মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম সৌরভ

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।
মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম সৌরভ

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে যাবেন। প্রতি শনিবার তাঁর এই একই নিয়ম।
নাজিম সাহেবের কফি খাওয়া, বডিগার্ডের তাঁর জন্য অধীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, পাইপ টানা—এ সবই তাঁর বাসার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন দুইয়েক লোক আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এদের চোখের খিদা মেটানোই নাজিম সাহেবের ঝুল বারান্দায় বসার মূল কারণ; তা না হলে পাইপের চেয়ে বেনসনই তাঁর বেশি পছন্দ। অবশ্য পার্টির সেক্রেটারি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি মানুষের সামনে আর সিগারেট খান না, মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। তাঁর ভালো লাগে, আরাম লাগে। এই আরাম যে পাইপ টানার আরাম নয়, সেটাও তিনি বোঝেন। বোঝেন বলেই আরামটা তাঁর আরও বেশি লাগে।
নাজিম সাহেব টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন। তাঁর বাথরুম করতে সময় লাগে কিছুটা। তিনি বেনসন টেনে টেনে বড় কাজ সারেন, ততক্ষণে গিজারে পানি গরম হয়। তারপর শেভ করে, হট শাওয়ার নিয়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হন। শনিবার দিন তিনি গোসল না করে বের হন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা আছে।
মাথা মুছতে মুছতে নাজিম সাহেব জয়নালকে গাড়ি রেডি করার জন্য নিচে খবর দিতে বললেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গেটের সামনে যে ডজন দুইয়েক লোক, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে যাবে, দু-একজন অবশ্য গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় বাদ পড়বে; প্রতিবারই এমন হয়। গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে এখন চারটা হয়েছে, কিন্তু তা-ও প্রতিবারই কেউ না কেউ বাদ পড়েই। মুশকিল!
সামনে দুইটা আর পেছনে দুইটা মাইক্রো নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নাজিম সাহেব। তিনি আগামীবার পার্টির নমিনেশন চাইবেন, তাই এলাকায় তাঁর প্রভাব পাকাপোক্ত করতেই ঘনঘন এলাকায় যাতায়াত করছেন। তাঁর নমিনেশন যদিও প্রায় নিশ্চিত, তা-ও তিনি রিস্ক নিতে চান না। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর ক্ষমতার আঁচ লেগেছে অনেক জায়গায়ই। গতবার থানায় গিয়েই তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। থানাওয়ালা যেভাবে তাঁকে খাতির-যত্ন করল, তিনি তো প্রায় বিব্রত অবস্থায়ই পড়েছিলেন। অবশ্য এলাকার লোকজনও এখন তাঁকে অন্য চোখে দেখে। চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সবাই তাঁর আসার অপেক্ষায় বসে থাকে। নাজিম সাহেব ব্যাপারটা খুব উপভোগ করেন, তাঁর অনেক ভালো লাগে।
গাড়ির বহর ইস্কাটন পার হতেই মানুষের জটলা। আগের শনিবারগুলোয় এত জটলা থাকত না, কদিন ধরে জ্যাম লেগে যাচ্ছে। টিসিবির গাড়ির পেছনের জটলা দেখতে আগে তাঁর খারাপ লাগত, আজকাল তেমন খারাপ লাগে না। কদিন ধরে তিনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করছেন, টিসিবির লাইনের লোকগুলোর কাপড়-চোপড় বেশ ভালো। হয়তো এ কারণেই এদের দেখতে এত খারাপ লাগে না।
গাড়িতে ড্রাইভার ও নাজিম সাহেব ছাড়া আর একজন আছে, জমির। নাজিম সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয় জমির, তিনি তাকে পিএসের চাকরি দিয়েছেন। শিক্ষিত ভদ্র ছেলে সে, চুপচাপ। আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করত। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে চাকরির জন্য এসেছিল। নাজিম সাহেব ইংরেজিতে একটু কাচা, ইদানীং আবার অনেক চিঠিপত্র আসে তাঁর কাছে, যেগুলো ইংরেজিতে লেখা। সাতপাঁচ না ভেবে তাই তিনি জমিরকে নিজ পিএসের চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন।
‘বুঝলে জমির?’—নাজিম সাহেবের ডাকে ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে ঘাড় বাঁকা করে পেছনে তাকায় জমির। ‘দেশ যে এত উন্নত হচ্ছে, লোকে বুঝতে পারে না। কথায় কথায় খালি সরকাররে গালায়। সুশীল ব্যাটাদের তো খাইয়্যা কাম নাই, শালার ব্যাটারা খালি ভুল ধরে। বিদেশিদের টাকা খায় আর গালগপ্প বলে বেড়ায় ব্যাটারা।’ যদিও নাজিম সাহেব সারাক্ষণই এমন খিস্তি করতে থাকেন, তবু জমির অবাক হলো। শনিবার দিন সাধারণত তিনি আজেবাজে কথা বলেন না, তাঁর পীর সাহেবের মানা।
নাজিম সাহেব কোন প্রসঙ্গে বলছেন তার কিছুই না বুঝে জমির বলল ‘জি স্যার!’ নাজিম সাহেব সায় পেয়ে খুশি হলেন। তাঁর গালাগালির ঝুড়ি তিনি একেবারে খুলে দিলেন। সুশীলদের গুষ্টি উদ্ধার করে মিনিট দশেক বক্তব্য দিলেন, জমির শুধু জি স্যার, জি স্যার করতে লাগল। এতক্ষণে অবশ্য জমির প্রসঙ্গটা ধরতে পেরেছে। তাঁর এখন আর ‘জি স্যার, জি স্যার’ করতে ভালো লাগছে না। ‘দেখো না, দেখো কত মানুষ এখানে লাইন ধরে জিনিস কিনছে। বলো কখনো দেখেছ আগে এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ লাইন? আর দেখো, এই সব লোকেরা কত ভালো ভালো কাপড় পরা। জুতাগুলো দেখো, ওই যে দেখছ, ওই মেয়েটা। দেখো কী সুন্দর কাপড় পরা। আর এই যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ছেলেটা। কী অদ্ভুত! আগামী পার্টি মিটিংয়ে বলতেই হবে ব্যাপারটা।’ নাজিম সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন। জমির বিরক্তি আর আড়াল করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলবেন স্যার, পার্টি মিটিংয়ে?’
জমির কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করে না, এইবার জিজ্ঞেস করাতে নাজিম সাহেব খুব আনন্দ পেলেন। বদ্ধ গাড়িতে এসি চলছে, এর মধ্যেই তিনি সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলতে লাগলেন—‘কী আর? এই যে ব্যাটা সুশীলেরা দেখে না এইগুলো। এই যে গরিবদের লাইনের দিকে তারা তাকায় না, দেখে না যে এদের কাপড়-চোপড়ের উন্নতি হয়েছে। কত ভালো ভালো কাপড় তারা পরা শুরু করেছে। আয় না বাড়লে কি আর তারা এসব কাপড় পরত? কত সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ায়ে জিনিস কিনতেছে লোকে। সরকারের এই সব উন্নয়ন না দেখে তারা খালি এই নাই, ওই নাই করে। এসবই বলব আর কি।’
জমির চুপ করে থাকে। পেছন থেকে প্রচুর হর্নের শব্দ আসছে। ড্রাইভার উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ‘স্যার, পেছনে মনে হয় গন্ডগোল।’ গন্ডগোলে নাজিম সাহেব আর ভয় পান না। তাঁর গাড়িতে পার্টির সিল লাগানো আছে। তিনি জমিরকে ব্যাপারটা দেখে আসতে বললেন, লাগলে পাশের থানার ওসিকে কল করতে বলে দেন।
জমির গাড়ি থেকে নেমে যায়। সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। টিসিবির লাইনটা বেশ লম্বা, কিলোমিটার খানেক হবে। লাইনের সবাইকে তার অনেক আপন লাগে। সবাই যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হঠাৎ একটা চেহারায় জমিরের চোখ আটকে যায়, চমকে ওঠে সে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার শিক্ষক নাজমুল স্যার; চেহারা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। সেই আগের মতোই সাদা শার্ট আর ছাই রঙের প্যান্ট পরনে। নাজমুল স্যারের সাদা শার্ট আর সাদা নেই, কেমন ধূসর হয়ে গেছে।
জমিরের মনে পড়ে যায় তাঁর মায়ের চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়ার কথা। পরপর কয়েক ঈদে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের কাপড় কিনে দিতে না পারার কথা। মোটামুটি ভালো বেতন পেয়েও কোনোভাবেই সংসার চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার কথা। বেতন বাড়াতে বলায় তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
আচমকাই জমির ফুসে ওঠে। ভালো কাপড়-চোপড়, উন্নয়ন, সুশীল, নাজমুল স্যার, মায়ের ওষুধ, সন্তানের কান্না—সব তাঁকে চেপে ধরে। নাজমুল স্যারের পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট নিয়ে সে নাজিম সাহেবের গাড়ির দিকে রওনা দেয়। পেছনে হট্টগোল বাড়তে থাকে, টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ, বেশির ভাগ লোকই পায়নি কিছুই।
নাজমুল স্যার চেয়ে আছেন জমিরের দিকে। জমির নাজিম সাহেবের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট দিয়ে। লাইন থেকে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও অনেকজন। সামনের আর পেছনের মাইক্রো থেকে নাজিম সাহেবের সহযাত্রীরা সব পালিয়েছে। নাজিম সাহেব জমিরের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। শিক্ষিত, ভদ্র, চুপচাপ জমিরের চোখে যেন আগুন লেগেছে।
নাজিম সাহেব ভয় পেয়েছেন। আজ বহু বছর পর তিনি ভয় পেয়েছেন।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

নাজিম সাহেব আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পাশে বডিগার্ড জয়নাল তাঁর জন্য টাওয়েল আর পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কফিটা শেষ করেই পাইপ নেবেন, গুনে গুনে ৬টা টান দেবেন, তারপর টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের
৩১ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে