Ajker Patrika

বিশ্লেষণ /ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস ইসরায়েলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ

বিবিসি
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ২২: ৩৫
ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস ইসরায়েলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। সেই প্রেক্ষিতে তেহরানও দীর্ঘদিন ধরে সম্ভাব্য হামলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে।

চলমান সংঘাতের শুরুতেই ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ধ্বংস করা হচ্ছে। আইডিএফ মুখপাত্র এফি ডেফরিন দাবি করেছেন, ‘তেহরান পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান কার্যত মুক্তভাবে উড়তে পারছে।’

তবে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করাই ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোর প্রধান প্রতিরক্ষা ভাঙার উপায় নয়।

কারণ, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত, যা বহু স্তরের মাটি ও শক্ত কংক্রিট দিয়ে সুরক্ষিত। উদাহরণস্বরূপ, ফোরদোর জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি মাটি থেকে প্রায় ৮০ মিটার নিচে বলে ধারণা করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, মাউন্ট কোলাং-এ নির্মাণাধীন একটি নতুন স্থাপনাটি আরও গভীর।

এ ধরনের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে প্রয়োজন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ ধরনের বোমা— যেমন ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের GBU-57/B বা Massive Ordnance Penetrator (MOP), যা ৬০ মিটার পর্যন্ত কংক্রিট গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র হামলায় অংশ নিচ্ছে না এবং ইসরায়েলের কাছে MOP নেই।

irann

ইসরায়েলের নিজস্ব অস্ত্রাগারে রয়েছে ROCKS ও Air LORA নামের ক্ষেপণাস্ত্র, যা সর্বোচ্চ ৬ মিটার কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (RUSI) বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, এত গভীর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে হলে একই স্থানে বহুবার সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে হবে, যাতে প্রতিটি আঘাত করে ধাপে ধাপে নিচে পৌঁছানো যায়।

এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য ইসরায়েলের অস্ত্র মজুদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক কূটনীতিক ও প্রধানমন্ত্রীদের উপদেষ্টা আলোন পিঙ্কাস। তাঁর মতে, এত গভীর হামলার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ইসরায়েলের কাছে নেই।

তাই একমাত্র বাস্তবসম্মত কৌশল হতে পারে—প্রবেশ ও নির্গমন সুড়ঙ্গগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কার্যকারিতা অচল করে দেওয়া। তবে RUSI-এর পর্যবেক্ষণ বলছে, ইরান এই সুড়ঙ্গগুলো পুনর্গঠন করার জন্য খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবে।

বিশ্লেষক ব্রঙ্কসহ অনেকে বলছেন, সব মিলিয়ে সামরিকভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা ‘বাস্তবতায় সম্ভব নয়’। বিজ্ঞানীদের হত্যা এবং ক্ষণস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে কিছুটা সময়সাপেক্ষে কাজ বিলম্বিত করা সম্ভব হলেও যতদিন ইরানের সরকার টিকে থাকবে, ততদিন এই কর্মসূচি পুনর্গঠন চলতেই থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত