
বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হবে বুঝি কোনো প্রদর্শনী চলছে। এস্কোবার আজ কলারবিহীন ডোরাকাটা শার্ট পরেছে, সঙ্গে সোনালি রঙের গলাবন্ধ। ফিতা দিয়ে কোমরে আটকানো প্যান্ট। সহজ-সরল, শীর্ণ এস্কোবারের নির্লিপ্ত চাহনি, অনেকটা অন্ধের তাকানোর মতো।
টেবিলে সরঞ্জাম সাজাতে সাজাতে সে ড্রিল মেশিনটা পা দিয়ে সামনের দিকে টানছিল। নকল দাঁতগুলো পরিষ্কার করার জন্য চেয়ারে এসে বসল। সে যে কাজ করছে এটা ভাবতে চাইছিল না। কিন্তু কাজ করছিল খুব ধীরস্থিরভাবে, পা দিয়ে মেশিনটা একটানা টেনে চলেছে, এমনকি যখন টানার দরকার নেই তখনো।
৮টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য কাজে বিরতি দিল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সূর্য এখন তার প্রতিবেশীর ঘরের চালের ওপর। চালের ওপর ফুঁড়ে ওঠা দণ্ডে বসে এক জোড়া বাজপাখি রোদ পোহাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি নামবে। তার ১১ বছরের ছেলের বাজখাই ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল,
‘বাবা?’
‘কি রে?’
‘মেয়র জানতে চাইছেন তুমি তাঁর দাঁত ফেলতে পারবে কি না?’
‘বলে দে, আমি নেই!’
এস্কোবার তখন একটা সোনালি রঙের দাঁত পরিষ্কার করছিল। হাতের বাহুর সমান্তরালে রেখে অর্ধেক চোখ বন্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষা করছিল ওটা। ওপাশের ছোট ওয়েটিং রুম থেকে আবার তার ছেলের ডাক শোনা গেল,
‘বাবা, উনি বলছেন তুমি এখানে আছ; কারণ উনি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’
ডাক্তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। সে তার কাজে মন দিল। মনোযোগ দিয়ে দাঁত নিরীক্ষা করতে থাকল। একপর্যায়ে সে তার হাতের কাজ শেষ করে জবাব দিল,
‘ভালো হয়েছে।’
এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা আবার চালু করল। যন্ত্রপাতি রাখার বাক্স থেকে আরও কিছু জিনিস বের করল ও আগের মতোই দাঁত পরিষ্কারে লেগে গেল।
বাবা?;
এস্কোবার আগের ঝাঁজেই উত্তর দিল, ‘কী?’
‘উনি বলছেন, যদি তুমি ওনার দাঁত না তোল, তবে তোমাকে গুলি করবে।’
কোনো রকম তাড়াহুড়ো না করে এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা খুব ধীরস্থিরভাবে বন্ধ করে চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখল। নিচের ড্রয়ারটা পুরোটা টেনে খুলে দেখল, হুম, রিভলবারটা ওখানেই আছে।
‘ঠিক আছে। ওনাকে ভেতরে আসতে বল।’
এস্কোবার চেয়ারটা টেনে দরজার উল্টা দিকে নিয়ে রাখল। তার হাত ড্রয়ারের কোনায় রাখা। এরই মধ্যে দরজায় মেয়রকে দেখা গেল। গালের বাঁদিকের দাড়ি কামানো। কিন্তু ‘অন্য গালে পাঁচ দিনের দাড়ি, ব্যথায় ফুলে আছে।
ডাক্তার দেখল, মেয়রের বিরস চোখে বহু বিষণ্ন রাতের ছাপ। আঙুলের টোকায় ড্রয়ারটা বন্ধ করে দিল সে। নরম সুরে বলল,
‘বসুন।’
‘সুপ্রভাত’, মেয়র বলল।
‘হুম, শুভসকাল’, উত্তরে ডাক্তার বলল।
ওদিকে যন্ত্রপাতিগুলো গরম জলে ফুটছে। চেয়ারের ওপর দিয়ে মেয়র তার মাথাটা সেদিকে বাড়িয়ে দিল। তার খানিকটা আরাম লাগছে। ঠান্ডা নিশ্বাস বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারের চেম্বার জীর্ণশীর্ণ। পুরোনো কাঠের একটা চেয়ার। পায়ে টানা ড্রিল মেশিন। একটা কেইসে কিছু সিরামিক বোতল রাখা। চেয়ারের উল্টো দিকের জানালায় কাঁধসম পর্দা। ডাক্তার যখন মেয়রের দিকে মনোযোগ দিল, মেয়র তার ব্যথাটা আবার টের পেল এবং মুখটা হা করল।
এস্কোবার মেয়রের মাথাটা টেনে আলোর দিকে ঘুরাল। যে দাঁতটায় ব্যথা হচ্ছে, সেটা খুব ভালো করে দেখল। এরপর আঙুলের চাপে বেশ জোরেশোরেই মেয়রের হা করে থাকা চোয়াল জোড়া বন্ধ করে দিল।
‘ব্যথানাশক ছাড়াই এটা তুলতে হবে’, এস্কোবার বলল।
‘কেন?’
‘কারণ, ফোড়ার গোড়ায় পুঁজ জমে গেছে।’
মেয়র ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। তোল’। হাসলও। বিনিময়ে ডাক্তার হাসি ফিরিয়ে দিল না। সে যন্ত্রপাতি রাখা বেসিনটা তার কাজের টেবিলে এনে রাখল। কোনো রকম তাড়াহুড়ো ছাড়াই সাঁড়াশি জোড়া পানি থেকে তুলে রাখল। জুতো দিয়ে পিকদানিটা সরিয়ে রাখল একদিকে। বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল। এসব কাজ সে এতই মনোযোগ দিয়ে করছিল যে মেয়রের দিকে ফিরেও তাকাল না। কিন্তু মেয়র একপলকের জন্যও ডাক্তারের ওপর থেকে চোখ সরাল না।
‘এটা ভেতরের দিকের একটা আক্কেল দাঁত ছিল।’ ডাক্তার তার পা দুখানা ছড়িয়ে দাঁড়াল এবং গরম সাঁড়াশি দিয়ে দাঁতটা ভালোভাবে আটকাল। ব্যথায় যেন মেয়র চেয়ারের হাতলের সঙ্গে মিশে যাবে। সব ভর তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল। কিডনিতে যেন শীতল বায়ু বয়ে গেল তার। কিন্তু ‘টুঁ-শব্দটিও করল না। ডাক্তার শুধু তার কবজির মোচড়টা ব্যবহার করল। কোনো রাগ নয়; কোমল সুরে ডাক্তার বলল,
‘এখন আপনি আমার বিশ পুরুষের দেনা শোধ করবেন।’
মেয়রের মনে হলো, তার চোয়ালের একটা হাড় যেন ভেঙে গেছে। চোখ জলে টইটম্বুর। কিন্তু ‘দাঁতটা বেরিয়ে আসার আগপর্যন্ত নিশ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেল সে। জলভরা চোখে বেরিয়ে আসা দাঁতটা দেখল। গত পাঁচ রাতের ব্যথার কাছে এ যেন কিছুই না। পিকদানি, ঘামে ভেজা শরীর আর বোতাম খোলা শার্ট পেরিয়ে তার পকেটে হাত দিল রুমালের জন্য। ডাক্তার এক খণ্ড পরিষ্কার কাপড় এগিয়ে দিল।
বলল, ‘চোখের জল মুছে নিন।’
মেয়র চোখ মুছে নিল। তার সারা শরীর কাঁপছে। এস্কোবার বেসিনে হাত ধুতে যাওয়ার পর মেয়র ওপরের দিকে তাকাল, ছাদে মাকড়সার জালে ডিম আর নানা রকমের পোকা মরে আটকে আছে। হাত শুকাতে শুকাতে ডাক্তার বলল, ‘কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন আর লবণপানি দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন।’ মেয়র উঠে দাঁড়াল। মিলিটারি কায়দায় স্যালুট দিয়ে দরজায় দিকে পা টানতে টানতে বলল, ‘যাই’। তখনো তার জামাটার বোতামও লাগানো হয়নি।
যেতে যেতে বলল, ‘বিলটা পাঠিয়ে দিস।’
‘কোথায় পাঠাব? আপনার কাছে নাকি নগর ভবনে?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করল।
মেয়র ফিরেও তাকাল না। দরজাটা বন্ধ করে দিল। জানালার ফাঁক দিয়ে বলল,
‘ওই হলো! একই কথা!’

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হবে বুঝি কোনো প্রদর্শনী চলছে। এস্কোবার আজ কলারবিহীন ডোরাকাটা শার্ট পরেছে, সঙ্গে সোনালি রঙের গলাবন্ধ। ফিতা দিয়ে কোমরে আটকানো প্যান্ট। সহজ-সরল, শীর্ণ এস্কোবারের নির্লিপ্ত চাহনি, অনেকটা অন্ধের তাকানোর মতো।
টেবিলে সরঞ্জাম সাজাতে সাজাতে সে ড্রিল মেশিনটা পা দিয়ে সামনের দিকে টানছিল। নকল দাঁতগুলো পরিষ্কার করার জন্য চেয়ারে এসে বসল। সে যে কাজ করছে এটা ভাবতে চাইছিল না। কিন্তু কাজ করছিল খুব ধীরস্থিরভাবে, পা দিয়ে মেশিনটা একটানা টেনে চলেছে, এমনকি যখন টানার দরকার নেই তখনো।
৮টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য কাজে বিরতি দিল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সূর্য এখন তার প্রতিবেশীর ঘরের চালের ওপর। চালের ওপর ফুঁড়ে ওঠা দণ্ডে বসে এক জোড়া বাজপাখি রোদ পোহাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি নামবে। তার ১১ বছরের ছেলের বাজখাই ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল,
‘বাবা?’
‘কি রে?’
‘মেয়র জানতে চাইছেন তুমি তাঁর দাঁত ফেলতে পারবে কি না?’
‘বলে দে, আমি নেই!’
এস্কোবার তখন একটা সোনালি রঙের দাঁত পরিষ্কার করছিল। হাতের বাহুর সমান্তরালে রেখে অর্ধেক চোখ বন্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষা করছিল ওটা। ওপাশের ছোট ওয়েটিং রুম থেকে আবার তার ছেলের ডাক শোনা গেল,
‘বাবা, উনি বলছেন তুমি এখানে আছ; কারণ উনি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’
ডাক্তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। সে তার কাজে মন দিল। মনোযোগ দিয়ে দাঁত নিরীক্ষা করতে থাকল। একপর্যায়ে সে তার হাতের কাজ শেষ করে জবাব দিল,
‘ভালো হয়েছে।’
এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা আবার চালু করল। যন্ত্রপাতি রাখার বাক্স থেকে আরও কিছু জিনিস বের করল ও আগের মতোই দাঁত পরিষ্কারে লেগে গেল।
বাবা?;
এস্কোবার আগের ঝাঁজেই উত্তর দিল, ‘কী?’
‘উনি বলছেন, যদি তুমি ওনার দাঁত না তোল, তবে তোমাকে গুলি করবে।’
কোনো রকম তাড়াহুড়ো না করে এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা খুব ধীরস্থিরভাবে বন্ধ করে চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখল। নিচের ড্রয়ারটা পুরোটা টেনে খুলে দেখল, হুম, রিভলবারটা ওখানেই আছে।
‘ঠিক আছে। ওনাকে ভেতরে আসতে বল।’
এস্কোবার চেয়ারটা টেনে দরজার উল্টা দিকে নিয়ে রাখল। তার হাত ড্রয়ারের কোনায় রাখা। এরই মধ্যে দরজায় মেয়রকে দেখা গেল। গালের বাঁদিকের দাড়ি কামানো। কিন্তু ‘অন্য গালে পাঁচ দিনের দাড়ি, ব্যথায় ফুলে আছে।
ডাক্তার দেখল, মেয়রের বিরস চোখে বহু বিষণ্ন রাতের ছাপ। আঙুলের টোকায় ড্রয়ারটা বন্ধ করে দিল সে। নরম সুরে বলল,
‘বসুন।’
‘সুপ্রভাত’, মেয়র বলল।
‘হুম, শুভসকাল’, উত্তরে ডাক্তার বলল।
ওদিকে যন্ত্রপাতিগুলো গরম জলে ফুটছে। চেয়ারের ওপর দিয়ে মেয়র তার মাথাটা সেদিকে বাড়িয়ে দিল। তার খানিকটা আরাম লাগছে। ঠান্ডা নিশ্বাস বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারের চেম্বার জীর্ণশীর্ণ। পুরোনো কাঠের একটা চেয়ার। পায়ে টানা ড্রিল মেশিন। একটা কেইসে কিছু সিরামিক বোতল রাখা। চেয়ারের উল্টো দিকের জানালায় কাঁধসম পর্দা। ডাক্তার যখন মেয়রের দিকে মনোযোগ দিল, মেয়র তার ব্যথাটা আবার টের পেল এবং মুখটা হা করল।
এস্কোবার মেয়রের মাথাটা টেনে আলোর দিকে ঘুরাল। যে দাঁতটায় ব্যথা হচ্ছে, সেটা খুব ভালো করে দেখল। এরপর আঙুলের চাপে বেশ জোরেশোরেই মেয়রের হা করে থাকা চোয়াল জোড়া বন্ধ করে দিল।
‘ব্যথানাশক ছাড়াই এটা তুলতে হবে’, এস্কোবার বলল।
‘কেন?’
‘কারণ, ফোড়ার গোড়ায় পুঁজ জমে গেছে।’
মেয়র ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। তোল’। হাসলও। বিনিময়ে ডাক্তার হাসি ফিরিয়ে দিল না। সে যন্ত্রপাতি রাখা বেসিনটা তার কাজের টেবিলে এনে রাখল। কোনো রকম তাড়াহুড়ো ছাড়াই সাঁড়াশি জোড়া পানি থেকে তুলে রাখল। জুতো দিয়ে পিকদানিটা সরিয়ে রাখল একদিকে। বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল। এসব কাজ সে এতই মনোযোগ দিয়ে করছিল যে মেয়রের দিকে ফিরেও তাকাল না। কিন্তু মেয়র একপলকের জন্যও ডাক্তারের ওপর থেকে চোখ সরাল না।
‘এটা ভেতরের দিকের একটা আক্কেল দাঁত ছিল।’ ডাক্তার তার পা দুখানা ছড়িয়ে দাঁড়াল এবং গরম সাঁড়াশি দিয়ে দাঁতটা ভালোভাবে আটকাল। ব্যথায় যেন মেয়র চেয়ারের হাতলের সঙ্গে মিশে যাবে। সব ভর তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল। কিডনিতে যেন শীতল বায়ু বয়ে গেল তার। কিন্তু ‘টুঁ-শব্দটিও করল না। ডাক্তার শুধু তার কবজির মোচড়টা ব্যবহার করল। কোনো রাগ নয়; কোমল সুরে ডাক্তার বলল,
‘এখন আপনি আমার বিশ পুরুষের দেনা শোধ করবেন।’
মেয়রের মনে হলো, তার চোয়ালের একটা হাড় যেন ভেঙে গেছে। চোখ জলে টইটম্বুর। কিন্তু ‘দাঁতটা বেরিয়ে আসার আগপর্যন্ত নিশ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেল সে। জলভরা চোখে বেরিয়ে আসা দাঁতটা দেখল। গত পাঁচ রাতের ব্যথার কাছে এ যেন কিছুই না। পিকদানি, ঘামে ভেজা শরীর আর বোতাম খোলা শার্ট পেরিয়ে তার পকেটে হাত দিল রুমালের জন্য। ডাক্তার এক খণ্ড পরিষ্কার কাপড় এগিয়ে দিল।
বলল, ‘চোখের জল মুছে নিন।’
মেয়র চোখ মুছে নিল। তার সারা শরীর কাঁপছে। এস্কোবার বেসিনে হাত ধুতে যাওয়ার পর মেয়র ওপরের দিকে তাকাল, ছাদে মাকড়সার জালে ডিম আর নানা রকমের পোকা মরে আটকে আছে। হাত শুকাতে শুকাতে ডাক্তার বলল, ‘কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন আর লবণপানি দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন।’ মেয়র উঠে দাঁড়াল। মিলিটারি কায়দায় স্যালুট দিয়ে দরজায় দিকে পা টানতে টানতে বলল, ‘যাই’। তখনো তার জামাটার বোতামও লাগানো হয়নি।
যেতে যেতে বলল, ‘বিলটা পাঠিয়ে দিস।’
‘কোথায় পাঠাব? আপনার কাছে নাকি নগর ভবনে?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করল।
মেয়র ফিরেও তাকাল না। দরজাটা বন্ধ করে দিল। জানালার ফাঁক দিয়ে বলল,
‘ওই হলো! একই কথা!’

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হবে বুঝি কোনো প্রদর্শনী চলছে। এস্কোবার আজ কলারবিহীন ডোরাকাটা শার্ট পরেছে, সঙ্গে সোনালি রঙের গলাবন্ধ। ফিতা দিয়ে কোমরে আটকানো প্যান্ট। সহজ-সরল, শীর্ণ এস্কোবারের নির্লিপ্ত চাহনি, অনেকটা অন্ধের তাকানোর মতো।
টেবিলে সরঞ্জাম সাজাতে সাজাতে সে ড্রিল মেশিনটা পা দিয়ে সামনের দিকে টানছিল। নকল দাঁতগুলো পরিষ্কার করার জন্য চেয়ারে এসে বসল। সে যে কাজ করছে এটা ভাবতে চাইছিল না। কিন্তু কাজ করছিল খুব ধীরস্থিরভাবে, পা দিয়ে মেশিনটা একটানা টেনে চলেছে, এমনকি যখন টানার দরকার নেই তখনো।
৮টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য কাজে বিরতি দিল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সূর্য এখন তার প্রতিবেশীর ঘরের চালের ওপর। চালের ওপর ফুঁড়ে ওঠা দণ্ডে বসে এক জোড়া বাজপাখি রোদ পোহাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি নামবে। তার ১১ বছরের ছেলের বাজখাই ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল,
‘বাবা?’
‘কি রে?’
‘মেয়র জানতে চাইছেন তুমি তাঁর দাঁত ফেলতে পারবে কি না?’
‘বলে দে, আমি নেই!’
এস্কোবার তখন একটা সোনালি রঙের দাঁত পরিষ্কার করছিল। হাতের বাহুর সমান্তরালে রেখে অর্ধেক চোখ বন্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষা করছিল ওটা। ওপাশের ছোট ওয়েটিং রুম থেকে আবার তার ছেলের ডাক শোনা গেল,
‘বাবা, উনি বলছেন তুমি এখানে আছ; কারণ উনি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’
ডাক্তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। সে তার কাজে মন দিল। মনোযোগ দিয়ে দাঁত নিরীক্ষা করতে থাকল। একপর্যায়ে সে তার হাতের কাজ শেষ করে জবাব দিল,
‘ভালো হয়েছে।’
এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা আবার চালু করল। যন্ত্রপাতি রাখার বাক্স থেকে আরও কিছু জিনিস বের করল ও আগের মতোই দাঁত পরিষ্কারে লেগে গেল।
বাবা?;
এস্কোবার আগের ঝাঁজেই উত্তর দিল, ‘কী?’
‘উনি বলছেন, যদি তুমি ওনার দাঁত না তোল, তবে তোমাকে গুলি করবে।’
কোনো রকম তাড়াহুড়ো না করে এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা খুব ধীরস্থিরভাবে বন্ধ করে চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখল। নিচের ড্রয়ারটা পুরোটা টেনে খুলে দেখল, হুম, রিভলবারটা ওখানেই আছে।
‘ঠিক আছে। ওনাকে ভেতরে আসতে বল।’
এস্কোবার চেয়ারটা টেনে দরজার উল্টা দিকে নিয়ে রাখল। তার হাত ড্রয়ারের কোনায় রাখা। এরই মধ্যে দরজায় মেয়রকে দেখা গেল। গালের বাঁদিকের দাড়ি কামানো। কিন্তু ‘অন্য গালে পাঁচ দিনের দাড়ি, ব্যথায় ফুলে আছে।
ডাক্তার দেখল, মেয়রের বিরস চোখে বহু বিষণ্ন রাতের ছাপ। আঙুলের টোকায় ড্রয়ারটা বন্ধ করে দিল সে। নরম সুরে বলল,
‘বসুন।’
‘সুপ্রভাত’, মেয়র বলল।
‘হুম, শুভসকাল’, উত্তরে ডাক্তার বলল।
ওদিকে যন্ত্রপাতিগুলো গরম জলে ফুটছে। চেয়ারের ওপর দিয়ে মেয়র তার মাথাটা সেদিকে বাড়িয়ে দিল। তার খানিকটা আরাম লাগছে। ঠান্ডা নিশ্বাস বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারের চেম্বার জীর্ণশীর্ণ। পুরোনো কাঠের একটা চেয়ার। পায়ে টানা ড্রিল মেশিন। একটা কেইসে কিছু সিরামিক বোতল রাখা। চেয়ারের উল্টো দিকের জানালায় কাঁধসম পর্দা। ডাক্তার যখন মেয়রের দিকে মনোযোগ দিল, মেয়র তার ব্যথাটা আবার টের পেল এবং মুখটা হা করল।
এস্কোবার মেয়রের মাথাটা টেনে আলোর দিকে ঘুরাল। যে দাঁতটায় ব্যথা হচ্ছে, সেটা খুব ভালো করে দেখল। এরপর আঙুলের চাপে বেশ জোরেশোরেই মেয়রের হা করে থাকা চোয়াল জোড়া বন্ধ করে দিল।
‘ব্যথানাশক ছাড়াই এটা তুলতে হবে’, এস্কোবার বলল।
‘কেন?’
‘কারণ, ফোড়ার গোড়ায় পুঁজ জমে গেছে।’
মেয়র ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। তোল’। হাসলও। বিনিময়ে ডাক্তার হাসি ফিরিয়ে দিল না। সে যন্ত্রপাতি রাখা বেসিনটা তার কাজের টেবিলে এনে রাখল। কোনো রকম তাড়াহুড়ো ছাড়াই সাঁড়াশি জোড়া পানি থেকে তুলে রাখল। জুতো দিয়ে পিকদানিটা সরিয়ে রাখল একদিকে। বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল। এসব কাজ সে এতই মনোযোগ দিয়ে করছিল যে মেয়রের দিকে ফিরেও তাকাল না। কিন্তু মেয়র একপলকের জন্যও ডাক্তারের ওপর থেকে চোখ সরাল না।
‘এটা ভেতরের দিকের একটা আক্কেল দাঁত ছিল।’ ডাক্তার তার পা দুখানা ছড়িয়ে দাঁড়াল এবং গরম সাঁড়াশি দিয়ে দাঁতটা ভালোভাবে আটকাল। ব্যথায় যেন মেয়র চেয়ারের হাতলের সঙ্গে মিশে যাবে। সব ভর তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল। কিডনিতে যেন শীতল বায়ু বয়ে গেল তার। কিন্তু ‘টুঁ-শব্দটিও করল না। ডাক্তার শুধু তার কবজির মোচড়টা ব্যবহার করল। কোনো রাগ নয়; কোমল সুরে ডাক্তার বলল,
‘এখন আপনি আমার বিশ পুরুষের দেনা শোধ করবেন।’
মেয়রের মনে হলো, তার চোয়ালের একটা হাড় যেন ভেঙে গেছে। চোখ জলে টইটম্বুর। কিন্তু ‘দাঁতটা বেরিয়ে আসার আগপর্যন্ত নিশ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেল সে। জলভরা চোখে বেরিয়ে আসা দাঁতটা দেখল। গত পাঁচ রাতের ব্যথার কাছে এ যেন কিছুই না। পিকদানি, ঘামে ভেজা শরীর আর বোতাম খোলা শার্ট পেরিয়ে তার পকেটে হাত দিল রুমালের জন্য। ডাক্তার এক খণ্ড পরিষ্কার কাপড় এগিয়ে দিল।
বলল, ‘চোখের জল মুছে নিন।’
মেয়র চোখ মুছে নিল। তার সারা শরীর কাঁপছে। এস্কোবার বেসিনে হাত ধুতে যাওয়ার পর মেয়র ওপরের দিকে তাকাল, ছাদে মাকড়সার জালে ডিম আর নানা রকমের পোকা মরে আটকে আছে। হাত শুকাতে শুকাতে ডাক্তার বলল, ‘কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন আর লবণপানি দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন।’ মেয়র উঠে দাঁড়াল। মিলিটারি কায়দায় স্যালুট দিয়ে দরজায় দিকে পা টানতে টানতে বলল, ‘যাই’। তখনো তার জামাটার বোতামও লাগানো হয়নি।
যেতে যেতে বলল, ‘বিলটা পাঠিয়ে দিস।’
‘কোথায় পাঠাব? আপনার কাছে নাকি নগর ভবনে?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করল।
মেয়র ফিরেও তাকাল না। দরজাটা বন্ধ করে দিল। জানালার ফাঁক দিয়ে বলল,
‘ওই হলো! একই কথা!’

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হবে বুঝি কোনো প্রদর্শনী চলছে। এস্কোবার আজ কলারবিহীন ডোরাকাটা শার্ট পরেছে, সঙ্গে সোনালি রঙের গলাবন্ধ। ফিতা দিয়ে কোমরে আটকানো প্যান্ট। সহজ-সরল, শীর্ণ এস্কোবারের নির্লিপ্ত চাহনি, অনেকটা অন্ধের তাকানোর মতো।
টেবিলে সরঞ্জাম সাজাতে সাজাতে সে ড্রিল মেশিনটা পা দিয়ে সামনের দিকে টানছিল। নকল দাঁতগুলো পরিষ্কার করার জন্য চেয়ারে এসে বসল। সে যে কাজ করছে এটা ভাবতে চাইছিল না। কিন্তু কাজ করছিল খুব ধীরস্থিরভাবে, পা দিয়ে মেশিনটা একটানা টেনে চলেছে, এমনকি যখন টানার দরকার নেই তখনো।
৮টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য কাজে বিরতি দিল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সূর্য এখন তার প্রতিবেশীর ঘরের চালের ওপর। চালের ওপর ফুঁড়ে ওঠা দণ্ডে বসে এক জোড়া বাজপাখি রোদ পোহাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি নামবে। তার ১১ বছরের ছেলের বাজখাই ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল,
‘বাবা?’
‘কি রে?’
‘মেয়র জানতে চাইছেন তুমি তাঁর দাঁত ফেলতে পারবে কি না?’
‘বলে দে, আমি নেই!’
এস্কোবার তখন একটা সোনালি রঙের দাঁত পরিষ্কার করছিল। হাতের বাহুর সমান্তরালে রেখে অর্ধেক চোখ বন্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে নিরীক্ষা করছিল ওটা। ওপাশের ছোট ওয়েটিং রুম থেকে আবার তার ছেলের ডাক শোনা গেল,
‘বাবা, উনি বলছেন তুমি এখানে আছ; কারণ উনি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছেন।’
ডাক্তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। সে তার কাজে মন দিল। মনোযোগ দিয়ে দাঁত নিরীক্ষা করতে থাকল। একপর্যায়ে সে তার হাতের কাজ শেষ করে জবাব দিল,
‘ভালো হয়েছে।’
এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা আবার চালু করল। যন্ত্রপাতি রাখার বাক্স থেকে আরও কিছু জিনিস বের করল ও আগের মতোই দাঁত পরিষ্কারে লেগে গেল।
বাবা?;
এস্কোবার আগের ঝাঁজেই উত্তর দিল, ‘কী?’
‘উনি বলছেন, যদি তুমি ওনার দাঁত না তোল, তবে তোমাকে গুলি করবে।’
কোনো রকম তাড়াহুড়ো না করে এস্কোবার তার ড্রিল মেশিনটা খুব ধীরস্থিরভাবে বন্ধ করে চেয়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখল। নিচের ড্রয়ারটা পুরোটা টেনে খুলে দেখল, হুম, রিভলবারটা ওখানেই আছে।
‘ঠিক আছে। ওনাকে ভেতরে আসতে বল।’
এস্কোবার চেয়ারটা টেনে দরজার উল্টা দিকে নিয়ে রাখল। তার হাত ড্রয়ারের কোনায় রাখা। এরই মধ্যে দরজায় মেয়রকে দেখা গেল। গালের বাঁদিকের দাড়ি কামানো। কিন্তু ‘অন্য গালে পাঁচ দিনের দাড়ি, ব্যথায় ফুলে আছে।
ডাক্তার দেখল, মেয়রের বিরস চোখে বহু বিষণ্ন রাতের ছাপ। আঙুলের টোকায় ড্রয়ারটা বন্ধ করে দিল সে। নরম সুরে বলল,
‘বসুন।’
‘সুপ্রভাত’, মেয়র বলল।
‘হুম, শুভসকাল’, উত্তরে ডাক্তার বলল।
ওদিকে যন্ত্রপাতিগুলো গরম জলে ফুটছে। চেয়ারের ওপর দিয়ে মেয়র তার মাথাটা সেদিকে বাড়িয়ে দিল। তার খানিকটা আরাম লাগছে। ঠান্ডা নিশ্বাস বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারের চেম্বার জীর্ণশীর্ণ। পুরোনো কাঠের একটা চেয়ার। পায়ে টানা ড্রিল মেশিন। একটা কেইসে কিছু সিরামিক বোতল রাখা। চেয়ারের উল্টো দিকের জানালায় কাঁধসম পর্দা। ডাক্তার যখন মেয়রের দিকে মনোযোগ দিল, মেয়র তার ব্যথাটা আবার টের পেল এবং মুখটা হা করল।
এস্কোবার মেয়রের মাথাটা টেনে আলোর দিকে ঘুরাল। যে দাঁতটায় ব্যথা হচ্ছে, সেটা খুব ভালো করে দেখল। এরপর আঙুলের চাপে বেশ জোরেশোরেই মেয়রের হা করে থাকা চোয়াল জোড়া বন্ধ করে দিল।
‘ব্যথানাশক ছাড়াই এটা তুলতে হবে’, এস্কোবার বলল।
‘কেন?’
‘কারণ, ফোড়ার গোড়ায় পুঁজ জমে গেছে।’
মেয়র ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। তোল’। হাসলও। বিনিময়ে ডাক্তার হাসি ফিরিয়ে দিল না। সে যন্ত্রপাতি রাখা বেসিনটা তার কাজের টেবিলে এনে রাখল। কোনো রকম তাড়াহুড়ো ছাড়াই সাঁড়াশি জোড়া পানি থেকে তুলে রাখল। জুতো দিয়ে পিকদানিটা সরিয়ে রাখল একদিকে। বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল। এসব কাজ সে এতই মনোযোগ দিয়ে করছিল যে মেয়রের দিকে ফিরেও তাকাল না। কিন্তু মেয়র একপলকের জন্যও ডাক্তারের ওপর থেকে চোখ সরাল না।
‘এটা ভেতরের দিকের একটা আক্কেল দাঁত ছিল।’ ডাক্তার তার পা দুখানা ছড়িয়ে দাঁড়াল এবং গরম সাঁড়াশি দিয়ে দাঁতটা ভালোভাবে আটকাল। ব্যথায় যেন মেয়র চেয়ারের হাতলের সঙ্গে মিশে যাবে। সব ভর তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল। কিডনিতে যেন শীতল বায়ু বয়ে গেল তার। কিন্তু ‘টুঁ-শব্দটিও করল না। ডাক্তার শুধু তার কবজির মোচড়টা ব্যবহার করল। কোনো রাগ নয়; কোমল সুরে ডাক্তার বলল,
‘এখন আপনি আমার বিশ পুরুষের দেনা শোধ করবেন।’
মেয়রের মনে হলো, তার চোয়ালের একটা হাড় যেন ভেঙে গেছে। চোখ জলে টইটম্বুর। কিন্তু ‘দাঁতটা বেরিয়ে আসার আগপর্যন্ত নিশ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেল সে। জলভরা চোখে বেরিয়ে আসা দাঁতটা দেখল। গত পাঁচ রাতের ব্যথার কাছে এ যেন কিছুই না। পিকদানি, ঘামে ভেজা শরীর আর বোতাম খোলা শার্ট পেরিয়ে তার পকেটে হাত দিল রুমালের জন্য। ডাক্তার এক খণ্ড পরিষ্কার কাপড় এগিয়ে দিল।
বলল, ‘চোখের জল মুছে নিন।’
মেয়র চোখ মুছে নিল। তার সারা শরীর কাঁপছে। এস্কোবার বেসিনে হাত ধুতে যাওয়ার পর মেয়র ওপরের দিকে তাকাল, ছাদে মাকড়সার জালে ডিম আর নানা রকমের পোকা মরে আটকে আছে। হাত শুকাতে শুকাতে ডাক্তার বলল, ‘কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন আর লবণপানি দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন।’ মেয়র উঠে দাঁড়াল। মিলিটারি কায়দায় স্যালুট দিয়ে দরজায় দিকে পা টানতে টানতে বলল, ‘যাই’। তখনো তার জামাটার বোতামও লাগানো হয়নি।
যেতে যেতে বলল, ‘বিলটা পাঠিয়ে দিস।’
‘কোথায় পাঠাব? আপনার কাছে নাকি নগর ভবনে?’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করল।
মেয়র ফিরেও তাকাল না। দরজাটা বন্ধ করে দিল। জানালার ফাঁক দিয়ে বলল,
‘ওই হলো! একই কথা!’

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হ
১৩ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হ
১৩ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হ
১৩ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

বৃষ্টিহীন সোমবারের উষ্ণ সকাল। হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তার অরিলিও এস্কোবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টায় তার চেম্বার খুলল। গ্লাসকেস থেকে কিছু নকল দাঁত হাতে নিল যেগুলোর শরীরের উঁচু অংশে এখনো কিছুটা চুনকামের ছাঁচ অবশিষ্ট আছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের ওপর দাঁতগুলো বড় থেকে ছোট আকারে সাজাল, দেখে মনে হ
১৩ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৮ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৩ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৯ দিন আগে