Ajker Patrika

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠালে ভারতের কী লাভ-ক্ষতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১০
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ছবি: বাসস
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ছবি: বাসস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।

গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।

ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’

কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।

এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’

অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।

হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।

তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।

গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’

তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’

ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।

‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’

তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।

তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।

সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।

হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী

বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।

ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।

ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।

ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’

পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।

তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।

কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ