Ajker Patrika

চীনাদের কাছে ৩৫ বছর বয়স হলো ‘অভিশাপ’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৩, ২০: ৩১
Thumbnail image

পৃথিবীর প্রায় সব দেশে মধ্য ত্রিশে পা রাখার পরই বেশির ভাগ মানুষের জীবনে স্থিতিশীলতা আসে। কারণ তত দিনে চাকরি, পরিবার এবং আর্থিক বিষয়গুলোতে থিতু হন তাঁরা। কেউ বিয়ে করে নতুন জীবন শুরুর উদ্যোগ নেন, কেউ আগেই বিয়ে করে থাকলে সন্তানের জন্ম দেন। আর সন্তান থাকলে সুখী জীবন-যাপন করেন।

বলা যায়, জীবনের এই পর্যায়টিতেই একটি ভালো সময় আশা করে মানুষ।

তবে চীনাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কারণ, জীবনের এই পর্যায়ে এসে তাঁদের মনে দানা বাঁধতে থাকে ভয়, অনিশ্চয়তা। অবস্থা এমন যে এই সময়টিকে ‘৩৫-এর অভিশাপ’ হিসেবেও আখ্যা দেন অনেক চীনা।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, মধ্য ত্রিশে পা রাখার পরই কর্মীদের ওপর আগ্রহ হারাতে শুরু করে চীনা কোম্পানিগুলো। বয়সের এই বৈষম্য শুধু কর্মীদের ক্যারিয়ারেই প্রভাব ফেলে না, তাঁদের বিয়ে, বাড়ি নির্মাণ এবং সন্তান গ্রহণের বিষয়গুলোকেও প্রভাবিত করে।

প্রতিবেদন অনুসারে, চীনাদের এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী দেশটির মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি। এই অবস্থার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দুর্বল চাকরির বাজারের জন্যই বয়সভেদে এ ধরনের বৈষম্য দেশটিতে ধীরে ধীরে প্রচলিত হয়ে উঠেছে।

বয়সভেদে চাকরিতে এ ধরনের বৈষম্যের মুখোমুখি বয়স্ক চীনারাই সবচেয়ে বেশি হন। তবে ৩৫ বছর বয়সীরাই বিষয়টিকে সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভব করেন। কারণ, এই বয়সে তাঁরা প্রথমবারের মতো এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

আলিবাবা, টেনসেন্ট এবং বাইদু—চীনের এই তিনটি বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, মহামারির প্রভাবে ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে তারা অন্যান্য বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে চীনের অনেক বড় বড় আবাসন কোম্পানির কর্মীসংখ্যা ৩০, ৫০ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। বলাবাহুল্য, কর্মীসংখ্যা কমানোর এই কোপটি ৩৫ কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষদের ওপরই পড়েছে।

বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে চীনা সমাজেও। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চীনে বিয়ে নিবন্ধনের সংখ্যা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। 

ফ্লিন ফ্যান নামে ৩৫ বছর বয়সী এক চীনা জানান, এই বয়সের অনিশ্চয়তা সমাজে প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

 ৩০ বছর বয়সে পা রাখার পর থেকেই নিজের চাকরিজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে শুরু করেছিলেন ফ্লিন। ভয় ছিল, হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই চাকরি হারাবেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে ২০২১ সাল থেকে দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ খেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের শেষ দিকে এসে শেষ পর্যন্ত চাকরি থেকে বরখাস্তই হন তিনি। চাকরি যায় তাঁর সঙ্গে আরও অনেকের।

ফ্লিন জানান, তাঁর সঙ্গে চাকরি যাওয়া বেশির ভাগই এখনো বিয়ে করেননি। আবার কেউ বিয়ে করে থাকলেও বর্তমানে একটি সন্তান নেওয়ার পরিস্থিতিও নেই তাঁদের। 

গত ছয় মাসে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠিয়েছেন ফ্লিন। ভাইভা দিয়েছেন অন্তত ১০ জায়গায়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই তাঁকে চাকরিতে নেয়নি। বর্তমানে অতীতের চেয়ে ২০ কিংবা ৩০ শতাংশ কম বেতনে কেউ চাকরি দেয় কি না তার অনুসন্ধান করছেন তিনি।

চিচি ঝ্যাং নামে আরেক কর্মীর কথাই ধরা যাক। কর্মজীবী এই চীনা নারীর ৩২ বছর বয়স। সম্প্রতি এক প্রতিষ্ঠান তাঁকে বলে দেয়, কাজ করার জন্য তাঁর বয়স একটু বেশি হয়ে গেছে। বস জানান, তাঁর জায়গায় নতুন স্নাতক হয়েছেন এমন কাউকে খুঁজে দেখা হচ্ছে।

এ অবস্থায় চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন চিচি। পরে অনেক চেষ্টায় আরেকটি ছোট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন তিনি। এই চাকরি নিয়ে তাঁর কোনো সন্তুষ্টি নেই। তাঁর স্বামীর আয়ও খুব বেশি নয়। এ অবস্থায় কোনো সন্তান নেওয়ার চিন্তাই করতে পারছেন না তাঁরা। সন্তান জন্ম দেওয়ার শারীরিক সামর্থ্যও হয়তো বেশি দিন থাকবে না চিচির। এ যেন এক অভিশাপ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত