রওশন আরা মুক্তা

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।
রওশন আরা মুক্তা

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয় মাথায়ই ছিল না। আর এ বছরই কিনা তার অফিশিয়াল মেইলে জানানো হলো সে এখন থেকে বিন্দু গ্রুপ অব কোম্পানিজের জেনারেল ম্যানেজার। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আফতাব সাহেবের স্ত্রী খেয়া আহমেদ। স্বামীকে অভিনন্দন জানিয়ে হাজার শব্দের ডুয়েট ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট তো করেছেই; আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে কল করে সুখবর দিচ্ছে। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাবনীয় যে কাণ্ডটি ঘটতে যাচ্ছে তা হলো, আফতাব আহমেদের পরিবারের জন্য পাওয়া যাবে ড্রাইভারসহ আলাদা একটি গাড়ি! জেনারেল ম্যানেজারের পরিবারের প্রতি এই আলাদা খেয়ালের কোনো তুলনা হয় না। খেয়া ভাবছে বড় করে কোনো পার্টি দেবে। আফতাব সাহেবের অফিসের লোকজন, তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। মসজিদে কিছু টাকাও দান করবে, একদিন ফকির-মিসকিনও খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রমোশনের ই-মেইলটা এসেছে শুক্রবার, ছুটির দিনে। যদিও আফতাব আহমেদ প্রতি শুক্রবারই সাইট ভিজিটে ঢাকার বাইরে যায়। তাই ছুটি বলতে আলাদা কিছু আসলে তার জীবনে নেই। বিন্দু গ্রুপের চেয়ারম্যান অরবিন্দু আচার্য শূন্য থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কোথায় ফ্যাক্টরি নেই তাঁদের! গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, পাবনা, দিনাজপুর—বিশাল বিস্তৃতি! সত্যি বলতে, সাত বছর আগেই জেনারেল ম্যানেজার পদটা পেতে পারত আফতাব আহমেদ। কেন পায়নি, তার উত্তর একমাত্র অরবিন্দু আচার্যই জানেন। তাঁর সামনে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস আফতাব আহমেদের নেই। এই সাহসের অভাবটিকে ভয়, সমীহ ইত্যকার শব্দ দিয়ে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়—এটা অন্য কিছু। এমনও নয় যে আফতাব আহমেদের কোনো উপকার করেছেন অরবিন্দু, যার ফলে কৃতজ্ঞতা মেশানো সম্মানের ফলে চুপ থাকা। মূলত অরবিন্দু আচার্যর সামনে আফতাব আহমেদ কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এই প্রমোশনের ই-মেইলের ব্যাপারেও তাই সে বসকে নিজে থেকে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার আজ ময়মনসিংহে সাইট ভিজিটে যাওয়ার কথা। সে জন্যই তৈরি হতে লাগল। খেয়া যখন বুঝল এমন খুশির দিনেও আফতাব আহমেদ বের হবে, দ্রুত ফোনালাপ বন্ধ করে স্বামীর জন্য কাপড়-জুতা, খাবার-দাবার ইত্যাদির খোঁজে কোন দিকে যেন ছুটল। আফতাব আহমেদ গোসলে ঢুকে গেল। খেয়ার কিছু কথা কানে এসেছে তার। তার যে আলাদা গাড়ির দরকার ছিল, তাকে কখনোই কেন বলেনি খেয়া? প্রশ্নটা খেয়াকে করবে ভাবল, কিন্তু গোসল থেকে বের হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভুলে গেল।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল রাত ১টার দিকে। গ্যারেজে সম্পূর্ণ নতুন একটি গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, খেয়ার জন্য নতুন গাড়িটি চলে এসেছে। এই গাড়ির ড্রাইভার কি তার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই চিলেকোঠায় থাকবে? নাকি তার নিজের থাকার জায়গা আছে? খেয়াকে জিজ্ঞেস করতে হবে। লিফটে উঠতে উঠতে এ বিষয়টিও ভুলে গেল আফতাব। কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ সাইট থেকে, খাওয়া শেষে সেগুলো দেখে সকালের অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেল এবং তিন মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
কথাটা খেয়াকে প্রথম বলল আসিফের বউ পাপড়ি; আসিফ আফতাবের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। দূর সম্পর্কের হলেও খেয়াদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত ছাত্রাবস্থায়। এখন তার চাকরি হয়েছে, সংসার হয়েছে; বছরে এক-দুবার দেখা হয় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খেয়া আসিফকে তার ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে। আফতাবের সঙ্গে আসিফের দেখা নেই অনেককাল। কীভাবেই বা দেখা হবে! আফতাব থাকে অফিস নিয়ে ব্যস্ত, তাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদে-পর্বণেও আফতাব অফিসকেই প্রাধান্য দেয়। কোরবানির ঈদের ছুটিতে একবার আফতাব তার বসের পরিবারের সঙ্গে ব্যাংককে চলে গেল। আর ছোটখাটো ছুটিছাঁটায় নানা রকম ইভেন্ট এবং সাইট ভিজিটিংয়েই ব্যস্ত থাকে। আফতাব আহমেদকে খেয়া আর তার বাচ্চারাই পায় না ঠিকমতো, অন্যরা কী পাবে!
আসিফ সেদিন সন্ধ্যায় তার বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিল। চা-নাশতা খাওয়ার সময় কথাটা বলে পাপড়ি। কোনো এক লেড বিলবোর্ডে আফতাব আহমেদের ছবি দেখেছে সে। খেয়া চমকিত হয়, কিসের বিলবোর্ড, কোন এলাকায়—সব জানতে চায়। জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবে আড়ংয়ের পাশে যে লেড স্ক্রিন আছে, সেখানে আফতাবদের কোনো একটা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যমণি হয়ে ছিল আফতাব। পাপড়ি বেশ গর্ব করে বলে কথাটা। খেয়ারও খুব ভালো লাগে, কিন্তু প্রকাশ করে না। নিজের স্বামীর সাফল্যকে খেয়া বরাবরই নিজের সাফল্য হিসেবে গণ্য করে, তাই গর্ব প্রকাশ না করে সে বিনয়ীই থাকে।
বিলবোর্ডের ব্যাপারটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চায় না খেয়া, তবে মন থেকে সরাতেও পারে না। বাচ্চারা যখন ছোট ছিল, প্রচুর নিউমার্কেটে যেত খেয়া। এখন বড় চেইন শপ থেকেই কেনাকাটা করে। গাড়ি রাখার যন্ত্রণা, ঘিঞ্জি দোকানপাটের ভিড়ে তার যেতে ইচ্ছে করে না। তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়াই একদিন নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে গেল খেয়া। ভাবটা এমন—আসলে কেনাকাটা করতেই যাচ্ছে, মূলত সে চাইছিল বিলবোর্ডটা দেখতে। এ বিষয়ে সে আফতাবকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারেনি। কোথায় কোন বিলবোর্ডে তার ছবি গেছে—এ সমস্ত ব্যাপারে কৌতূহলকে বাচ্চামি মনে করার কথা আফতাবের। এ ছাড়া আফতাবের তো ক্যামেরাভীতিও আছে, কোনো ছবিতে তাঁকে ঠিকঠাক ধরা যায় না। গ্রুপ ছবিতে সে থাকে সবার পেছনে, না হয় কোনো কোনায়, চোখ নিচু বা বন্ধ অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে—সে সবার মধ্যমণি হয়ে আছে বিলবোর্ডে, খেয়ার অবিশ্বাস্য লাগে। নিজের চোখে দেখতে চায়, সেই ছবিতে কেমন দেখাচ্ছে তার স্বামীকে।
নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় সায়েন্স ল্যাবের জ্যামে বসেই বিলবোর্ড দেখে ফেলতে পারবে ভেবেছিল খেয়া, কিন্তু রাস্তায় খুব বেশি চাপ ছিল না। তবু গাড়ির জানালার কাচ নামিয়ে দেখে সে। পরপর তিনটা বিজ্ঞাপন দেখে, কিন্তু বিন্দু গ্রুপের কোনো প্রোডাক্ট নজরে পড়ে না। অগত্যা নিউমার্কেটে ঢুকে পড়ে সে। চকলেট, বাদাম এবং নতুন একটা শিল-পাটা কিনে ফেলে ঘুরে ঘুরে। ড্রাইভারের হাতে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যায় খেয়া। ঠিক মোড়টায় গিয়ে দাঁড়ায়। গিয়ে দাঁড়াতেই একঝলক দেখে বিন্দু গ্রুপের নাম। তার মানে, বিজ্ঞাপনটা এখনো চলছে! খেয়া সানগ্লাসটা খুলে অপেক্ষা করতে থাকে। পাঁচ-ছটা বিজ্ঞাপন চলে নানা রকম। বিন্দু গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা আসতেই খেয়া অ্যালার্ট হয়ে যায়, এই বিজ্ঞাপনেই দেখা যাবে আফতাবকে! সহকর্মীদের মাঝখানে দাঁড়ানো রিমলেস চশমা পরা ভদ্রলোককে আফতাব আহমেদের মতোই লাগছে। তবে এমন চকচকে নীল রঙের কোনো শার্ট কখনোই আফতাবের জন্য কেনেনি খেয়া। খেয়ার শরীর ঘেমে যায়। ২০ মিনিট সময় নিয়ে আরও দুবার বিজ্ঞাপনটা দেখে সে। ঘেমে গোসলের অবস্থা হয় তার। খেয়া দেখল, বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনটিতে সবার মধ্যমণি হয়ে থাকা ভদ্রলোকটি আসলে অরবিন্দু আচার্য, আর সবার পেছনে এক কোনায় হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরিহিত অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়ানো তার স্বামী আফতাব আহমেদ। অরবিন্দু আচার্যর সঙ্গে উচ্চতা ও গায়ের রঙে মিল থাকলেও তাদের চেহারায় কোনো মিল ছিল না আগে। কিন্তু পাপড়ি যে অরবিন্দু আচার্যকে আফতাব আহমেদ ভেবে নিয়েছে, তাকেও দোষ দেওয়া যায় না—তাদের চেহারায় আসলেই অদ্ভুত মিল পাচ্ছে খেয়াও।
খেয়া আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ায় মোড়টায়। চারপাশে প্রচুর লোকজন চলাফেরা করছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে খেয়াকে। খেয়া তার মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপনটার একটা ছবি তুলে নেয়। নিউমার্কেটের পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যায়। তার কাছে ধাঁধার মতো লাগে পুরো ব্যাপারটা। অরবিন্দু সাহেবের চেহারা তো আগের মতোই আছে, বয়সের তুলনায় বেশ ইয়াং লাগছে তাকে। আর আফতাবের চেহারায় গত পাঁচ-সাত বছরে এত পরিবর্তন হলো কীভাবে? খেয়া হাঁটতে হাঁটতে ছবিটা বের করে দেখে, মেলাতে পারে না কিছু। হোয়াটস অ্যাপে তার ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠায় ছবিটা। তার ছেলে সৌরভ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়—‘DAD!’ তবে তার মেয়ে সাজিয়া মেসেজটা সিন করলেও কোনো রিপ্লাই করে না। খেয়া বেশ অন্যমনস্কভাবেই গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় হেঁটে।
আফতাব আহমেদ বাসায় ফিরল ১১টার দিকে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসল কিছু কাগজপত্র নিয়ে। খেয়া টেবিলে খাবার দিয়ে সৌরভ-সাজিয়াকে ডাকল। ওরা টেবিলে বসতেই আফতাব খেতে এল। সৌরভ কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে উঠল—ড্যাডি, তোমার চেহারার সঙ্গে অরবিন্দু আচার্যের চেহারার ভৌতিক কিছু মিল পাওয়া গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির লেড বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এটা জানলাম, অথচ আগে চোখেই পড়েনি। আফতাব একটু থমকে গেল, এক সেকেন্ডের মতো, আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাহ!’ খেয়া সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাজিয়া চুপচাপ। সৌরভ আবার বলল, ‘তোমার হোয়াটস অ্যাপ দেখো, আমি এখনই পাঠাচ্ছি ছবিটা।’ আফতাব হাসিমুখেই বলল, ‘আচ্ছা, তুমি পাঠিয়ে রাখো, আমি পরে দেখব।’ খেয়া তার ফোন বের করে ছবিটা মেলে ধরল আফতাবের সামনে। ‘পরে কেন? এখনই দেখো। ছেলেমেয়েরা আরও কিছু বলতে চায়, শোনো ওদের কথা। কি রে সাজিয়া, বল?’ সাজিয়া শান্তভাবে ভাত খাচ্ছে। কিছুই বলল না। আফতাব খেতে খেতে একপলক দেখল ছবিটা, এরপর বলল, ‘ডালের বাটিটা দাও।’ সাজিয়া এগিয়ে দিল। খেয়া অপ্রস্তুতভাবে মোবাইল ফোনটা সরিয়ে নিল। সৌরভ বলল, ‘আমরা রিসার্চ করে দেখলাম, অরবিন্দু সাহেব একটা রিমলেস চশমা পরেন, চশমা আছে কি নাই বোঝাই যায় না। তুমি যদি মোটা কালো ফ্রেমের একটা চশমা পরো, তাহলে এই মিল আর বোঝা যাবে না। বড়জোর লোকে অরবিন্দু সাহেবের ভাই ভাবতে পারে তোমাকে, কিন্তু একেবারে আইডেন্টিকাল লাগবে না।’
আফতাব খাওয়ার শেষ পর্যায়ে, সে সবার দিকে একে একে দেখে বলে, ‘আচ্ছা, এই চশমার আইডিয়াটা কার?’ খেয়া আর সৌরভ দুজনই সাজিয়ার দিকে তাকায়। সাজিয়ার খাওয়া শেষ। সে কিছুই না বলে হাত ধুতে চলে যায়। আফতাব কিছুটা উৎফুল্ল গলায় বলে, ‘আচ্ছা, আমি চশমা পরব অবশ্যই!’ সাজিয়া একটা প্যাকেট এনে রাখে আফতাবের পাশে। বলে, ‘এই যে তোমার চশমা। গুড নাইট।’ সাজিয়া তার রুমে চলে যায়। সৌরভও ড্রইংরুমে টেলিভিশনে খেলা দেখতে বসে যায়। আফতাব আহমেদ হাত ধুয়ে প্যাকেটটা নিয়ে বেডরুমের দিকে যায়। বলা বাহুল্য, খেয়া টেবিল গুছিয়ে আসতে আসতে আফতাব আহমেদ ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল আফতাব। খেয়া ডাকে, ‘নাশতা খেয়ে নাও, রেডি।’ আফতাব আহমেদ ড্রেসিং টেবিলটার ওপর রাখা তার কন্যা সাজিয়ার দেওয়া চশমার প্যাকেটটা নেয়। খুলে দেখে দুটো বাক্স আছে, সঙ্গে একটা চিরকুট; সাজিয়ার হাতের লেখা—‘যেটা ভালো লাগে পরো’। আফতাব হা হা করে হেসে ওঠে। খেয়া দরজায় একবার উঁকি দিয়ে যায়। কিছু বলে না। অদ্ভুত ঠেকে সব তার কাছে। খেয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, বাচ্চারা যে যার রুমে। নতুন চশমা পরিহিত আফতাব তার নির্ধারিত চেয়ারটায় এসে বসে, খেয়া তার দিকে তাকাতেই একটু অপ্রস্তুতভাবে হাসে আফতাব। খেয়া থমকে যায়, এটা কে? অরবিন্দু, নাকি আফতাব? মুহূর্তেই সামলে নেয় খেয়া, রিমলেস চশমা পরিহিত আফতাব আহমেদের পাতে সদ্য সেঁকা রুটি তুলে দেয় সে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয়
১৮ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয়
১৮ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয়
১৮ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

করোনার কারণে যখন অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, অনেকেরই বেতন কাটা পড়ছে; আফতাব আহমেদের হলো প্রমোশন—বহুল প্রতীক্ষিত বলেই হয়তো সে আলাদা করে কিছু ফিল করছে না। আগের প্রমোশন হওয়ার পর সাত বছর চলে গেছে, প্রতি বছরই আশা করেছে হয়ে যাবে, তবে শেষ দুই বছর আশা করেনি বলা যায়। বিশেষ করে এ বছর তো তার প্রমোশনের বিষয়
১৮ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে