Ajker Patrika

মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করায় ইউক্রেনের পরিণতি কী হতে পারে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০: ১৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি শুধু ইউক্রেনের জন্যই নয়, দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের জন্যও বড় একটি ধাক্কা। ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউরোপের নেতারা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।

মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিত হয়ে যাওয়া এবারই প্রথম ঘটল—বিষয়টি এমন নয়। এর আগেও ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে বাইডেনের আমলে মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা ইউক্রেনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সামরিক সহায়তার প্যাকেজ আটকে দিয়েছিলেন।

সেই সময় ইউরোপের সহায়তায় বিদ্যমান গোলাবারুদের মজুত কোনো রকমে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল ইউক্রেন। অবশেষে ২০২৪ সালের বসন্তে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে এবং এই সহায়তা ঠিক সময়ের মধ্যেই পৌঁছায়। ইউক্রেন তখন খারকিভে রুশ বাহিনীর নতুন আক্রমণ প্রতিহত করতে লড়াই করছিল। বিলম্বিত হলেও মার্কিন অস্ত্র পৌঁছানোর পর যুদ্ধের পরিস্থিতি ইউক্রেনের পক্ষে মোড় নিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালের মতো এবারও মার্কিন সহায়তা বন্ধের প্রভাব অনুভূত হতে ইউক্রেনের কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। অন্তত গোলাবারুদ ও অস্ত্রের দিক থেকে। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে। বর্তমানে ইউরোপ ইউক্রেনকে ৬০ শতাংশ সহায়তা দিচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।

তবে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশ মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। মার্কিন প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি এবং নরওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের জনগণ ও শহরগুলো রক্ষার মূল অস্ত্র।

এ ছাড়া মার্কিন সহায়তা ইউক্রেনকে দূরপাল্লার হামলা চালানোর সক্ষমতা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত হিমারস ও এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা থাকলেও দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে এগুলো অত্যন্ত কার্যকরী ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে শত শত সাঁজোয়া যানও সরবরাহ করেছে।

এ অবস্থায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেনের অস্ত্রের ভান্ডারে টান পড়তে পারে। আর এর তাৎক্ষণিক আরও উদ্বেগজনক প্রভাব পড়তে পারে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে। কারণ মহাকাশ-ভিত্তিক নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ নয়।

শুধু মার্কিন সামরিক বাহিনীই নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সহায়তা প্রদান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ—ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের কথা বলা যেতে পারে। ফ্রন্টলাইনের প্রতিটি ইউক্রেনীয় ঘাঁটিতে স্টারলিংকের সংযোগ রয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করা হয়। এটি আর্টিলারি ও ড্রোন হামলা সমন্বয়ে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগও অতীতে স্বীকার করেছে যে, তারা এই পরিষেবার জন্য অর্থায়ন করেছে।

কিন্তু ইলন মাস্ক বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এ অবস্থায় তিনি নিজের খরচে ইউক্রেনকে স্টারলিংকের সেবা দেবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির কঠোর সমালোচক হিসেবেও পরিচিত।

এ ছাড়া আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়—ইউরোপীয় দেশগুলো কি তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত সরঞ্জাম ইউক্রেনে পাঠাতে পারবে? এর আগে ইউরোপ যখন ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে চেয়েছিল, তখন এর জন্য ওয়াশিংটনের অনুমতি নিতে হয়েছিল।

আরেকটি বিষয় হলো—ইউক্রেনে ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা যুদ্ধ সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে চলবে? যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং তাদের সরবরাহ করা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণেও সহায়তা করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে হঠাৎ এবং বিরূপ মনে হতে পারে। তবে এটি ইউক্রেনকে দ্রুত শান্তি আলোচনার টেবিলে আনতে একটি রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে।

ইউরোপে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোও আশা করছে, এটি শুধুমাত্র একটি সাময়িক বিরতি। কারণ মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের টিকে থাকার লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত