গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আফ্রিকার সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ নাইজেরিয়া। সম্প্রতি দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন অল প্রগ্রেসিভস কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী বোলা টিনুবু মোট ভোটের ৩৭ শতাংশ পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) আতিকু আবুবাকার পেয়েছেন ২৯ শতাংশ, লেবার পার্টির পিটার ওবি পেয়েছেন ২৫ শতাংশ ভোট।
বিবিসির তথ্যমতে, ফলাফল প্রকাশের আগেই বিরোধী সব দল এই নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ তোলেন। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সব দল ভোটগ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
ফলাফর ঘোষণার পর এক ভাষণে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বলেছেন, ‘নির্বাচনে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে, কিন্তু তা নির্বাচনের ফল পরিবর্তন হওয়ার মতো যতেষ্ট নয়। আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, আসুন একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোলা টিনুবুকে নাইজেরিয়ায় রাজনৈতিক ‘গডফাদার’ বলা হয়। নাইজেরিয়ার ধনী রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাসের কথা তিনি প্রকাশ্যেই বলে আসতেন। দেশটির লাগোস রাজ্যের দুবারের গভর্নর টিনুবু। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে কাজ করেছেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তাঁর স্লোগান ছিল, ‘এবার আমার পালা’।
এই নির্বাচনকে এখনও মেনে নেয়নি বিরোধীরা ও অধিকাংশ জনগণ। দেশটিতে ভোটার সংখ্যা ৮ কোটির বেশি। ভোট দিয়েছেন মাত্র আড়াই কোটির মতো। তবে নাইজেরিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (আইএনইসি) চেয়ারম্যান মাহমুদ ইয়াকুবু বলেছেন, প্রার্থী টিনুবু প্রায় ৮৮ লাখ ভোট পেয়ে নাইজেরিয়ার গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জনসাধারণের মধ্যে হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আবুজার বাসিন্দা অগাস্টিন আমেহ নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সত্যিই উত্তেজিত নই । কারণ অনেক নাইজেরীয় ভোট দিতে পারেনি।’
অগাস্টিন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি নাইজেরিয়ার নয়, বরং গুটিকয়েক বাছাইকৃত মানুষের একটি জয়।’
নির্বাচনে টিনুবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির আতিকু আবুবকর জনি ৬৯ লাখ ভোট পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের এমন ফলাফল ঘোষণাকে ‘গণতন্ত্রকে ধর্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
বর্তমানে দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বে ইসলামি জঙ্গিরা বেশ সক্রিয়, দক্ষিণ-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা ও অপহরণকাণ্ডও নাগরিকদের ভোগাচ্ছে।
এছাড়া নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটিতে নতুন নকশার মুদ্রা চালু করার এক প্রচেষ্টার কারণে নগদ অর্থের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই সব কিছু বিবেচনা করে অনেকেই ভেবেছিল এই নির্বাচন হবে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণভোট। কিন্তু দিন শেষে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। আর এই নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে তা নাইজেরিয়ার নির্বাচন ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
বর্তমানে নাইজেরিয়ার বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলো— নতুন মুদ্রা চালু করা, ধসে পড়া অর্থনীতি সামাল দেওয়া, তরুণদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব মোকাবিলা, এবং নিরাপত্তা সংকট কঠোর হাতে প্রতিহত করা।
দেশটির নাগরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেছিলেন, এবারের নির্বাচনে ভালো করবেন লেবার পার্টির পিটার ওবি। কারণ এবারের নির্বাচনে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ চোখে পড়েছে। দেশটিতে ভোটদানের যোগ্যতাসম্পন্ন জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই তরুণ। যারা ওবিকে পছন্দ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন যে, দেশটিতে টানা ২৪ বছর হলো দুটি প্রধান দলের যে আধিপত্য সেটা ভাঙতে সক্ষম হবেন পিটার ওবি। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠির মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা দেখেই এই ধারণা করেছিলেন সবাই।
দেশটির রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক প্যাট উটোমি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ১০টি রাজ্যের ভোট পর্যালোচনা করতে বলেন। রাজ্যগুলো হলো— লাগোস, রিভার, ইমো, বেনু, নাসারাওয়া, প্লেটেউ, কাদুনা, কাতসিনা, আদামাওয়া এবং আকওয়া ইবোম।
প্যাট বলেন, ‘আমি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন নির্বাচন সম্পর্কে খারাপ কিছু না শেখে সেটার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমি ২৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানাই। আগামী ১১ মার্চ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আয়োজন করা হোক।’
নাইজেরিয়ার ভোটার সংখ্যা ৮ কোটি ৭০ লাখের মতো। কিন্তু ভোট পড়েছে মাত্র আড়াই কোটি। তাহলে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা কথা বলেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষক বলেছেন, নির্বাচন প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বচ্ছ হয়নি। অনিয়ম, জালিয়াতি ছিল।
যে কেন্দ্রগুলো বিরোধী প্রার্থীদের ঘাঁটি বা বিরোধীরা জিততে পারে এমন সম্ভাবনা ছিল সেসব কেন্দ্রে অনিয়ম বেশি হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছেছেন। আবার অনেক কেন্দ্রে আগেই ভোট বন্ধ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় ভোটের মেশিনে সমস্যা দেখা গেছে জানিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোটারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে ভোট দিতে পারেনি বহু মানুষ।
যারা প্রথমবারের ভোটার তাঁরা খুব উৎসাহী ছিলেন। তাঁরা ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে এসে অপেক্ষা করেন। কিন্তু কেন্দ্রে ভোটের সামগ্রী ও কর্মকর্তারা না আসায় ভোট দিতে পারেননি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাঁরা বাড়ি ফিরে গেছেন।
রাজধানী আবুজা বিমানবন্দরের পাশে একটি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসা এক ভোটার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি সকাল ৮ টায় কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু ১১টায়ও কোনো কর্মকর্তা ও সরঞ্জাম এসে পৌঁছায়নি।’
দক্ষিণের শহর লাগোসে ওবির সমর্থক বেশি, সেখানে তরুণ ও শিক্ষিত ভোটার বেশি ছিল। সেই কেন্দ্রে অনেক সকালে ভোটারেরা এসেছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো কর্মকর্তা না আসায় তাঁরা বাড়ি ফিরে গেছেন।
হাজার হাজার ভোটার বলেছেন, তাঁরা বেলা ১টা পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। নির্ধারিত শেষ সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে সময়ও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় ও নিরাপত্তার শঙ্কায় ভোটারেরা আগেই ফিরে গেছেন।
এছাড়া, বিরোধীরা শক্তিশালী এমন কিছু কেন্দ্রে একেবারেই ভোট না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণের রাজ্য যেমন— রিভার, লাগোস এবং ডেল্টাতে ব্যালট ছিনতাই , সহিংসতা ও ভোটারদের ভয় দেখানোর ঘটনা ঘটেছে।
অবশ্য ভোটগ্রহণে দেরির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহমুদ ইয়াকুবু দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্যালট ছিনতাইয়ের কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণের রাজ্য ডেলটা এবং উত্তরের কাটসিনা রাজ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কিছু ভোটদান কেন্দ্রে ঢুকে ভোটার পরিচয়পত্র যাচাই করার যন্ত্রপাতি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
এনডিআই, আইআরআই এবং ইইউ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনগুলো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
ইলেকশন মনিটরিং গ্রুপ ইয়াগা বলেছে, শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৭ শতাংশ, যার মধ্যে টিনুবু পেয়েছেন ৮৮ লাখ, যা নিবন্ধিত ভোটের মাত্র ১০ শতাংশেরও কম।
ভোটের সংখ্যা কমের পেছনে ভোটারদের উদাসীনতা রয়েছে এমন বিষয় মনে করা হচ্ছে না। কারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন।
এছাড়া ভোটের পরিমাণ কমার আরও একটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকেরা। সেটি হলো—সাম্প্রতিক নগদ অর্থ সঙ্কট। দেশের কিছু জায়গায় জ্বালানি সংকটও রয়েছে। যার ফলে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে পিটার ওবি ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিতেছি এবং আমরা এটা প্রমাণ করব।’
এই নির্বাচন একটি অবাধ, স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশিত ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করেন পিটার ওবি। তিনি বলেন, এটি নাইজেরিয়ায় নির্বাচন ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর একটি।
আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ওবি বলেন, ‘আমি জানি, আদালত সঠিক কাজ করবেন। এখানে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জড়িত।’
অবশ্য নির্বাচন নিয়ে ওবির আইনি লড়াই এবারই প্রথম নয়। ২০০৭ সালে রাজ্য পার্লামেন্টে অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে গিয়ে পদ ফিরে পান।
এ ছাড়া গভর্নেটরিয়াল নির্বাচনে তাঁকে পরাজিত ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরে আদালতে গেলে তাঁকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এবার জাতীয় নির্বাচনেও ওবিকে পরাজিত ঘোষণা কররা হয়েছে। ওবি বলছেন, জিতলেও তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। আর তিনি এটা প্রমাণ করবেন। ফলে নাইজেরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন আদালতে হাতে।
আফ্রিকার সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ নাইজেরিয়া। সম্প্রতি দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন অল প্রগ্রেসিভস কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী বোলা টিনুবু মোট ভোটের ৩৭ শতাংশ পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) আতিকু আবুবাকার পেয়েছেন ২৯ শতাংশ, লেবার পার্টির পিটার ওবি পেয়েছেন ২৫ শতাংশ ভোট।
বিবিসির তথ্যমতে, ফলাফল প্রকাশের আগেই বিরোধী সব দল এই নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ তোলেন। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সব দল ভোটগ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
ফলাফর ঘোষণার পর এক ভাষণে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বলেছেন, ‘নির্বাচনে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে, কিন্তু তা নির্বাচনের ফল পরিবর্তন হওয়ার মতো যতেষ্ট নয়। আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, আসুন একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোলা টিনুবুকে নাইজেরিয়ায় রাজনৈতিক ‘গডফাদার’ বলা হয়। নাইজেরিয়ার ধনী রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাসের কথা তিনি প্রকাশ্যেই বলে আসতেন। দেশটির লাগোস রাজ্যের দুবারের গভর্নর টিনুবু। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে কাজ করেছেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তাঁর স্লোগান ছিল, ‘এবার আমার পালা’।
এই নির্বাচনকে এখনও মেনে নেয়নি বিরোধীরা ও অধিকাংশ জনগণ। দেশটিতে ভোটার সংখ্যা ৮ কোটির বেশি। ভোট দিয়েছেন মাত্র আড়াই কোটির মতো। তবে নাইজেরিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (আইএনইসি) চেয়ারম্যান মাহমুদ ইয়াকুবু বলেছেন, প্রার্থী টিনুবু প্রায় ৮৮ লাখ ভোট পেয়ে নাইজেরিয়ার গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জনসাধারণের মধ্যে হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আবুজার বাসিন্দা অগাস্টিন আমেহ নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সত্যিই উত্তেজিত নই । কারণ অনেক নাইজেরীয় ভোট দিতে পারেনি।’
অগাস্টিন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি নাইজেরিয়ার নয়, বরং গুটিকয়েক বাছাইকৃত মানুষের একটি জয়।’
নির্বাচনে টিনুবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির আতিকু আবুবকর জনি ৬৯ লাখ ভোট পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের এমন ফলাফল ঘোষণাকে ‘গণতন্ত্রকে ধর্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
বর্তমানে দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বে ইসলামি জঙ্গিরা বেশ সক্রিয়, দক্ষিণ-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা ও অপহরণকাণ্ডও নাগরিকদের ভোগাচ্ছে।
এছাড়া নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটিতে নতুন নকশার মুদ্রা চালু করার এক প্রচেষ্টার কারণে নগদ অর্থের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই সব কিছু বিবেচনা করে অনেকেই ভেবেছিল এই নির্বাচন হবে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণভোট। কিন্তু দিন শেষে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। আর এই নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে তা নাইজেরিয়ার নির্বাচন ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
বর্তমানে নাইজেরিয়ার বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলো— নতুন মুদ্রা চালু করা, ধসে পড়া অর্থনীতি সামাল দেওয়া, তরুণদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব মোকাবিলা, এবং নিরাপত্তা সংকট কঠোর হাতে প্রতিহত করা।
দেশটির নাগরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেছিলেন, এবারের নির্বাচনে ভালো করবেন লেবার পার্টির পিটার ওবি। কারণ এবারের নির্বাচনে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ চোখে পড়েছে। দেশটিতে ভোটদানের যোগ্যতাসম্পন্ন জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই তরুণ। যারা ওবিকে পছন্দ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন যে, দেশটিতে টানা ২৪ বছর হলো দুটি প্রধান দলের যে আধিপত্য সেটা ভাঙতে সক্ষম হবেন পিটার ওবি। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠির মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা দেখেই এই ধারণা করেছিলেন সবাই।
দেশটির রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক প্যাট উটোমি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ১০টি রাজ্যের ভোট পর্যালোচনা করতে বলেন। রাজ্যগুলো হলো— লাগোস, রিভার, ইমো, বেনু, নাসারাওয়া, প্লেটেউ, কাদুনা, কাতসিনা, আদামাওয়া এবং আকওয়া ইবোম।
প্যাট বলেন, ‘আমি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন নির্বাচন সম্পর্কে খারাপ কিছু না শেখে সেটার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমি ২৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানাই। আগামী ১১ মার্চ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আয়োজন করা হোক।’
নাইজেরিয়ার ভোটার সংখ্যা ৮ কোটি ৭০ লাখের মতো। কিন্তু ভোট পড়েছে মাত্র আড়াই কোটি। তাহলে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা কথা বলেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষক বলেছেন, নির্বাচন প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বচ্ছ হয়নি। অনিয়ম, জালিয়াতি ছিল।
যে কেন্দ্রগুলো বিরোধী প্রার্থীদের ঘাঁটি বা বিরোধীরা জিততে পারে এমন সম্ভাবনা ছিল সেসব কেন্দ্রে অনিয়ম বেশি হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছেছেন। আবার অনেক কেন্দ্রে আগেই ভোট বন্ধ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় ভোটের মেশিনে সমস্যা দেখা গেছে জানিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোটারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে ভোট দিতে পারেনি বহু মানুষ।
যারা প্রথমবারের ভোটার তাঁরা খুব উৎসাহী ছিলেন। তাঁরা ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে এসে অপেক্ষা করেন। কিন্তু কেন্দ্রে ভোটের সামগ্রী ও কর্মকর্তারা না আসায় ভোট দিতে পারেননি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাঁরা বাড়ি ফিরে গেছেন।
রাজধানী আবুজা বিমানবন্দরের পাশে একটি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসা এক ভোটার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি সকাল ৮ টায় কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু ১১টায়ও কোনো কর্মকর্তা ও সরঞ্জাম এসে পৌঁছায়নি।’
দক্ষিণের শহর লাগোসে ওবির সমর্থক বেশি, সেখানে তরুণ ও শিক্ষিত ভোটার বেশি ছিল। সেই কেন্দ্রে অনেক সকালে ভোটারেরা এসেছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো কর্মকর্তা না আসায় তাঁরা বাড়ি ফিরে গেছেন।
হাজার হাজার ভোটার বলেছেন, তাঁরা বেলা ১টা পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। নির্ধারিত শেষ সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে সময়ও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় ও নিরাপত্তার শঙ্কায় ভোটারেরা আগেই ফিরে গেছেন।
এছাড়া, বিরোধীরা শক্তিশালী এমন কিছু কেন্দ্রে একেবারেই ভোট না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণের রাজ্য যেমন— রিভার, লাগোস এবং ডেল্টাতে ব্যালট ছিনতাই , সহিংসতা ও ভোটারদের ভয় দেখানোর ঘটনা ঘটেছে।
অবশ্য ভোটগ্রহণে দেরির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহমুদ ইয়াকুবু দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্যালট ছিনতাইয়ের কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণের রাজ্য ডেলটা এবং উত্তরের কাটসিনা রাজ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কিছু ভোটদান কেন্দ্রে ঢুকে ভোটার পরিচয়পত্র যাচাই করার যন্ত্রপাতি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
এনডিআই, আইআরআই এবং ইইউ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনগুলো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
ইলেকশন মনিটরিং গ্রুপ ইয়াগা বলেছে, শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৭ শতাংশ, যার মধ্যে টিনুবু পেয়েছেন ৮৮ লাখ, যা নিবন্ধিত ভোটের মাত্র ১০ শতাংশেরও কম।
ভোটের সংখ্যা কমের পেছনে ভোটারদের উদাসীনতা রয়েছে এমন বিষয় মনে করা হচ্ছে না। কারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন।
এছাড়া ভোটের পরিমাণ কমার আরও একটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকেরা। সেটি হলো—সাম্প্রতিক নগদ অর্থ সঙ্কট। দেশের কিছু জায়গায় জ্বালানি সংকটও রয়েছে। যার ফলে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে পিটার ওবি ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিতেছি এবং আমরা এটা প্রমাণ করব।’
এই নির্বাচন একটি অবাধ, স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশিত ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করেন পিটার ওবি। তিনি বলেন, এটি নাইজেরিয়ায় নির্বাচন ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর একটি।
আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ওবি বলেন, ‘আমি জানি, আদালত সঠিক কাজ করবেন। এখানে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জড়িত।’
অবশ্য নির্বাচন নিয়ে ওবির আইনি লড়াই এবারই প্রথম নয়। ২০০৭ সালে রাজ্য পার্লামেন্টে অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে গিয়ে পদ ফিরে পান।
এ ছাড়া গভর্নেটরিয়াল নির্বাচনে তাঁকে পরাজিত ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরে আদালতে গেলে তাঁকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এবার জাতীয় নির্বাচনেও ওবিকে পরাজিত ঘোষণা কররা হয়েছে। ওবি বলছেন, জিতলেও তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। আর তিনি এটা প্রমাণ করবেন। ফলে নাইজেরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন আদালতে হাতে।
সম্প্রতি বিশ্ব কি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে? যদি এমনটা মনে হয়, তবে আপনার ধারণা ভুল নয়। বাস্তবিকই বিশ্বে সংঘাতের সংখ্যা বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইসরায়েল-গাজা ও সুদান। এসব সংঘাতের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো পুরুষেরাই চালাচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ক্ষমতাধর পুরুষদের
১০ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং এই বিষয়টি ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ তথা জলে–স্থলে–অন্তরিক্ষে আমেরিকার একক প্রভাবের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।
২০ ঘণ্টা আগেবিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শাসন—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে আবার ফিরে এসেছে এই প্রক্রিয়া। আগের দিন কানাডা-মেক্সিকোর ওপর কঠোর শুল্ক চাপিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুললেন ট্রাম্প। পরদিনই স্বীকার করলেন, এই শুল্ক আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে ধ্বংস করতে পারে। পরে, সেই শঙ্কা থেকে অটোমোবাইল
৩ দিন আগেভারতের মূল লক্ষ্য দেশীয় স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করা, যেখানে এরই মধ্যেই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কেবল জরুরি হুমকি দেখা দিলেই বিদেশি স্টেলথ জেট কেনার চিন্তা করা হবে। অতএব, স্বল্পমেয়াদে জরুরি ক্রয় হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের লক্ষ্য পরিষ্কার—নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান...
৪ দিন আগে