আজকের পত্রিকা ডেস্ক
কয়েক দশক ধরে বহু সংলাপ ও সংযমের করুণায় সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, চলে গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ এড়াতে তাঁরা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন।
কিন্তু এবার সেই লাল রেখা অতিক্রম করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার-ইন-চিফ (সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি বলেছিলেন, তিনি হবেন ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’, তিনিই এবার তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালিয়েছেন। এটা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় ও হঠকারী সিদ্ধান্ত। এই নজিরবিহীন ঘটনা বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে আরও ঐতিহাসিক। দেশটির ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (যিনি বর্তমানে রাজধানীর এক বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে) ইসলামি প্রজাতন্ত্র রক্ষার্থে চার দশক ধরে সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ধৈর্যসহকারে কৌশলগত অবস্থানে ছিলেন। এখন তিনি মার্কিন হামলার জবাবে কোমল অবস্থান নিলে জনসমর্থন হারাবেন। আর কড়া জবাব দিতে গেলে সবকিছু হারানোর আশঙ্কা থাকবে।
এই উভয়সংকটের বিষয়ে চ্যাথাম হাউস থিংকট্যাংকের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির পরবর্তী পদক্ষেপ শুধু তাঁর নিজের টিকে থাকার জন্য নয়, বরং ইতিহাসে তিনি কীভাবে স্মরণীয় হবেন, তা-ও নির্ধারণ করবে।
সানাম ভাকিল আরও বলেন, খামেনিকে সামনে যে বিষ পান করতে হবে, সেটা ১৯৮৮ সালে খোমেনির পান করা বিষের চেয়েও তীব্র। বিশ্লেষক খোমেনির বিষপান বলতে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়াকে বুঝিয়েছেন।
এই যুদ্ধ ইরান চায় না
গত ১০ দিনে ইরানের যে পরিমাণ ক্ষতি ইসরায়েল করেছে, তা আট বছরের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়ে বেশি। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ নেতারা ও গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুবিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। জাতীয় গ্যাসক্ষেত্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান ইরানের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গঠিত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা এমন জবাব দেবে, যা হবে আমরণ অনুশোচনা। তবে মুখের কঠিন কথার পেছনে রয়েছে গভীর হিসাব-নিকাশ, যাতে কোনো বড় ভুল না ঘটে।
মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষক হামিদরেজা আজিজ বলেন, এই যুদ্ধ ইরান চায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের শক্তিশালী দেশের ভাবমূর্তি ভেঙে গেছে। তাই তাদের এখন প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে।
তবে প্রতিটি প্রতিক্রিয়া হবে ঝুঁকিপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের ২০টির বেশি মার্কিন ঘাঁটি বা ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনার ওপর সরাসরি হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা বড় আঘাত হানতে পারে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে সেটা আরব মিত্রদের রাগিয়ে তুলতে পারে, চীনকেও (যারা ইরানের তেলের বড় ক্রেতা) ক্ষুব্ধ করতে পারে। পাশাপাশি পশ্চিমা নৌবাহিনীগুলো এতে জড়িয়ে পড়তে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।
এ ছাড়া ইরানের ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ হিসেবে কাজ করা আঞ্চলিক প্রক্সি বাহিনী (হিজবুল্লাহ, হুতি, সিরিয়ার মিলিশিয়া ইত্যাদি) এরই মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তাই ইরানের সামনে হালকা প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও তেমন নেই। এখন ইরান এমনভাবে জবাব দিতে চায়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র রাগ না করে, আবার নিজের মুখও বাঁচানো যায়। ২০১৯ সালে সোলাইমানিকে হত্যার পর এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ইরান পাল্টা হামলার আগেই ইরাকের সরকারি কর্মকর্তাদের গোপনে জানায়, ইরাকের নির্দিষ্ট কিছু মার্কিন বেস থেকে মার্কিন সেনারা যেন চলে যায়, কেননা সেগুলোতে ইরান হামলা চালাবে আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে। সেযাত্রায় সফল হয়েছিল ইরান। ওই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা মারা যায়নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল।
এদিকে ট্রাম্প আগে বলতেন, তিনি চুক্তি করতে চান, ইরানে বোমা ফেলতে চান না। এখন তিনি পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। তিনি ইরানকে বলছেন ‘মধ্যপ্রাচ্যের মাস্তান’, যারা পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়। যদিও আগের মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে এমন কিছু বলা হয়নি।
পেন্টাগন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বি-২ বোমারু বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ইস্পাহান ও ফোরদো ‘চরমভাবে ধ্বংস’ হয়েছে। বিশেষ ধরনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ছাড়া পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ফোরদোতে আঘাত করা সম্ভব ছিল না।
এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, ইরান শান্তির পথে ফিরুক। আলোচনায় বসুক। কিন্তু ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘কূটনৈতিক প্রস্তাব’ ছিল এক মহাপ্রতারণা। তাদের দাবি, আলোচনা চলার সময়েই ইসরায়েল হামলা চালায় (ষষ্ঠ রাউন্ডের ঠিক দুই দিন আগে)।
আর ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করবে কি না, তার জন্য ‘দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হবে’। কিন্তু দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়নি, তার আগেই হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইরান এখন বলছে, যতক্ষণ বোমা পড়ছে, ততক্ষণ কোনো আলোচনায় ফিরবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কূটনীতি ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নয়। এ ছাড়া তিনি ওআইসির সম্মেলনে ৫৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে ‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের’ নিন্দা ও এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আইএইএর সতর্কতার বিরুদ্ধে গেছে। (আইএইএ আগেই বলেছে, পারমাণবিক স্থাপনায় কখনোই হামলা চালানো উচিত নয়।)
ইউরোপীয় নেতারা এখন দ্রুত যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় ফিরতে বলছেন। তবে তাঁরা বলছেন, ইরান যেন পারমাণবিক বোমা বানাতে না পারে। তাঁরা মনে করছেন, ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের অসৎ উদ্দেশ্যের পরিচায়ক। কেননা ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়েই দুনিয়াবিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র বানানো সম্ভব।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ডেপুটি ডিরেক্টর এলি জেরানমায়েহ বলেন, ইরান হয়তো বলবে, হামলায় তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বলবে, তারা অনেক বড় ক্ষতি করেছে; যাতে ট্রাম্প একতরফা বিজয়ের ঘোষণা দিতে পারে।
ট্রাম্পও একেবারে গায়ে হাওয়া লাগানো অবস্থায় নেই। তাঁর ওপর চাপ আছে দুই দিক থেকে। ইসরায়েলি নেতারা চাচ্ছেন আরও বড় হামলা হোক। আর সিনেটররা বলছেন, তিনি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ শুরু করেছেন।
এই মুহূর্ত ইরানের কট্টরপন্থীরা ভাবছেন, কীভাবে প্রতিশোধ নিয়ে আবার শক্তি ফিরে পাওয়া যায়, নিজেরা ঝুঁকিতে না পড়েই।
জেরানমায়েহ বলেন, ট্রাম্প চেয়েছিলেন ইরানের পারমাণবিক হুমকি শেষ করতে, কিন্তু এখন তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যেখানে ইরানের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আবদুল বাছেদ
কয়েক দশক ধরে বহু সংলাপ ও সংযমের করুণায় সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, চলে গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ এড়াতে তাঁরা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন।
কিন্তু এবার সেই লাল রেখা অতিক্রম করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার-ইন-চিফ (সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি বলেছিলেন, তিনি হবেন ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’, তিনিই এবার তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালিয়েছেন। এটা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় ও হঠকারী সিদ্ধান্ত। এই নজিরবিহীন ঘটনা বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে আরও ঐতিহাসিক। দেশটির ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (যিনি বর্তমানে রাজধানীর এক বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে) ইসলামি প্রজাতন্ত্র রক্ষার্থে চার দশক ধরে সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ধৈর্যসহকারে কৌশলগত অবস্থানে ছিলেন। এখন তিনি মার্কিন হামলার জবাবে কোমল অবস্থান নিলে জনসমর্থন হারাবেন। আর কড়া জবাব দিতে গেলে সবকিছু হারানোর আশঙ্কা থাকবে।
এই উভয়সংকটের বিষয়ে চ্যাথাম হাউস থিংকট্যাংকের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির পরবর্তী পদক্ষেপ শুধু তাঁর নিজের টিকে থাকার জন্য নয়, বরং ইতিহাসে তিনি কীভাবে স্মরণীয় হবেন, তা-ও নির্ধারণ করবে।
সানাম ভাকিল আরও বলেন, খামেনিকে সামনে যে বিষ পান করতে হবে, সেটা ১৯৮৮ সালে খোমেনির পান করা বিষের চেয়েও তীব্র। বিশ্লেষক খোমেনির বিষপান বলতে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়াকে বুঝিয়েছেন।
এই যুদ্ধ ইরান চায় না
গত ১০ দিনে ইরানের যে পরিমাণ ক্ষতি ইসরায়েল করেছে, তা আট বছরের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়ে বেশি। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ নেতারা ও গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুবিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। জাতীয় গ্যাসক্ষেত্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান ইরানের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গঠিত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা এমন জবাব দেবে, যা হবে আমরণ অনুশোচনা। তবে মুখের কঠিন কথার পেছনে রয়েছে গভীর হিসাব-নিকাশ, যাতে কোনো বড় ভুল না ঘটে।
মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষক হামিদরেজা আজিজ বলেন, এই যুদ্ধ ইরান চায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের শক্তিশালী দেশের ভাবমূর্তি ভেঙে গেছে। তাই তাদের এখন প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে।
তবে প্রতিটি প্রতিক্রিয়া হবে ঝুঁকিপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের ২০টির বেশি মার্কিন ঘাঁটি বা ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনার ওপর সরাসরি হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা বড় আঘাত হানতে পারে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে সেটা আরব মিত্রদের রাগিয়ে তুলতে পারে, চীনকেও (যারা ইরানের তেলের বড় ক্রেতা) ক্ষুব্ধ করতে পারে। পাশাপাশি পশ্চিমা নৌবাহিনীগুলো এতে জড়িয়ে পড়তে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।
এ ছাড়া ইরানের ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ হিসেবে কাজ করা আঞ্চলিক প্রক্সি বাহিনী (হিজবুল্লাহ, হুতি, সিরিয়ার মিলিশিয়া ইত্যাদি) এরই মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তাই ইরানের সামনে হালকা প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও তেমন নেই। এখন ইরান এমনভাবে জবাব দিতে চায়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র রাগ না করে, আবার নিজের মুখও বাঁচানো যায়। ২০১৯ সালে সোলাইমানিকে হত্যার পর এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ইরান পাল্টা হামলার আগেই ইরাকের সরকারি কর্মকর্তাদের গোপনে জানায়, ইরাকের নির্দিষ্ট কিছু মার্কিন বেস থেকে মার্কিন সেনারা যেন চলে যায়, কেননা সেগুলোতে ইরান হামলা চালাবে আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে। সেযাত্রায় সফল হয়েছিল ইরান। ওই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা মারা যায়নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল।
এদিকে ট্রাম্প আগে বলতেন, তিনি চুক্তি করতে চান, ইরানে বোমা ফেলতে চান না। এখন তিনি পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। তিনি ইরানকে বলছেন ‘মধ্যপ্রাচ্যের মাস্তান’, যারা পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়। যদিও আগের মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে এমন কিছু বলা হয়নি।
পেন্টাগন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বি-২ বোমারু বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ইস্পাহান ও ফোরদো ‘চরমভাবে ধ্বংস’ হয়েছে। বিশেষ ধরনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ছাড়া পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ফোরদোতে আঘাত করা সম্ভব ছিল না।
এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, ইরান শান্তির পথে ফিরুক। আলোচনায় বসুক। কিন্তু ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘কূটনৈতিক প্রস্তাব’ ছিল এক মহাপ্রতারণা। তাদের দাবি, আলোচনা চলার সময়েই ইসরায়েল হামলা চালায় (ষষ্ঠ রাউন্ডের ঠিক দুই দিন আগে)।
আর ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করবে কি না, তার জন্য ‘দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হবে’। কিন্তু দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়নি, তার আগেই হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইরান এখন বলছে, যতক্ষণ বোমা পড়ছে, ততক্ষণ কোনো আলোচনায় ফিরবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কূটনীতি ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নয়। এ ছাড়া তিনি ওআইসির সম্মেলনে ৫৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে ‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের’ নিন্দা ও এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আইএইএর সতর্কতার বিরুদ্ধে গেছে। (আইএইএ আগেই বলেছে, পারমাণবিক স্থাপনায় কখনোই হামলা চালানো উচিত নয়।)
ইউরোপীয় নেতারা এখন দ্রুত যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় ফিরতে বলছেন। তবে তাঁরা বলছেন, ইরান যেন পারমাণবিক বোমা বানাতে না পারে। তাঁরা মনে করছেন, ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের অসৎ উদ্দেশ্যের পরিচায়ক। কেননা ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়েই দুনিয়াবিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র বানানো সম্ভব।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ডেপুটি ডিরেক্টর এলি জেরানমায়েহ বলেন, ইরান হয়তো বলবে, হামলায় তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বলবে, তারা অনেক বড় ক্ষতি করেছে; যাতে ট্রাম্প একতরফা বিজয়ের ঘোষণা দিতে পারে।
ট্রাম্পও একেবারে গায়ে হাওয়া লাগানো অবস্থায় নেই। তাঁর ওপর চাপ আছে দুই দিক থেকে। ইসরায়েলি নেতারা চাচ্ছেন আরও বড় হামলা হোক। আর সিনেটররা বলছেন, তিনি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ শুরু করেছেন।
এই মুহূর্ত ইরানের কট্টরপন্থীরা ভাবছেন, কীভাবে প্রতিশোধ নিয়ে আবার শক্তি ফিরে পাওয়া যায়, নিজেরা ঝুঁকিতে না পড়েই।
জেরানমায়েহ বলেন, ট্রাম্প চেয়েছিলেন ইরানের পারমাণবিক হুমকি শেষ করতে, কিন্তু এখন তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যেখানে ইরানের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আবদুল বাছেদ
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৪১ মিনিট আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৩ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগে