গাজী আবদুর রহিম
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো হয়ে যায়। তখন এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে মধুডাঙার জল। কেউ হঠাৎ একা দেখলে ভাববে, এটা খুনের রক্তের দরিয়া। এই নদী নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প তৈরি হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত দ্বীপটাকে সবাই জেলেপল্লি হিসেবে চেনে। নদীতীরের এই পল্লিতে কোনো পাকা ঘর নেই। যা আছে, সবগুলো মাটির। ওপরে শণের চালা। কারো কারো চালা দিয়ে আবার আসমান দেখা যায়। এই পল্লি ক্ষুধার নিদারুণ এক রাজ্য। তবে ক্ষুধার রাজ্য হলে কী হবে, এখানে কাল্পনিক রাজ্য দেখা যায়। এই দ্বীপ নদীর ওপর ভেসে আছে। ছোট-বড়-মাঝারি ঘরগুলোর দক্ষিণ পাশে বরইগাছের নিচে খসে যাওয়া মাটির ঘর। বারান্দার সঙ্গে রান্নাঘর। এই ঘরটা কালিদাসের। তার ঘরে দেবী বসবাস করে। এই দেবী তার অপূর্ব সুন্দরী ও গুণবতী মেয়ে। নাম ভিমা। এখানে সচরাচর সুন্দরী মেয়ে জন্মে না। কারণ এই দ্বীপে যারা বাস করে, এরা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গায়ের রং কালো হয়। আর সবাই উচ্চ লম্বা হয়। দেহের গড়ন হয় সুঠাম। তবে ভিমার চেহারা ছিল ভিন্ন রকমের। যেন হিন্দি সিনেমার নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চেহারার নকল রূপ পেয়েছে। এখন এই সৌন্দর্য তার বিপদের কারণ হলো। নিম্নবর্গের মানুষের ঘরে উচ্চবর্গের চেহারার মেয়ে থাকা যে কতটা বিবাদের তা বলা কষ্টকর। কালিদাস মেয়েকে নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছে। দুষ্ট যুবকেরা তার বাড়ির আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে কালিদাসের সংসারে টানাটানি নিদারুণ। স্ত্রী মারা গেছে গত বছর। দীর্ঘদিন সে অসুস্থ ছিল। তার পেছনে হাজার তিরিশেক টাকা খরচ হয়েছিল চিকিৎসা বাবদ। শেষমেশ টাকাও গেল, স্ত্রীও মারা গেল। মাঝখান দিয়ে কালিদাস ঋণের জলে ডুবে গেল। মাছ ধরার নৌকাটাও গেছে ফুটো হয়ে। পানি ওঠে গড়গড় করে। এই পৌষে দূরদূরান্ত থেকে ধান আনা-নেওয়ার খ্যাপের কাজ করতে পারলে তার কিছু রোজগার হতো। তা ছাড়া মধুডাঙায় এখন মাছের ছড়াছড়ি। ধরতে পারলেই হাটে নিয়ে গেলে কাঁচা টাকা পাওয়া যায়। এই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না কালিদাস। সমিতির লোকেরা দুবেলা আসে ঋণের কিস্তি আদায় করতে। অন্যান্য পাওনাদারও বাড়তি কথা শোনাচ্ছে। রামেশ্বর বলেছে, সাত দিনের মধ্যে তার টাকা না দিতে পারলে কালিদাসকে বাজারে বটগাছের গায়ে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধবে। রামেশ্বর এই গাঁয়ের কেউ না। ওর বাড়ি মহাদেবপুর বাজারের পাশেই। এদিকে ঘরের চালে শণ কিছুটা ওড়ে দক্ষিণের বাতাসে। তিন মাস বাদেই বর্ষাকাল।
পাওনাদারের গালি সইতে না পেরে কালিদাস একদিন কালো আঁধারের নিশিতে পাড়ি দিল যশোরে। যশোরে ধান কাটার কাজে বেশ রোজগার হয়। যাওয়ার সময় ভিমাকে বলে গেছে, ‘মা, তুই দেইখা-শুইনা ভালো মতোন থাকিস। আমি বিশ-পঁচিশ দিনের বেশি থাকপো না।’
এ কাজে ধানও পাওয়া যাবে খোরাকির জন্য, আবার বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যাবে। এজন্য এই কাজ তার কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য উত্তম পন্থা মনে হয়েছে।
এদিকে কালিদাস চলে যাওয়ায় বাড়িতে একা থাকে ভিমা। সকালবেলা সে ভাঙাচোরা নৌকাটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। মেয়ে হলে কী হবে, তার ভেতরে শক্তি-সামর্থ্য সবই আছে। খেওলা জাল ফেলতে পারে। সে স্কুলে যায় না। পড়ালেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ির সব কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
একদিন দুপুরের দিকে রামেশ্বর এসে ডাক পাড়ে, ‘কালিদাস, বাড়িত আছো?’
ভিমা তার হাঁসের বাচ্চাগুলোকে শামুক ভেঙে দিচ্ছিল। রামেশ্বরকে দেখে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে চৌকি এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘বাবা বাড়িতে নাই।’
‘কই গ্যাছে?’
‘যশোরে। ধান কাটবার কামলা দিবার গ্যাছে।’
‘আমার টাকাগুলান এত দিন হইয়া গেল, তবু পরিশোধ করল না। এরকম করলি চলে বলো?’
‘সব টাকা পরিশোধ কইরা দিবে, একটু সবুর করেন, কাকাবাবু।’
ভিমা ঘর থেকে বাটিতে করে চালভাজা এনে দেয় রামেশ্বরকে। খেতে খেতে দুজন কথা বলে। রামেশ্বর বলে, ‘তোমার নামডা কী য্যান?’
‘ভিমা।’
মানুষের মন বড়ই উচাটন। মেয়েটাকে দেখে রামেশ্বরের মনে ধরে। সে মনে মনে ঠিক করে, তার ছেলের সঙ্গে বেশ মানাবে। এতক্ষণে ভিমা যে জেলের ঘরের মেয়ে, এটা খেয়াল ছিল না রামেশ্বরের।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা।’
‘আমি রান্ধন বসাইছি। খাইয়া যাইবেন, কাকাবাবু।’
‘তা হোকগে। অন্যদিন আইসা খাব।’
রামেশ্বর এরপর থেকে নিয়মিত আসে টাকা চাইতে। তবে তার মনে লক্ষ্যের বিপরীতে একটা উপলক্ষও যে ছিল, সেটা আর কে জানে?
একদিন ভিমার সতেরো বসন্ত পার করে আসা যৌবনে রামেশ্বর গাঢ় ছাপ এঁকে দেয়। এই ছাপ আসলে কলঙ্কের, নাকি স্বর্গের?
সেদিনও পাওনা আদায়ের জন্য এসেছিল রামেশ্বর। তাকে কাকাবাবু সম্বোধন করে বারান্দায় বসতে দিয়েছিল ভিমা। তারপর শুরু হলো ঘোর বর্ষা। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা জানোয়ার হয়ে ওঠে রামেশ্বর। সেদিন ভিমার শত বাধা, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কাকাবাবু ডাক উপেক্ষা করেছিল রামেশ্বর।
এ ঘটনার পর থেকে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে ভিমার। তার গোলাপের মতো মুখটায় আর ফুটন্ত গোলাপের হাসি আসে না। যেন বিধির এই গোলাপের পাপড়িগুলো কীটের আক্রমণে বুজে যায় যায় ভাব। সারাক্ষণ পৃথিবীটা ঘুরতে থাকে ওর কাছে। হাঁসের বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলতে আর ভালো লাগে না ওর। নৌকা নিয়ে নদীতে যেতেও মন চায় না।
এক মাস পর বাড়িতে আসে কালিদাস। অনেক টাকা কামিয়েছে সে। ভিমার জন্য এনেছে চুরি ও ব্যান ক্লিপ। আর এনেছে সন্দেশ। মেয়েটা তার সন্দেশ পছন্দ করে। বাবাকে দেখে ধীরপায়ে এসে দাঁড়ায় ভিমা। কালিদাস বলে, ‘মা তোর মুখ এত শুকনো ক্যান? কিচ্ছু খাসনি বুঝি? চিন্তা করিস? আর চিন্তা করতে হইব না। এবার সক্কল দেনা পরিশোধ কইরা দিমু।’
ভিমা মনে মনে বলে, ‘যা দেনা ছিল, তার থাইকা বেশি তো নিয়া গ্যাছে জানোয়ার রামেশ্বর। তুমি আবার কী পরিশোধ করবে, বাবা?’
ভিমা বলে, ‘বাবা, আইসা ভাত খাইয়া নাও।’
কালিদাসের হাতে থাকা ব্যানক্লিপ, চুরি ও সন্দেশের প্যাকেটগুলো ভিমার হাতে দেয়।
উঠোনে রোদে বসে ভাত খায় কালিদাস। শীত পড়ছে বেশ প্রখরতা নিয়ে। সকালে কুয়াশা পড়ে হালকা। এর মধ্যে একদিন হয়ে গেল ঘোর বর্ষা। ঋতুর যেন ঠিকঠিকানা নেই।
কালিদাস নৌকা সারাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আরশাদ মিস্ত্রি সকাল থেকেই কাজে লেগেছে। নৌকা গড়ার দক্ষ এক কারিগর এই আরশাদ। বয়স নব্বইয়ের ওপরে। চুল সাদা হয়ে গেছে। দাঁত পড়েনি একটাও। জীবনে কয়েক হাজার নৌকা গড়েছে আরশাদ। এখনো গড়ে যাচ্ছে, দুবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে।
পরদিন রামেশ্বর আসে টাকা চাইতে। ঘর থেকে টাকা এনে দেয় কালিদাস। রামেশ্বরকে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থুতু ফেলে ভিমা। রামেশ্বর ভিমার চোখে মানুষরূপী জানোয়ার।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা কালি।’
কালিদাস বলে, ‘এত দেরি হলো দেনা পরিশোধ করতে, আমাকে ক্ষমা কইরা দিও, দাদা।’
‘সমস্যা নেই। তুমি যাইও দিন বেড়াইয়া আইসো।’
‘নিশ্চয় যাব।’
রামেশ্বর চলে যাওয়ার পর কালিদাসের সামনে এসে দাঁড়ায় ভিমা। ভিমা বলে, ‘রামেশ্বর কী জন্যি আইছিল?’
‘পাওনা টাকা নিবার লাগি।’
ভিমা বাবাকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। তার ভেতরে অন্যরকম একটা দ্বিধা-ঘৃণা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কালিদাস বের হয় হাটে যাওয়ার জন্য। তার একটা ঘন জালের দরকার। নদীতে ছোট-বড় হরিণা চিংড়ির ছড়াছড়ি। বাজারে দামও ভালো, কেজি পঞ্চাশ টাকা।
হঠাৎ ভাতপোড়া গন্ধ আসে ভিমার নাকে। ও সেই কখন ভাত বসিয়েছে। তারপর আর খেয়াল করেনি। মেয়েটা সারাক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থাকে। কাজে মন বসে না আগের মতো। শুধু মাথা ঘুরায় আর বমি আসে।
হাসের বাচ্চাগুলো দাঁড়িয়ে আছে উঠানের আঙিনায়। একটু পর আরশাদ মিস্ত্রি আসবে ভাত খেতে। এসে দেরি করবে না। লোকটা কাজে ফাঁকি দেয় না।
ভিমা পোড়া ভাতগুলো গরুর নান্দায় ঢেলে দিয়ে আবার নতুন করে ভাত বসায়। কালিদাস হাট থেকে বাড়ি ফেরে। নদীর তীর থেকে আসে আরশাদ মিস্ত্রি। কালিদাস বলে, ‘মিস্ত্রি আইছে। ভাত দে, মা।’
ভিমা বলে, ‘ভাত হইতে আরেকটু বাকি আছে।’
‘আমি হাটে যাইবার সময় না দেইখা গেলাম তুই ভাত বসাইছিলি!’
‘হ। বসাইছিলাম। পুইড়া গ্যাছে, তাই আবার বসাইছি।’
ওদিকে আরশাদ মিস্ত্রি ডাক পাড়ে, ‘কই, ভাত কই! নিয়া আসো, বেলা গড়াইয়া যাইতেছে। অনেক কাম বাকি এখনো।’
কালিদাস বলে, ‘ভাই, দুইডা মিনিট বসেন।’
ভিমা বলে, ‘তোমরা দুইজন বসো। আমি চিড়া আর গুড় আনতাছি।’
চিড়া আর গুড় খেয়ে নদীর তীরে রওনা দেয় কালিদাস ও আরশাদ। আজকে যে করেই হোক কাজ শেষ করা লাগব।
সন্ধ্যায় ঘরে চৌকিতে শুয়ে আছে ভিমা। কালিদাস ভিমার কপালে হাত রেখে বলে, ‘কিরে মা, তোর কি শরীল খারাপ করছে?’
‘না। কেমুন জানি লাগতাছে।’
‘দ্যাখলি, বুঝি আমি। বাবারা মাইয়ার সব দুখ্খো বোঝে। বল কী হইছে?’
‘জানি না কী হইছে। তবে সারাক্ষণ শুধু ওলডানি আসে আর মাথা ঘুরায়।’
এ কথা শুনে কালিদাসের চোখ কপালে উঠে যায়। ‘এখন আমি যা যা জিগাইব, উত্তর দিবি।’
‘কী প্রশ্ন, বলো?’
‘তুই কি কারো লগে শুইছিলি?’
‘অত কিছু কইতে পারুম না। শুধু এটুকুন বলতেছি। হুম। তয় নিজের ইচ্ছায় না। সে জোর করে...’
‘কে সে?’
‘তোমার পাওনাদার। এর বেশি কিচ্ছু আমি কইতে পারুম না।’
‘রামেশ্বর যে এমন কুত্তার কুত্তা। ওরে দেখলে চেনা যায় না। কুত্তাটারে আমি বলি দিব। তুই এই কথা কাউরে কছ নাই তো?’
‘কইলে কী হইব, আর না কইলে কী হইব?’
‘লোকে জানলি তোরে বিয়া দিবার পারুম না, মা। খবরদার, কাউরে বলবি না।’
এ কথা শোনার পর কালিদাসের মন খারাপের রোগে ধরে। তার কোনো কাজে মন বসতে চায় না। তবে তার তো আর বসে থাকলে চলবে না। কালিদাস তার নতুন জালটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। অনেক মাছ উঠেছে জালে। সব মিলিয়ে কেজি দেড়েক চিংড়ি মাছ। সেগুলো নিয়ে হাটে যায় কালিদাস ৷ এগুলো বেচে তরিতরকারি কিনে আনবে সে।
হাট থেকে ফিরে কালিদাস দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। কালিদাস বলে, ‘মা, এই অবেলায় ঘরের দরজা বন্ধ কইরা ঘুমাচ্ছিস ক্যান?’
কোনো সাড়া না পেয়ে কালিদাস দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে, ভিমা আর বেঁচে নেই। সে গলায় রশি নিয়ে এই পৃথিবীর বিষাক্ত মানুষ নামের কীটদের মুখে থুতু দিয়েছে আরও একবার।
পাড়ার লোকেরা চিতা সাজিয়েছে। মধুডাঙা নদীর তীরে শ্মশান। চন্দনের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। একটু পরই চিতার মুখে আগুন দেবে কালিদাস। কিন্তু তার চোখে-মুখে কোনো শোকের ছাপ নেই। কারণ তার মনে হচ্ছে, ভিমা স্বর্গে চলে গেছে।
শ্মশান থেকে ফিরতে রামেশ্বরের সঙ্গে দেখা হয় কালিদাসের। কালিদাস বলে, ‘রামেশ্বর, তুই মানুষ না। তুই আস্তো একটা কুত্তার বাচ্চা। তুই একটা জানোয়ার।’
এ কথা শুনে রামেশ্বরের চোখ দুটো বড় হয়ে যায়। যেন চিড়িয়াখানার কোনো জন্তু অনেক দিন পর মানুষের দেখা পেয়েছে।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো হয়ে যায়। তখন এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে মধুডাঙার জল। কেউ হঠাৎ একা দেখলে ভাববে, এটা খুনের রক্তের দরিয়া। এই নদী নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প তৈরি হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত দ্বীপটাকে সবাই জেলেপল্লি হিসেবে চেনে। নদীতীরের এই পল্লিতে কোনো পাকা ঘর নেই। যা আছে, সবগুলো মাটির। ওপরে শণের চালা। কারো কারো চালা দিয়ে আবার আসমান দেখা যায়। এই পল্লি ক্ষুধার নিদারুণ এক রাজ্য। তবে ক্ষুধার রাজ্য হলে কী হবে, এখানে কাল্পনিক রাজ্য দেখা যায়। এই দ্বীপ নদীর ওপর ভেসে আছে। ছোট-বড়-মাঝারি ঘরগুলোর দক্ষিণ পাশে বরইগাছের নিচে খসে যাওয়া মাটির ঘর। বারান্দার সঙ্গে রান্নাঘর। এই ঘরটা কালিদাসের। তার ঘরে দেবী বসবাস করে। এই দেবী তার অপূর্ব সুন্দরী ও গুণবতী মেয়ে। নাম ভিমা। এখানে সচরাচর সুন্দরী মেয়ে জন্মে না। কারণ এই দ্বীপে যারা বাস করে, এরা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গায়ের রং কালো হয়। আর সবাই উচ্চ লম্বা হয়। দেহের গড়ন হয় সুঠাম। তবে ভিমার চেহারা ছিল ভিন্ন রকমের। যেন হিন্দি সিনেমার নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চেহারার নকল রূপ পেয়েছে। এখন এই সৌন্দর্য তার বিপদের কারণ হলো। নিম্নবর্গের মানুষের ঘরে উচ্চবর্গের চেহারার মেয়ে থাকা যে কতটা বিবাদের তা বলা কষ্টকর। কালিদাস মেয়েকে নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছে। দুষ্ট যুবকেরা তার বাড়ির আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে কালিদাসের সংসারে টানাটানি নিদারুণ। স্ত্রী মারা গেছে গত বছর। দীর্ঘদিন সে অসুস্থ ছিল। তার পেছনে হাজার তিরিশেক টাকা খরচ হয়েছিল চিকিৎসা বাবদ। শেষমেশ টাকাও গেল, স্ত্রীও মারা গেল। মাঝখান দিয়ে কালিদাস ঋণের জলে ডুবে গেল। মাছ ধরার নৌকাটাও গেছে ফুটো হয়ে। পানি ওঠে গড়গড় করে। এই পৌষে দূরদূরান্ত থেকে ধান আনা-নেওয়ার খ্যাপের কাজ করতে পারলে তার কিছু রোজগার হতো। তা ছাড়া মধুডাঙায় এখন মাছের ছড়াছড়ি। ধরতে পারলেই হাটে নিয়ে গেলে কাঁচা টাকা পাওয়া যায়। এই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না কালিদাস। সমিতির লোকেরা দুবেলা আসে ঋণের কিস্তি আদায় করতে। অন্যান্য পাওনাদারও বাড়তি কথা শোনাচ্ছে। রামেশ্বর বলেছে, সাত দিনের মধ্যে তার টাকা না দিতে পারলে কালিদাসকে বাজারে বটগাছের গায়ে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধবে। রামেশ্বর এই গাঁয়ের কেউ না। ওর বাড়ি মহাদেবপুর বাজারের পাশেই। এদিকে ঘরের চালে শণ কিছুটা ওড়ে দক্ষিণের বাতাসে। তিন মাস বাদেই বর্ষাকাল।
পাওনাদারের গালি সইতে না পেরে কালিদাস একদিন কালো আঁধারের নিশিতে পাড়ি দিল যশোরে। যশোরে ধান কাটার কাজে বেশ রোজগার হয়। যাওয়ার সময় ভিমাকে বলে গেছে, ‘মা, তুই দেইখা-শুইনা ভালো মতোন থাকিস। আমি বিশ-পঁচিশ দিনের বেশি থাকপো না।’
এ কাজে ধানও পাওয়া যাবে খোরাকির জন্য, আবার বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যাবে। এজন্য এই কাজ তার কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য উত্তম পন্থা মনে হয়েছে।
এদিকে কালিদাস চলে যাওয়ায় বাড়িতে একা থাকে ভিমা। সকালবেলা সে ভাঙাচোরা নৌকাটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। মেয়ে হলে কী হবে, তার ভেতরে শক্তি-সামর্থ্য সবই আছে। খেওলা জাল ফেলতে পারে। সে স্কুলে যায় না। পড়ালেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ির সব কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
একদিন দুপুরের দিকে রামেশ্বর এসে ডাক পাড়ে, ‘কালিদাস, বাড়িত আছো?’
ভিমা তার হাঁসের বাচ্চাগুলোকে শামুক ভেঙে দিচ্ছিল। রামেশ্বরকে দেখে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে চৌকি এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘বাবা বাড়িতে নাই।’
‘কই গ্যাছে?’
‘যশোরে। ধান কাটবার কামলা দিবার গ্যাছে।’
‘আমার টাকাগুলান এত দিন হইয়া গেল, তবু পরিশোধ করল না। এরকম করলি চলে বলো?’
‘সব টাকা পরিশোধ কইরা দিবে, একটু সবুর করেন, কাকাবাবু।’
ভিমা ঘর থেকে বাটিতে করে চালভাজা এনে দেয় রামেশ্বরকে। খেতে খেতে দুজন কথা বলে। রামেশ্বর বলে, ‘তোমার নামডা কী য্যান?’
‘ভিমা।’
মানুষের মন বড়ই উচাটন। মেয়েটাকে দেখে রামেশ্বরের মনে ধরে। সে মনে মনে ঠিক করে, তার ছেলের সঙ্গে বেশ মানাবে। এতক্ষণে ভিমা যে জেলের ঘরের মেয়ে, এটা খেয়াল ছিল না রামেশ্বরের।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা।’
‘আমি রান্ধন বসাইছি। খাইয়া যাইবেন, কাকাবাবু।’
‘তা হোকগে। অন্যদিন আইসা খাব।’
রামেশ্বর এরপর থেকে নিয়মিত আসে টাকা চাইতে। তবে তার মনে লক্ষ্যের বিপরীতে একটা উপলক্ষও যে ছিল, সেটা আর কে জানে?
একদিন ভিমার সতেরো বসন্ত পার করে আসা যৌবনে রামেশ্বর গাঢ় ছাপ এঁকে দেয়। এই ছাপ আসলে কলঙ্কের, নাকি স্বর্গের?
সেদিনও পাওনা আদায়ের জন্য এসেছিল রামেশ্বর। তাকে কাকাবাবু সম্বোধন করে বারান্দায় বসতে দিয়েছিল ভিমা। তারপর শুরু হলো ঘোর বর্ষা। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা জানোয়ার হয়ে ওঠে রামেশ্বর। সেদিন ভিমার শত বাধা, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কাকাবাবু ডাক উপেক্ষা করেছিল রামেশ্বর।
এ ঘটনার পর থেকে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে ভিমার। তার গোলাপের মতো মুখটায় আর ফুটন্ত গোলাপের হাসি আসে না। যেন বিধির এই গোলাপের পাপড়িগুলো কীটের আক্রমণে বুজে যায় যায় ভাব। সারাক্ষণ পৃথিবীটা ঘুরতে থাকে ওর কাছে। হাঁসের বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলতে আর ভালো লাগে না ওর। নৌকা নিয়ে নদীতে যেতেও মন চায় না।
এক মাস পর বাড়িতে আসে কালিদাস। অনেক টাকা কামিয়েছে সে। ভিমার জন্য এনেছে চুরি ও ব্যান ক্লিপ। আর এনেছে সন্দেশ। মেয়েটা তার সন্দেশ পছন্দ করে। বাবাকে দেখে ধীরপায়ে এসে দাঁড়ায় ভিমা। কালিদাস বলে, ‘মা তোর মুখ এত শুকনো ক্যান? কিচ্ছু খাসনি বুঝি? চিন্তা করিস? আর চিন্তা করতে হইব না। এবার সক্কল দেনা পরিশোধ কইরা দিমু।’
ভিমা মনে মনে বলে, ‘যা দেনা ছিল, তার থাইকা বেশি তো নিয়া গ্যাছে জানোয়ার রামেশ্বর। তুমি আবার কী পরিশোধ করবে, বাবা?’
ভিমা বলে, ‘বাবা, আইসা ভাত খাইয়া নাও।’
কালিদাসের হাতে থাকা ব্যানক্লিপ, চুরি ও সন্দেশের প্যাকেটগুলো ভিমার হাতে দেয়।
উঠোনে রোদে বসে ভাত খায় কালিদাস। শীত পড়ছে বেশ প্রখরতা নিয়ে। সকালে কুয়াশা পড়ে হালকা। এর মধ্যে একদিন হয়ে গেল ঘোর বর্ষা। ঋতুর যেন ঠিকঠিকানা নেই।
কালিদাস নৌকা সারাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আরশাদ মিস্ত্রি সকাল থেকেই কাজে লেগেছে। নৌকা গড়ার দক্ষ এক কারিগর এই আরশাদ। বয়স নব্বইয়ের ওপরে। চুল সাদা হয়ে গেছে। দাঁত পড়েনি একটাও। জীবনে কয়েক হাজার নৌকা গড়েছে আরশাদ। এখনো গড়ে যাচ্ছে, দুবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে।
পরদিন রামেশ্বর আসে টাকা চাইতে। ঘর থেকে টাকা এনে দেয় কালিদাস। রামেশ্বরকে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থুতু ফেলে ভিমা। রামেশ্বর ভিমার চোখে মানুষরূপী জানোয়ার।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা কালি।’
কালিদাস বলে, ‘এত দেরি হলো দেনা পরিশোধ করতে, আমাকে ক্ষমা কইরা দিও, দাদা।’
‘সমস্যা নেই। তুমি যাইও দিন বেড়াইয়া আইসো।’
‘নিশ্চয় যাব।’
রামেশ্বর চলে যাওয়ার পর কালিদাসের সামনে এসে দাঁড়ায় ভিমা। ভিমা বলে, ‘রামেশ্বর কী জন্যি আইছিল?’
‘পাওনা টাকা নিবার লাগি।’
ভিমা বাবাকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। তার ভেতরে অন্যরকম একটা দ্বিধা-ঘৃণা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কালিদাস বের হয় হাটে যাওয়ার জন্য। তার একটা ঘন জালের দরকার। নদীতে ছোট-বড় হরিণা চিংড়ির ছড়াছড়ি। বাজারে দামও ভালো, কেজি পঞ্চাশ টাকা।
হঠাৎ ভাতপোড়া গন্ধ আসে ভিমার নাকে। ও সেই কখন ভাত বসিয়েছে। তারপর আর খেয়াল করেনি। মেয়েটা সারাক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থাকে। কাজে মন বসে না আগের মতো। শুধু মাথা ঘুরায় আর বমি আসে।
হাসের বাচ্চাগুলো দাঁড়িয়ে আছে উঠানের আঙিনায়। একটু পর আরশাদ মিস্ত্রি আসবে ভাত খেতে। এসে দেরি করবে না। লোকটা কাজে ফাঁকি দেয় না।
ভিমা পোড়া ভাতগুলো গরুর নান্দায় ঢেলে দিয়ে আবার নতুন করে ভাত বসায়। কালিদাস হাট থেকে বাড়ি ফেরে। নদীর তীর থেকে আসে আরশাদ মিস্ত্রি। কালিদাস বলে, ‘মিস্ত্রি আইছে। ভাত দে, মা।’
ভিমা বলে, ‘ভাত হইতে আরেকটু বাকি আছে।’
‘আমি হাটে যাইবার সময় না দেইখা গেলাম তুই ভাত বসাইছিলি!’
‘হ। বসাইছিলাম। পুইড়া গ্যাছে, তাই আবার বসাইছি।’
ওদিকে আরশাদ মিস্ত্রি ডাক পাড়ে, ‘কই, ভাত কই! নিয়া আসো, বেলা গড়াইয়া যাইতেছে। অনেক কাম বাকি এখনো।’
কালিদাস বলে, ‘ভাই, দুইডা মিনিট বসেন।’
ভিমা বলে, ‘তোমরা দুইজন বসো। আমি চিড়া আর গুড় আনতাছি।’
চিড়া আর গুড় খেয়ে নদীর তীরে রওনা দেয় কালিদাস ও আরশাদ। আজকে যে করেই হোক কাজ শেষ করা লাগব।
সন্ধ্যায় ঘরে চৌকিতে শুয়ে আছে ভিমা। কালিদাস ভিমার কপালে হাত রেখে বলে, ‘কিরে মা, তোর কি শরীল খারাপ করছে?’
‘না। কেমুন জানি লাগতাছে।’
‘দ্যাখলি, বুঝি আমি। বাবারা মাইয়ার সব দুখ্খো বোঝে। বল কী হইছে?’
‘জানি না কী হইছে। তবে সারাক্ষণ শুধু ওলডানি আসে আর মাথা ঘুরায়।’
এ কথা শুনে কালিদাসের চোখ কপালে উঠে যায়। ‘এখন আমি যা যা জিগাইব, উত্তর দিবি।’
‘কী প্রশ্ন, বলো?’
‘তুই কি কারো লগে শুইছিলি?’
‘অত কিছু কইতে পারুম না। শুধু এটুকুন বলতেছি। হুম। তয় নিজের ইচ্ছায় না। সে জোর করে...’
‘কে সে?’
‘তোমার পাওনাদার। এর বেশি কিচ্ছু আমি কইতে পারুম না।’
‘রামেশ্বর যে এমন কুত্তার কুত্তা। ওরে দেখলে চেনা যায় না। কুত্তাটারে আমি বলি দিব। তুই এই কথা কাউরে কছ নাই তো?’
‘কইলে কী হইব, আর না কইলে কী হইব?’
‘লোকে জানলি তোরে বিয়া দিবার পারুম না, মা। খবরদার, কাউরে বলবি না।’
এ কথা শোনার পর কালিদাসের মন খারাপের রোগে ধরে। তার কোনো কাজে মন বসতে চায় না। তবে তার তো আর বসে থাকলে চলবে না। কালিদাস তার নতুন জালটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। অনেক মাছ উঠেছে জালে। সব মিলিয়ে কেজি দেড়েক চিংড়ি মাছ। সেগুলো নিয়ে হাটে যায় কালিদাস ৷ এগুলো বেচে তরিতরকারি কিনে আনবে সে।
হাট থেকে ফিরে কালিদাস দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। কালিদাস বলে, ‘মা, এই অবেলায় ঘরের দরজা বন্ধ কইরা ঘুমাচ্ছিস ক্যান?’
কোনো সাড়া না পেয়ে কালিদাস দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে, ভিমা আর বেঁচে নেই। সে গলায় রশি নিয়ে এই পৃথিবীর বিষাক্ত মানুষ নামের কীটদের মুখে থুতু দিয়েছে আরও একবার।
পাড়ার লোকেরা চিতা সাজিয়েছে। মধুডাঙা নদীর তীরে শ্মশান। চন্দনের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। একটু পরই চিতার মুখে আগুন দেবে কালিদাস। কিন্তু তার চোখে-মুখে কোনো শোকের ছাপ নেই। কারণ তার মনে হচ্ছে, ভিমা স্বর্গে চলে গেছে।
শ্মশান থেকে ফিরতে রামেশ্বরের সঙ্গে দেখা হয় কালিদাসের। কালিদাস বলে, ‘রামেশ্বর, তুই মানুষ না। তুই আস্তো একটা কুত্তার বাচ্চা। তুই একটা জানোয়ার।’
এ কথা শুনে রামেশ্বরের চোখ দুটো বড় হয়ে যায়। যেন চিড়িয়াখানার কোনো জন্তু অনেক দিন পর মানুষের দেখা পেয়েছে।
গাজী আবদুর রহিম
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো হয়ে যায়। তখন এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে মধুডাঙার জল। কেউ হঠাৎ একা দেখলে ভাববে, এটা খুনের রক্তের দরিয়া। এই নদী নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প তৈরি হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত দ্বীপটাকে সবাই জেলেপল্লি হিসেবে চেনে। নদীতীরের এই পল্লিতে কোনো পাকা ঘর নেই। যা আছে, সবগুলো মাটির। ওপরে শণের চালা। কারো কারো চালা দিয়ে আবার আসমান দেখা যায়। এই পল্লি ক্ষুধার নিদারুণ এক রাজ্য। তবে ক্ষুধার রাজ্য হলে কী হবে, এখানে কাল্পনিক রাজ্য দেখা যায়। এই দ্বীপ নদীর ওপর ভেসে আছে। ছোট-বড়-মাঝারি ঘরগুলোর দক্ষিণ পাশে বরইগাছের নিচে খসে যাওয়া মাটির ঘর। বারান্দার সঙ্গে রান্নাঘর। এই ঘরটা কালিদাসের। তার ঘরে দেবী বসবাস করে। এই দেবী তার অপূর্ব সুন্দরী ও গুণবতী মেয়ে। নাম ভিমা। এখানে সচরাচর সুন্দরী মেয়ে জন্মে না। কারণ এই দ্বীপে যারা বাস করে, এরা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গায়ের রং কালো হয়। আর সবাই উচ্চ লম্বা হয়। দেহের গড়ন হয় সুঠাম। তবে ভিমার চেহারা ছিল ভিন্ন রকমের। যেন হিন্দি সিনেমার নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চেহারার নকল রূপ পেয়েছে। এখন এই সৌন্দর্য তার বিপদের কারণ হলো। নিম্নবর্গের মানুষের ঘরে উচ্চবর্গের চেহারার মেয়ে থাকা যে কতটা বিবাদের তা বলা কষ্টকর। কালিদাস মেয়েকে নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছে। দুষ্ট যুবকেরা তার বাড়ির আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে কালিদাসের সংসারে টানাটানি নিদারুণ। স্ত্রী মারা গেছে গত বছর। দীর্ঘদিন সে অসুস্থ ছিল। তার পেছনে হাজার তিরিশেক টাকা খরচ হয়েছিল চিকিৎসা বাবদ। শেষমেশ টাকাও গেল, স্ত্রীও মারা গেল। মাঝখান দিয়ে কালিদাস ঋণের জলে ডুবে গেল। মাছ ধরার নৌকাটাও গেছে ফুটো হয়ে। পানি ওঠে গড়গড় করে। এই পৌষে দূরদূরান্ত থেকে ধান আনা-নেওয়ার খ্যাপের কাজ করতে পারলে তার কিছু রোজগার হতো। তা ছাড়া মধুডাঙায় এখন মাছের ছড়াছড়ি। ধরতে পারলেই হাটে নিয়ে গেলে কাঁচা টাকা পাওয়া যায়। এই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না কালিদাস। সমিতির লোকেরা দুবেলা আসে ঋণের কিস্তি আদায় করতে। অন্যান্য পাওনাদারও বাড়তি কথা শোনাচ্ছে। রামেশ্বর বলেছে, সাত দিনের মধ্যে তার টাকা না দিতে পারলে কালিদাসকে বাজারে বটগাছের গায়ে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধবে। রামেশ্বর এই গাঁয়ের কেউ না। ওর বাড়ি মহাদেবপুর বাজারের পাশেই। এদিকে ঘরের চালে শণ কিছুটা ওড়ে দক্ষিণের বাতাসে। তিন মাস বাদেই বর্ষাকাল।
পাওনাদারের গালি সইতে না পেরে কালিদাস একদিন কালো আঁধারের নিশিতে পাড়ি দিল যশোরে। যশোরে ধান কাটার কাজে বেশ রোজগার হয়। যাওয়ার সময় ভিমাকে বলে গেছে, ‘মা, তুই দেইখা-শুইনা ভালো মতোন থাকিস। আমি বিশ-পঁচিশ দিনের বেশি থাকপো না।’
এ কাজে ধানও পাওয়া যাবে খোরাকির জন্য, আবার বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যাবে। এজন্য এই কাজ তার কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য উত্তম পন্থা মনে হয়েছে।
এদিকে কালিদাস চলে যাওয়ায় বাড়িতে একা থাকে ভিমা। সকালবেলা সে ভাঙাচোরা নৌকাটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। মেয়ে হলে কী হবে, তার ভেতরে শক্তি-সামর্থ্য সবই আছে। খেওলা জাল ফেলতে পারে। সে স্কুলে যায় না। পড়ালেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ির সব কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
একদিন দুপুরের দিকে রামেশ্বর এসে ডাক পাড়ে, ‘কালিদাস, বাড়িত আছো?’
ভিমা তার হাঁসের বাচ্চাগুলোকে শামুক ভেঙে দিচ্ছিল। রামেশ্বরকে দেখে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে চৌকি এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘বাবা বাড়িতে নাই।’
‘কই গ্যাছে?’
‘যশোরে। ধান কাটবার কামলা দিবার গ্যাছে।’
‘আমার টাকাগুলান এত দিন হইয়া গেল, তবু পরিশোধ করল না। এরকম করলি চলে বলো?’
‘সব টাকা পরিশোধ কইরা দিবে, একটু সবুর করেন, কাকাবাবু।’
ভিমা ঘর থেকে বাটিতে করে চালভাজা এনে দেয় রামেশ্বরকে। খেতে খেতে দুজন কথা বলে। রামেশ্বর বলে, ‘তোমার নামডা কী য্যান?’
‘ভিমা।’
মানুষের মন বড়ই উচাটন। মেয়েটাকে দেখে রামেশ্বরের মনে ধরে। সে মনে মনে ঠিক করে, তার ছেলের সঙ্গে বেশ মানাবে। এতক্ষণে ভিমা যে জেলের ঘরের মেয়ে, এটা খেয়াল ছিল না রামেশ্বরের।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা।’
‘আমি রান্ধন বসাইছি। খাইয়া যাইবেন, কাকাবাবু।’
‘তা হোকগে। অন্যদিন আইসা খাব।’
রামেশ্বর এরপর থেকে নিয়মিত আসে টাকা চাইতে। তবে তার মনে লক্ষ্যের বিপরীতে একটা উপলক্ষও যে ছিল, সেটা আর কে জানে?
একদিন ভিমার সতেরো বসন্ত পার করে আসা যৌবনে রামেশ্বর গাঢ় ছাপ এঁকে দেয়। এই ছাপ আসলে কলঙ্কের, নাকি স্বর্গের?
সেদিনও পাওনা আদায়ের জন্য এসেছিল রামেশ্বর। তাকে কাকাবাবু সম্বোধন করে বারান্দায় বসতে দিয়েছিল ভিমা। তারপর শুরু হলো ঘোর বর্ষা। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা জানোয়ার হয়ে ওঠে রামেশ্বর। সেদিন ভিমার শত বাধা, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কাকাবাবু ডাক উপেক্ষা করেছিল রামেশ্বর।
এ ঘটনার পর থেকে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে ভিমার। তার গোলাপের মতো মুখটায় আর ফুটন্ত গোলাপের হাসি আসে না। যেন বিধির এই গোলাপের পাপড়িগুলো কীটের আক্রমণে বুজে যায় যায় ভাব। সারাক্ষণ পৃথিবীটা ঘুরতে থাকে ওর কাছে। হাঁসের বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলতে আর ভালো লাগে না ওর। নৌকা নিয়ে নদীতে যেতেও মন চায় না।
এক মাস পর বাড়িতে আসে কালিদাস। অনেক টাকা কামিয়েছে সে। ভিমার জন্য এনেছে চুরি ও ব্যান ক্লিপ। আর এনেছে সন্দেশ। মেয়েটা তার সন্দেশ পছন্দ করে। বাবাকে দেখে ধীরপায়ে এসে দাঁড়ায় ভিমা। কালিদাস বলে, ‘মা তোর মুখ এত শুকনো ক্যান? কিচ্ছু খাসনি বুঝি? চিন্তা করিস? আর চিন্তা করতে হইব না। এবার সক্কল দেনা পরিশোধ কইরা দিমু।’
ভিমা মনে মনে বলে, ‘যা দেনা ছিল, তার থাইকা বেশি তো নিয়া গ্যাছে জানোয়ার রামেশ্বর। তুমি আবার কী পরিশোধ করবে, বাবা?’
ভিমা বলে, ‘বাবা, আইসা ভাত খাইয়া নাও।’
কালিদাসের হাতে থাকা ব্যানক্লিপ, চুরি ও সন্দেশের প্যাকেটগুলো ভিমার হাতে দেয়।
উঠোনে রোদে বসে ভাত খায় কালিদাস। শীত পড়ছে বেশ প্রখরতা নিয়ে। সকালে কুয়াশা পড়ে হালকা। এর মধ্যে একদিন হয়ে গেল ঘোর বর্ষা। ঋতুর যেন ঠিকঠিকানা নেই।
কালিদাস নৌকা সারাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আরশাদ মিস্ত্রি সকাল থেকেই কাজে লেগেছে। নৌকা গড়ার দক্ষ এক কারিগর এই আরশাদ। বয়স নব্বইয়ের ওপরে। চুল সাদা হয়ে গেছে। দাঁত পড়েনি একটাও। জীবনে কয়েক হাজার নৌকা গড়েছে আরশাদ। এখনো গড়ে যাচ্ছে, দুবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে।
পরদিন রামেশ্বর আসে টাকা চাইতে। ঘর থেকে টাকা এনে দেয় কালিদাস। রামেশ্বরকে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থুতু ফেলে ভিমা। রামেশ্বর ভিমার চোখে মানুষরূপী জানোয়ার।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা কালি।’
কালিদাস বলে, ‘এত দেরি হলো দেনা পরিশোধ করতে, আমাকে ক্ষমা কইরা দিও, দাদা।’
‘সমস্যা নেই। তুমি যাইও দিন বেড়াইয়া আইসো।’
‘নিশ্চয় যাব।’
রামেশ্বর চলে যাওয়ার পর কালিদাসের সামনে এসে দাঁড়ায় ভিমা। ভিমা বলে, ‘রামেশ্বর কী জন্যি আইছিল?’
‘পাওনা টাকা নিবার লাগি।’
ভিমা বাবাকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। তার ভেতরে অন্যরকম একটা দ্বিধা-ঘৃণা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কালিদাস বের হয় হাটে যাওয়ার জন্য। তার একটা ঘন জালের দরকার। নদীতে ছোট-বড় হরিণা চিংড়ির ছড়াছড়ি। বাজারে দামও ভালো, কেজি পঞ্চাশ টাকা।
হঠাৎ ভাতপোড়া গন্ধ আসে ভিমার নাকে। ও সেই কখন ভাত বসিয়েছে। তারপর আর খেয়াল করেনি। মেয়েটা সারাক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থাকে। কাজে মন বসে না আগের মতো। শুধু মাথা ঘুরায় আর বমি আসে।
হাসের বাচ্চাগুলো দাঁড়িয়ে আছে উঠানের আঙিনায়। একটু পর আরশাদ মিস্ত্রি আসবে ভাত খেতে। এসে দেরি করবে না। লোকটা কাজে ফাঁকি দেয় না।
ভিমা পোড়া ভাতগুলো গরুর নান্দায় ঢেলে দিয়ে আবার নতুন করে ভাত বসায়। কালিদাস হাট থেকে বাড়ি ফেরে। নদীর তীর থেকে আসে আরশাদ মিস্ত্রি। কালিদাস বলে, ‘মিস্ত্রি আইছে। ভাত দে, মা।’
ভিমা বলে, ‘ভাত হইতে আরেকটু বাকি আছে।’
‘আমি হাটে যাইবার সময় না দেইখা গেলাম তুই ভাত বসাইছিলি!’
‘হ। বসাইছিলাম। পুইড়া গ্যাছে, তাই আবার বসাইছি।’
ওদিকে আরশাদ মিস্ত্রি ডাক পাড়ে, ‘কই, ভাত কই! নিয়া আসো, বেলা গড়াইয়া যাইতেছে। অনেক কাম বাকি এখনো।’
কালিদাস বলে, ‘ভাই, দুইডা মিনিট বসেন।’
ভিমা বলে, ‘তোমরা দুইজন বসো। আমি চিড়া আর গুড় আনতাছি।’
চিড়া আর গুড় খেয়ে নদীর তীরে রওনা দেয় কালিদাস ও আরশাদ। আজকে যে করেই হোক কাজ শেষ করা লাগব।
সন্ধ্যায় ঘরে চৌকিতে শুয়ে আছে ভিমা। কালিদাস ভিমার কপালে হাত রেখে বলে, ‘কিরে মা, তোর কি শরীল খারাপ করছে?’
‘না। কেমুন জানি লাগতাছে।’
‘দ্যাখলি, বুঝি আমি। বাবারা মাইয়ার সব দুখ্খো বোঝে। বল কী হইছে?’
‘জানি না কী হইছে। তবে সারাক্ষণ শুধু ওলডানি আসে আর মাথা ঘুরায়।’
এ কথা শুনে কালিদাসের চোখ কপালে উঠে যায়। ‘এখন আমি যা যা জিগাইব, উত্তর দিবি।’
‘কী প্রশ্ন, বলো?’
‘তুই কি কারো লগে শুইছিলি?’
‘অত কিছু কইতে পারুম না। শুধু এটুকুন বলতেছি। হুম। তয় নিজের ইচ্ছায় না। সে জোর করে...’
‘কে সে?’
‘তোমার পাওনাদার। এর বেশি কিচ্ছু আমি কইতে পারুম না।’
‘রামেশ্বর যে এমন কুত্তার কুত্তা। ওরে দেখলে চেনা যায় না। কুত্তাটারে আমি বলি দিব। তুই এই কথা কাউরে কছ নাই তো?’
‘কইলে কী হইব, আর না কইলে কী হইব?’
‘লোকে জানলি তোরে বিয়া দিবার পারুম না, মা। খবরদার, কাউরে বলবি না।’
এ কথা শোনার পর কালিদাসের মন খারাপের রোগে ধরে। তার কোনো কাজে মন বসতে চায় না। তবে তার তো আর বসে থাকলে চলবে না। কালিদাস তার নতুন জালটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। অনেক মাছ উঠেছে জালে। সব মিলিয়ে কেজি দেড়েক চিংড়ি মাছ। সেগুলো নিয়ে হাটে যায় কালিদাস ৷ এগুলো বেচে তরিতরকারি কিনে আনবে সে।
হাট থেকে ফিরে কালিদাস দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। কালিদাস বলে, ‘মা, এই অবেলায় ঘরের দরজা বন্ধ কইরা ঘুমাচ্ছিস ক্যান?’
কোনো সাড়া না পেয়ে কালিদাস দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে, ভিমা আর বেঁচে নেই। সে গলায় রশি নিয়ে এই পৃথিবীর বিষাক্ত মানুষ নামের কীটদের মুখে থুতু দিয়েছে আরও একবার।
পাড়ার লোকেরা চিতা সাজিয়েছে। মধুডাঙা নদীর তীরে শ্মশান। চন্দনের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। একটু পরই চিতার মুখে আগুন দেবে কালিদাস। কিন্তু তার চোখে-মুখে কোনো শোকের ছাপ নেই। কারণ তার মনে হচ্ছে, ভিমা স্বর্গে চলে গেছে।
শ্মশান থেকে ফিরতে রামেশ্বরের সঙ্গে দেখা হয় কালিদাসের। কালিদাস বলে, ‘রামেশ্বর, তুই মানুষ না। তুই আস্তো একটা কুত্তার বাচ্চা। তুই একটা জানোয়ার।’
এ কথা শুনে রামেশ্বরের চোখ দুটো বড় হয়ে যায়। যেন চিড়িয়াখানার কোনো জন্তু অনেক দিন পর মানুষের দেখা পেয়েছে।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো হয়ে যায়। তখন এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে মধুডাঙার জল। কেউ হঠাৎ একা দেখলে ভাববে, এটা খুনের রক্তের দরিয়া। এই নদী নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প তৈরি হয়েছে।
ওপরে উল্লেখিত দ্বীপটাকে সবাই জেলেপল্লি হিসেবে চেনে। নদীতীরের এই পল্লিতে কোনো পাকা ঘর নেই। যা আছে, সবগুলো মাটির। ওপরে শণের চালা। কারো কারো চালা দিয়ে আবার আসমান দেখা যায়। এই পল্লি ক্ষুধার নিদারুণ এক রাজ্য। তবে ক্ষুধার রাজ্য হলে কী হবে, এখানে কাল্পনিক রাজ্য দেখা যায়। এই দ্বীপ নদীর ওপর ভেসে আছে। ছোট-বড়-মাঝারি ঘরগুলোর দক্ষিণ পাশে বরইগাছের নিচে খসে যাওয়া মাটির ঘর। বারান্দার সঙ্গে রান্নাঘর। এই ঘরটা কালিদাসের। তার ঘরে দেবী বসবাস করে। এই দেবী তার অপূর্ব সুন্দরী ও গুণবতী মেয়ে। নাম ভিমা। এখানে সচরাচর সুন্দরী মেয়ে জন্মে না। কারণ এই দ্বীপে যারা বাস করে, এরা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গায়ের রং কালো হয়। আর সবাই উচ্চ লম্বা হয়। দেহের গড়ন হয় সুঠাম। তবে ভিমার চেহারা ছিল ভিন্ন রকমের। যেন হিন্দি সিনেমার নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চেহারার নকল রূপ পেয়েছে। এখন এই সৌন্দর্য তার বিপদের কারণ হলো। নিম্নবর্গের মানুষের ঘরে উচ্চবর্গের চেহারার মেয়ে থাকা যে কতটা বিবাদের তা বলা কষ্টকর। কালিদাস মেয়েকে নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছে। দুষ্ট যুবকেরা তার বাড়ির আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে কালিদাসের সংসারে টানাটানি নিদারুণ। স্ত্রী মারা গেছে গত বছর। দীর্ঘদিন সে অসুস্থ ছিল। তার পেছনে হাজার তিরিশেক টাকা খরচ হয়েছিল চিকিৎসা বাবদ। শেষমেশ টাকাও গেল, স্ত্রীও মারা গেল। মাঝখান দিয়ে কালিদাস ঋণের জলে ডুবে গেল। মাছ ধরার নৌকাটাও গেছে ফুটো হয়ে। পানি ওঠে গড়গড় করে। এই পৌষে দূরদূরান্ত থেকে ধান আনা-নেওয়ার খ্যাপের কাজ করতে পারলে তার কিছু রোজগার হতো। তা ছাড়া মধুডাঙায় এখন মাছের ছড়াছড়ি। ধরতে পারলেই হাটে নিয়ে গেলে কাঁচা টাকা পাওয়া যায়। এই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না কালিদাস। সমিতির লোকেরা দুবেলা আসে ঋণের কিস্তি আদায় করতে। অন্যান্য পাওনাদারও বাড়তি কথা শোনাচ্ছে। রামেশ্বর বলেছে, সাত দিনের মধ্যে তার টাকা না দিতে পারলে কালিদাসকে বাজারে বটগাছের গায়ে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধবে। রামেশ্বর এই গাঁয়ের কেউ না। ওর বাড়ি মহাদেবপুর বাজারের পাশেই। এদিকে ঘরের চালে শণ কিছুটা ওড়ে দক্ষিণের বাতাসে। তিন মাস বাদেই বর্ষাকাল।
পাওনাদারের গালি সইতে না পেরে কালিদাস একদিন কালো আঁধারের নিশিতে পাড়ি দিল যশোরে। যশোরে ধান কাটার কাজে বেশ রোজগার হয়। যাওয়ার সময় ভিমাকে বলে গেছে, ‘মা, তুই দেইখা-শুইনা ভালো মতোন থাকিস। আমি বিশ-পঁচিশ দিনের বেশি থাকপো না।’
এ কাজে ধানও পাওয়া যাবে খোরাকির জন্য, আবার বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যাবে। এজন্য এই কাজ তার কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য উত্তম পন্থা মনে হয়েছে।
এদিকে কালিদাস চলে যাওয়ায় বাড়িতে একা থাকে ভিমা। সকালবেলা সে ভাঙাচোরা নৌকাটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। মেয়ে হলে কী হবে, তার ভেতরে শক্তি-সামর্থ্য সবই আছে। খেওলা জাল ফেলতে পারে। সে স্কুলে যায় না। পড়ালেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ির সব কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
একদিন দুপুরের দিকে রামেশ্বর এসে ডাক পাড়ে, ‘কালিদাস, বাড়িত আছো?’
ভিমা তার হাঁসের বাচ্চাগুলোকে শামুক ভেঙে দিচ্ছিল। রামেশ্বরকে দেখে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে চৌকি এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘বাবা বাড়িতে নাই।’
‘কই গ্যাছে?’
‘যশোরে। ধান কাটবার কামলা দিবার গ্যাছে।’
‘আমার টাকাগুলান এত দিন হইয়া গেল, তবু পরিশোধ করল না। এরকম করলি চলে বলো?’
‘সব টাকা পরিশোধ কইরা দিবে, একটু সবুর করেন, কাকাবাবু।’
ভিমা ঘর থেকে বাটিতে করে চালভাজা এনে দেয় রামেশ্বরকে। খেতে খেতে দুজন কথা বলে। রামেশ্বর বলে, ‘তোমার নামডা কী য্যান?’
‘ভিমা।’
মানুষের মন বড়ই উচাটন। মেয়েটাকে দেখে রামেশ্বরের মনে ধরে। সে মনে মনে ঠিক করে, তার ছেলের সঙ্গে বেশ মানাবে। এতক্ষণে ভিমা যে জেলের ঘরের মেয়ে, এটা খেয়াল ছিল না রামেশ্বরের।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা।’
‘আমি রান্ধন বসাইছি। খাইয়া যাইবেন, কাকাবাবু।’
‘তা হোকগে। অন্যদিন আইসা খাব।’
রামেশ্বর এরপর থেকে নিয়মিত আসে টাকা চাইতে। তবে তার মনে লক্ষ্যের বিপরীতে একটা উপলক্ষও যে ছিল, সেটা আর কে জানে?
একদিন ভিমার সতেরো বসন্ত পার করে আসা যৌবনে রামেশ্বর গাঢ় ছাপ এঁকে দেয়। এই ছাপ আসলে কলঙ্কের, নাকি স্বর্গের?
সেদিনও পাওনা আদায়ের জন্য এসেছিল রামেশ্বর। তাকে কাকাবাবু সম্বোধন করে বারান্দায় বসতে দিয়েছিল ভিমা। তারপর শুরু হলো ঘোর বর্ষা। সবকিছু পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা জানোয়ার হয়ে ওঠে রামেশ্বর। সেদিন ভিমার শত বাধা, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কাকাবাবু ডাক উপেক্ষা করেছিল রামেশ্বর।
এ ঘটনার পর থেকে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে ভিমার। তার গোলাপের মতো মুখটায় আর ফুটন্ত গোলাপের হাসি আসে না। যেন বিধির এই গোলাপের পাপড়িগুলো কীটের আক্রমণে বুজে যায় যায় ভাব। সারাক্ষণ পৃথিবীটা ঘুরতে থাকে ওর কাছে। হাঁসের বাচ্চাগুলোর সঙ্গে খেলতে আর ভালো লাগে না ওর। নৌকা নিয়ে নদীতে যেতেও মন চায় না।
এক মাস পর বাড়িতে আসে কালিদাস। অনেক টাকা কামিয়েছে সে। ভিমার জন্য এনেছে চুরি ও ব্যান ক্লিপ। আর এনেছে সন্দেশ। মেয়েটা তার সন্দেশ পছন্দ করে। বাবাকে দেখে ধীরপায়ে এসে দাঁড়ায় ভিমা। কালিদাস বলে, ‘মা তোর মুখ এত শুকনো ক্যান? কিচ্ছু খাসনি বুঝি? চিন্তা করিস? আর চিন্তা করতে হইব না। এবার সক্কল দেনা পরিশোধ কইরা দিমু।’
ভিমা মনে মনে বলে, ‘যা দেনা ছিল, তার থাইকা বেশি তো নিয়া গ্যাছে জানোয়ার রামেশ্বর। তুমি আবার কী পরিশোধ করবে, বাবা?’
ভিমা বলে, ‘বাবা, আইসা ভাত খাইয়া নাও।’
কালিদাসের হাতে থাকা ব্যানক্লিপ, চুরি ও সন্দেশের প্যাকেটগুলো ভিমার হাতে দেয়।
উঠোনে রোদে বসে ভাত খায় কালিদাস। শীত পড়ছে বেশ প্রখরতা নিয়ে। সকালে কুয়াশা পড়ে হালকা। এর মধ্যে একদিন হয়ে গেল ঘোর বর্ষা। ঋতুর যেন ঠিকঠিকানা নেই।
কালিদাস নৌকা সারাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আরশাদ মিস্ত্রি সকাল থেকেই কাজে লেগেছে। নৌকা গড়ার দক্ষ এক কারিগর এই আরশাদ। বয়স নব্বইয়ের ওপরে। চুল সাদা হয়ে গেছে। দাঁত পড়েনি একটাও। জীবনে কয়েক হাজার নৌকা গড়েছে আরশাদ। এখনো গড়ে যাচ্ছে, দুবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে।
পরদিন রামেশ্বর আসে টাকা চাইতে। ঘর থেকে টাকা এনে দেয় কালিদাস। রামেশ্বরকে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থুতু ফেলে ভিমা। রামেশ্বর ভিমার চোখে মানুষরূপী জানোয়ার।
রামেশ্বর বলে, ‘আজ তাইলে যাইগা কালি।’
কালিদাস বলে, ‘এত দেরি হলো দেনা পরিশোধ করতে, আমাকে ক্ষমা কইরা দিও, দাদা।’
‘সমস্যা নেই। তুমি যাইও দিন বেড়াইয়া আইসো।’
‘নিশ্চয় যাব।’
রামেশ্বর চলে যাওয়ার পর কালিদাসের সামনে এসে দাঁড়ায় ভিমা। ভিমা বলে, ‘রামেশ্বর কী জন্যি আইছিল?’
‘পাওনা টাকা নিবার লাগি।’
ভিমা বাবাকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। তার ভেতরে অন্যরকম একটা দ্বিধা-ঘৃণা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কালিদাস বের হয় হাটে যাওয়ার জন্য। তার একটা ঘন জালের দরকার। নদীতে ছোট-বড় হরিণা চিংড়ির ছড়াছড়ি। বাজারে দামও ভালো, কেজি পঞ্চাশ টাকা।
হঠাৎ ভাতপোড়া গন্ধ আসে ভিমার নাকে। ও সেই কখন ভাত বসিয়েছে। তারপর আর খেয়াল করেনি। মেয়েটা সারাক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থাকে। কাজে মন বসে না আগের মতো। শুধু মাথা ঘুরায় আর বমি আসে।
হাসের বাচ্চাগুলো দাঁড়িয়ে আছে উঠানের আঙিনায়। একটু পর আরশাদ মিস্ত্রি আসবে ভাত খেতে। এসে দেরি করবে না। লোকটা কাজে ফাঁকি দেয় না।
ভিমা পোড়া ভাতগুলো গরুর নান্দায় ঢেলে দিয়ে আবার নতুন করে ভাত বসায়। কালিদাস হাট থেকে বাড়ি ফেরে। নদীর তীর থেকে আসে আরশাদ মিস্ত্রি। কালিদাস বলে, ‘মিস্ত্রি আইছে। ভাত দে, মা।’
ভিমা বলে, ‘ভাত হইতে আরেকটু বাকি আছে।’
‘আমি হাটে যাইবার সময় না দেইখা গেলাম তুই ভাত বসাইছিলি!’
‘হ। বসাইছিলাম। পুইড়া গ্যাছে, তাই আবার বসাইছি।’
ওদিকে আরশাদ মিস্ত্রি ডাক পাড়ে, ‘কই, ভাত কই! নিয়া আসো, বেলা গড়াইয়া যাইতেছে। অনেক কাম বাকি এখনো।’
কালিদাস বলে, ‘ভাই, দুইডা মিনিট বসেন।’
ভিমা বলে, ‘তোমরা দুইজন বসো। আমি চিড়া আর গুড় আনতাছি।’
চিড়া আর গুড় খেয়ে নদীর তীরে রওনা দেয় কালিদাস ও আরশাদ। আজকে যে করেই হোক কাজ শেষ করা লাগব।
সন্ধ্যায় ঘরে চৌকিতে শুয়ে আছে ভিমা। কালিদাস ভিমার কপালে হাত রেখে বলে, ‘কিরে মা, তোর কি শরীল খারাপ করছে?’
‘না। কেমুন জানি লাগতাছে।’
‘দ্যাখলি, বুঝি আমি। বাবারা মাইয়ার সব দুখ্খো বোঝে। বল কী হইছে?’
‘জানি না কী হইছে। তবে সারাক্ষণ শুধু ওলডানি আসে আর মাথা ঘুরায়।’
এ কথা শুনে কালিদাসের চোখ কপালে উঠে যায়। ‘এখন আমি যা যা জিগাইব, উত্তর দিবি।’
‘কী প্রশ্ন, বলো?’
‘তুই কি কারো লগে শুইছিলি?’
‘অত কিছু কইতে পারুম না। শুধু এটুকুন বলতেছি। হুম। তয় নিজের ইচ্ছায় না। সে জোর করে...’
‘কে সে?’
‘তোমার পাওনাদার। এর বেশি কিচ্ছু আমি কইতে পারুম না।’
‘রামেশ্বর যে এমন কুত্তার কুত্তা। ওরে দেখলে চেনা যায় না। কুত্তাটারে আমি বলি দিব। তুই এই কথা কাউরে কছ নাই তো?’
‘কইলে কী হইব, আর না কইলে কী হইব?’
‘লোকে জানলি তোরে বিয়া দিবার পারুম না, মা। খবরদার, কাউরে বলবি না।’
এ কথা শোনার পর কালিদাসের মন খারাপের রোগে ধরে। তার কোনো কাজে মন বসতে চায় না। তবে তার তো আর বসে থাকলে চলবে না। কালিদাস তার নতুন জালটা নিয়ে নদীতে যায় মাছ ধরতে। অনেক মাছ উঠেছে জালে। সব মিলিয়ে কেজি দেড়েক চিংড়ি মাছ। সেগুলো নিয়ে হাটে যায় কালিদাস ৷ এগুলো বেচে তরিতরকারি কিনে আনবে সে।
হাট থেকে ফিরে কালিদাস দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। কালিদাস বলে, ‘মা, এই অবেলায় ঘরের দরজা বন্ধ কইরা ঘুমাচ্ছিস ক্যান?’
কোনো সাড়া না পেয়ে কালিদাস দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে, ভিমা আর বেঁচে নেই। সে গলায় রশি নিয়ে এই পৃথিবীর বিষাক্ত মানুষ নামের কীটদের মুখে থুতু দিয়েছে আরও একবার।
পাড়ার লোকেরা চিতা সাজিয়েছে। মধুডাঙা নদীর তীরে শ্মশান। চন্দনের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। একটু পরই চিতার মুখে আগুন দেবে কালিদাস। কিন্তু তার চোখে-মুখে কোনো শোকের ছাপ নেই। কারণ তার মনে হচ্ছে, ভিমা স্বর্গে চলে গেছে।
শ্মশান থেকে ফিরতে রামেশ্বরের সঙ্গে দেখা হয় কালিদাসের। কালিদাস বলে, ‘রামেশ্বর, তুই মানুষ না। তুই আস্তো একটা কুত্তার বাচ্চা। তুই একটা জানোয়ার।’
এ কথা শুনে রামেশ্বরের চোখ দুটো বড় হয়ে যায়। যেন চিড়িয়াখানার কোনো জন্তু অনেক দিন পর মানুষের দেখা পেয়েছে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
অর্ধবৃত্তাকার এক দ্বীপের তিন পাশ নদীবেষ্টিত। যেন একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে আড়াআড়ি দ্বিখণ্ডিত বৃক্ষের কোমরে। নদীটার নাম মধুডাঙা। স্বচ্ছ জলের নদী। তবে বারো মাস ঢেউ থাকে। অমাবস্যার রাতে এই নদীর জল মেঘের মতো কালো
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
১৪ ঘণ্টা আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৬ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১১ দিন আগে