বুদ্ধির অভাবে হারছেন ইমরান

একজন বিবাহিত পুরুষকে সবচেয়ে ভালো বোঝার কথা তাঁর স্ত্রীর। সেই স্ত্রী যদি বলেন, তাঁর স্বামীর সবই আছে শুধু বুদ্ধি নেই। তাহলে সেই পুরুষের বুদ্ধি আর বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতেই পারে। দেখা দেবে আস্থার সংকট।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ইমরানের ক্ষেত্রেও এটা হয়তো প্রযোজ্য। যদিও তাঁর বর্তমান স্ত্রী নয়, সাবেক স্ত্রী রেহাম খান তাঁকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। দুই দিন আগে এক টুইটে রেহাম বলেন, বুদ্ধি ছাড়া এই লোকটার সবই আছে। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখন পাকিস্তান অনেক ভালো ছিল।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। খেলার মাঠের নেতৃত্ব দিয়ে দলকে অসংখ্যবার জিতিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দারুণ শুরুর পরও তিনি মনে হচ্ছে হেরে যেতে বসেছেন। বিরোধীদের উত্থাপিত অনাস্থা ভোটের প্রস্তাবে জাতীয় পরিষদে (এনএ) ভোটাভুটি হবে আজ রোববার।

পাকিস্তানের জিও নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দেশটির জাতীয় পরিষদের মোট সদস্যসংখ্যা ৩৪২। প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ১৭২ জনের সম্মতি দরকার। ১৯৯ জন ইতিমধ্যে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এই খবর ঠিক হলে বলাই যেতে পারে, ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। হেরে বসে আছেন তিনি।

নিরাপত্তা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বে দেশটিতে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু অর্থনীতি ও নিরাপত্তা—কোনোটাতেই সফলতা দেখাতে পারেননি তিনি। উল্টো বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে খোদ ইমরান খানকে প্রকাশ্যে খেদ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

গত মাসের শুরুর দিকে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনে বিরোধী জোট। গত এক মাস এ নিয়ে উত্তপ্ত দেশটির রাজনীতি। অনাস্থা ভোটের দাবি জোরদার হতে থাকে। পিটিআইয়ের কয়েকজন সদস্য বিরোধীদের সঙ্গে হাতও মেলান এর মধ্যে। গত বুধবার জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ‘মুত্তাহিদা কাওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)’ অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে সেদিনই জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় পিটিআই সরকার।

একই দিন একটি গোপন চিঠির কথা জানান ইমরান খান। গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক জনসভায় সেই চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করেন তিনি। জনসভায় ইমরান খান বলেন, একটি দেশ পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধীদের উসকানি দিচ্ছে। দেশটির নাম শুরুতে না বললেও একপর্যায়ে মুখ ফসকে বলে ফেলেন, যুক্তরাষ্ট্র পিটিআই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করছে। অবশ্য এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

কূটনৈতিক এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার জন্যই ইমরানকে বোকা বলেন সাবেক স্ত্রী রেহাম। এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি দেখছেন তিনি।

গত শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে ইমরান বলেন, স্টাবলিস্টমেন্ট (সেনাবাহিনী) তাঁকে তিনটি অপশন দিয়েছে। এক. অনাস্থা ভোটে যাওয়া। দুই. অনাস্থা ভোটের আগে পদত্যাগ করা। তিন. নির্দিষ্ট সময়ের আগে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। আমি আগে নির্বাচন দেওয়ার অপশনটি বেছে নিয়েছি। কিন্তু তাঁর এমন দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

একই দিন অনাস্থা ভোটে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছিল পিটিআই। গতকাল শনিবার সেই সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়েছে। তরুণ ও সমর্থকদের রাস্তায় মিছিল করতে আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, ১৪২ জন সাংসদ ইমরান খানের পক্ষে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর ক্ষমতাচ্যুতি ঠেকানোর কোনো উপায় নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে দেশটির শক্তিশালী সংবাদপত্র দ্য ডনের এক অনলাইন সংস্করণের সম্পাদকীয়তে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। আজ অনাস্থা ভোটে হেরে গেলে ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও সেই একই ভাগ্য বরণ করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, সেনাবাহিনীকে চটিয়ে কোনো সরকার পাকিস্তানে টিকতে পারে না। ইমরান খানের ব্যাপারেও এই একই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। যদিও বলা হয়, সেনাবাহিনীই কোলে তুলে এনে ক্ষমতায় বসিয়েছে।