অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো যখন তাদের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে, ভারত তখন নিজেদের ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তটি এখনো আসেনি। অর্থাৎ, ভারত ‘বিশ্বের কারখানা’ হয়ে উঠতে পারেনি।
এক দশক আগে যেসব কোম্পানি তাদের উৎপাদন ঘাঁটি অন্যত্র সরাতে চাইছিল তখন ভারত নিজেকে প্রধান গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছিল। বিশ্লেষকেরা ভারতের এই কৌশলকে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি এবং ভারত এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ভিয়েতনামের মতো ছোট দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি সফল।
দুই ডজনেরও বেশি ব্যবসায়িক নির্বাহী, সরকারি কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আমদানি নীতিতে কড়াকড়ি এবং নিয়মকানুনের অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে ভারতে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগে বাধা দিয়েছে।
ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, কিন্তু সত্যিটা হলো, আমরা ভিয়েতনাম নই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রচারণার জমকালো বার্তার আড়ালে আছে এক জটিল বাস্তবতা। এর মধ্যে রয়েছে হাতছাড়া হওয়া চুক্তি, আটকে থাকা বিনিয়োগ এবং কোম্পানিগুলোর চুপিসারে অন্য দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা।
তাইওয়ানের কয়েকটি সেমিকন্ডাক্টর ফার্ম ভারত পরিদর্শন করলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিনিয়োগ নিয়ে আসেনি। স্যামসাং ২০১৮ সালে বলেছিল, তাদের সবচেয়ে বড় কারখানা ভারতেই হবে। কিন্তু সেই ঘোষণার পরও কোম্পানিটি ভিয়েতনামে আরও বেশি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ভারতের সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্প অ্যাপল হলেও কোম্পানিটিও চীন থেকে সরে এসে ভারতে যাওয়ার পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
ভারতীয় বাজার বিশ্লেষক ফয়সাল কাওসা বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের একটি বড় বাজার আছে এবং আমরা মনে করি, এই ব্র্যান্ডগুলো আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু সবাই প্রতিযোগিতা করছে এবং ভিয়েতনাম অতিরিক্ত চেষ্টা করছে।’
উৎপাদনকারীরা যখন চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে, তখন দুই টেক জায়ান্ট দুই ভিন্ন পথে এগিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ১৯৯০-এর দশকে ভারতে টেলিভিশন তৈরি শুরু করলেও তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে ভারতে আসেনি। কোম্পানিটি তাদের পরবর্তী সম্প্রসারণের জন্য ভিয়েতনামে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে, অ্যাপল ভারতের দিকে মনোযোগ দেয়।
বর্তমানে স্যামসাংয়ের বেশির ভাগ স্মার্টফোন ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়। সেখানে কোম্পানিটির ৬টি কারখানায় প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে তারা চীনে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপল এখনো তাদের বেশির ভাগ ডিভাইস চীনে তৈরি করে। অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ভারতে মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন হয়, যা ২০২৪ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশের লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অ্যাপলের জগতে ১৫ শতাংশ পরিবর্তন খুব বেশি নয়। এই গতি তাদের পছন্দ নয়।’ অ্যাপল ও স্যামসাং এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি জানান, যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিধিনিষেধ, বিশেষ করে চীন থেকে এবং উৎপাদনের মানের কারণে কোম্পানির বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনার মধ্যে ‘বিরোধ ও হতাশা’ তৈরি হয়েছে। শ্রমিক ধর্মঘটও একটি বড় ‘বাস্তবতা পরীক্ষা’ হিসেবে কাজ করেছে।
ওই ব্যক্তি ২০২১ সালের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘অ্যাপল এ ধরনের মনোযোগ পছন্দ করে না।’ সে সময় ফক্সকন পরিচালিত তামিলনাড়ুতে অবস্থিত একটি আইফোন অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টে খাদ্যে বিষক্রিয়ার খবরের পর ২ হাজার নারী শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। ফক্সকন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
স্যামসাংয়ের তামিলনাড়ু কারখানায় গত বছর সেপ্টেম্বরের পর থেকে অন্তত তিনটি শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছে। সেখানে তারা গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে। অন্যদিকে, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র ভিয়েতনামে শ্রমিক অসন্তোষ তুলনামূলকভাবে বিরল।
একটি আন্তর্জাতিক বাজারের এক পরিচালক বলেন, ‘ভিয়েতনামে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, যা ব্যবসার জন্য আরও বেশি নিশ্চয়তা প্রদান করে।’ ওই পরিচালক আরও বলেন, ভারতের বিশাল গণতন্ত্র এবং বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা ‘অসংগতি’ তৈরি করে। তিনি আরও ‘এটা ব্যবসার জন্য যা প্রয়োজন তার ঠিক বিপরীত।’
=বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি স্বাভাবিক পরবর্তী গন্তব্য। এর বিপরীতে, ভারত ২০২০ সালে সীমান্ত সংঘাতের পর চীনা বিনিয়োগে তীব্র কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিকস শিল্পের বাজার এখন ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের, যা ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ভারতের জনসংখ্যা এবং আয়তন ভিয়েতনামের চেয়ে যথাক্রমে ১৪ এবং ১০ গুণ বেশি।
বাণিজ্যের পরিসংখ্যানও এই বৈষম্য তুলে ধরে। ভিয়েতনাম এখন আমেরিকার ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, দেশটি ২০১৪ সালে ১৫তম স্থানে ছিল। ভারত এখনো ১০ম স্থানেই আটকে আছে। গোল্ডম্যান স্যাচের চলতি বছরের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের রপ্তানি উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে সর্বনিম্ন।
ভারতের অর্থনৈতিক গতি মন্থর হওয়ায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। দেশটিতে তীব্র কর্মসংস্থান সংকট চলছে। প্রতি বছর কর্মজীবনে প্রবেশ করা ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি তৈরি করতে পারছে না ভারত। শ্রমঘন শিল্প যা ভারতের বিকাশের জন্য জরুরি, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ পিছিয়ে থাকাটা এই সমস্যার মূল কারণ।
এমনকি ভারতের কিছু সরকারি মূল্যায়নও এই বাস্তবতা স্বীকার করেছে। ডিসেম্বরে প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চায়না প্লাস ওয়ান কৌশল বাস্তবায়নে ভারত এখনো সীমিত সাফল্য পেয়েছে।’ এতে বলা হয়েছে, কম শ্রম ব্যয়, সহজ নিয়মকানুন এবং অনুকূল করনীতির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। ভারতের প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এস কৃষ্ণান বলেন, ‘সরকার অবগত আছে যে আমরা একমাত্র গন্তব্য নই।’
২০২৩ সালের এক সংসদীয় প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ভারত ‘চীন থেকে সরে আসা ব্যবসাগুলোর মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।’ ভারতের অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগারিয়া ডিসেম্বরে এক বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের অসুবিধা মূলত নীতিগত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জমিকে অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল করে তুলেছি এবং শ্রমিক নিয়োগ অত্যন্ত কঠিন করে দিয়েছি।’
ভারত সরকার বারবার তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোকে গুজরাটে কারখানা স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছে। গুজরাট হলো মোদির নিজের রাজ্য। কিন্তু বেশির ভাগ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানেন এমন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্কের কারণে ভারত আরও তাইওয়ানের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ অনেক কোম্পানি মহামারির সময় সমীক্ষার জন্য ভারতে এসেছিল এবং লাভজনক নয় বলে আর ফিরে আসেনি।
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাওয়ারচিপ সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং করপোরেশন (পিএসএমসি) ঝুঁকি মূল্যায়নের পর ভারতের টাটা গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে তারা ভারতীয় কোম্পানিটিকে তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করতে এবং কারখানা নির্মাণে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। ২০২৩ সালে ফক্সকন এবং ভারতীয় কোম্পানি বেদান্তের মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের একটি সেমিকন্ডাক্টর অংশীদারত্ব ভেঙে যায়।
বৈশ্বিক বাজারের এক পরিচালক বলেছেন, কোম্পানিগুলো ভারতের বাজার দেখে ‘আশাবাদী’ হয়, কিন্তু তারপর ভারতে ব্যবসা করার ‘প্রয়োজনীয় খরচ’ হিসাব করতে শুরু করে। এই দ্বিধা শুধু সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়। জাপানের চেম্বার অব কমার্স ইন ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল কেনজি সুগিনো বলেন, ভারতের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া ১০টি জাপানি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। তিনি আরও জানান, চীন থেকে ভারতে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে পেরেছে, এমন জাপানি কোম্পানির সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি।
যারা ভারতে আসেও, তাদের প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জাপানি গাড়ি কোম্পানিগুলো ফ্রিকশন-ফ্রি টায়ারের ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক নিয়ে অভিযোগ করেছে। নিয়মকানুন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ভারতীয় কাস্টমস নিপ্পন স্টিলের গুরুত্বপূর্ণ চালান কয়েক মাস আটকে রাখলে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পেছনে ইতিহাসের অনেক সতর্কবার্তা রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ভারতের এক নির্বাহী জানান, ২০১৩ সালে ওষুধ কোম্পানি ডাইচি স্যাঙ্কিও ভারত থেকে ব্যয়বহুলভাবে বেরিয়ে যায়। তারা যে ভারতীয় কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করেছিল, সেটির বিরুদ্ধে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ ডেটা জালিয়াতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানির অভিযোগ এনেছিল।
অন্যদিকে, জেনারেল মোটরস তাদের ভারতীয় কারখানা বিক্রির চেষ্টা করেছে অন্তত চার বছর ধরে। ২০২০ সালে এই কারখানা শুরু হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় বাধা ছিল নতুন ক্রেতাকে তাদের কর্মীদের ধরে রাখার নিয়ম। এই ঘটনা সম্পর্কে পরিচিত এক ব্যক্তি এ কথা জানিয়েছেন।
ভারত সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য নতুন প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিও করতে চাইছে, যা ভারতের শুল্ক কমাতে এবং দেশটিকে উৎপাদনের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
মোদি চলতি মাসে বলেছেন, ‘বিশ্বের একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার প্রয়োজন, যারা উচ্চমানের পণ্য তৈরি করতে পারে এবং যার সরবরাহব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য। আমি চাই আমরা বিশ্বের প্রত্যাশা পূরণ করি।’
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো যখন তাদের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে, ভারত তখন নিজেদের ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তটি এখনো আসেনি। অর্থাৎ, ভারত ‘বিশ্বের কারখানা’ হয়ে উঠতে পারেনি।
এক দশক আগে যেসব কোম্পানি তাদের উৎপাদন ঘাঁটি অন্যত্র সরাতে চাইছিল তখন ভারত নিজেকে প্রধান গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছিল। বিশ্লেষকেরা ভারতের এই কৌশলকে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি এবং ভারত এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ভিয়েতনামের মতো ছোট দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি সফল।
দুই ডজনেরও বেশি ব্যবসায়িক নির্বাহী, সরকারি কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আমদানি নীতিতে কড়াকড়ি এবং নিয়মকানুনের অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে ভারতে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগে বাধা দিয়েছে।
ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, কিন্তু সত্যিটা হলো, আমরা ভিয়েতনাম নই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রচারণার জমকালো বার্তার আড়ালে আছে এক জটিল বাস্তবতা। এর মধ্যে রয়েছে হাতছাড়া হওয়া চুক্তি, আটকে থাকা বিনিয়োগ এবং কোম্পানিগুলোর চুপিসারে অন্য দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা।
তাইওয়ানের কয়েকটি সেমিকন্ডাক্টর ফার্ম ভারত পরিদর্শন করলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিনিয়োগ নিয়ে আসেনি। স্যামসাং ২০১৮ সালে বলেছিল, তাদের সবচেয়ে বড় কারখানা ভারতেই হবে। কিন্তু সেই ঘোষণার পরও কোম্পানিটি ভিয়েতনামে আরও বেশি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ভারতের সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্প অ্যাপল হলেও কোম্পানিটিও চীন থেকে সরে এসে ভারতে যাওয়ার পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
ভারতীয় বাজার বিশ্লেষক ফয়সাল কাওসা বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের একটি বড় বাজার আছে এবং আমরা মনে করি, এই ব্র্যান্ডগুলো আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু সবাই প্রতিযোগিতা করছে এবং ভিয়েতনাম অতিরিক্ত চেষ্টা করছে।’
উৎপাদনকারীরা যখন চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে, তখন দুই টেক জায়ান্ট দুই ভিন্ন পথে এগিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ১৯৯০-এর দশকে ভারতে টেলিভিশন তৈরি শুরু করলেও তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে ভারতে আসেনি। কোম্পানিটি তাদের পরবর্তী সম্প্রসারণের জন্য ভিয়েতনামে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে, অ্যাপল ভারতের দিকে মনোযোগ দেয়।
বর্তমানে স্যামসাংয়ের বেশির ভাগ স্মার্টফোন ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়। সেখানে কোম্পানিটির ৬টি কারখানায় প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে তারা চীনে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপল এখনো তাদের বেশির ভাগ ডিভাইস চীনে তৈরি করে। অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ভারতে মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন হয়, যা ২০২৪ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশের লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অ্যাপলের জগতে ১৫ শতাংশ পরিবর্তন খুব বেশি নয়। এই গতি তাদের পছন্দ নয়।’ অ্যাপল ও স্যামসাং এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অ্যাপলের ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি জানান, যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিধিনিষেধ, বিশেষ করে চীন থেকে এবং উৎপাদনের মানের কারণে কোম্পানির বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনার মধ্যে ‘বিরোধ ও হতাশা’ তৈরি হয়েছে। শ্রমিক ধর্মঘটও একটি বড় ‘বাস্তবতা পরীক্ষা’ হিসেবে কাজ করেছে।
ওই ব্যক্তি ২০২১ সালের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘অ্যাপল এ ধরনের মনোযোগ পছন্দ করে না।’ সে সময় ফক্সকন পরিচালিত তামিলনাড়ুতে অবস্থিত একটি আইফোন অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টে খাদ্যে বিষক্রিয়ার খবরের পর ২ হাজার নারী শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। ফক্সকন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
স্যামসাংয়ের তামিলনাড়ু কারখানায় গত বছর সেপ্টেম্বরের পর থেকে অন্তত তিনটি শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছে। সেখানে তারা গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে। অন্যদিকে, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র ভিয়েতনামে শ্রমিক অসন্তোষ তুলনামূলকভাবে বিরল।
একটি আন্তর্জাতিক বাজারের এক পরিচালক বলেন, ‘ভিয়েতনামে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, যা ব্যবসার জন্য আরও বেশি নিশ্চয়তা প্রদান করে।’ ওই পরিচালক আরও বলেন, ভারতের বিশাল গণতন্ত্র এবং বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা ‘অসংগতি’ তৈরি করে। তিনি আরও ‘এটা ব্যবসার জন্য যা প্রয়োজন তার ঠিক বিপরীত।’
=বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি স্বাভাবিক পরবর্তী গন্তব্য। এর বিপরীতে, ভারত ২০২০ সালে সীমান্ত সংঘাতের পর চীনা বিনিয়োগে তীব্র কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিকস শিল্পের বাজার এখন ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের, যা ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ভারতের জনসংখ্যা এবং আয়তন ভিয়েতনামের চেয়ে যথাক্রমে ১৪ এবং ১০ গুণ বেশি।
বাণিজ্যের পরিসংখ্যানও এই বৈষম্য তুলে ধরে। ভিয়েতনাম এখন আমেরিকার ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, দেশটি ২০১৪ সালে ১৫তম স্থানে ছিল। ভারত এখনো ১০ম স্থানেই আটকে আছে। গোল্ডম্যান স্যাচের চলতি বছরের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের রপ্তানি উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে সর্বনিম্ন।
ভারতের অর্থনৈতিক গতি মন্থর হওয়ায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। দেশটিতে তীব্র কর্মসংস্থান সংকট চলছে। প্রতি বছর কর্মজীবনে প্রবেশ করা ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত চাকরি তৈরি করতে পারছে না ভারত। শ্রমঘন শিল্প যা ভারতের বিকাশের জন্য জরুরি, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ পিছিয়ে থাকাটা এই সমস্যার মূল কারণ।
এমনকি ভারতের কিছু সরকারি মূল্যায়নও এই বাস্তবতা স্বীকার করেছে। ডিসেম্বরে প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চায়না প্লাস ওয়ান কৌশল বাস্তবায়নে ভারত এখনো সীমিত সাফল্য পেয়েছে।’ এতে বলা হয়েছে, কম শ্রম ব্যয়, সহজ নিয়মকানুন এবং অনুকূল করনীতির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। ভারতের প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এস কৃষ্ণান বলেন, ‘সরকার অবগত আছে যে আমরা একমাত্র গন্তব্য নই।’
২০২৩ সালের এক সংসদীয় প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ভারত ‘চীন থেকে সরে আসা ব্যবসাগুলোর মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারেনি।’ ভারতের অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগারিয়া ডিসেম্বরে এক বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের অসুবিধা মূলত নীতিগত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জমিকে অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল করে তুলেছি এবং শ্রমিক নিয়োগ অত্যন্ত কঠিন করে দিয়েছি।’
ভারত সরকার বারবার তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোকে গুজরাটে কারখানা স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছে। গুজরাট হলো মোদির নিজের রাজ্য। কিন্তু বেশির ভাগ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানেন এমন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্কের কারণে ভারত আরও তাইওয়ানের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ অনেক কোম্পানি মহামারির সময় সমীক্ষার জন্য ভারতে এসেছিল এবং লাভজনক নয় বলে আর ফিরে আসেনি।
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাওয়ারচিপ সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং করপোরেশন (পিএসএমসি) ঝুঁকি মূল্যায়নের পর ভারতের টাটা গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে তারা ভারতীয় কোম্পানিটিকে তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করতে এবং কারখানা নির্মাণে সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। ২০২৩ সালে ফক্সকন এবং ভারতীয় কোম্পানি বেদান্তের মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের একটি সেমিকন্ডাক্টর অংশীদারত্ব ভেঙে যায়।
বৈশ্বিক বাজারের এক পরিচালক বলেছেন, কোম্পানিগুলো ভারতের বাজার দেখে ‘আশাবাদী’ হয়, কিন্তু তারপর ভারতে ব্যবসা করার ‘প্রয়োজনীয় খরচ’ হিসাব করতে শুরু করে। এই দ্বিধা শুধু সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়। জাপানের চেম্বার অব কমার্স ইন ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল কেনজি সুগিনো বলেন, ভারতের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া ১০টি জাপানি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। তিনি আরও জানান, চীন থেকে ভারতে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে পেরেছে, এমন জাপানি কোম্পানির সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি।
যারা ভারতে আসেও, তাদের প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জাপানি গাড়ি কোম্পানিগুলো ফ্রিকশন-ফ্রি টায়ারের ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক নিয়ে অভিযোগ করেছে। নিয়মকানুন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ভারতীয় কাস্টমস নিপ্পন স্টিলের গুরুত্বপূর্ণ চালান কয়েক মাস আটকে রাখলে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পেছনে ইতিহাসের অনেক সতর্কবার্তা রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ভারতের এক নির্বাহী জানান, ২০১৩ সালে ওষুধ কোম্পানি ডাইচি স্যাঙ্কিও ভারত থেকে ব্যয়বহুলভাবে বেরিয়ে যায়। তারা যে ভারতীয় কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করেছিল, সেটির বিরুদ্ধে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ ডেটা জালিয়াতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানির অভিযোগ এনেছিল।
অন্যদিকে, জেনারেল মোটরস তাদের ভারতীয় কারখানা বিক্রির চেষ্টা করেছে অন্তত চার বছর ধরে। ২০২০ সালে এই কারখানা শুরু হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় বাধা ছিল নতুন ক্রেতাকে তাদের কর্মীদের ধরে রাখার নিয়ম। এই ঘটনা সম্পর্কে পরিচিত এক ব্যক্তি এ কথা জানিয়েছেন।
ভারত সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য নতুন প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিও করতে চাইছে, যা ভারতের শুল্ক কমাতে এবং দেশটিকে উৎপাদনের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
মোদি চলতি মাসে বলেছেন, ‘বিশ্বের একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার প্রয়োজন, যারা উচ্চমানের পণ্য তৈরি করতে পারে এবং যার সরবরাহব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য। আমি চাই আমরা বিশ্বের প্রত্যাশা পূরণ করি।’
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন একেবারে স্পষ্ট। চীনা পণ্যে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, আর পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং। এতে ভোক্তা, ব্যবসা এবং বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এমনকি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে।
৩৫ মিনিট আগেভারত যে পথই বেছে নিক না কেন এবং পাকিস্তান যেভাবে সাড়া দিক না কেন—প্রতিটি পদক্ষেপ ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে কাশ্মীরে ভঙ্গুর শান্তি আরও হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। একই সময়ে, ভারতকেও নিরাপত্তা ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, যার কারণে প্রথমে এই হামলা সংঘটিত হতে পেরেছে।
৫ ঘণ্টা আগেকাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর আবারও উঠে এসেছে সেই পুরোনো প্রশ্ন—এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে কি না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন। এটি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই
২১ ঘণ্টা আগেভারত চলতি মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্থগিত করেছে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে সারা বিশ্বে পণ্য রপ্তানি করতে পারত। ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিশাল পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত
২ দিন আগে