আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের অনুভূতি হয়ে ধরা দিল।
গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে সীমার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিহত হন। দীর্ঘ তদন্ত ও কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
ঢাকা থেকে সীমা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভাবতেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবে না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড আমাদের শহীদদের প্রতি ন্যায়বিচারের পথে একটি পদক্ষেপ।’ তবে সীমা যোগ করেন, শুধু রায় ঘোষণা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তাঁকে ঢাকাতেই ফাঁসি দেওয়া হোক!’
কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তিনি দিল্লিতে নির্বাসনে, গারদের বাইরে বহু দূরে। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকার পরও গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের বারবার আনুষ্ঠানিক অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থানই দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনার উৎস। এখন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, তবুও বহু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে—মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দিল্লি কল্পনাও করতে পারছে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিল্লি কীভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে!’
অত্যন্ত অমিত্রসুলভ পদক্ষেপ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা মেনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার জিতে ক্ষমতায় বসেন। এরপর টানা ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। এ দীর্ঘ সময় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় সব বিরোধী দল হয় বর্জন করেছে, নয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। কঠোর দমননীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছিল। হাজারো মানুষ গুম হয়েছে। অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন ছিল নিয়মিত, আর বিরোধীদের অনেককে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়েছিল।
হাসিনা তাঁর শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বারবার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সরকারি অনেক পরিসংখ্যানই অস্বাভাবিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা-বাহিনীর ভয়াবহ দমন-পীড়নের পর তা হাসিনাকে অপসারণের গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা হাসিনাকে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের দাবি করায় সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির প্রতি চাপ আরও বাড়ায়। মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সঙ্গে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার অধীনে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিশ্চিত করা নয়াদিল্লির ‘অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব’। মন্ত্রণালয় আরও বলে, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবহেলা।’
তবে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্পষ্ট একটি ব্যতিক্রম আছে। কারণ, অভিযোগের প্রকৃতি ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে এই চুক্তি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়। নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” হিসেবে দেখছে।’
ভরদ্বাজের ভাষায়, ভারতের দৃষ্টিতে বর্তমান বাংলাদেশ ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ শাসনের অধীন। ড. ইউনূস প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেন, আর হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও প্রায়ই অভিযোগ করেছেন যে—নয়াদিল্লি আগের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে হবে, ভারতের তরফ থেকে এই বিরোধিতার বৈধতা দেওয়া’—বলে মনে করেন ভরদ্বাজ।
‘ভারতকে সমীকরণ বদলাতে হবে’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ‘খেয়াল করেছে’ এবং নয়াদিল্লি ‘সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে চায়।’ ভারত জানিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই স্বার্থ শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই নিহিত।’
তবুও আজকের দিনে নয়াদিল্লি–ঢাকা সম্পর্ক শীতল ও অবিশ্বাসে পূর্ণ। হাসিনা আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল, তা এখন আস্থাহীনতার ছায়ায় মলিন। ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই দৃশ্য দ্রুত বদলাবে বলে তিনি মনে করেন না।
তাঁর ভাষায়, ‘এই সরকার (ঢাকায়) থাকলে সম্পর্ক টানটানই থাকবে। কারণ তারা তো বলতেই থাকবে যে, ভারত আমাদের হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’ তবে তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলতে পারে। যদিও হাসিনার আওয়ামী লীগের নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ নেই, আর অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বেশির ভাগই—সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ—নয়াদিল্লির সমালোচক, তবুও নির্বাচিত সরকার থাকলে ভারতের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। ঢাকায় একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের দরকার। ভারত অপেক্ষা করবে, দেখবে। তবে বাণিজ্যের মতো অন্যান্য ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না, সৌজন্য বজায় রাখবে।’
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনাকে ঘিরে ভারত কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছিল, তা নয়াদিল্লির চোখ এড়ায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে ভারত চাইত ভবিষ্যতে কোনো একসময় আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরুক। কারণ, তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সর্বদা সবচেয়ে নিরাপদ হাত।’
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হাসিনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। শ্রীরাধা দত্তের মতে, তাই ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘ভারত কখনোই অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভালো সমীকরণ গড়ে তুলতে পারেনি। এখন তা বদলাতে হবে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভঙ্গুর এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বর্তমান জেদটাও আমাদের উতরে যেতে হবে।’ শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এখন মিত্র না হলেও অন্তত পরস্পরের প্রতি ‘সভ্যতা ও সৌজন্য’ বজায় রাখা জরুরি।
হাসিনাকে আঁকড়ে থাকায় ভারতের লাভ কী
বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের পরই ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বেড়েছে।
ভারত বহুদিন ধরেই বলে এসেছে, তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় আসেন। পাকিস্তান ভাগ হওয়ায় ভারতের কৌশলগত জট এক লহমায় কেটে যায়, পূর্ব দিকের প্রতিবেশী শত্রুর বদলে মিত্রে পরিণত হয়।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বহু দশক ধরে বোনা। পঞ্চাশ বছর আগে তিনি প্রথম দিল্লিকে নিজের ঘর বলে মেনে নেন। কারণ, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। শুধু হাসিনা আর তাঁর ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান, কারণ তখন তাঁরা জার্মানিতে ছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুজিবুর রহমানের দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন। হাসিনা দিল্লিতে বিভিন্ন বাসায় স্বামী এমএ ওয়াজেদ, সন্তান এবং বোন রেহানা—সবাইকে নিয়ে থাকতেন। এমনকি অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাংলা পরিষেবায় রাতের শিফটে কাজও করেছেন।
ছয় বছরের নির্বাসনের পর হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাঁর দীর্ঘ দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। তাঁর শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। যদিও দেশে তাঁকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ঢাকার জন্য অন্যায্য’ চুক্তি করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষমতা হারানোর পর আবার পালাতে হলে কোথায় যাবেন—সে প্রশ্নে তেমন সংশয় ছিল না। ৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এবার হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তিনি তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তাঁকে থাকতে দেওয়া ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কী বিকল্পই বা ছিল?’
পিনাক রঞ্জন প্রশ্ন তোলেন, ‘তিনি কি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন? বিশেষ করে এখন যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে?’ এরপর তিনিই আবার বলেন, ‘তিনি ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন, আর ভারতকে নৈতিক অবস্থান নিতে হয়।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের মাটিতে হাসিনার অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে থাকবে। তবে একই সঙ্গে এটি ভারতের মিত্রদের প্রতি ‘আনুগত্য রক্ষার অঙ্গীকারেও’ ভারতকে অটল থাকতে সাহায্য করে।
তবে কেবল নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, তাত্ত্বিকভাবে দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক লাভও থাকতে পারে, যোগ করেন কুগেলম্যান। অন্য বিশ্লেষকদের মতো তিনি মনে করেন না যে, হাসিনার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা তাঁর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ একেবারে মুছে গেছে।
কুগেলম্যানের মতে, হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো এক ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক দলের নেত্রী, আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের দল অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে, দীর্ঘসময় দুর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু ‘শেষ পর্যন্ত টিকে যায়’। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বংশ পরম্পরাগত দলগুলো টিকে থাকে। ধৈর্য ধরে টিকে যেতে পারলে, বড় রাজনৈতিক পালাবদল এলে, ফিরে আসার সুযোগ নতুনভাবে তৈরি হয়।’

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
২ দিন আগে
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
৪ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।
১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।
কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্রিকেট থেকে জনসেবায়
ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।
কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।
২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।
শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।
প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।
দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।
ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।
থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’
থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।
২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।
থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।
থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।
১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।
কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্রিকেট থেকে জনসেবায়
ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।
কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।
২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।
শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।
প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।
দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।
ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।
থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’
থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।
২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।
থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।
থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৪ দিন আগে
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
৪ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।
এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।
এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৪ দিন আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
২ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
৪ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।
তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।
তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।
সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।
যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।
দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।
দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।
দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।
তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।
তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।
সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।
যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।
দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।
দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।
দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৪ দিন আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
২ দিন আগে
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩ দিন আগে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।
সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।










বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।
সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।










ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ফুটবল অনুশীলন করছিলেন। ঠিক তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে থামিয়ে একটি খবর দিলেন—বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর কাছে মুহূর্তটি যেন এক ধরনের ন্যায়বিচার পূরণের
১৪ দিন আগে
জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।
২ দিন আগে
গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩ দিন আগে
২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড...
৪ দিন আগে