বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের খবরের যে প্রবাহ, তাতে মার্কিনরা জেনে অবাক হতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। প্রকৃতপক্ষে, জিডিপির কত শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে—সেই হিসাবকে বলা হয় ট্রেড টু জিডিপি। আর এই হিসাব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে কম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যভিত্তিক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত ছিল ২৭ শতাংশ। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য, পরিষেবার আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ দেশের জিডিপির ২৭ শতাংশ। যেখানে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাতের বৈশ্বিক গড় ৬৩ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক দ্বারা পরীক্ষিত ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র দুটি দেশের এই অনুপাত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও কম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করা দেশ দুটি হচ্ছে— ২৬ শতাংশ অনুপাত নিয়ে নাইজেরিয়া এবং ৩ শতাংশ নিয়ে সুদান। বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশেরই এই স্কোর যথেষ্ট বেশি। যেমন—জার্মানি ১০০ শতাংশ, ফ্রান্স ৭৩, যুক্তরাজ্য ৭০, ভারত ৪৯ শতাংশ এবং চীন ৩৮ শতাংশ।
ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের ধারণা
বেশ কয়েকটি কারণ ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশের বড় অংশজুড়ে উচ্চ শুল্ক বা অন্য সুরক্ষাবাদী নীতি থাকার কারণে সেখানে অনুপাত কম থাকতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মাথায় আসতে পারে নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া ও পাকিস্তানের নাম। আবার, তুর্কমেনিস্তানের এই অনুপাত কম। কারণ, দেশটি ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী।
একটি দেশ যদি বড়, ধনী ও উন্নত হয় এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির কারণে অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে, তবে তাদের ট্রেড টু জিডিপির অনুপাতও কম হতে পারে। সম্ভবত এই কারণগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত নিম্ন অনুপাত সম্পর্কে অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করে।
অন্যদিকে, প্রয়োজনীয়তা, অবস্থান বা উভয় কারণেই কয়েকটি ক্ষুদ্র দেশে এই অনুপাত ৩০০ শতাংশেরও বেশি। লুক্সেমবার্গ ও সান মারিনোর মতো ক্ষুদ্র দুটি দেশ ব্যাপক বাণিজ্য ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের গতিপথের দিকেও নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১৯৬০ সালে ছিল মাত্র ৯ শতাংশ, যা ১৯৭০ সালে বেড়ে হয়েছিল প্রায় ১১ শতাংশ। এই অনুপাত ২০০০ সালের মধ্যে পৌঁছেছিল ২৫ শতাংশে।
এরপর থেকে এই অনুপাত ২০০২ সালে ২২ শতাংশ এবং ২০১২ সালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশ। অনুপাত বাড়লেও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় কমই রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসজুড়ে তুলনামূলকভাবে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির উত্থান–পতনের ইতিহাস
উদার, উন্মুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো; যা আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আকৃতি দিয়েছে—সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তৈরি। ১৯৭০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের উল্লম্বভাবে বৃদ্ধির আগে পর্যন্ত মার্কিন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে তুলনামূলকভাবে মুক্তবাণিজ্যে যুক্ত থাকাকে সমর্থন দেওয়া সহজ ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুক্ত বাণিজ্য এবং স্থিতিশীল বিনিময় হার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় ব্রেটন উডস চুক্তির ফলে ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক। এর সঙ্গে ১৯৪৭ সালে শুল্ক ও বাণিজ্যের বিষয়ে চুক্তি বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধি বিকাশে সফল হয়েছিল। সেই নীতিগুলো মুদ্রা এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টকেও স্থিতিশীল করে। সে সময় এই ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং নতুন করে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাওয়া দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে তাদের নিয়মে এবং তত্ত্বাবধানে একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়।
১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকে বিদেশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করলেও যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যম্ভাবীভাবে কৃষি ও উৎপাদনের বাজারের দখল কিছুটা হারায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড টু জিডিপির কম অনুপাত এবং কমিউনিস্টবিরোধী মিত্রদের দেওয়া আদর্শিক প্রতিশ্রুতি দেশটির অভ্যন্তরে বাণিজ্য–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রশমিত করেছিল। বিপরীতে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ, আইন প্রণয়ন এবং কূটনৈতিক সংশোধনের মতো ধারাবাহিক কয়েকটি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ভূমিকাকে সীমিত করে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত বেড়ে যাওয়ায় ১৯৭০–এর দশকে ঘটে নাটকীয় পরিবর্তন। এর একটি মূল কারণ ছিল রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আর্থিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস। বিশ্ববাণিজ্য চুক্তির অধীনে পণ্যের তারল্য এবং মূলধন স্থানান্তর বেড়ে যায়। সে সময় জাপান ও তাইওয়ানের সস্তা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করতে শুরু করে।
যুদ্ধোত্তর শ্রমিক শ্রেণির জীবিকার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছিল উৎপাদন, পরিবহন ও যোগাযোগে উৎপাদনশীলতা বর্ধক বেশ কিছু উদ্ভাবন থেকে। আরও দুটি সুদূরপ্রসারী কারণ হলো—১৯৭৯ সালে চীনের অর্থনৈতিক বিকাশের সূচনা এবং ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে সোভিয়েত ব্লকের পতন।
১৯৯০–এর দশকে ঘটেছিল মুক্তবাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি অগ্রগতি। ১৯৯৩ সালে নাফটা চুক্তির ফলে উত্তর ও দক্ষিণে মার্কিন সীমানা পুঁজি, বাণিজ্য এবং অভিবাসনের অভূতপূর্ব স্থানান্তরের জন্য খুলে গিয়েছিল। তারপর ২০০১ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্কের সুযোগ পায়। এ ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনের প্রবেশকে মসৃণ করে। এসব পদক্ষেপের কারণে যে অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মার্কিন ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত ১৯৯০ সালে ২০ শতাংশ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশে ধারাবাহিকভাবে উন্নীত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন রাজনীতিতে বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। যেসব নীতির কারণে আমেরিকানরা চাকরি হারাচ্ছেন বা তাঁদের জীবনমান নিম্নমুখী হচ্ছে সেসবের সমালোচনাও হচ্ছে।
নাফটার উত্তরণ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের প্রবেশের পর অনেক আমেরিকান এবং তাঁদের প্রতিনিধিত্বকারী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ‘বিশ্বায়ন’ নিয়ে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। সেই বিশ্বায়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার মাঝেই বিমূর্ত অবস্থায় ছিল।
সুতরাং, চীনের ওপর কঠোর শুল্ক এবং মেক্সিকো সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাঝে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতি থেকে খুব বেশি পিছপা হননি—সেটিও বাস্তবিক।
যেকোনো নতুন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনার চেয়েও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের শিগগিরই বাণিজ্য–নির্ভরতার দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। বরং, মুক্তবাণিজ্যের বিষয়টি সামনে এলে আমরা বাইডেন এবং ট্রাম্প উভয়ের কাছ থেকেই সংশয় শুনতে পাব।
পরিহাসের বিষয়, উন্মুক্ত বাণিজ্যভিত্তিক যে বিশ্ব নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছুই করেছে, সেই ব্যবস্থাতে মার্কিনদের অংশগ্রহণ এখন অনেকটাই সীমিত।
লেখক: পিটার এ ককলানিস এবং লিওন ফিঙ্ক
জাপান টুডেতে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন মঞ্জুরুল ইকরাম
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের খবরের যে প্রবাহ, তাতে মার্কিনরা জেনে অবাক হতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। প্রকৃতপক্ষে, জিডিপির কত শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে—সেই হিসাবকে বলা হয় ট্রেড টু জিডিপি। আর এই হিসাব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে কম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যভিত্তিক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত ছিল ২৭ শতাংশ। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য, পরিষেবার আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ দেশের জিডিপির ২৭ শতাংশ। যেখানে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাতের বৈশ্বিক গড় ৬৩ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক দ্বারা পরীক্ষিত ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র দুটি দেশের এই অনুপাত যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও কম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করা দেশ দুটি হচ্ছে— ২৬ শতাংশ অনুপাত নিয়ে নাইজেরিয়া এবং ৩ শতাংশ নিয়ে সুদান। বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশেরই এই স্কোর যথেষ্ট বেশি। যেমন—জার্মানি ১০০ শতাংশ, ফ্রান্স ৭৩, যুক্তরাজ্য ৭০, ভারত ৪৯ শতাংশ এবং চীন ৩৮ শতাংশ।
ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের ধারণা
বেশ কয়েকটি কারণ ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশের বড় অংশজুড়ে উচ্চ শুল্ক বা অন্য সুরক্ষাবাদী নীতি থাকার কারণে সেখানে অনুপাত কম থাকতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মাথায় আসতে পারে নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া ও পাকিস্তানের নাম। আবার, তুর্কমেনিস্তানের এই অনুপাত কম। কারণ, দেশটি ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী।
একটি দেশ যদি বড়, ধনী ও উন্নত হয় এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির কারণে অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে, তবে তাদের ট্রেড টু জিডিপির অনুপাতও কম হতে পারে। সম্ভবত এই কারণগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত নিম্ন অনুপাত সম্পর্কে অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করে।
অন্যদিকে, প্রয়োজনীয়তা, অবস্থান বা উভয় কারণেই কয়েকটি ক্ষুদ্র দেশে এই অনুপাত ৩০০ শতাংশেরও বেশি। লুক্সেমবার্গ ও সান মারিনোর মতো ক্ষুদ্র দুটি দেশ ব্যাপক বাণিজ্য ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের গতিপথের দিকেও নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১৯৬০ সালে ছিল মাত্র ৯ শতাংশ, যা ১৯৭০ সালে বেড়ে হয়েছিল প্রায় ১১ শতাংশ। এই অনুপাত ২০০০ সালের মধ্যে পৌঁছেছিল ২৫ শতাংশে।
এরপর থেকে এই অনুপাত ২০০২ সালে ২২ শতাংশ এবং ২০১২ সালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশ। অনুপাত বাড়লেও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় কমই রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসজুড়ে তুলনামূলকভাবে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির উত্থান–পতনের ইতিহাস
উদার, উন্মুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো; যা আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আকৃতি দিয়েছে—সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তৈরি। ১৯৭০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ট্রেড টু জিডিপি অনুপাতের উল্লম্বভাবে বৃদ্ধির আগে পর্যন্ত মার্কিন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে তুলনামূলকভাবে মুক্তবাণিজ্যে যুক্ত থাকাকে সমর্থন দেওয়া সহজ ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুক্ত বাণিজ্য এবং স্থিতিশীল বিনিময় হার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় ব্রেটন উডস চুক্তির ফলে ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক। এর সঙ্গে ১৯৪৭ সালে শুল্ক ও বাণিজ্যের বিষয়ে চুক্তি বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধি বিকাশে সফল হয়েছিল। সেই নীতিগুলো মুদ্রা এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টকেও স্থিতিশীল করে। সে সময় এই ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং নতুন করে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাওয়া দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে তাদের নিয়মে এবং তত্ত্বাবধানে একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়।
১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকে বিদেশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করলেও যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যম্ভাবীভাবে কৃষি ও উৎপাদনের বাজারের দখল কিছুটা হারায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড টু জিডিপির কম অনুপাত এবং কমিউনিস্টবিরোধী মিত্রদের দেওয়া আদর্শিক প্রতিশ্রুতি দেশটির অভ্যন্তরে বাণিজ্য–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রশমিত করেছিল। বিপরীতে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ, আইন প্রণয়ন এবং কূটনৈতিক সংশোধনের মতো ধারাবাহিক কয়েকটি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ভূমিকাকে সীমিত করে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বে ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত বেড়ে যাওয়ায় ১৯৭০–এর দশকে ঘটে নাটকীয় পরিবর্তন। এর একটি মূল কারণ ছিল রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আর্থিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস। বিশ্ববাণিজ্য চুক্তির অধীনে পণ্যের তারল্য এবং মূলধন স্থানান্তর বেড়ে যায়। সে সময় জাপান ও তাইওয়ানের সস্তা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করতে শুরু করে।
যুদ্ধোত্তর শ্রমিক শ্রেণির জীবিকার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছিল উৎপাদন, পরিবহন ও যোগাযোগে উৎপাদনশীলতা বর্ধক বেশ কিছু উদ্ভাবন থেকে। আরও দুটি সুদূরপ্রসারী কারণ হলো—১৯৭৯ সালে চীনের অর্থনৈতিক বিকাশের সূচনা এবং ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে সোভিয়েত ব্লকের পতন।
১৯৯০–এর দশকে ঘটেছিল মুক্তবাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি অগ্রগতি। ১৯৯৩ সালে নাফটা চুক্তির ফলে উত্তর ও দক্ষিণে মার্কিন সীমানা পুঁজি, বাণিজ্য এবং অভিবাসনের অভূতপূর্ব স্থানান্তরের জন্য খুলে গিয়েছিল। তারপর ২০০১ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্কের সুযোগ পায়। এ ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনের প্রবেশকে মসৃণ করে। এসব পদক্ষেপের কারণে যে অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মার্কিন ট্রেড টু জিডিপির অনুপাত ১৯৯০ সালে ২০ শতাংশ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশে ধারাবাহিকভাবে উন্নীত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন রাজনীতিতে বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। যেসব নীতির কারণে আমেরিকানরা চাকরি হারাচ্ছেন বা তাঁদের জীবনমান নিম্নমুখী হচ্ছে সেসবের সমালোচনাও হচ্ছে।
নাফটার উত্তরণ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের প্রবেশের পর অনেক আমেরিকান এবং তাঁদের প্রতিনিধিত্বকারী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ‘বিশ্বায়ন’ নিয়ে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। সেই বিশ্বায়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার মাঝেই বিমূর্ত অবস্থায় ছিল।
সুতরাং, চীনের ওপর কঠোর শুল্ক এবং মেক্সিকো সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাঝে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতি থেকে খুব বেশি পিছপা হননি—সেটিও বাস্তবিক।
যেকোনো নতুন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনার চেয়েও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের শিগগিরই বাণিজ্য–নির্ভরতার দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। বরং, মুক্তবাণিজ্যের বিষয়টি সামনে এলে আমরা বাইডেন এবং ট্রাম্প উভয়ের কাছ থেকেই সংশয় শুনতে পাব।
পরিহাসের বিষয়, উন্মুক্ত বাণিজ্যভিত্তিক যে বিশ্ব নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছুই করেছে, সেই ব্যবস্থাতে মার্কিনদের অংশগ্রহণ এখন অনেকটাই সীমিত।
লেখক: পিটার এ ককলানিস এবং লিওন ফিঙ্ক
জাপান টুডেতে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন মঞ্জুরুল ইকরাম
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি হুঁশিয়ারি অনেকের কাছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মনে হচ্ছে—ঠিক যেমনটা করেছিলেন ইয়াহিয়া খান, ১৯৭১ সালে। বিভাজন, দমন ও অস্বীকারের সেই পুরোনো কৌশলই যেন ফিরে এসেছে নতুন ইউনিফর্মে। ইতিহাস আবার প্রশ্ন করছে—পাকিস্তান কি কিছুই শিখল না?
১৮ ঘণ্টা আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
১ দিন আগেমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্রুত অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিত না পান, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্পের এমন মনোভাব নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
৩ দিন আগেট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
৩ দিন আগে