিলেক্ট হয়েছিল তাদের মাঝে অনেকেরই পাসপোর্ট ঠিক না থাকার কারণে যেতে পারিনি। আল্লাহ ভরসা টেনশন কর না।’
খানিক বাদে আমার বান্ধবী সামিরা এসএমএস করল। সে লিখল, ‘মেইল আসছে তোর?’
‘হে দোস্ত, পাসপোর্ট মেইল করতে বলল।’
‘মেইলটা আমাকে ফরওয়ার্ড কর তো।’
‘করেছি, চেক কর।’
সামিরা বলল, ‘না আমার এমন কোনো মেইল আসেনি। হবে না আমার, গুড লাক দোস্ত।’
‘অপেক্ষা কর, হাজার হাজার মেইল সেন্ড করেছে। নেবে তো মাত্র ১০০ জন, মেইল ফরওয়ার্ড করতে তো একটু সময় লাগবে।’
সামিরার সাথে কথা শেষ করে গ্রুপে এসএমএস চেক করলাম। যারা যারা মেইল পেয়েছে সবাই শেয়ার করছে। এই নিয়ে গ্রুপে তুমুল আলোচনা। অডিশনের দিন ত্রিদিব দাদা বলেছিলেন আপনারা নিজেদের মাঝে কথা বলে নেটওয়ার্কিং বাড়ান। আর আমাদের নেটওয়ার্কিং গতি ফাইভ-জি ইন্টারনেটের থেকেও বেশি। মুহূর্তেই ১০০ জনের বেশি মেম্বার নিয়ে গ্রুপ খোলা হয়ে গেছে। আর সেই গ্রুপে চলে রাত দিন নানা আলোচনা।
সময় গড়িয়ে তিন-চার দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো পাসপোর্ট স্ক্যান কপি মেইল করা হয়নি। তখনই ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে মেইল করে দিলাম। একটা বিষয় ভাবলাম পাসপোর্টের মতো জঘন্য একটা ছবি দিয়ে কীভাবে মানুষ ভেরিফাই করে? আমার বর্তমান চেহারার সঙ্গে পাসপোর্টের চেহারার কোনো মিল নাই।
আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। পাসপোর্টের ছবি তোলার দিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম যখন রেডি ১ ২ ৩ বলবে, তখন একটা হাসি দেব। ওমা বলে হয়েছে গেছে, উঠে আসেন। কখন ছবি তুলল টেরই পেলাম না।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে ২৬ তারিখ। সুর্মি সঙ্গে কথা হলো সে পাসপোর্ট পেয়েছে। ইতিমধ্যে মেইল করে দিয়েছে। নন্দিতার সঙ্গে কথা বললাম বেচারি এখনো পায়নি আজ রাত ১২টায় শেষ সময়। ২৭ সেপ্টেম্বর আবার নন্দিতা এসএমএস করল। তার পাসপোর্ট পাইছে। আমি বললাম কোনো সমস্যা নাই এখনই ছবি তুলে মেইল করে দে। উত্তর সে বলল অলরেডি করে দিছি। বেশ দেখা যাক কী হয়, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অন্য এক স্টুডেন্টকে পড়াতে এসেছি। খানিক বাদে দেখি বিওয়াইডি ২২ গ্রুপে অনেক এসএমএস আসছে। মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখি ফাইনাল সিলেকশনের মেইল সবাই স্ক্রিনশট দিয়ে গ্রুপে দিয়েছে। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহ আল্লাহ করে মেইলে ঢুকলাম। দেখি কোনো মেইল আসেনি। মুহূর্তেই মনের আকাশে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম, আমি তো অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো হয়ে যাবে। ভারত ভ্রমণ নিয়ে কত চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন দেখলাম। আর এখন হলো না। ভাবতে ভাবতে মেইলটা একটু রিফ্রেস করতেই সামনে চলে এল ‘ফাইনাল সিলেকশন ফর বাংলাদেশ ইয়থ ডেলিগেশন-২০২২ প্রোগ্রাম’। চোখ দুটো কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। ইয়াহু বলে একটু চেয়ার আপ করলাম। আমার পিচ্চি স্টুডেন্ট বলে উঠল আপু কী হয়েছে? আমি বললাম আমার ইন্ডিয়া যাওয়া কনফার্ম। আমি সিলেক্ট হয়েছি। এই পিচ্ছি বরাবরই আমাকে অনেক অনেক বেশি কোশ্চেন করে। আজ আমার রক্ষা নেই। আমার সঙ্গে সেও চেয়ার আপ করা শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে কাছের মানুষদের ফোন দিয়ে সুখবরটা জানাতে লাগলাম। মাথায় এল সুর্মি আর নন্দিতার কথা।
তখনই সুর্মিকে নক দিলাম কী খবর।
সে বলল, ‘আপু, আলহামদুলিল্লাহ, সিলেক্ট হয়েছি। তুমি?’
‘আমিও।’ সুর্মি দেখি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড।
‘নন্দিতাদির খবর জান?’
‘না। এখন ওরে নক দিয়ে দেখি।’
নন্দিতাকে নক দিলাম, বলল ওর হয়নি। আমি আবারো তাকে আশ্বাস দিলাম একটু অপেক্ষা কর, ওয়েটিং লিস্ট থেকে অনেককে ডাকে।
সে বলল, ‘আমার মনে হয় আর হবে না।’
মেয়েটার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। ভেবেছিলাম তিনজন একসঙ্গে যেতে পারব।
ভিসার জন্য আবেদন করার সময় দিয়েছে ৩ তারিখ। যে যেখান থেকে আবেদন করুক ৩ তারিখ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে অনলাইন ভিসার আবেদন ফরম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ। রুমে ফিরে এসে বিষয়টা রুমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করলাম আর আমার পরিবারকে জানালাম। সবাই অনেক খুশি আমার পরিবার বরাবরই আমাকে সাপোর্ট করে আসছে। ২০১৬ সালের যখন অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রথমবারের মতো বাসা, পরিবার ছেড়ে আসি, মা বিদায় বেলা বলে দিয়েছিল আমরা তোমাকে কোনো কিছুতে না করি না, যখন যা করতে চেয়েছ সুযোগ দিয়েছি। আজকের পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হবে, যা কিছুই কর না কেন একটা কথা মাথায় রেখ, তোমার কোনো কাজের জন্য যেন তোমার বাবা বা পরিবারের অসম্মান না হয়। তোমাকে অনেক স্বাধীনতাই দেওয়া হচ্ছে। মা-এর সেই কথাটা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি আমার পরিবারের সম্মান যেন অটুট থাকে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই কোনো কাজ করার আগে নিজ পরিবারের কথা একবার হলেও ভেবে দেখা উচিত।
দিনশেষে পরিবারই ভরসা।
বিষয়টা আমার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক প্রায় সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিল। একটা বিষয় চিন্তা করলাম আপনি যখন ভালো কিছু করবেন বা কোনো কাজে সফল হবেন তখন চারপাশ থেকে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। যাকে আপনি চিনেনও না সেও আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। কিন্তু আপনি কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার হাতটা ধরে তুলে দাঁড়ানোর মানুষ খুব কমই পাবেন। জীবন যুদ্ধে চলার পথে উঠে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়ার মতো একটা মানুষ সবার জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন। সব কাজ শেষে রাতের বেলায় বসলাম অনলাইন ভিসা আবেদন করতে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভিসা আবেদন করব। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা আবেদনে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। অনেক জটিল প্রসেস। অনেক ইনফরমেশন দিতে হচ্ছে। টেকনিক্যাল সমস্যা আর সার্ভার ডাউন থাকার কারণে আমি তিনবার চেষ্টা করার পর সফলভাবে আবেদন করতে সক্ষম হই।
একটা বিষয় খুব কষ্টকর। যেমন আমি ভিসা আবেদনের জন্য দুইটা বা তিনটা স্টেজ পার করে পরের স্টেজে গেলাম কোনো কারণে সাবমিট হচ্ছে না। রিলোড দেওয়ার পর আবার প্রথম টেস্ট থেকে শুরু করতে হয়। এই বিষয়টা খুবই বেদনাদায়ক ও কষ্টকর। আবার সব ইনফরমেশন শুরু থেকে দিতে হয়। এটা শুধু ভিসা আবেদনের জন্য না সব ক্ষেত্রেই হয়।
রুমমেটকে বিষয়টা বলার পর সে বলে এত প্যারা নেওয়ার দরকার কী? দোকানে গিয়ে আবেদন করে এলেই তো হয়। আমার সব কাজ আমি নিজে নিজে করি। প্রয়োজনে আশপাশের মানুষদেরও কাজ করে দেই।
আজ ৩ অক্টোবর। সকাল ১০টার মধ্যে ইন্ডিয়া ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আমার এরিয়া থেকে অনেকটাই কাছে তারপরও সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম। রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, রাস্তা ভেজা, পানি জমে আছে। যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে আমি রীতিমতো অবাক! মেইন গেটের একটু পর থেকে লম্বা লাইন। বাইরে তখন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। লাইন ধরে ভেতরে গেলে আজকে আর আবেদন করা সম্ভব না। আর ভিজে একাকার হয়ে যাব। লাইন ছেড়ে একদম ভিসা সেন্টারে গেটে চলে এলাম। একটু বুদ্ধি করে বিওয়াইডি মেম্বার বলে পরিচয় দেওয়ায় সোজা ভেতরে চলে আসার পারমিশন দিল। সিকিউরিটি চেকিং শেষ করে ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকে চোখ কপালে উঠে গেল। হাজার হাজার মানুষ, দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সুর্মিকে ফোন দিয়ে দেখা করলাম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি সবার হাতে পাসপোর্ট। কারও হাতে একাধিক। সুর্মিকে জিজ্ঞেস করলাম পাসপোর্টও কি জমা দেওয়া লাগবে? সঙ্গে থাকা এক বড় ভাই বলল হ্যাঁ অবশ্যই, পাসপোর্ট না দিলে আপনার ভিসা কোথায় দেবে? তখন পর্যন্ত ভিসা কী জিনিস না জানা আমি, না দেখা আমি! মাথায় বাজ পড়ল। বড় ভাই বলল, আপনার বাসা কোথায়?
‘ক্যান্টনমেন্টে ভাই।’
কাছেই তো আছে দ্রুত গিয়ে নিয়ে আসুন। আমার সিরিয়াল ৪৭, এখন চলে ৯ নাম্বার। আমার সিরিয়াল আসার আগে চলে আসা লাগবে। বের হওয়ার রাস্তাটা এতটাও সহজ ছিল না। অনেক মানুষের ধাক্কাধাক্কি খেয়ে শেষে যমুনা ফিউচার পার্কের বাইরে এলাম। সময় বাঁচানোর জন্য পাঠাও রাইড নেওয়ার চিন্তা করলাম। ভাড়া চেয়ে বসল ৩৫০ টাকা। ১০-১৫ মিনিট আগে ইসিবি চত্বর থেকে এলাম ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এত চাইলে তো হবে না।
বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। আমার হোস্টেলে যেতে না যেতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ড্রাইভার মামাকে বললাম, মামা আমি আবার যাব। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন। আমি যাব আর আসব। এ সময় ড্রাইভার ছেড়ে দেওয়াটা চরম বোকামি হবে। আমার এরিয়াতে কিছুই পাওয়া যায় না। রিকশায় উঠতে গেলেও ২০ মিনিট পথ হেঁটে তারপর উঠা লাগে।
দ্রুত ওপরে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে এলাম। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ড্রাইভার মামাকে ক্যান্টিনে নিয়ে কফি খাওয়ালাম। স্টাফ আঙ্কেল জিজ্ঞেস করছিল, কী হয়? আমার কোনো আত্মীয় কি না। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। উনার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কেটে গেল প্রায় ৪০ মিনিট। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। আবার ওপরে গিয়ে রুম থেকে একটা ছাতা নিয়ে এলাম। সুর্মিকে ফোন দিলাম ওর কাজ শেষ বাসার দিকে রওনা হবে।
খানিক বাদে মামাকে বললাম, মামা চলেন এভাবে বসে থাকলে চলবে না। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বের হলাম, বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস। ড্রাইভার মামার সামনের দিক পুরোটাই ভিজে গেছে। এত বাতাস ছাতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খুব কষ্ট করে যমুনা ফিউচার পার্কে চলে এলাম। ড্রাইভার মামাকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
শপিংমলের গেট এখনো খোলেনি, আরও ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। একটু চিন্তা করে দোতলায় চলে গেলাম। এদিকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেক রিকোয়েস্ট করে ভেতরে ঢুকলাম। আমার শরীর অর্ধেক ভেজা, জুতা-মোজা ভিজে অনেক ভারী হয়ে গেছে। হাঁটার সময় একটা শব্দ হচ্ছিল, কী এক বিব্রতকর অবস্থা।
ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকলাম, সিরিয়াল চলছে কেবল ৩৯। যাক আমি ভালো সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। লাইনে দাঁড়ালাম আশপাশে শুধু বিওআইডি শোনা যাচ্ছে, বুঝতে পারলাম সবাই বিওআইডি মেম্বার। পরিচিত কেউ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলে পরিচিত হলাম ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে। সরকারি আইন ও বিচার বিভাগে কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করতে আসছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না এত মানুষ থাকবে। কেউ ট্যুরিস্ট ভিসা, কেউ চিকিৎসা ভিসা, কেউ ফরেন ভিসা, নানা ভিসার লোকজন এসেছে। অনেক সময় বাদে ভিসার সব রকম কাজ সম্পন্ন করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বের হলাম।
ভিসা কবে দেবে কেউ জানে না, গ্রুপে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। মানে গ্রুপে এমন হয়ে গেছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছেই। আমাদের যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করেছে ১২ থেকে ১৯ অক্টোবর। ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট হবে ১১ অক্টোবর। গত ছয় অক্টোবর ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের ইনভাইটেশন মেইল আসছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বনানী শেরাটন হোটেলে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের প্রোগ্রাম। বিষয়টা মোটেও পছন্দ হলো না ১০ তারিখ হওয়ার কথা ছিল সেটা পরিবর্তন করে ১১ তারিখ করা হলো, ১২ তারিখ যাত্রা, ফ্লাইট কখন তাও জানি না। জিনিসপত্র গোছানোর একটা বিষয় আছে। কত কেজি পর্যন্ত নিতে পারব? কী কী জিনিস নেওয়া যাবে, অনেক তথ্য জানা বাকি। সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে লাগেজটা মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছি।
১১ তারিখের মধ্যে অফিস ও হোস্টেল থেকে ছুটি নেওয়ার কাজ শেষ করলাম। অফিস থেকে সাত দিন, হোস্টেল থেকে আট দিন ছুটি পাওয়া গেল।
সময়ের পালা বদল করে চলে এল ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের দিন। সকাল থেকেই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। গত রাতে অফিসের সব কাজ করে জমা দিয়ে দিয়েছি। অনেকটা রিলাক্স লাগছে। হোস্টেলের বন্ধুবান্ধব-জুনিয়ররা বেশ চেয়ার আপ করছে। এমন একটা বিষয় না জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। বিকেল পাঁচটার দিকে একটু ফিটফাট হয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় খুব বেশি ট্রাফিক না থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। নন্দিতাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন পর্যন্ত আসছে, সামনে তাকিয়ে দেখি সে ভেতরে আসছে একসঙ্গে ইভেন্টে পৌঁছালাম। বেশ লম্বা একটা লাইন। অনেক মানুষ আসছে, সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইয়েরা যার যার মতো ফুটেজ নিতে ব্যস্ত।
ভিসা সেন্টার থেকে দেওয়া টিকিট জমা দিলে ত্রিদিব দাদা হাতে পাসপোর্টটা দিয়ে দিলেন। পাশের টেবিল থেকে তন্ময় দাদা একটা আইডি কার্ড, কোট ব্যাচ, এল সাইজ একটা টি-শার্ট আর বিওইডির লোগো দেওয়া ব্যাগ দিয়ে ভেতরে যেতে বললেন। পাশেই ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের বড় ব্যানারের ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। আমি জিনিসগুলো ব্যাগের ভেতরে রেখে আগে পাসপোর্টটা খুলে দেখতে শুরু করলাম। ভিসা জিনিসটা দেখতে কেমন! সেদিন এ জিনিসটার জন্য অনেক দৌড় দৌড়াতে হলো। দেখার পর আমার রিঅ্যাকশন, ও এটা দেখতে এমন! তাহলে গলা কাটা ভিসা দেখতে কেমন? আমার কৌতূহলী মন।
পেছন থেকে সুর্মি ডাকছে আগে ফারজানা আপু পাসপোর্ট রেখে এদিকে আসো ছবি তুলি। সঙ্গে নন্দিতাকে ডেকে নিয়ে গেলাম। বেচারি মানুষের এত এত ছবি তোলা দেখে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এত ছবি তুলে কী করবে। ফটোসেশন শেষে আসন গ্রহণ করলাম। কারণ ওই দিকে ইসরাত পায়েল আপু মাইক্রোফোনে আসন গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছেন।
একটা সারিতে আমি, সুর্মি আর নন্দিতা সঙ্গে বসলেন শামা মাকিং আপু। নামটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। উনি মারমা সম্প্রদায়ের ট্র্যাডিশন ড্রেস থামি পরে এসেছে। সিল্ক কাপড়ের হালকা সবুজ আর পেস্ট রঙের একটা খুব সুন্দর থামি পরেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। তার মেকআপটা বেশ সুন্দর ছিল। ব্লোন্ডিংটা বেশ সুন্দর হয়েছে। অনেকেই আছে মেকআপ করলে সাদা সাদা লাগে। কিন্তু উনাকে একদম ন্যাচারাল লাগছে। আমি শুরুতেই উনার মেকআপের প্রশংসা করেছি। পরিচয় পর্বে আমার পরিচয় দিলাম। তুমি করে বলব নাকি আপনি করে বলব এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এইচএসসি ব্যাচ জিজ্ঞেস করলে বললেন ২০০৮। আঙুল গুনে দেখছিলাম আরে বাবা অনেক সিনিয়র। আমি ভেবেছিলাম কাছাকাছি বা ব্যাচমেট হয়তো হবে। নন্দিতা আর সুর্মি দেখি উনার সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হচ্ছে। আমি ভাবলাম এমন অনন্য প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে অ্যাড না হওয়াটাই বরং বেমানান। ১২ হাজার ফলোয়াড় রেখে আমাদের অ্যাড করছেন। উনার আইডি খুঁজে না পাওয়ায় নিজের ফোনটা দিয়ে বললেন এখান থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দাও। আপুটা বেশ বিনয়ী। কণ্ঠাটা অনেক শ্রুতিমধুর। মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর শ্রুতিমধুর কণ্ঠ কিন্তু অনেক পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনক আমার কোনোটাই নেই। সঙ্গে থাকা সুর্মি এক আবৃত্তিশিল্পী দুই-চারটা কথা বললেই মনে হয় আমাকে নিয়ে কোনো কবিতা আবৃত্তি করছে।
ট্র্যাডিশনাল ড্রেস পরে আরও এসেছিলেন তেজশ্রী চাকমা আপু। উনাকেও বেশ সুন্দর লাগছিল। আমাদের সবার থেকে বিভিন্ন ড্রেস পরাতে উনাদের বেশ চোখে পড়ছিল। প্রথমবারের মতো দেশের অনন্য প্রতিভাবান ১০০ জনের সঙ্গে দেখা হলো। এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ইভেন্টে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথমবার তাঁকে সামনা-সামনি দেখলাম। আরও ছিলেন আমার প্রিয় একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ। প্রীতম হাসান, অর্ণব, চিরকুটের সুমি আপু, অবন্তী সিথি আপুসহ আরও অনেক তারকা। আরও ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নারী ফুটবলাররা। নানা আলোচনা কথাবার্তা ও কালচারাল প্রোগ্রাম শেষে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট শেষ হলো। ডিনারের আয়োজন ছিল। সবার সঙ্গে কথা কম বেশি কথা বলা হলো। সবাই ব্যস্ত তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে। পাঁচটা গ্রুপ করে গ্রুপ মেম্বারদের আলাদা করা হলো, ফ্লাইটের টাইম কাল দুপুর ১২টা। সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে সবাইকে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে বলা হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে ফাইনাল চেকিং দিয়ে লাগেজ লক করে দিলাম। কাল সকালে এক স্বপ্নযাত্রার উদ্দেশে শুয়ে পড়লাম। (চলবে).....
ফারজানা লিজা
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা, পূর্ণতা, স্বচ্ছতা, সজীবতা। আমার বরাবরই বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে ভালো লাগে। বৃষ্টির ফোঁটা যখন টিনের চালে বা গাছের পাতায় পড়ে, সুন্দর একটা শব্দ হয়। শব্দটা সংগীতের মধুর বাদ্যযন্ত্র থেকে কোনো অংশে কম নয়।
ছাতা হাতে বের হয়ে গেলাম। ভাষানটেক বাজার থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত সিএনজি করে চলে এলাম। মিরপুর দশ চত্বরে অপেক্ষা করছিল আমার এক জুনিয়র আর কে সোহান। ওর সঙ্গেই বুট ক্যাম্পে যাব। আর কে সোহান ধালাদের প্রতিষ্ঠাতা। এটা মূলত একটা ব্র্যান্ড। যেটা আমাদের বাংলাদেশের লোকাল, ট্র্যাডিশনাল এবং হেরিটেজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিলুপ্তের হাত থেকে রক্ষা করা। এটা ই-কমার্স বেস্ড একটা স্টার্টআপ বিজনেস।
মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১ তারপর মিরপুর-১ থেকে ধানমন্ডির বাসে উঠলাম।
কলাবাগান বাস থেকে নামার মুহূর্তে একটা মেইল এল। শব্দটা কানে এসেছে। সঠিক লোকেশনটা না জানার কারণে ভুল করে কলাবাগান চলে এসেছি। তারপর আবার বাসে উঠে ধানমন্ডি ২৭-এর দিকে রওনা হলাম। ধানমন্ডি মিডাস টাওয়ার ইএমকে সেন্টার। কাক স্নান করে পৌঁছালাম। সকল প্রকার চেকিং শেষ করে প্রোগ্রামে উপস্থিত হলাম। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে মেইল আসছে। মুহূর্তেই অনেক এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য মেইল করেছে। বিষয়টা এরকম যে, আমাদের সবার পাসপোর্ট ঠিক আছে কিনা, যাদের পাসপোর্ট আছে তাদের আগামী তিন মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকা লাগবে। আর যাদের নেই, তাদের অতি দ্রুত পাসপোর্ট করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাসপোর্টের স্ক্যান কপি মেইল করতে বলা হয়েছে।
আমি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাসপোর্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়নি। আগামী ২০৩০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ। আদৌ কি আমার বিদেশ ভ্রমণ হবে? নাকি কোনো রকম ভিসা ছাড়াই আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে? ভাবতে ভাবতে প্রোগ্রামের স্পিকার চলে এসেছে। সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলাম। প্রোগ্রামটা মূলত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছে বা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। আমার আশপাশে এত এত নারী উদ্যোগতা তাদের দেখে বেশ ভালোই লাগছিল। তথাকথিত সমাজের চৌকাঠ পেরিয়ে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তাদের যদি সর্বোচ্চ সহায়তা ও সুযোগ দেওয়া হতো আমি বিশ্বাস করি নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং জিডিপি এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছে। কিছু সময় রেস্ট করে টিউশনে চলে গেলাম। নন্দিতা হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করেছে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আমার মেইল আসছে কি না, উত্তরে বললাম আসছে। সে জানাল, তারও আসছে। কিন্তু তার তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি, কী করবে এখন?
‘কবে করতে দিয়েছিলে?’
নন্দিতা বলল, ‘অনেক আগে, অডিশনের পরেই।’
‘টেনশন করব না। ২৬ তারিখ তো শেষ দিন। তার আগে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।’
‘তুমি কি স্ক্যান কপি মেইল করেছ?’
আমি বললাম, ‘না সারা দিন আজ বাইরে ছিলাম। শেষ দিন তো ২৬ তারিখ। আজকে ১৪ তারিখ, অনেক সময় বাকি। এর মধ্যেই করে দেব।’
নন্দিতা মেয়েটা অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। তার সঙ্গে কথা শেষ করে সুর্মিকে এসএমএস করলাম—কী অবস্থা তোমার, মেইল পেয়েছ?
সুর্মি বলল, ‘হ্যাঁ আপু, তুমি পেয়েছ?’
‘হ্যাঁ। নন্দিতাও মেইল পেয়েছে, কিন্তু ওর তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি।’
সুর্মি বলল, ‘আপু, আমারও হয়নি।’
আমি বললাম, ‘যত দ্রুত সম্ভব করে স্ক্যান কপি মেইল কর। আমার মনে হয় যাদের মোটামুটি সিলেক্ট করার মতো তাদের ভেরিফিকেশন মিল করেছে। যদি পাসপোর্ট ঠিক থাকে তাহলে হয়তো ফাইনাল সিলেকশন করে ফেলবে।’
সুর্মি বলল, ‘সম্ভবত আমারও তাই মনে হয়।’
‘যত দূর জানি, বিগত বছরগুলোয় যারা সিলেক্ট হয়েছিল তাদের মাঝে অনেকেরই পাসপোর্ট ঠিক না থাকার কারণে যেতে পারিনি। আল্লাহ ভরসা টেনশন কর না।’
খানিক বাদে আমার বান্ধবী সামিরা এসএমএস করল। সে লিখল, ‘মেইল আসছে তোর?’
‘হে দোস্ত, পাসপোর্ট মেইল করতে বলল।’
‘মেইলটা আমাকে ফরওয়ার্ড কর তো।’
‘করেছি, চেক কর।’
সামিরা বলল, ‘না আমার এমন কোনো মেইল আসেনি। হবে না আমার, গুড লাক দোস্ত।’
‘অপেক্ষা কর, হাজার হাজার মেইল সেন্ড করেছে। নেবে তো মাত্র ১০০ জন, মেইল ফরওয়ার্ড করতে তো একটু সময় লাগবে।’
সামিরার সাথে কথা শেষ করে গ্রুপে এসএমএস চেক করলাম। যারা যারা মেইল পেয়েছে সবাই শেয়ার করছে। এই নিয়ে গ্রুপে তুমুল আলোচনা। অডিশনের দিন ত্রিদিব দাদা বলেছিলেন আপনারা নিজেদের মাঝে কথা বলে নেটওয়ার্কিং বাড়ান। আর আমাদের নেটওয়ার্কিং গতি ফাইভ-জি ইন্টারনেটের থেকেও বেশি। মুহূর্তেই ১০০ জনের বেশি মেম্বার নিয়ে গ্রুপ খোলা হয়ে গেছে। আর সেই গ্রুপে চলে রাত দিন নানা আলোচনা।
সময় গড়িয়ে তিন-চার দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো পাসপোর্ট স্ক্যান কপি মেইল করা হয়নি। তখনই ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে মেইল করে দিলাম। একটা বিষয় ভাবলাম পাসপোর্টের মতো জঘন্য একটা ছবি দিয়ে কীভাবে মানুষ ভেরিফাই করে? আমার বর্তমান চেহারার সঙ্গে পাসপোর্টের চেহারার কোনো মিল নাই।
আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। পাসপোর্টের ছবি তোলার দিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম যখন রেডি ১ ২ ৩ বলবে, তখন একটা হাসি দেব। ওমা বলে হয়েছে গেছে, উঠে আসেন। কখন ছবি তুলল টেরই পেলাম না।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে ২৬ তারিখ। সুর্মি সঙ্গে কথা হলো সে পাসপোর্ট পেয়েছে। ইতিমধ্যে মেইল করে দিয়েছে। নন্দিতার সঙ্গে কথা বললাম বেচারি এখনো পায়নি আজ রাত ১২টায় শেষ সময়। ২৭ সেপ্টেম্বর আবার নন্দিতা এসএমএস করল। তার পাসপোর্ট পাইছে। আমি বললাম কোনো সমস্যা নাই এখনই ছবি তুলে মেইল করে দে। উত্তর সে বলল অলরেডি করে দিছি। বেশ দেখা যাক কী হয়, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অন্য এক স্টুডেন্টকে পড়াতে এসেছি। খানিক বাদে দেখি বিওয়াইডি ২২ গ্রুপে অনেক এসএমএস আসছে। মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখি ফাইনাল সিলেকশনের মেইল সবাই স্ক্রিনশট দিয়ে গ্রুপে দিয়েছে। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহ আল্লাহ করে মেইলে ঢুকলাম। দেখি কোনো মেইল আসেনি। মুহূর্তেই মনের আকাশে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম, আমি তো অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো হয়ে যাবে। ভারত ভ্রমণ নিয়ে কত চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন দেখলাম। আর এখন হলো না। ভাবতে ভাবতে মেইলটা একটু রিফ্রেস করতেই সামনে চলে এল ‘ফাইনাল সিলেকশন ফর বাংলাদেশ ইয়থ ডেলিগেশন-২০২২ প্রোগ্রাম’। চোখ দুটো কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। ইয়াহু বলে একটু চেয়ার আপ করলাম। আমার পিচ্চি স্টুডেন্ট বলে উঠল আপু কী হয়েছে? আমি বললাম আমার ইন্ডিয়া যাওয়া কনফার্ম। আমি সিলেক্ট হয়েছি। এই পিচ্ছি বরাবরই আমাকে অনেক অনেক বেশি কোশ্চেন করে। আজ আমার রক্ষা নেই। আমার সঙ্গে সেও চেয়ার আপ করা শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে কাছের মানুষদের ফোন দিয়ে সুখবরটা জানাতে লাগলাম। মাথায় এল সুর্মি আর নন্দিতার কথা।
তখনই সুর্মিকে নক দিলাম কী খবর।
সে বলল, ‘আপু, আলহামদুলিল্লাহ, সিলেক্ট হয়েছি। তুমি?’
‘আমিও।’ সুর্মি দেখি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড।
‘নন্দিতাদির খবর জান?’
‘না। এখন ওরে নক দিয়ে দেখি।’
নন্দিতাকে নক দিলাম, বলল ওর হয়নি। আমি আবারো তাকে আশ্বাস দিলাম একটু অপেক্ষা কর, ওয়েটিং লিস্ট থেকে অনেককে ডাকে।
সে বলল, ‘আমার মনে হয় আর হবে না।’
মেয়েটার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। ভেবেছিলাম তিনজন একসঙ্গে যেতে পারব।
ভিসার জন্য আবেদন করার সময় দিয়েছে ৩ তারিখ। যে যেখান থেকে আবেদন করুক ৩ তারিখ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে অনলাইন ভিসার আবেদন ফরম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ। রুমে ফিরে এসে বিষয়টা রুমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করলাম আর আমার পরিবারকে জানালাম। সবাই অনেক খুশি আমার পরিবার বরাবরই আমাকে সাপোর্ট করে আসছে। ২০১৬ সালের যখন অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রথমবারের মতো বাসা, পরিবার ছেড়ে আসি, মা বিদায় বেলা বলে দিয়েছিল আমরা তোমাকে কোনো কিছুতে না করি না, যখন যা করতে চেয়েছ সুযোগ দিয়েছি। আজকের পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হবে, যা কিছুই কর না কেন একটা কথা মাথায় রেখ, তোমার কোনো কাজের জন্য যেন তোমার বাবা বা পরিবারের অসম্মান না হয়। তোমাকে অনেক স্বাধীনতাই দেওয়া হচ্ছে। মা-এর সেই কথাটা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি আমার পরিবারের সম্মান যেন অটুট থাকে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই কোনো কাজ করার আগে নিজ পরিবারের কথা একবার হলেও ভেবে দেখা উচিত।
দিনশেষে পরিবারই ভরসা।
বিষয়টা আমার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক প্রায় সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিল। একটা বিষয় চিন্তা করলাম আপনি যখন ভালো কিছু করবেন বা কোনো কাজে সফল হবেন তখন চারপাশ থেকে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। যাকে আপনি চিনেনও না সেও আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। কিন্তু আপনি কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার হাতটা ধরে তুলে দাঁড়ানোর মানুষ খুব কমই পাবেন। জীবন যুদ্ধে চলার পথে উঠে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়ার মতো একটা মানুষ সবার জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন। সব কাজ শেষে রাতের বেলায় বসলাম অনলাইন ভিসা আবেদন করতে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভিসা আবেদন করব। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা আবেদনে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। অনেক জটিল প্রসেস। অনেক ইনফরমেশন দিতে হচ্ছে। টেকনিক্যাল সমস্যা আর সার্ভার ডাউন থাকার কারণে আমি তিনবার চেষ্টা করার পর সফলভাবে আবেদন করতে সক্ষম হই।
একটা বিষয় খুব কষ্টকর। যেমন আমি ভিসা আবেদনের জন্য দুইটা বা তিনটা স্টেজ পার করে পরের স্টেজে গেলাম কোনো কারণে সাবমিট হচ্ছে না। রিলোড দেওয়ার পর আবার প্রথম টেস্ট থেকে শুরু করতে হয়। এই বিষয়টা খুবই বেদনাদায়ক ও কষ্টকর। আবার সব ইনফরমেশন শুরু থেকে দিতে হয়। এটা শুধু ভিসা আবেদনের জন্য না সব ক্ষেত্রেই হয়।
রুমমেটকে বিষয়টা বলার পর সে বলে এত প্যারা নেওয়ার দরকার কী? দোকানে গিয়ে আবেদন করে এলেই তো হয়। আমার সব কাজ আমি নিজে নিজে করি। প্রয়োজনে আশপাশের মানুষদেরও কাজ করে দেই।
আজ ৩ অক্টোবর। সকাল ১০টার মধ্যে ইন্ডিয়া ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আমার এরিয়া থেকে অনেকটাই কাছে তারপরও সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম। রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, রাস্তা ভেজা, পানি জমে আছে। যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে আমি রীতিমতো অবাক! মেইন গেটের একটু পর থেকে লম্বা লাইন। বাইরে তখন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। লাইন ধরে ভেতরে গেলে আজকে আর আবেদন করা সম্ভব না। আর ভিজে একাকার হয়ে যাব। লাইন ছেড়ে একদম ভিসা সেন্টারে গেটে চলে এলাম। একটু বুদ্ধি করে বিওয়াইডি মেম্বার বলে পরিচয় দেওয়ায় সোজা ভেতরে চলে আসার পারমিশন দিল। সিকিউরিটি চেকিং শেষ করে ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকে চোখ কপালে উঠে গেল। হাজার হাজার মানুষ, দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সুর্মিকে ফোন দিয়ে দেখা করলাম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি সবার হাতে পাসপোর্ট। কারও হাতে একাধিক। সুর্মিকে জিজ্ঞেস করলাম পাসপোর্টও কি জমা দেওয়া লাগবে? সঙ্গে থাকা এক বড় ভাই বলল হ্যাঁ অবশ্যই, পাসপোর্ট না দিলে আপনার ভিসা কোথায় দেবে? তখন পর্যন্ত ভিসা কী জিনিস না জানা আমি, না দেখা আমি! মাথায় বাজ পড়ল। বড় ভাই বলল, আপনার বাসা কোথায়?
‘ক্যান্টনমেন্টে ভাই।’
কাছেই তো আছে দ্রুত গিয়ে নিয়ে আসুন। আমার সিরিয়াল ৪৭, এখন চলে ৯ নাম্বার। আমার সিরিয়াল আসার আগে চলে আসা লাগবে। বের হওয়ার রাস্তাটা এতটাও সহজ ছিল না। অনেক মানুষের ধাক্কাধাক্কি খেয়ে শেষে যমুনা ফিউচার পার্কের বাইরে এলাম। সময় বাঁচানোর জন্য পাঠাও রাইড নেওয়ার চিন্তা করলাম। ভাড়া চেয়ে বসল ৩৫০ টাকা। ১০-১৫ মিনিট আগে ইসিবি চত্বর থেকে এলাম ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এত চাইলে তো হবে না।
বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। আমার হোস্টেলে যেতে না যেতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ড্রাইভার মামাকে বললাম, মামা আমি আবার যাব। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন। আমি যাব আর আসব। এ সময় ড্রাইভার ছেড়ে দেওয়াটা চরম বোকামি হবে। আমার এরিয়াতে কিছুই পাওয়া যায় না। রিকশায় উঠতে গেলেও ২০ মিনিট পথ হেঁটে তারপর উঠা লাগে।
দ্রুত ওপরে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে এলাম। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ড্রাইভার মামাকে ক্যান্টিনে নিয়ে কফি খাওয়ালাম। স্টাফ আঙ্কেল জিজ্ঞেস করছিল, কী হয়? আমার কোনো আত্মীয় কি না। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। উনার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কেটে গেল প্রায় ৪০ মিনিট। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। আবার ওপরে গিয়ে রুম থেকে একটা ছাতা নিয়ে এলাম। সুর্মিকে ফোন দিলাম ওর কাজ শেষ বাসার দিকে রওনা হবে।
খানিক বাদে মামাকে বললাম, মামা চলেন এভাবে বসে থাকলে চলবে না। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বের হলাম, বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস। ড্রাইভার মামার সামনের দিক পুরোটাই ভিজে গেছে। এত বাতাস ছাতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খুব কষ্ট করে যমুনা ফিউচার পার্কে চলে এলাম। ড্রাইভার মামাকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
শপিংমলের গেট এখনো খোলেনি, আরও ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। একটু চিন্তা করে দোতলায় চলে গেলাম। এদিকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেক রিকোয়েস্ট করে ভেতরে ঢুকলাম। আমার শরীর অর্ধেক ভেজা, জুতা-মোজা ভিজে অনেক ভারী হয়ে গেছে। হাঁটার সময় একটা শব্দ হচ্ছিল, কী এক বিব্রতকর অবস্থা।
ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকলাম, সিরিয়াল চলছে কেবল ৩৯। যাক আমি ভালো সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। লাইনে দাঁড়ালাম আশপাশে শুধু বিওআইডি শোনা যাচ্ছে, বুঝতে পারলাম সবাই বিওআইডি মেম্বার। পরিচিত কেউ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলে পরিচিত হলাম ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে। সরকারি আইন ও বিচার বিভাগে কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করতে আসছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না এত মানুষ থাকবে। কেউ ট্যুরিস্ট ভিসা, কেউ চিকিৎসা ভিসা, কেউ ফরেন ভিসা, নানা ভিসার লোকজন এসেছে। অনেক সময় বাদে ভিসার সব রকম কাজ সম্পন্ন করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বের হলাম।
ভিসা কবে দেবে কেউ জানে না, গ্রুপে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। মানে গ্রুপে এমন হয়ে গেছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছেই। আমাদের যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করেছে ১২ থেকে ১৯ অক্টোবর। ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট হবে ১১ অক্টোবর। গত ছয় অক্টোবর ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের ইনভাইটেশন মেইল আসছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বনানী শেরাটন হোটেলে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের প্রোগ্রাম। বিষয়টা মোটেও পছন্দ হলো না ১০ তারিখ হওয়ার কথা ছিল সেটা পরিবর্তন করে ১১ তারিখ করা হলো, ১২ তারিখ যাত্রা, ফ্লাইট কখন তাও জানি না। জিনিসপত্র গোছানোর একটা বিষয় আছে। কত কেজি পর্যন্ত নিতে পারব? কী কী জিনিস নেওয়া যাবে, অনেক তথ্য জানা বাকি। সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে লাগেজটা মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছি।
১১ তারিখের মধ্যে অফিস ও হোস্টেল থেকে ছুটি নেওয়ার কাজ শেষ করলাম। অফিস থেকে সাত দিন, হোস্টেল থেকে আট দিন ছুটি পাওয়া গেল।
সময়ের পালা বদল করে চলে এল ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের দিন। সকাল থেকেই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। গত রাতে অফিসের সব কাজ করে জমা দিয়ে দিয়েছি। অনেকটা রিলাক্স লাগছে। হোস্টেলের বন্ধুবান্ধব-জুনিয়ররা বেশ চেয়ার আপ করছে। এমন একটা বিষয় না জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। বিকেল পাঁচটার দিকে একটু ফিটফাট হয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় খুব বেশি ট্রাফিক না থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। নন্দিতাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন পর্যন্ত আসছে, সামনে তাকিয়ে দেখি সে ভেতরে আসছে একসঙ্গে ইভেন্টে পৌঁছালাম। বেশ লম্বা একটা লাইন। অনেক মানুষ আসছে, সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইয়েরা যার যার মতো ফুটেজ নিতে ব্যস্ত।
ভিসা সেন্টার থেকে দেওয়া টিকিট জমা দিলে ত্রিদিব দাদা হাতে পাসপোর্টটা দিয়ে দিলেন। পাশের টেবিল থেকে তন্ময় দাদা একটা আইডি কার্ড, কোট ব্যাচ, এল সাইজ একটা টি-শার্ট আর বিওইডির লোগো দেওয়া ব্যাগ দিয়ে ভেতরে যেতে বললেন। পাশেই ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের বড় ব্যানারের ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। আমি জিনিসগুলো ব্যাগের ভেতরে রেখে আগে পাসপোর্টটা খুলে দেখতে শুরু করলাম। ভিসা জিনিসটা দেখতে কেমন! সেদিন এ জিনিসটার জন্য অনেক দৌড় দৌড়াতে হলো। দেখার পর আমার রিঅ্যাকশন, ও এটা দেখতে এমন! তাহলে গলা কাটা ভিসা দেখতে কেমন? আমার কৌতূহলী মন।
পেছন থেকে সুর্মি ডাকছে আগে ফারজানা আপু পাসপোর্ট রেখে এদিকে আসো ছবি তুলি। সঙ্গে নন্দিতাকে ডেকে নিয়ে গেলাম। বেচারি মানুষের এত এত ছবি তোলা দেখে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এত ছবি তুলে কী করবে। ফটোসেশন শেষে আসন গ্রহণ করলাম। কারণ ওই দিকে ইসরাত পায়েল আপু মাইক্রোফোনে আসন গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছেন।
একটা সারিতে আমি, সুর্মি আর নন্দিতা সঙ্গে বসলেন শামা মাকিং আপু। নামটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। উনি মারমা সম্প্রদায়ের ট্র্যাডিশন ড্রেস থামি পরে এসেছে। সিল্ক কাপড়ের হালকা সবুজ আর পেস্ট রঙের একটা খুব সুন্দর থামি পরেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। তার মেকআপটা বেশ সুন্দর ছিল। ব্লোন্ডিংটা বেশ সুন্দর হয়েছে। অনেকেই আছে মেকআপ করলে সাদা সাদা লাগে। কিন্তু উনাকে একদম ন্যাচারাল লাগছে। আমি শুরুতেই উনার মেকআপের প্রশংসা করেছি। পরিচয় পর্বে আমার পরিচয় দিলাম। তুমি করে বলব নাকি আপনি করে বলব এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এইচএসসি ব্যাচ জিজ্ঞেস করলে বললেন ২০০৮। আঙুল গুনে দেখছিলাম আরে বাবা অনেক সিনিয়র। আমি ভেবেছিলাম কাছাকাছি বা ব্যাচমেট হয়তো হবে। নন্দিতা আর সুর্মি দেখি উনার সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হচ্ছে। আমি ভাবলাম এমন অনন্য প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে অ্যাড না হওয়াটাই বরং বেমানান। ১২ হাজার ফলোয়াড় রেখে আমাদের অ্যাড করছেন। উনার আইডি খুঁজে না পাওয়ায় নিজের ফোনটা দিয়ে বললেন এখান থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দাও। আপুটা বেশ বিনয়ী। কণ্ঠাটা অনেক শ্রুতিমধুর। মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর শ্রুতিমধুর কণ্ঠ কিন্তু অনেক পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনক আমার কোনোটাই নেই। সঙ্গে থাকা সুর্মি এক আবৃত্তিশিল্পী দুই-চারটা কথা বললেই মনে হয় আমাকে নিয়ে কোনো কবিতা আবৃত্তি করছে।
ট্র্যাডিশনাল ড্রেস পরে আরও এসেছিলেন তেজশ্রী চাকমা আপু। উনাকেও বেশ সুন্দর লাগছিল। আমাদের সবার থেকে বিভিন্ন ড্রেস পরাতে উনাদের বেশ চোখে পড়ছিল। প্রথমবারের মতো দেশের অনন্য প্রতিভাবান ১০০ জনের সঙ্গে দেখা হলো। এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ইভেন্টে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথমবার তাঁকে সামনা-সামনি দেখলাম। আরও ছিলেন আমার প্রিয় একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ। প্রীতম হাসান, অর্ণব, চিরকুটের সুমি আপু, অবন্তী সিথি আপুসহ আরও অনেক তারকা। আরও ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নারী ফুটবলাররা। নানা আলোচনা কথাবার্তা ও কালচারাল প্রোগ্রাম শেষে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট শেষ হলো। ডিনারের আয়োজন ছিল। সবার সঙ্গে কথা কম বেশি কথা বলা হলো। সবাই ব্যস্ত তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে। পাঁচটা গ্রুপ করে গ্রুপ মেম্বারদের আলাদা করা হলো, ফ্লাইটের টাইম কাল দুপুর ১২টা। সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে সবাইকে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে বলা হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে ফাইনাল চেকিং দিয়ে লাগেজ লক করে দিলাম। কাল সকালে এক স্বপ্নযাত্রার উদ্দেশে শুয়ে পড়লাম। (চলবে).....
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা, পূর্ণতা, স্বচ্ছতা, সজীবতা। আমার বরাবরই বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে ভালো লাগে। বৃষ্টির ফোঁটা যখন টিনের চালে বা গাছের পাতায় পড়ে, সুন্দর একটা শব্দ হয়। শব্দটা সংগীতের মধুর বাদ্যযন্ত্র থেকে কোনো অংশে কম নয়।
ছাতা হাতে বের হয়ে গেলাম। ভাষানটেক বাজার থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত সিএনজি করে চলে এলাম। মিরপুর দশ চত্বরে অপেক্ষা করছিল আমার এক জুনিয়র আর কে সোহান। ওর সঙ্গেই বুট ক্যাম্পে যাব। আর কে সোহান ধালাদের প্রতিষ্ঠাতা। এটা মূলত একটা ব্র্যান্ড। যেটা আমাদের বাংলাদেশের লোকাল, ট্র্যাডিশনাল এবং হেরিটেজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিলুপ্তের হাত থেকে রক্ষা করা। এটা ই-কমার্স বেস্ড একটা স্টার্টআপ বিজনেস।
মিরপুর-১০ থেকে মিরপুর-১ তারপর মিরপুর-১ থেকে ধানমন্ডির বাসে উঠলাম।
কলাবাগান বাস থেকে নামার মুহূর্তে একটা মেইল এল। শব্দটা কানে এসেছে। সঠিক লোকেশনটা না জানার কারণে ভুল করে কলাবাগান চলে এসেছি। তারপর আবার বাসে উঠে ধানমন্ডি ২৭-এর দিকে রওনা হলাম। ধানমন্ডি মিডাস টাওয়ার ইএমকে সেন্টার। কাক স্নান করে পৌঁছালাম। সকল প্রকার চেকিং শেষ করে প্রোগ্রামে উপস্থিত হলাম। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে মেইল আসছে। মুহূর্তেই অনেক এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য মেইল করেছে। বিষয়টা এরকম যে, আমাদের সবার পাসপোর্ট ঠিক আছে কিনা, যাদের পাসপোর্ট আছে তাদের আগামী তিন মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকা লাগবে। আর যাদের নেই, তাদের অতি দ্রুত পাসপোর্ট করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাসপোর্টের স্ক্যান কপি মেইল করতে বলা হয়েছে।
আমি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাসপোর্ট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোথাও যাওয়া হয়নি। আগামী ২০৩০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ। আদৌ কি আমার বিদেশ ভ্রমণ হবে? নাকি কোনো রকম ভিসা ছাড়াই আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে? ভাবতে ভাবতে প্রোগ্রামের স্পিকার চলে এসেছে। সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলাম। প্রোগ্রামটা মূলত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছে বা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। আমার আশপাশে এত এত নারী উদ্যোগতা তাদের দেখে বেশ ভালোই লাগছিল। তথাকথিত সমাজের চৌকাঠ পেরিয়ে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তাদের যদি সর্বোচ্চ সহায়তা ও সুযোগ দেওয়া হতো আমি বিশ্বাস করি নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং জিডিপি এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছে। কিছু সময় রেস্ট করে টিউশনে চলে গেলাম। নন্দিতা হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করেছে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য আমার মেইল আসছে কি না, উত্তরে বললাম আসছে। সে জানাল, তারও আসছে। কিন্তু তার তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি, কী করবে এখন?
‘কবে করতে দিয়েছিলে?’
নন্দিতা বলল, ‘অনেক আগে, অডিশনের পরেই।’
‘টেনশন করব না। ২৬ তারিখ তো শেষ দিন। তার আগে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।’
‘তুমি কি স্ক্যান কপি মেইল করেছ?’
আমি বললাম, ‘না সারা দিন আজ বাইরে ছিলাম। শেষ দিন তো ২৬ তারিখ। আজকে ১৪ তারিখ, অনেক সময় বাকি। এর মধ্যেই করে দেব।’
নন্দিতা মেয়েটা অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। তার সঙ্গে কথা শেষ করে সুর্মিকে এসএমএস করলাম—কী অবস্থা তোমার, মেইল পেয়েছ?
সুর্মি বলল, ‘হ্যাঁ আপু, তুমি পেয়েছ?’
‘হ্যাঁ। নন্দিতাও মেইল পেয়েছে, কিন্তু ওর তো পাসপোর্ট এখনো হয়নি।’
সুর্মি বলল, ‘আপু, আমারও হয়নি।’
আমি বললাম, ‘যত দ্রুত সম্ভব করে স্ক্যান কপি মেইল কর। আমার মনে হয় যাদের মোটামুটি সিলেক্ট করার মতো তাদের ভেরিফিকেশন মিল করেছে। যদি পাসপোর্ট ঠিক থাকে তাহলে হয়তো ফাইনাল সিলেকশন করে ফেলবে।’
সুর্মি বলল, ‘সম্ভবত আমারও তাই মনে হয়।’
‘যত দূর জানি, বিগত বছরগুলোয় যারা সিলেক্ট হয়েছিল তাদের মাঝে অনেকেরই পাসপোর্ট ঠিক না থাকার কারণে যেতে পারিনি। আল্লাহ ভরসা টেনশন কর না।’
খানিক বাদে আমার বান্ধবী সামিরা এসএমএস করল। সে লিখল, ‘মেইল আসছে তোর?’
‘হে দোস্ত, পাসপোর্ট মেইল করতে বলল।’
‘মেইলটা আমাকে ফরওয়ার্ড কর তো।’
‘করেছি, চেক কর।’
সামিরা বলল, ‘না আমার এমন কোনো মেইল আসেনি। হবে না আমার, গুড লাক দোস্ত।’
‘অপেক্ষা কর, হাজার হাজার মেইল সেন্ড করেছে। নেবে তো মাত্র ১০০ জন, মেইল ফরওয়ার্ড করতে তো একটু সময় লাগবে।’
সামিরার সাথে কথা শেষ করে গ্রুপে এসএমএস চেক করলাম। যারা যারা মেইল পেয়েছে সবাই শেয়ার করছে। এই নিয়ে গ্রুপে তুমুল আলোচনা। অডিশনের দিন ত্রিদিব দাদা বলেছিলেন আপনারা নিজেদের মাঝে কথা বলে নেটওয়ার্কিং বাড়ান। আর আমাদের নেটওয়ার্কিং গতি ফাইভ-জি ইন্টারনেটের থেকেও বেশি। মুহূর্তেই ১০০ জনের বেশি মেম্বার নিয়ে গ্রুপ খোলা হয়ে গেছে। আর সেই গ্রুপে চলে রাত দিন নানা আলোচনা।
সময় গড়িয়ে তিন-চার দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো পাসপোর্ট স্ক্যান কপি মেইল করা হয়নি। তখনই ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে মেইল করে দিলাম। একটা বিষয় ভাবলাম পাসপোর্টের মতো জঘন্য একটা ছবি দিয়ে কীভাবে মানুষ ভেরিফাই করে? আমার বর্তমান চেহারার সঙ্গে পাসপোর্টের চেহারার কোনো মিল নাই।
আমি নিজেই নিজেকে চিনি না। পাসপোর্টের ছবি তোলার দিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম যখন রেডি ১ ২ ৩ বলবে, তখন একটা হাসি দেব। ওমা বলে হয়েছে গেছে, উঠে আসেন। কখন ছবি তুলল টেরই পেলাম না।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে ২৬ তারিখ। সুর্মি সঙ্গে কথা হলো সে পাসপোর্ট পেয়েছে। ইতিমধ্যে মেইল করে দিয়েছে। নন্দিতার সঙ্গে কথা বললাম বেচারি এখনো পায়নি আজ রাত ১২টায় শেষ সময়। ২৭ সেপ্টেম্বর আবার নন্দিতা এসএমএস করল। তার পাসপোর্ট পাইছে। আমি বললাম কোনো সমস্যা নাই এখনই ছবি তুলে মেইল করে দে। উত্তর সে বলল অলরেডি করে দিছি। বেশ দেখা যাক কী হয়, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অন্য এক স্টুডেন্টকে পড়াতে এসেছি। খানিক বাদে দেখি বিওয়াইডি ২২ গ্রুপে অনেক এসএমএস আসছে। মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখি ফাইনাল সিলেকশনের মেইল সবাই স্ক্রিনশট দিয়ে গ্রুপে দিয়েছে। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহ আল্লাহ করে মেইলে ঢুকলাম। দেখি কোনো মেইল আসেনি। মুহূর্তেই মনের আকাশে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম, আমি তো অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো হয়ে যাবে। ভারত ভ্রমণ নিয়ে কত চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন দেখলাম। আর এখন হলো না। ভাবতে ভাবতে মেইলটা একটু রিফ্রেস করতেই সামনে চলে এল ‘ফাইনাল সিলেকশন ফর বাংলাদেশ ইয়থ ডেলিগেশন-২০২২ প্রোগ্রাম’। চোখ দুটো কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। ইয়াহু বলে একটু চেয়ার আপ করলাম। আমার পিচ্চি স্টুডেন্ট বলে উঠল আপু কী হয়েছে? আমি বললাম আমার ইন্ডিয়া যাওয়া কনফার্ম। আমি সিলেক্ট হয়েছি। এই পিচ্ছি বরাবরই আমাকে অনেক অনেক বেশি কোশ্চেন করে। আজ আমার রক্ষা নেই। আমার সঙ্গে সেও চেয়ার আপ করা শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে কাছের মানুষদের ফোন দিয়ে সুখবরটা জানাতে লাগলাম। মাথায় এল সুর্মি আর নন্দিতার কথা।
তখনই সুর্মিকে নক দিলাম কী খবর।
সে বলল, ‘আপু, আলহামদুলিল্লাহ, সিলেক্ট হয়েছি। তুমি?’
‘আমিও।’ সুর্মি দেখি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড।
‘নন্দিতাদির খবর জান?’
‘না। এখন ওরে নক দিয়ে দেখি।’
নন্দিতাকে নক দিলাম, বলল ওর হয়নি। আমি আবারো তাকে আশ্বাস দিলাম একটু অপেক্ষা কর, ওয়েটিং লিস্ট থেকে অনেককে ডাকে।
সে বলল, ‘আমার মনে হয় আর হবে না।’
মেয়েটার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। ভেবেছিলাম তিনজন একসঙ্গে যেতে পারব।
ভিসার জন্য আবেদন করার সময় দিয়েছে ৩ তারিখ। যে যেখান থেকে আবেদন করুক ৩ তারিখ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে অনলাইন ভিসার আবেদন ফরম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ। রুমে ফিরে এসে বিষয়টা রুমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করলাম আর আমার পরিবারকে জানালাম। সবাই অনেক খুশি আমার পরিবার বরাবরই আমাকে সাপোর্ট করে আসছে। ২০১৬ সালের যখন অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রথমবারের মতো বাসা, পরিবার ছেড়ে আসি, মা বিদায় বেলা বলে দিয়েছিল আমরা তোমাকে কোনো কিছুতে না করি না, যখন যা করতে চেয়েছ সুযোগ দিয়েছি। আজকের পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হবে, যা কিছুই কর না কেন একটা কথা মাথায় রেখ, তোমার কোনো কাজের জন্য যেন তোমার বাবা বা পরিবারের অসম্মান না হয়। তোমাকে অনেক স্বাধীনতাই দেওয়া হচ্ছে। মা-এর সেই কথাটা মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি আমার পরিবারের সম্মান যেন অটুট থাকে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই কোনো কাজ করার আগে নিজ পরিবারের কথা একবার হলেও ভেবে দেখা উচিত।
দিনশেষে পরিবারই ভরসা।
বিষয়টা আমার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক প্রায় সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিল। একটা বিষয় চিন্তা করলাম আপনি যখন ভালো কিছু করবেন বা কোনো কাজে সফল হবেন তখন চারপাশ থেকে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। যাকে আপনি চিনেনও না সেও আপনাকে অভিনন্দন জানাবে। কিন্তু আপনি কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনার হাতটা ধরে তুলে দাঁড়ানোর মানুষ খুব কমই পাবেন। জীবন যুদ্ধে চলার পথে উঠে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়ার মতো একটা মানুষ সবার জীবনে খুব বেশি প্রয়োজন। সব কাজ শেষে রাতের বেলায় বসলাম অনলাইন ভিসা আবেদন করতে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভিসা আবেদন করব। ইন্ডিয়া হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা আবেদনে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। অনেক জটিল প্রসেস। অনেক ইনফরমেশন দিতে হচ্ছে। টেকনিক্যাল সমস্যা আর সার্ভার ডাউন থাকার কারণে আমি তিনবার চেষ্টা করার পর সফলভাবে আবেদন করতে সক্ষম হই।
একটা বিষয় খুব কষ্টকর। যেমন আমি ভিসা আবেদনের জন্য দুইটা বা তিনটা স্টেজ পার করে পরের স্টেজে গেলাম কোনো কারণে সাবমিট হচ্ছে না। রিলোড দেওয়ার পর আবার প্রথম টেস্ট থেকে শুরু করতে হয়। এই বিষয়টা খুবই বেদনাদায়ক ও কষ্টকর। আবার সব ইনফরমেশন শুরু থেকে দিতে হয়। এটা শুধু ভিসা আবেদনের জন্য না সব ক্ষেত্রেই হয়।
রুমমেটকে বিষয়টা বলার পর সে বলে এত প্যারা নেওয়ার দরকার কী? দোকানে গিয়ে আবেদন করে এলেই তো হয়। আমার সব কাজ আমি নিজে নিজে করি। প্রয়োজনে আশপাশের মানুষদেরও কাজ করে দেই।
আজ ৩ অক্টোবর। সকাল ১০টার মধ্যে ইন্ডিয়া ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আমার এরিয়া থেকে অনেকটাই কাছে তারপরও সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম। রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, রাস্তা ভেজা, পানি জমে আছে। যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে আমি রীতিমতো অবাক! মেইন গেটের একটু পর থেকে লম্বা লাইন। বাইরে তখন টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। লাইন ধরে ভেতরে গেলে আজকে আর আবেদন করা সম্ভব না। আর ভিজে একাকার হয়ে যাব। লাইন ছেড়ে একদম ভিসা সেন্টারে গেটে চলে এলাম। একটু বুদ্ধি করে বিওয়াইডি মেম্বার বলে পরিচয় দেওয়ায় সোজা ভেতরে চলে আসার পারমিশন দিল। সিকিউরিটি চেকিং শেষ করে ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকে চোখ কপালে উঠে গেল। হাজার হাজার মানুষ, দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে সামনে এগিয়ে গেলাম।
সুর্মিকে ফোন দিয়ে দেখা করলাম। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি সবার হাতে পাসপোর্ট। কারও হাতে একাধিক। সুর্মিকে জিজ্ঞেস করলাম পাসপোর্টও কি জমা দেওয়া লাগবে? সঙ্গে থাকা এক বড় ভাই বলল হ্যাঁ অবশ্যই, পাসপোর্ট না দিলে আপনার ভিসা কোথায় দেবে? তখন পর্যন্ত ভিসা কী জিনিস না জানা আমি, না দেখা আমি! মাথায় বাজ পড়ল। বড় ভাই বলল, আপনার বাসা কোথায়?
‘ক্যান্টনমেন্টে ভাই।’
কাছেই তো আছে দ্রুত গিয়ে নিয়ে আসুন। আমার সিরিয়াল ৪৭, এখন চলে ৯ নাম্বার। আমার সিরিয়াল আসার আগে চলে আসা লাগবে। বের হওয়ার রাস্তাটা এতটাও সহজ ছিল না। অনেক মানুষের ধাক্কাধাক্কি খেয়ে শেষে যমুনা ফিউচার পার্কের বাইরে এলাম। সময় বাঁচানোর জন্য পাঠাও রাইড নেওয়ার চিন্তা করলাম। ভাড়া চেয়ে বসল ৩৫০ টাকা। ১০-১৫ মিনিট আগে ইসিবি চত্বর থেকে এলাম ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এত চাইলে তো হবে না।
বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। আমার হোস্টেলে যেতে না যেতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ড্রাইভার মামাকে বললাম, মামা আমি আবার যাব। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন। আমি যাব আর আসব। এ সময় ড্রাইভার ছেড়ে দেওয়াটা চরম বোকামি হবে। আমার এরিয়াতে কিছুই পাওয়া যায় না। রিকশায় উঠতে গেলেও ২০ মিনিট পথ হেঁটে তারপর উঠা লাগে।
দ্রুত ওপরে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে এলাম। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ড্রাইভার মামাকে ক্যান্টিনে নিয়ে কফি খাওয়ালাম। স্টাফ আঙ্কেল জিজ্ঞেস করছিল, কী হয়? আমার কোনো আত্মীয় কি না। সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। উনার সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কেটে গেল প্রায় ৪০ মিনিট। বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। আবার ওপরে গিয়ে রুম থেকে একটা ছাতা নিয়ে এলাম। সুর্মিকে ফোন দিলাম ওর কাজ শেষ বাসার দিকে রওনা হবে।
খানিক বাদে মামাকে বললাম, মামা চলেন এভাবে বসে থাকলে চলবে না। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বের হলাম, বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস। ড্রাইভার মামার সামনের দিক পুরোটাই ভিজে গেছে। এত বাতাস ছাতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খুব কষ্ট করে যমুনা ফিউচার পার্কে চলে এলাম। ড্রাইভার মামাকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
শপিংমলের গেট এখনো খোলেনি, আরও ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। একটু চিন্তা করে দোতলায় চলে গেলাম। এদিকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেক রিকোয়েস্ট করে ভেতরে ঢুকলাম। আমার শরীর অর্ধেক ভেজা, জুতা-মোজা ভিজে অনেক ভারী হয়ে গেছে। হাঁটার সময় একটা শব্দ হচ্ছিল, কী এক বিব্রতকর অবস্থা।
ভিসা সেন্টারের ভেতরে ঢুকলাম, সিরিয়াল চলছে কেবল ৩৯। যাক আমি ভালো সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। লাইনে দাঁড়ালাম আশপাশে শুধু বিওআইডি শোনা যাচ্ছে, বুঝতে পারলাম সবাই বিওআইডি মেম্বার। পরিচিত কেউ নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলে পরিচিত হলাম ফারহান ভাইয়ের সঙ্গে। সরকারি আইন ও বিচার বিভাগে কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করতে আসছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না এত মানুষ থাকবে। কেউ ট্যুরিস্ট ভিসা, কেউ চিকিৎসা ভিসা, কেউ ফরেন ভিসা, নানা ভিসার লোকজন এসেছে। অনেক সময় বাদে ভিসার সব রকম কাজ সম্পন্ন করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বের হলাম।
ভিসা কবে দেবে কেউ জানে না, গ্রুপে এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। মানে গ্রুপে এমন হয়ে গেছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছেই। আমাদের যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করেছে ১২ থেকে ১৯ অক্টোবর। ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট হবে ১১ অক্টোবর। গত ছয় অক্টোবর ইন্ডিয়া হাইকমিশন থেকে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের ইনভাইটেশন মেইল আসছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বনানী শেরাটন হোটেলে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের প্রোগ্রাম। বিষয়টা মোটেও পছন্দ হলো না ১০ তারিখ হওয়ার কথা ছিল সেটা পরিবর্তন করে ১১ তারিখ করা হলো, ১২ তারিখ যাত্রা, ফ্লাইট কখন তাও জানি না। জিনিসপত্র গোছানোর একটা বিষয় আছে। কত কেজি পর্যন্ত নিতে পারব? কী কী জিনিস নেওয়া যাবে, অনেক তথ্য জানা বাকি। সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে লাগেজটা মোটামুটি গুছিয়ে রেখেছি।
১১ তারিখের মধ্যে অফিস ও হোস্টেল থেকে ছুটি নেওয়ার কাজ শেষ করলাম। অফিস থেকে সাত দিন, হোস্টেল থেকে আট দিন ছুটি পাওয়া গেল।
সময়ের পালা বদল করে চলে এল ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের দিন। সকাল থেকেই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। গত রাতে অফিসের সব কাজ করে জমা দিয়ে দিয়েছি। অনেকটা রিলাক্স লাগছে। হোস্টেলের বন্ধুবান্ধব-জুনিয়ররা বেশ চেয়ার আপ করছে। এমন একটা বিষয় না জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। বিকেল পাঁচটার দিকে একটু ফিটফাট হয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় খুব বেশি ট্রাফিক না থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। নন্দিতাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন পর্যন্ত আসছে, সামনে তাকিয়ে দেখি সে ভেতরে আসছে একসঙ্গে ইভেন্টে পৌঁছালাম। বেশ লম্বা একটা লাইন। অনেক মানুষ আসছে, সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাইয়েরা যার যার মতো ফুটেজ নিতে ব্যস্ত।
ভিসা সেন্টার থেকে দেওয়া টিকিট জমা দিলে ত্রিদিব দাদা হাতে পাসপোর্টটা দিয়ে দিলেন। পাশের টেবিল থেকে তন্ময় দাদা একটা আইডি কার্ড, কোট ব্যাচ, এল সাইজ একটা টি-শার্ট আর বিওইডির লোগো দেওয়া ব্যাগ দিয়ে ভেতরে যেতে বললেন। পাশেই ফ্ল্যাগ অব ইভেন্টের বড় ব্যানারের ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। আমি জিনিসগুলো ব্যাগের ভেতরে রেখে আগে পাসপোর্টটা খুলে দেখতে শুরু করলাম। ভিসা জিনিসটা দেখতে কেমন! সেদিন এ জিনিসটার জন্য অনেক দৌড় দৌড়াতে হলো। দেখার পর আমার রিঅ্যাকশন, ও এটা দেখতে এমন! তাহলে গলা কাটা ভিসা দেখতে কেমন? আমার কৌতূহলী মন।
পেছন থেকে সুর্মি ডাকছে আগে ফারজানা আপু পাসপোর্ট রেখে এদিকে আসো ছবি তুলি। সঙ্গে নন্দিতাকে ডেকে নিয়ে গেলাম। বেচারি মানুষের এত এত ছবি তোলা দেখে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এত ছবি তুলে কী করবে। ফটোসেশন শেষে আসন গ্রহণ করলাম। কারণ ওই দিকে ইসরাত পায়েল আপু মাইক্রোফোনে আসন গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছেন।
একটা সারিতে আমি, সুর্মি আর নন্দিতা সঙ্গে বসলেন শামা মাকিং আপু। নামটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। উনি মারমা সম্প্রদায়ের ট্র্যাডিশন ড্রেস থামি পরে এসেছে। সিল্ক কাপড়ের হালকা সবুজ আর পেস্ট রঙের একটা খুব সুন্দর থামি পরেছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। তার মেকআপটা বেশ সুন্দর ছিল। ব্লোন্ডিংটা বেশ সুন্দর হয়েছে। অনেকেই আছে মেকআপ করলে সাদা সাদা লাগে। কিন্তু উনাকে একদম ন্যাচারাল লাগছে। আমি শুরুতেই উনার মেকআপের প্রশংসা করেছি। পরিচয় পর্বে আমার পরিচয় দিলাম। তুমি করে বলব নাকি আপনি করে বলব এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এইচএসসি ব্যাচ জিজ্ঞেস করলে বললেন ২০০৮। আঙুল গুনে দেখছিলাম আরে বাবা অনেক সিনিয়র। আমি ভেবেছিলাম কাছাকাছি বা ব্যাচমেট হয়তো হবে। নন্দিতা আর সুর্মি দেখি উনার সঙ্গে ফেসবুকে অ্যাড হচ্ছে। আমি ভাবলাম এমন অনন্য প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে অ্যাড না হওয়াটাই বরং বেমানান। ১২ হাজার ফলোয়াড় রেখে আমাদের অ্যাড করছেন। উনার আইডি খুঁজে না পাওয়ায় নিজের ফোনটা দিয়ে বললেন এখান থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দাও। আপুটা বেশ বিনয়ী। কণ্ঠাটা অনেক শ্রুতিমধুর। মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর শ্রুতিমধুর কণ্ঠ কিন্তু অনেক পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনক আমার কোনোটাই নেই। সঙ্গে থাকা সুর্মি এক আবৃত্তিশিল্পী দুই-চারটা কথা বললেই মনে হয় আমাকে নিয়ে কোনো কবিতা আবৃত্তি করছে।
ট্র্যাডিশনাল ড্রেস পরে আরও এসেছিলেন তেজশ্রী চাকমা আপু। উনাকেও বেশ সুন্দর লাগছিল। আমাদের সবার থেকে বিভিন্ন ড্রেস পরাতে উনাদের বেশ চোখে পড়ছিল। প্রথমবারের মতো দেশের অনন্য প্রতিভাবান ১০০ জনের সঙ্গে দেখা হলো। এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ইভেন্টে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথমবার তাঁকে সামনা-সামনি দেখলাম। আরও ছিলেন আমার প্রিয় একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ। প্রীতম হাসান, অর্ণব, চিরকুটের সুমি আপু, অবন্তী সিথি আপুসহ আরও অনেক তারকা। আরও ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নারী ফুটবলাররা। নানা আলোচনা কথাবার্তা ও কালচারাল প্রোগ্রাম শেষে ফ্ল্যাগ অব ইভেন্ট শেষ হলো। ডিনারের আয়োজন ছিল। সবার সঙ্গে কথা কম বেশি কথা বলা হলো। সবাই ব্যস্ত তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে। পাঁচটা গ্রুপ করে গ্রুপ মেম্বারদের আলাদা করা হলো, ফ্লাইটের টাইম কাল দুপুর ১২টা। সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে সবাইকে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে বলা হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে ফাইনাল চেকিং দিয়ে লাগেজ লক করে দিলাম। কাল সকালে এক স্বপ্নযাত্রার উদ্দেশে শুয়ে পড়লাম। (চলবে).....
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৩ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৮ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৪ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা,
১২ ডিসেম্বর ২০২২জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৮ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৪ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৪ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা,
১২ ডিসেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৩ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৪ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা,
১২ ডিসেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৩ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৮ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
সকালে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে দেখি বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডিতে একটা বুট ক্যাম্প আছে। না যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেভাবেই হোক প্রোগ্রামে জয়েন করা লাগবে। অন্য কিছু চিন্তা না করে দ্রুত রেডি হয়ে গেলাম। এমন বৃষ্টি বাদলার দিনে কেন জানি ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এক ধরনের স্নিগ্ধতা,
১২ ডিসেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৩ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৮ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৪ দিন আগে