অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন। সফরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। এটি মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চীনের কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ। এটি এমন এক সময়ে ঘটতে যাচ্ছে, যখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করছেন। হাসিনার পতন তাঁর ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
ঢাকার তথ্যমতে, ড. ইউনূস ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। পরদিন তিনি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং পরে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ইউনূসের প্রথম চীন সফর। এই সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উত্তপ্ত। ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বেড়েছে।
এ ছাড়া, জানুয়ারিতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা প্রায় ৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করলে উত্তেজনা বাড়ে। ১২ জানুয়ারি ঢাকা ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে কড়া আপত্তি জানায় এবং দাবি করে, এটি সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। পরদিন ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, তারা ‘সব চুক্তি ও প্রোটোকল মেনে’ বেড়া নির্মাণ করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনার আরেকটি কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য। তিনি ভারতের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা হচ্ছে। গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতন আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয়।’
ড. ইউনূসের দপ্তর তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এটি ‘কোনো তথ্যপ্রমাণ বা নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি।’ বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সমর্থন ইউনূস প্রশাসনের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। কারণ তাঁর সরকার ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক স্বীকৃতি চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাংক সেন্টারের গবেষক অণু আনোয়ার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ঢাকা চীনের কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে বেইজিং সতর্ক অবস্থান নিতে পারে। প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রাখতে পারে।’
চীনের বিনিয়োগ নিশ্চিত করাও ড. ইউনূসের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে চীন ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ২২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারই ছিল চীনা রপ্তানি।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয় এবং এই উদ্যোগের আওতায় চীনের বিনিয়োগ পেতে থাকে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্পে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো জড়িত। এখন মোংলা বন্দর সম্প্রসারণের জন্য চীনের ঋণ চাইছে ঢাকা।
২০২৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চীন বাংলাদেশে তাদের বিশাল বিনিয়োগ, বিশেষ করে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অণু আনোয়ার মনে করেন, ইউনূস বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পরও চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ নিরাপদ আছে।
চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের উপপরিচালক লিন মিনওয়াং বলেন, ইউনূস শেখ হাসিনার শাসনামলে চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে চীন সফরের সময় ২০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। যেখানে চীন ১ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। লিন বলেন, ‘তখন থেকে অনেক প্রকল্প আটকে আছে এবং এখন এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন শুরুর সময়।’
হাসিনা সরকারকে ভারতপন্থী হিসেবে দেখা হতো। তাঁর পতনের পর থেকে চীন ধাপে ধাপে বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের, সামরিক নেতৃত্ব ও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি চিকিৎসা প্রতিনিধি দল চীনের কুনমিং সফর করেছে। এর কারণ, মূলত ভারত বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা ভিসা দেওয়া সীমিত করা। সেই সংকট কাটাতেই বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও ইউনূসের সফরে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ভারতে হওয়ায় ভারত বিশেষভাবে কৌশলগত সুবিধা পায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ঋণ চেয়েছিল, যা ভারত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে।
এরপর থেকে এই প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি হয়নি। যদিও চীন বারবার ভারতকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতও পরে নিজেই প্রকল্পটি নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তিস্তা প্রকল্প চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিফলন।
লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা কেবল প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের মধ্যকার প্রধান বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি। এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি হলে তা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতা সুসংহত করার বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।’
আরও খবর পড়ুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন। সফরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। এটি মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চীনের কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ। এটি এমন এক সময়ে ঘটতে যাচ্ছে, যখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করছেন। হাসিনার পতন তাঁর ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
ঢাকার তথ্যমতে, ড. ইউনূস ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। পরদিন তিনি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং পরে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ইউনূসের প্রথম চীন সফর। এই সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উত্তপ্ত। ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বেড়েছে।
এ ছাড়া, জানুয়ারিতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা প্রায় ৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করলে উত্তেজনা বাড়ে। ১২ জানুয়ারি ঢাকা ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে কড়া আপত্তি জানায় এবং দাবি করে, এটি সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। পরদিন ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, তারা ‘সব চুক্তি ও প্রোটোকল মেনে’ বেড়া নির্মাণ করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনার আরেকটি কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য। তিনি ভারতের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা হচ্ছে। গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতন আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয়।’
ড. ইউনূসের দপ্তর তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এটি ‘কোনো তথ্যপ্রমাণ বা নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি।’ বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সমর্থন ইউনূস প্রশাসনের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। কারণ তাঁর সরকার ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক স্বীকৃতি চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাংক সেন্টারের গবেষক অণু আনোয়ার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ঢাকা চীনের কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে বেইজিং সতর্ক অবস্থান নিতে পারে। প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রাখতে পারে।’
চীনের বিনিয়োগ নিশ্চিত করাও ড. ইউনূসের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে চীন ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ২২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারই ছিল চীনা রপ্তানি।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয় এবং এই উদ্যোগের আওতায় চীনের বিনিয়োগ পেতে থাকে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্পে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো জড়িত। এখন মোংলা বন্দর সম্প্রসারণের জন্য চীনের ঋণ চাইছে ঢাকা।
২০২৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চীন বাংলাদেশে তাদের বিশাল বিনিয়োগ, বিশেষ করে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অণু আনোয়ার মনে করেন, ইউনূস বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পরও চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ নিরাপদ আছে।
চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের উপপরিচালক লিন মিনওয়াং বলেন, ইউনূস শেখ হাসিনার শাসনামলে চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে চীন সফরের সময় ২০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। যেখানে চীন ১ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। লিন বলেন, ‘তখন থেকে অনেক প্রকল্প আটকে আছে এবং এখন এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন শুরুর সময়।’
হাসিনা সরকারকে ভারতপন্থী হিসেবে দেখা হতো। তাঁর পতনের পর থেকে চীন ধাপে ধাপে বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের, সামরিক নেতৃত্ব ও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি চিকিৎসা প্রতিনিধি দল চীনের কুনমিং সফর করেছে। এর কারণ, মূলত ভারত বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা ভিসা দেওয়া সীমিত করা। সেই সংকট কাটাতেই বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও ইউনূসের সফরে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ভারতে হওয়ায় ভারত বিশেষভাবে কৌশলগত সুবিধা পায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ঋণ চেয়েছিল, যা ভারত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে।
এরপর থেকে এই প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি হয়নি। যদিও চীন বারবার ভারতকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতও পরে নিজেই প্রকল্পটি নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তিস্তা প্রকল্প চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিফলন।
লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা কেবল প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের মধ্যকার প্রধান বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি। এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি হলে তা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতা সুসংহত করার বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।’
আরও খবর পড়ুন:
কর্মী সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ সত্ত্বেও স্বাভাবিক পরিমাণে চিকিৎসা ভিসা ইস্যু করতে অনীহা দেখাচ্ছে ভারত। এই বিষয়টি মূলত, ক্রমশ অবনতি হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরই প্রতিফলন। ছয়টি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি চীনের জন্য বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশটি চিকিৎসা ভ্রমণের...
২ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। কয়েক দশকের বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে দুই দেশ সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। গত মাসে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ।
১ দিন আগেট্রাম্প কি মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের পদক্ষেপ নেবেন এবং ‘এসএসি’–এর সঙ্গে মিত্রতার সূত্র খুঁজতে শুরু করবেন? এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি হতে পারে, এসএসি–কে আলাদা করা এবং এর নিন্দা করা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কেবল চীনের দিকে আরও ঠেলে দেবে। মিয়ানমারের আগের জান্তা সরকারের সময়ও মার্কিন নীতি নির্ধারকদে
৩ দিন আগেবিশ্বজুড়ে নানা সংকটের মুখে পড়েছে টেক মোগল ইলন মাস্কের ব্যবসা। আবার এমন সময়ে তিনি ভারতে টেসলা ও স্টারলিংকের ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে টেসলা ও স্টারলিংক ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সংকট কাটাতে পারবে কি না। এমন একটি...
৪ দিন আগে