জন্মদিন: এস এম সুলতান
শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী। তিনি নেই; কিন্তু তাঁর শিল্প, জীবনের অদ্ভুত যাপন বেঁচে আছে, থাকবে আরও বহুকাল। আজ তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
সুলতান কি এসব জন্মদিনের খোঁজ রাখতেন? তথাকথিত নাগরিক জীবনকে থোড়াই কেয়ার করে গড়ে নিয়েছিলেন নিজের পৃথিবী। তাঁকে নিয়ে লেখায় কিংবা চলচ্চিত্রে সেই ছবির দেখা মেলে। নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্যচিত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবি শামসুর রাহমান ‘সুলতান তাঁর সালতানাত ত্যাগ করেননি’ প্রবন্ধে যে বাড়ির পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে, ‘সুলতানের সেই লতাগুল্ম এবং গাছপালা ভরা, কালের ক্ষতচিহ্ন বহনকারী বাড়ি অনেকের স্মৃতিতেই ভাস্বর হয়ে আছে। আমরা যারা যাইনি নানা পন্থায় সেই ভবনে, তাদেরও কল্পনায় জাগ্রত তার পরিবেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ।’
সংসারবিবাগী শিল্পরসিক এই মানুষের বাস জঙ্গলঘেঁষা এক পুরোনো দালানে। সঙ্গী হনুমান, বিড়াল, নেড়ি কুকুর, একপাল মুরগি। তথাকথিত মানুষের সঙ্গে নয়, প্রকৃতির সঙ্গেই যেন মিশে ছিলেন তিনি। সুলতানের ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
সুলতানের সান্নিধ্যে তাঁর থাকার সুযোগ হয়েছিল বেশ। এক সাক্ষাৎকারে সুলতানের সেই বাড়ি নিয়ে নাসির আলী মামুন স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘উনার নিজের থাকার যে রুম, তাতে ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকির মধ্যে একটা চাটাই। চাটাইয়ের ওপরে থাকা একটা কাঁথা। ওইটার মধ্যে ঘুমায়, শতচ্ছিন্ন কাঁথা। নিজের ঘুমানোর জায়গার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাথায় তখন এটাও ঘুরছে, সুলতান একজন সেলিব্রিটি, এস এম সুলতান, গ্রেটম্যান—তাঁর এই অবস্থা! খালি দেখতেছি আর অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’
নাগরিক চোখে সুলতানের জীবন দেখে স্বস্তি মেলে না। কারণ, তিনি সাধারণ থেকে অসাধারণের পথ ধরেছেন, যেখানে শিল্পী হিসেবে সাধারণের জীবনকে পরিত্যাগ করেছেন। জীবনযাপনে বিলাস পরিত্যাগ করলেও মনে-মানসে সুলতান ছিলেন অনন্য। তার প্রমাণ মেলে কবি জসীম উদ্দীনের ‘হলদে পরীর দেশে’ লেখায়। পাকিস্তানে থাকাকালীন এই শিল্পীর মনের উদার জমিন কবি এঁকেছেন এভাবে, ‘সুলতানের এখনো নৈশভোজ হয় নাই। একটি যুবক বাহিরের দোকান হইতে ১০-১২ খানা চাপাতি (রুটি) ও সামান্য কিছু তরকারি শালপাতায় করিয়া আনিয়া দিল। চার পাঁচজন যুবক আর এই শিল্পীকে (উপস্থিত সেতারবাদক) সঙ্গে লইয়া সুলতান আহার করিল। পরিচয় লইয়া জানিলাম, এই যুবকেরা বেকার অবস্থায় সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো কোনো গ্রাম হইতে করাচি আসিয়াছে চাকরির অনুসন্ধানে। সুলতান তাহাদিগকে আশ্রয় দিয়াছে। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, যাহার নিজেরই আশ্রয় নাই, সে-ই বোধ হয় এমন করিয়া অপরকে আশ্রয় দিতে পারে। এই করাচি শহরে কত ধনী ব্যক্তি আছে, তাহাদের কতজনের অন্তর সুলতানের মতো এমন করিয়া পরের জন্য কাঁদে?’
কেবল শিল্পী হওয়ার পরে নয়, ১৯২৪ সালে কৃষক ও রাজমিস্ত্রি বাবার ঘরে যে লালমিয়ার জন্ম, শৈশব থেকেই পালিয়ে বেড়াতেন। জন্মস্থান নড়াইল থেকে পালিয়ে কলকাতা, সেখানে আর্ট কলেজ থেকেও পালালেন। ঘুরলেন পুরো ভারত। ভাবনাহীন, দায়িত্বহীন, ভবঘুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। সৈনিকদের ছবি এঁকে পকেট খরচ মেটাচ্ছেন। দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে গেলেন। খ্যাতি পেলেন। ঘুরলেন ইউরোপ-আমেরিকা। চাইলে দূরদেশেও নিজের জীবন সঁপে দিতে পারতেন। হতে পারতেন খ্যাতিমান আর বিত্তশালী, কিন্তু সেখান থেকেও পালালেন। ফিরে এলেন জন্মভিটা—নড়াইলে।
দেশে ফিরেও পালালেন তিনি। এবার অন্য কোথাও নয়। নাগরিক সমাজ, খ্যাতির ভিড় আর করপোরেট দুনিয়া থেকে। রাজধানীকেন্দ্রিক যেখানে দেশের শিল্পচর্চা, সুলতান সেখানে বেছে নিলেন তাঁর নিজস্ব পথ। পলেস্তারা খসে পড়া পুরোনো জমিদারবাড়ি আর প্রকৃতিঘেরা জীবনকে বেছে নিলেন তিনি। তাঁর ক্যানভাসেও উঠে এল প্রকৃতির সন্তানেরা। বাংলার কৃষক হয়ে উঠল তাঁর ছবির চরিত্র।
শিল্পী হিসেবে খ্যাতির মোড়ক থেকে নিজেকে বের করে একেবারে বোহিমিয়ান ঘোড়ায় চড়ে জীবন আস্বাদন করলেন শিল্পী এস এম সুলতান। সেই আস্বাদন থেকে উদিত চিন্তা তিনি ঢেলে দিয়েছেন শিল্পে। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর নাগরিক পন্থা কতটুকু কাজের! তা হয়তো জানা নেই। কিন্তু বোহিমিয়ান এই শিল্পীর শিল্প যে নাগরিক জীবনে বেঁচে থাকবে শত শতবর্ষী হয়ে—এ ভারি বলা যায়।
আয়োজন
শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এস এম সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সুলতান কমপ্লেক্সে সকাল ছয়টায় কোরআনখানি, নয়টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সোয়া নয়টায় তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল। জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, সুলতানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননারও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নড়াইলের নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী। তিনি নেই; কিন্তু তাঁর শিল্প, জীবনের অদ্ভুত যাপন বেঁচে আছে, থাকবে আরও বহুকাল। আজ তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
সুলতান কি এসব জন্মদিনের খোঁজ রাখতেন? তথাকথিত নাগরিক জীবনকে থোড়াই কেয়ার করে গড়ে নিয়েছিলেন নিজের পৃথিবী। তাঁকে নিয়ে লেখায় কিংবা চলচ্চিত্রে সেই ছবির দেখা মেলে। নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্যচিত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবি শামসুর রাহমান ‘সুলতান তাঁর সালতানাত ত্যাগ করেননি’ প্রবন্ধে যে বাড়ির পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে, ‘সুলতানের সেই লতাগুল্ম এবং গাছপালা ভরা, কালের ক্ষতচিহ্ন বহনকারী বাড়ি অনেকের স্মৃতিতেই ভাস্বর হয়ে আছে। আমরা যারা যাইনি নানা পন্থায় সেই ভবনে, তাদেরও কল্পনায় জাগ্রত তার পরিবেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ।’
সংসারবিবাগী শিল্পরসিক এই মানুষের বাস জঙ্গলঘেঁষা এক পুরোনো দালানে। সঙ্গী হনুমান, বিড়াল, নেড়ি কুকুর, একপাল মুরগি। তথাকথিত মানুষের সঙ্গে নয়, প্রকৃতির সঙ্গেই যেন মিশে ছিলেন তিনি। সুলতানের ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
সুলতানের সান্নিধ্যে তাঁর থাকার সুযোগ হয়েছিল বেশ। এক সাক্ষাৎকারে সুলতানের সেই বাড়ি নিয়ে নাসির আলী মামুন স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘উনার নিজের থাকার যে রুম, তাতে ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকির মধ্যে একটা চাটাই। চাটাইয়ের ওপরে থাকা একটা কাঁথা। ওইটার মধ্যে ঘুমায়, শতচ্ছিন্ন কাঁথা। নিজের ঘুমানোর জায়গার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাথায় তখন এটাও ঘুরছে, সুলতান একজন সেলিব্রিটি, এস এম সুলতান, গ্রেটম্যান—তাঁর এই অবস্থা! খালি দেখতেছি আর অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’
নাগরিক চোখে সুলতানের জীবন দেখে স্বস্তি মেলে না। কারণ, তিনি সাধারণ থেকে অসাধারণের পথ ধরেছেন, যেখানে শিল্পী হিসেবে সাধারণের জীবনকে পরিত্যাগ করেছেন। জীবনযাপনে বিলাস পরিত্যাগ করলেও মনে-মানসে সুলতান ছিলেন অনন্য। তার প্রমাণ মেলে কবি জসীম উদ্দীনের ‘হলদে পরীর দেশে’ লেখায়। পাকিস্তানে থাকাকালীন এই শিল্পীর মনের উদার জমিন কবি এঁকেছেন এভাবে, ‘সুলতানের এখনো নৈশভোজ হয় নাই। একটি যুবক বাহিরের দোকান হইতে ১০-১২ খানা চাপাতি (রুটি) ও সামান্য কিছু তরকারি শালপাতায় করিয়া আনিয়া দিল। চার পাঁচজন যুবক আর এই শিল্পীকে (উপস্থিত সেতারবাদক) সঙ্গে লইয়া সুলতান আহার করিল। পরিচয় লইয়া জানিলাম, এই যুবকেরা বেকার অবস্থায় সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো কোনো গ্রাম হইতে করাচি আসিয়াছে চাকরির অনুসন্ধানে। সুলতান তাহাদিগকে আশ্রয় দিয়াছে। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, যাহার নিজেরই আশ্রয় নাই, সে-ই বোধ হয় এমন করিয়া অপরকে আশ্রয় দিতে পারে। এই করাচি শহরে কত ধনী ব্যক্তি আছে, তাহাদের কতজনের অন্তর সুলতানের মতো এমন করিয়া পরের জন্য কাঁদে?’
কেবল শিল্পী হওয়ার পরে নয়, ১৯২৪ সালে কৃষক ও রাজমিস্ত্রি বাবার ঘরে যে লালমিয়ার জন্ম, শৈশব থেকেই পালিয়ে বেড়াতেন। জন্মস্থান নড়াইল থেকে পালিয়ে কলকাতা, সেখানে আর্ট কলেজ থেকেও পালালেন। ঘুরলেন পুরো ভারত। ভাবনাহীন, দায়িত্বহীন, ভবঘুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। সৈনিকদের ছবি এঁকে পকেট খরচ মেটাচ্ছেন। দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে গেলেন। খ্যাতি পেলেন। ঘুরলেন ইউরোপ-আমেরিকা। চাইলে দূরদেশেও নিজের জীবন সঁপে দিতে পারতেন। হতে পারতেন খ্যাতিমান আর বিত্তশালী, কিন্তু সেখান থেকেও পালালেন। ফিরে এলেন জন্মভিটা—নড়াইলে।
দেশে ফিরেও পালালেন তিনি। এবার অন্য কোথাও নয়। নাগরিক সমাজ, খ্যাতির ভিড় আর করপোরেট দুনিয়া থেকে। রাজধানীকেন্দ্রিক যেখানে দেশের শিল্পচর্চা, সুলতান সেখানে বেছে নিলেন তাঁর নিজস্ব পথ। পলেস্তারা খসে পড়া পুরোনো জমিদারবাড়ি আর প্রকৃতিঘেরা জীবনকে বেছে নিলেন তিনি। তাঁর ক্যানভাসেও উঠে এল প্রকৃতির সন্তানেরা। বাংলার কৃষক হয়ে উঠল তাঁর ছবির চরিত্র।
শিল্পী হিসেবে খ্যাতির মোড়ক থেকে নিজেকে বের করে একেবারে বোহিমিয়ান ঘোড়ায় চড়ে জীবন আস্বাদন করলেন শিল্পী এস এম সুলতান। সেই আস্বাদন থেকে উদিত চিন্তা তিনি ঢেলে দিয়েছেন শিল্পে। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর নাগরিক পন্থা কতটুকু কাজের! তা হয়তো জানা নেই। কিন্তু বোহিমিয়ান এই শিল্পীর শিল্প যে নাগরিক জীবনে বেঁচে থাকবে শত শতবর্ষী হয়ে—এ ভারি বলা যায়।
আয়োজন
শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এস এম সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সুলতান কমপ্লেক্সে সকাল ছয়টায় কোরআনখানি, নয়টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সোয়া নয়টায় তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল। জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, সুলতানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননারও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নড়াইলের নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
জন্মদিন: এস এম সুলতান
শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী। তিনি নেই; কিন্তু তাঁর শিল্প, জীবনের অদ্ভুত যাপন বেঁচে আছে, থাকবে আরও বহুকাল। আজ তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
সুলতান কি এসব জন্মদিনের খোঁজ রাখতেন? তথাকথিত নাগরিক জীবনকে থোড়াই কেয়ার করে গড়ে নিয়েছিলেন নিজের পৃথিবী। তাঁকে নিয়ে লেখায় কিংবা চলচ্চিত্রে সেই ছবির দেখা মেলে। নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্যচিত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবি শামসুর রাহমান ‘সুলতান তাঁর সালতানাত ত্যাগ করেননি’ প্রবন্ধে যে বাড়ির পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে, ‘সুলতানের সেই লতাগুল্ম এবং গাছপালা ভরা, কালের ক্ষতচিহ্ন বহনকারী বাড়ি অনেকের স্মৃতিতেই ভাস্বর হয়ে আছে। আমরা যারা যাইনি নানা পন্থায় সেই ভবনে, তাদেরও কল্পনায় জাগ্রত তার পরিবেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ।’
সংসারবিবাগী শিল্পরসিক এই মানুষের বাস জঙ্গলঘেঁষা এক পুরোনো দালানে। সঙ্গী হনুমান, বিড়াল, নেড়ি কুকুর, একপাল মুরগি। তথাকথিত মানুষের সঙ্গে নয়, প্রকৃতির সঙ্গেই যেন মিশে ছিলেন তিনি। সুলতানের ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
সুলতানের সান্নিধ্যে তাঁর থাকার সুযোগ হয়েছিল বেশ। এক সাক্ষাৎকারে সুলতানের সেই বাড়ি নিয়ে নাসির আলী মামুন স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘উনার নিজের থাকার যে রুম, তাতে ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকির মধ্যে একটা চাটাই। চাটাইয়ের ওপরে থাকা একটা কাঁথা। ওইটার মধ্যে ঘুমায়, শতচ্ছিন্ন কাঁথা। নিজের ঘুমানোর জায়গার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাথায় তখন এটাও ঘুরছে, সুলতান একজন সেলিব্রিটি, এস এম সুলতান, গ্রেটম্যান—তাঁর এই অবস্থা! খালি দেখতেছি আর অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’
নাগরিক চোখে সুলতানের জীবন দেখে স্বস্তি মেলে না। কারণ, তিনি সাধারণ থেকে অসাধারণের পথ ধরেছেন, যেখানে শিল্পী হিসেবে সাধারণের জীবনকে পরিত্যাগ করেছেন। জীবনযাপনে বিলাস পরিত্যাগ করলেও মনে-মানসে সুলতান ছিলেন অনন্য। তার প্রমাণ মেলে কবি জসীম উদ্দীনের ‘হলদে পরীর দেশে’ লেখায়। পাকিস্তানে থাকাকালীন এই শিল্পীর মনের উদার জমিন কবি এঁকেছেন এভাবে, ‘সুলতানের এখনো নৈশভোজ হয় নাই। একটি যুবক বাহিরের দোকান হইতে ১০-১২ খানা চাপাতি (রুটি) ও সামান্য কিছু তরকারি শালপাতায় করিয়া আনিয়া দিল। চার পাঁচজন যুবক আর এই শিল্পীকে (উপস্থিত সেতারবাদক) সঙ্গে লইয়া সুলতান আহার করিল। পরিচয় লইয়া জানিলাম, এই যুবকেরা বেকার অবস্থায় সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো কোনো গ্রাম হইতে করাচি আসিয়াছে চাকরির অনুসন্ধানে। সুলতান তাহাদিগকে আশ্রয় দিয়াছে। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, যাহার নিজেরই আশ্রয় নাই, সে-ই বোধ হয় এমন করিয়া অপরকে আশ্রয় দিতে পারে। এই করাচি শহরে কত ধনী ব্যক্তি আছে, তাহাদের কতজনের অন্তর সুলতানের মতো এমন করিয়া পরের জন্য কাঁদে?’
কেবল শিল্পী হওয়ার পরে নয়, ১৯২৪ সালে কৃষক ও রাজমিস্ত্রি বাবার ঘরে যে লালমিয়ার জন্ম, শৈশব থেকেই পালিয়ে বেড়াতেন। জন্মস্থান নড়াইল থেকে পালিয়ে কলকাতা, সেখানে আর্ট কলেজ থেকেও পালালেন। ঘুরলেন পুরো ভারত। ভাবনাহীন, দায়িত্বহীন, ভবঘুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। সৈনিকদের ছবি এঁকে পকেট খরচ মেটাচ্ছেন। দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে গেলেন। খ্যাতি পেলেন। ঘুরলেন ইউরোপ-আমেরিকা। চাইলে দূরদেশেও নিজের জীবন সঁপে দিতে পারতেন। হতে পারতেন খ্যাতিমান আর বিত্তশালী, কিন্তু সেখান থেকেও পালালেন। ফিরে এলেন জন্মভিটা—নড়াইলে।
দেশে ফিরেও পালালেন তিনি। এবার অন্য কোথাও নয়। নাগরিক সমাজ, খ্যাতির ভিড় আর করপোরেট দুনিয়া থেকে। রাজধানীকেন্দ্রিক যেখানে দেশের শিল্পচর্চা, সুলতান সেখানে বেছে নিলেন তাঁর নিজস্ব পথ। পলেস্তারা খসে পড়া পুরোনো জমিদারবাড়ি আর প্রকৃতিঘেরা জীবনকে বেছে নিলেন তিনি। তাঁর ক্যানভাসেও উঠে এল প্রকৃতির সন্তানেরা। বাংলার কৃষক হয়ে উঠল তাঁর ছবির চরিত্র।
শিল্পী হিসেবে খ্যাতির মোড়ক থেকে নিজেকে বের করে একেবারে বোহিমিয়ান ঘোড়ায় চড়ে জীবন আস্বাদন করলেন শিল্পী এস এম সুলতান। সেই আস্বাদন থেকে উদিত চিন্তা তিনি ঢেলে দিয়েছেন শিল্পে। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর নাগরিক পন্থা কতটুকু কাজের! তা হয়তো জানা নেই। কিন্তু বোহিমিয়ান এই শিল্পীর শিল্প যে নাগরিক জীবনে বেঁচে থাকবে শত শতবর্ষী হয়ে—এ ভারি বলা যায়।
আয়োজন
শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এস এম সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সুলতান কমপ্লেক্সে সকাল ছয়টায় কোরআনখানি, নয়টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সোয়া নয়টায় তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল। জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, সুলতানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননারও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নড়াইলের নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী। তিনি নেই; কিন্তু তাঁর শিল্প, জীবনের অদ্ভুত যাপন বেঁচে আছে, থাকবে আরও বহুকাল। আজ তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
সুলতান কি এসব জন্মদিনের খোঁজ রাখতেন? তথাকথিত নাগরিক জীবনকে থোড়াই কেয়ার করে গড়ে নিয়েছিলেন নিজের পৃথিবী। তাঁকে নিয়ে লেখায় কিংবা চলচ্চিত্রে সেই ছবির দেখা মেলে। নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্যচিত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবি শামসুর রাহমান ‘সুলতান তাঁর সালতানাত ত্যাগ করেননি’ প্রবন্ধে যে বাড়ির পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে, ‘সুলতানের সেই লতাগুল্ম এবং গাছপালা ভরা, কালের ক্ষতচিহ্ন বহনকারী বাড়ি অনেকের স্মৃতিতেই ভাস্বর হয়ে আছে। আমরা যারা যাইনি নানা পন্থায় সেই ভবনে, তাদেরও কল্পনায় জাগ্রত তার পরিবেশ, অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্ঠ।’
সংসারবিবাগী শিল্পরসিক এই মানুষের বাস জঙ্গলঘেঁষা এক পুরোনো দালানে। সঙ্গী হনুমান, বিড়াল, নেড়ি কুকুর, একপাল মুরগি। তথাকথিত মানুষের সঙ্গে নয়, প্রকৃতির সঙ্গেই যেন মিশে ছিলেন তিনি। সুলতানের ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন।
সুলতানের সান্নিধ্যে তাঁর থাকার সুযোগ হয়েছিল বেশ। এক সাক্ষাৎকারে সুলতানের সেই বাড়ি নিয়ে নাসির আলী মামুন স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘উনার নিজের থাকার যে রুম, তাতে ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকির মধ্যে একটা চাটাই। চাটাইয়ের ওপরে থাকা একটা কাঁথা। ওইটার মধ্যে ঘুমায়, শতচ্ছিন্ন কাঁথা। নিজের ঘুমানোর জায়গার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাথায় তখন এটাও ঘুরছে, সুলতান একজন সেলিব্রিটি, এস এম সুলতান, গ্রেটম্যান—তাঁর এই অবস্থা! খালি দেখতেছি আর অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’
নাগরিক চোখে সুলতানের জীবন দেখে স্বস্তি মেলে না। কারণ, তিনি সাধারণ থেকে অসাধারণের পথ ধরেছেন, যেখানে শিল্পী হিসেবে সাধারণের জীবনকে পরিত্যাগ করেছেন। জীবনযাপনে বিলাস পরিত্যাগ করলেও মনে-মানসে সুলতান ছিলেন অনন্য। তার প্রমাণ মেলে কবি জসীম উদ্দীনের ‘হলদে পরীর দেশে’ লেখায়। পাকিস্তানে থাকাকালীন এই শিল্পীর মনের উদার জমিন কবি এঁকেছেন এভাবে, ‘সুলতানের এখনো নৈশভোজ হয় নাই। একটি যুবক বাহিরের দোকান হইতে ১০-১২ খানা চাপাতি (রুটি) ও সামান্য কিছু তরকারি শালপাতায় করিয়া আনিয়া দিল। চার পাঁচজন যুবক আর এই শিল্পীকে (উপস্থিত সেতারবাদক) সঙ্গে লইয়া সুলতান আহার করিল। পরিচয় লইয়া জানিলাম, এই যুবকেরা বেকার অবস্থায় সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো কোনো গ্রাম হইতে করাচি আসিয়াছে চাকরির অনুসন্ধানে। সুলতান তাহাদিগকে আশ্রয় দিয়াছে। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, যাহার নিজেরই আশ্রয় নাই, সে-ই বোধ হয় এমন করিয়া অপরকে আশ্রয় দিতে পারে। এই করাচি শহরে কত ধনী ব্যক্তি আছে, তাহাদের কতজনের অন্তর সুলতানের মতো এমন করিয়া পরের জন্য কাঁদে?’
কেবল শিল্পী হওয়ার পরে নয়, ১৯২৪ সালে কৃষক ও রাজমিস্ত্রি বাবার ঘরে যে লালমিয়ার জন্ম, শৈশব থেকেই পালিয়ে বেড়াতেন। জন্মস্থান নড়াইল থেকে পালিয়ে কলকাতা, সেখানে আর্ট কলেজ থেকেও পালালেন। ঘুরলেন পুরো ভারত। ভাবনাহীন, দায়িত্বহীন, ভবঘুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। সৈনিকদের ছবি এঁকে পকেট খরচ মেটাচ্ছেন। দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে গেলেন। খ্যাতি পেলেন। ঘুরলেন ইউরোপ-আমেরিকা। চাইলে দূরদেশেও নিজের জীবন সঁপে দিতে পারতেন। হতে পারতেন খ্যাতিমান আর বিত্তশালী, কিন্তু সেখান থেকেও পালালেন। ফিরে এলেন জন্মভিটা—নড়াইলে।
দেশে ফিরেও পালালেন তিনি। এবার অন্য কোথাও নয়। নাগরিক সমাজ, খ্যাতির ভিড় আর করপোরেট দুনিয়া থেকে। রাজধানীকেন্দ্রিক যেখানে দেশের শিল্পচর্চা, সুলতান সেখানে বেছে নিলেন তাঁর নিজস্ব পথ। পলেস্তারা খসে পড়া পুরোনো জমিদারবাড়ি আর প্রকৃতিঘেরা জীবনকে বেছে নিলেন তিনি। তাঁর ক্যানভাসেও উঠে এল প্রকৃতির সন্তানেরা। বাংলার কৃষক হয়ে উঠল তাঁর ছবির চরিত্র।
শিল্পী হিসেবে খ্যাতির মোড়ক থেকে নিজেকে বের করে একেবারে বোহিমিয়ান ঘোড়ায় চড়ে জীবন আস্বাদন করলেন শিল্পী এস এম সুলতান। সেই আস্বাদন থেকে উদিত চিন্তা তিনি ঢেলে দিয়েছেন শিল্পে। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর নাগরিক পন্থা কতটুকু কাজের! তা হয়তো জানা নেই। কিন্তু বোহিমিয়ান এই শিল্পীর শিল্প যে নাগরিক জীবনে বেঁচে থাকবে শত শতবর্ষী হয়ে—এ ভারি বলা যায়।
আয়োজন
শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এস এম সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সুলতান কমপ্লেক্সে সকাল ছয়টায় কোরআনখানি, নয়টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সোয়া নয়টায় তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল। জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, সুলতানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শিল্পী সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননারও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নড়াইলের নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১২ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
১০ আগস্ট ২০২৫জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১২ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
১০ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১২ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
১০ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
১০ আগস্ট ২০২৫জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১২ দিন আগে