Ajker Patrika

হালাল বিনিয়োগ কী এবং এটি কেন বাড়ছে

হালাল বিনিয়োগ কী এবং এটি কেন বাড়ছে

বিশ্বব্যাপী ইসলামিক হালাল অর্থনীতির পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে হালাল অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ, ১০ বছরের মধ্যে হালাল অর্থনীতির পরিমাণ বাড়তে যাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। তা ছাড়া, ২০২১ সালেও এই অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাই হালাল অর্থনীতির পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আর এ নিয়েই প্রতিবেদন করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইসলামিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জেনারেল কাউন্সিলের গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ফান্ড মার্কেট গত এক দশকে ৩০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলার। এই পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে, বিশ্বব্যাপী হালাল বা শরিয়া সম্মত বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইসলামে বিনিয়োগ করার অনুমতি আছে। তবে সুদ নেওয়া বা দেওয়ার অনুমতি নেই। ঐতিহ্যগতভাবে এই নিয়ম বলতে অতীতে মুসলিম সঞ্চয়কারী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগের অভাবকে বোঝানো হতো।

হালাল বিনিয়োগ কী
হালাল একটি আরবি পরিভাষা, যার অর্থ অনুমোদিত। হালাল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামে যেসব শর্ত রয়েছে—

লেনদেনে ‘রিবা’ বা সুদ যুক্ত হতে পারবে না।

হারাম বা বেআইনি সম্পদ ও পণ্য যেমন—শূকরের মাংস, অ্যালকোহল বা সামরিক সরঞ্জামে বিনিয়োগ না করা।

‘ঘারার’ এর ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা যাবে না। ‘ঘারার’ বলতে বোঝায় অনিশ্চিত লেনদেন, যেখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

ইসলামিক ফাইন্যান্স কাউন্সিল ইউকে (ইউকেআইএফসি) এর পরিচালক ওমর শেখ আল জাজিরাকে বলেন, ‘হালাল বিনিয়োগ মূলত নিজ বিশ্বাসের সঙ্গে সংগতি রেখে অর্থ এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা উত্তম। সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং ধর্মের নৈতিকতার বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না হালাল বিনিয়োগ।’

ইসলামিক ফাইন্যান্স গ্রুপ ইথিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর মুন্সি বলেছেন, হালাল অর্থনীতি ও বিনিয়োগে শরিয়া সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ। হালাল ব্যবসা কোনোভাবেই সমাজ বা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। সুতরাং, শুধুমাত্র শরিয়ার সঙ্গে সম্মতি নয়, ব্যবসার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব দূর করাও হালাল বিনিয়োগের লক্ষ্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি তামাক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা শরিয়া সম্মত হতে পারে, কিন্তু এটি সমাজের জন্য ভালো নয়।

হালাল বিনিয়োগ কীভাবে কাজ করে
হালাল বিনিয়োগের একটি উদাহরণ হলো ইসলামিক ব্যবসায় অর্থায়ন, যা লাভ বণ্টন, শরিয়া সম্মত বিমা এবং সুকুক নামের একটি ইসলামি সনদ ব্যবহার করা। সুকুক মূলত একটি নতুন ইসলামি আর্থিক মডেল যা মালিকানার অংশকে বোঝায়।

বিনিয়োগকারীরা প্রচলিত বন্ড কিনে থাকে সাধারণত সুদের অর্থ পাওয়ার জন্য। সুকুক মডেলে বিনিয়োগে কোনো সুদ নেই। তবে এই মডেলে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার আংশিক মালিকানা এবং লাভের অর্থ পান। শরিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে সুদের পরিবর্তে এই অর্থ প্রদান করা হয়।

ইউআইএসসি-এর এর পরিচালক ওমর শেখ বলেন, ব্যবসায়িক খাত হিসেবে ইসলামিক ফাইন্যান্সের বয়স মাত্র ৩০ বছর। গত ১৫ বছরেই খাতটির সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে। মানুষকে এই মডেল সম্পর্কে জানানো এবং সচেতনতা তৈরি করতে সময় লেগেছে। এখন আরও বেশি ব্যাংক হালাল বিনিয়োগের চাহিদার মেটানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে। এতে আরও পণ্য তৈরি হবে যা পরবর্তীতে বাড়তি চাহিদা তৈরি করবে।

হালাল বিনিয়োগ কেন জনপ্রিয় হচ্ছে
২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত গোল্ডম্যান বাক্সের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল যে, ২০৭৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির পাঁচটি—ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং মিসরের মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ হবে ৮৫ কোটিরও বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক পণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। গবেষণা গ্রুপ দিনার স্ট্যান্ডার্ডের প্রকাশিত স্টেট অব গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি রিপোর্ট-২০২৩ অনুসারে, এক বছরে ১২৮ শতাংশ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শরিয়া সম্মত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫৯০ কোটি ডলার।

দুবাই ভিত্তিক রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম স্মার্টক্রাউড-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিক ফরিদ বলেছেন, ‘হালাল বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন অনেক বেশি শিক্ষিত এবং তাদের ডলার বিশ্বব্যাপী আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কেমন প্রভাব রাখে সে সম্পর্কে আগের চেয়ে সচেতন। তারা সতর্ক বলে বিনিয়োগও করছেন নৈতিক পথে। আর এখানেই চলে আসে হালাল বিনিয়োগ। এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে। তারা সামাজিকভাবে অনেক বেশি সচেতন। মানুষ এখন বুঝতে পারে, তাদের অর্থ কোথায় যাচ্ছে এবং কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

সুযোগ বৃদ্ধি এবং সহজলভ্যতাও হালাল বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও এর প্রভাব
গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞেও সম্প্রতি বেড়েছে হালাল বিনিয়োগ। ভোক্তারা ইসরায়েল এবং গাজার যুদ্ধকে সমর্থনকারী ব্র্যান্ডগুলো বয়কট করেছে। সিদ্দিক ফরিদ বলেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্রভাব ফেলেছে। হালাল বিনিয়োগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গত ছয় মাসে এর গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। এর মাঝে বেশির ভাগই তরুণ এবং ৪০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তি।

তিনি আরও বলেন, ‘আগে মানুষ হালাল জিনিস খুঁজতো। কোনোকিছু হারাম না হলেই তাকে ভালো বলে ধরে নেওয়া হতো। তবে এখন কেবল হালাল নয়; মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস সম্পর্কেও সচেতনতা এসেছে। পণ্য বয়কট মানুষকে এটি শিখিয়েছে যে, কোনো কিছু হালাল হলেও তা ব্যবহার, তার সঙ্গে যুক্ত হতে বা বিনিয়োগ করতে নাও চাইতে পারে মানুষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...