আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি
আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ইউক্রেন ইস্যু। তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর যেসব বিষয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করবেন, তার একটি হলো ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলো ফেরত পাওয়া আশা হয়তো ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প মনোনীত দূত সাবেক মার্কিন জেনারেল কিথ কেলোগের পরিকল্পনা থেকেও এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইদানীং যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেও রাশিয়া অধিকৃত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তি আলোচনার প্রধান শর্ত হিসেবে দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করছিলেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে কেলোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এনএসএ–এর সাবেক চিফ অব স্টাফ ফ্রেড ফ্লেইটজ একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করা। এই কৌশলপত্রটি প্রকাশ করেছে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই)। ২০২১ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কৌশলপত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিশেষত, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত এবং রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যর্থ হওয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে। এতে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
কেলোগের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিপরীতে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট থাকলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা ঠেকানো যেত। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই করেছেন কেলোগে।
অবশ্য বাইডেনকে দুর্বল মনে করার কারণেই পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—কেলোগ ও ফ্লেইটজের এমন দাবি সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
কেলোগের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ শেষ করার একটি আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবে ভবিষ্যতে এই সামরিক সহায়তা নির্ভর করবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে কিনা তার ওপর। পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানোর জন্য ন্যাটো নেতারা ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিতে পারেন।
কেলোগ–ফ্লেইটজের কৌশলপত্রে আরও যেসব মূল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো—রাশিয়া যদি একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, তবে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিতে শুল্ক আরোপ করে সেই অর্থ ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহারেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই কৌশলপত্রে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
মোট কথা, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল যে ধারণা হাজির করেছে, সেখানে ইউক্রেনকে তার হারানো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত, জেলেনস্কিও বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী। তবে চলতি সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
অধিকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্যে আর তেমন জোর নেই। যেখানে তাঁকে প্রতিনিয়ত জনবল সংকট এবং নতুন নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি, অনেক অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সবাই শান্তি চাই। তবে আমাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যে, এই শান্তি যেন সবার জন্য ন্যায়সংগত হয় এবং রাশিয়া, পুতিন বা অন্য কোনো আগ্রাসী কখনোই ফিরে আসার সুযোগ না পায়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এবং এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একটি ন্যায়সংগত শান্তি এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।’
ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনের পেছনে সামরিক সহায়তার নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের বিরোধী। এ নিয়ে তিনি সব সময়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি বরং দ্রুত সমঝোতার মাধ্যম যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে আসছেন।
এলিসি প্রাসাদে বৈঠক শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং এই পাগলামি থামাতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনার শুরু করা উচিত।’
পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভ্লাদিমিরকে ভালোভাবে চিনি। এটাই তাঁর জন্য কাজ করার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় আছে!’
এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এলিসি প্রাসাদের আলোচনায় সেই অর্থে ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। অথবা হতে পারে, রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসাতে এখনই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত পরিকল্পনা এবং জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেন হয়তো হারানো ভূখণ্ডের বিষয়টি আলোচনার শর্ত হিসেবে জোরালো ভাবে হাজির করতে পারবে না।
এর একটি কারণ হতে পারে, রণক্ষেত্রে কিয়েভের দুর্বল অবস্থান। পাশাপাশি আলোচনায় নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে বা আপার হ্যান্ডে রাখার জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখলে যে অভিযান পরিচালনা করেছিল তা এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয়দের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে এবং গত নভেম্বরে তারা ইউক্রেনে অন্তত ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন করে দখল করেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—রণক্ষেত্রে জীবনবাজি রাখা ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ আসলে কী? এই অসম যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁরা এতদিনে টের পেয়ে গেছেন। সম্মুখযোদ্ধারা মূলত পশ্চিমা পরাশক্তিদের পক্ষে লড়ছেন। যে যুদ্ধে তাঁদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। তাঁদের হাতে এখন দুটি অপশন—হয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নয়তো মৃত্যু। স্বাধীনতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই বাস্তবতায় ইউক্রেনের প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। ইউক্রেনীয়রা এরই মধ্যে ক্লান্ত, হতাশ।
এই অবস্থায় রাশিয়া যে, আলোচনার শর্ত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সেটি চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এ বিষয়ে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলেছেন এবং আরও ভূমি দখলের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া–বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ইউজিন রুমার বলেন, ‘পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়—ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন।’
রুমার আরও বলেন, ‘পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত মে মাসে জানিয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাড়া না দিলে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন পুতিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এমন কোনো অবস্থানে নেই যেখান থেকে তিনি অধিকৃত অঞ্চল ফেরত পাওয়ার জন্য শক্তভাবে দাবি তুলতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের দলের পরিকল্পনাও বলে যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে চাপ দিতে পারে যাতে, প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান যুদ্ধটি বন্ধ করা যায়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স, এএফপি ও আরটি

আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআবদুল বাছেদ, ঢাকা
তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ছাড়া, ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, এর পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে