
ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁরা তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মরতে বাধ্য করছেন। সামরিক নেতৃত্বের সাক্ষাৎ চেয়ে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রিগোশিনের এমন কর্মকাণ্ডকে হঠকারিতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ওয়াগনারের বিদ্রোহ নস্যাৎ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, ওয়াগনারের প্রিগোশিন দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরি মেরেছেন।
কে এই ইয়েভজেনি প্রিগোশিন?
ওয়াগনার গ্রুপ সারা বিশ্বে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা সবখানেই এই গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। পুতিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রুপের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। তিনি সাবেক দাগি আসামি। এক সময় হটডগ বিক্রি করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রুপটি নির্মমতা, সহিংসতা এবং নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত।
প্রিগোশিনের জন্ম ১৯৬১ সালে, সেন্ট পিটার্সবার্গে। একটি স্পোর্টিং একাডেমিতে গিয়ে ছিঁচকে অপরাধীদের পাল্লায় পড়েন। ১৯৮০ সালে বেশ কয়েকটি সহিংস ডাকাতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তরুণ বয়সের বেশির ভাগ সময়ই জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পতনের মুখে তখন মুক্তি পান প্রিগোশিন। একটি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে শুরু করেন। শিগগিরই একটি সুপারমার্কেট চেইনের অংশীদারত্ব অর্জন করেন। সেটি ছিল শহরের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। এরপর ক্রমেই ভ্লাদিমির পুতিনের আস্থাভাজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হন।
প্রিগোশিন এক দশকেরও বেশি সময় পুতিন সরকারের হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানগুলোতে ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে এসেছেন। সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়—বিদেশি অতিথিদের মধ্যে প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে ব্রিটেনের রাজা) এবং জর্জ বুশের জন্য খাবার পরিবেশন করছেন। সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসের চুক্তি এবং অন্য অনেক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার অলিগার্ক পর্যায়ের ধনীদের সমান সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন প্রিগোশিন।
বর্তমান বিদ্রোহের বীজ বোপিত হয়েছে বলতে গেলে প্রায় এক দশক আগে। যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে জবরদখল করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে প্রক্সি বাহিনী পাঠায়। প্রিগোশিন এরপরে ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রুপ পুতিনের হাতকে আরও শক্তিশালী করে। পুতিন আরও সক্রিয় সামরিক হস্তক্ষেপে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততা এড়িয়ে অনেক বেআইনি হস্তক্ষেপ অস্বীকার করার একটি হাতিয়ার পেয়ে যান।
প্রিগোশিন একটি সাইবার বাহিনীও গঠন করেছিলেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতে তাঁর ডিজিটাল যোদ্ধাদের মাঠে নামিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে এভাবেই।
গত বছর অবধি প্রিগোশিন সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছেন, যারা তাঁর কার্যকলাপের বিষয়ে কথা বলেছেন এবং কেবল ক্যাটারিং সার্ভিস এবং অতিথি সেবার কাজ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার বিষয়ে বারবার ইঙ্গিত করেছেন।
কীভাবে ব্যক্তিগত বাহিনী বানালেন প্রিগোশিন?
বেশ কয়েক বছর ধরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রিগোশিন ওয়াগনার গ্রুপকে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। সিরিয়া ছিল প্রথম কোনো যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রিগোশিনের বাহিনী নিজেকে শক্তিশালী যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি মস্কোর সমর্থন এখানে বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কাজের একটি ধরন অনুসরণ করে। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এটিই ওয়াগনারের কাজের শর্ত। ইউক্রেনেও সেটি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। অসংখ্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য এই গ্রুপটি অভিযুক্ত হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কমান্ডারদের অধীনে বাহিনীর সদস্যদের বলি দিতেও কোনো কসুর করে না।
ওয়াগনারের সেনারা আফ্রিকাজুড়ে যুদ্ধ করেছে এবং করছে। রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে প্রায় সব মিশনেই অগ্রভাগে ছিল ওয়াগনার। এর মধ্যে মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং সর্বশেষ সুদান অন্যতম। পশ্চিমা গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর কয়েদিদের বাহিনীতে নিতে প্রিগোশিনকে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে তাঁর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া অর্থ সংস্থান হয় নানাভাবে। ইয়েভজেনি প্রিগোশিন নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ জব্দ করেছে। তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি অডিও বার্তায় তিনি টাকা বোঝাই একটি ভ্যান এবং দুটি বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এই তহবিলগুলো নিহত ওয়াগনার যোদ্ধাদের ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য রাখা হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।
প্রিগোশিন বলেন, ওয়াগনার ১০ বছর ধরে শুধু নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ করছে। এই পদ্ধতি তিনি সব সময় মেনে চলেন।
তবে উদ্ধারকৃত অর্থের সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ দেননি প্রিগোশিন। যদিও রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলো বলেছে, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে প্রিগোশিনের অফিসে এফএসবি অভিযান চালিয়ে ৪০০ কোটি রুবল বা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করেছে।
এখন কোন ধরনের রসদ এবং সমর্থন পাচ্ছেন প্রিগোশিন?
প্রিগোশিনের আচার আচরণ এবং বাহিনী পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। চাপা উত্তেজনা বহুদিন ধরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধ আরও গভীর হয়েছে।
কয়েক মাস আগে থেকে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন বারবার বলে আসছেন, তাঁর সৈন্যরা গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহের সংকটে ভুগছে। অস্ত্র–শস্ত্রের অভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পড়ছে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের কয়েক ডজন মৃতদেহের একটি ভিডিও রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের দায়ী করে আসছেন প্রিগোশিন।
ইউক্রেনে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে বাখমুতের ভয়াবহ যুদ্ধ প্রমাণ করে এই গ্রুপের কাছে ভারী অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান রয়েছে।
গ্রুপের কেউ কেউ ছোট ছোট গ্রুপে মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। যদিও তারা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। অবশ্য ভূমি থেকে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে দেখা গেছে।
তা ছাড়া ওয়াগনারের যোদ্ধাদের যে অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলা, তাতে তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পূর্ণ শক্তির সামনে বেশি সময় টিকে থাকতে পারার কথা না। এরই মধ্যে অবশ্য মস্কো অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াগনার।
জানা যাচ্ছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পুতিনের মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সৈন্যদের থামিয়ে দিতে প্রিগোশিনকে রাজি করান লুকাশেঙ্কো।
বিদ্রোহের শুরুর দিকে প্রিগোশিন রুশ সামরিক বাহিনীর কিছু জেনারেল বিদ্রোহী হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেবে এমনটি আশা করেছিলেন হয়তো। যাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অন্যান্য ব্যর্থতার কারণে কোণঠাসা হয়ে আছেন তাঁদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার অপেক্ষায় হয়তো ছিলেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনারের এই আকস্মিক শোডাউন কীভাবে শেষ হবে তা হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে প্রিগোশিন জয়ী হোন বা ব্যর্থ হোন—বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই ঘটনায় লড়াইয়ের ময়দানে উপকৃত হবে ইউক্রেন।
রাশিয়ার দৃষ্টি, অস্ত্র এবং সৈন্য সবই ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ জোরদার করছে। প্রিগোশিন বলেছেন, তিনি যুদ্ধে এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না। তবে ওয়াগনারের বিদ্রোহ আপাতত ইউক্রেন অভিযান সীমিত করে রাশিয়ার জেনারেলদের ঘরের সমস্যা মেটাতে বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য বাধ্য করবে তাতে সন্দেহ নেই।
এদিকে অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা এরই মধ্যে রোস্তভ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখানেই ওয়াগনারের লোকেরা সামরিক সদর দপ্তর দখল করেছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে জীবন, অস্ত্র এবং সময়ের অপচয় হবে।
বিদ্রোহের শেষটা যা–ই হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি মস্কোকে নিজের ঘরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতেই হবে।
ইউক্রেনের জন্য বার্তা
ওয়াগনার প্রধান অবশ্যই ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ জেনারেলদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের অবস্থানকে তাঁর প্রতি ‘অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছেন প্রিগোশিন। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করছে বা যুদ্ধাপরাধ করছে বলে প্রিগোশিন তাঁদের সমালোচনা করছেন এমনটা নয়।
প্রিগোশিন সেনাবাহিনী এবং নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন এই কারণে যে, তাঁরা যথেষ্ট ‘ভালোভাবে’ যুদ্ধ করছেন না!
রাশিয়ার বাহিনীকে দখলিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে পিছু হটতে হয়েছে। প্রিগোশিন বলেছেন, রুশ সেনা কর্মকর্তারা দুর্বল। কারণ তাঁরা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নন।
তবে ইউক্রেন আক্রমণের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য মস্কোর প্রচারণার সঙ্গে সব সময়ই সুর মিলিয়েছেন প্রিগোশিন। তিনি বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের অধিবাসীরা ‘জিনগতভাবে রুশ’। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়ার জনগণকে যারা বিরক্ত করে এটি তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ।’
সুতরাং প্রিগোশিনকে অবশ্যই যুদ্ধবাজ হিসেবে দেখতে হবে। তিনি ইউক্রেনকে পরাজিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বর্তমান নেতৃত্ব সেটি করতে পারছেন না।
ইউক্রেনের বাইরে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি এবং শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগের একটি দরকারি হাতিয়ার। এর সৈন্যরা মিত্রদের সমর্থন করে এবং যারা মস্কোর বার্তায় কান দেয় না তাদের সতর্ক বার্তা দেয়।
এটি প্রায় অসম্ভব যে, পুতিন দ্রুতই এই ভাড়াটে বাহিনীকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। এমনকি এই বিদ্রোহের বার্তাগুলোকেও তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তবে যে নেতারা ওয়াগনারের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন তাঁরা সম্ভবত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত থাকবেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁরা তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মরতে বাধ্য করছেন। সামরিক নেতৃত্বের সাক্ষাৎ চেয়ে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রিগোশিনের এমন কর্মকাণ্ডকে হঠকারিতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ওয়াগনারের বিদ্রোহ নস্যাৎ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, ওয়াগনারের প্রিগোশিন দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরি মেরেছেন।
কে এই ইয়েভজেনি প্রিগোশিন?
ওয়াগনার গ্রুপ সারা বিশ্বে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা সবখানেই এই গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। পুতিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রুপের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। তিনি সাবেক দাগি আসামি। এক সময় হটডগ বিক্রি করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রুপটি নির্মমতা, সহিংসতা এবং নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত।
প্রিগোশিনের জন্ম ১৯৬১ সালে, সেন্ট পিটার্সবার্গে। একটি স্পোর্টিং একাডেমিতে গিয়ে ছিঁচকে অপরাধীদের পাল্লায় পড়েন। ১৯৮০ সালে বেশ কয়েকটি সহিংস ডাকাতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তরুণ বয়সের বেশির ভাগ সময়ই জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পতনের মুখে তখন মুক্তি পান প্রিগোশিন। একটি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে শুরু করেন। শিগগিরই একটি সুপারমার্কেট চেইনের অংশীদারত্ব অর্জন করেন। সেটি ছিল শহরের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। এরপর ক্রমেই ভ্লাদিমির পুতিনের আস্থাভাজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হন।
প্রিগোশিন এক দশকেরও বেশি সময় পুতিন সরকারের হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানগুলোতে ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে এসেছেন। সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়—বিদেশি অতিথিদের মধ্যে প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে ব্রিটেনের রাজা) এবং জর্জ বুশের জন্য খাবার পরিবেশন করছেন। সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসের চুক্তি এবং অন্য অনেক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার অলিগার্ক পর্যায়ের ধনীদের সমান সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন প্রিগোশিন।
বর্তমান বিদ্রোহের বীজ বোপিত হয়েছে বলতে গেলে প্রায় এক দশক আগে। যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে জবরদখল করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে প্রক্সি বাহিনী পাঠায়। প্রিগোশিন এরপরে ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রুপ পুতিনের হাতকে আরও শক্তিশালী করে। পুতিন আরও সক্রিয় সামরিক হস্তক্ষেপে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততা এড়িয়ে অনেক বেআইনি হস্তক্ষেপ অস্বীকার করার একটি হাতিয়ার পেয়ে যান।
প্রিগোশিন একটি সাইবার বাহিনীও গঠন করেছিলেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতে তাঁর ডিজিটাল যোদ্ধাদের মাঠে নামিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে এভাবেই।
গত বছর অবধি প্রিগোশিন সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছেন, যারা তাঁর কার্যকলাপের বিষয়ে কথা বলেছেন এবং কেবল ক্যাটারিং সার্ভিস এবং অতিথি সেবার কাজ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার বিষয়ে বারবার ইঙ্গিত করেছেন।
কীভাবে ব্যক্তিগত বাহিনী বানালেন প্রিগোশিন?
বেশ কয়েক বছর ধরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রিগোশিন ওয়াগনার গ্রুপকে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। সিরিয়া ছিল প্রথম কোনো যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রিগোশিনের বাহিনী নিজেকে শক্তিশালী যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি মস্কোর সমর্থন এখানে বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কাজের একটি ধরন অনুসরণ করে। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এটিই ওয়াগনারের কাজের শর্ত। ইউক্রেনেও সেটি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। অসংখ্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য এই গ্রুপটি অভিযুক্ত হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কমান্ডারদের অধীনে বাহিনীর সদস্যদের বলি দিতেও কোনো কসুর করে না।
ওয়াগনারের সেনারা আফ্রিকাজুড়ে যুদ্ধ করেছে এবং করছে। রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে প্রায় সব মিশনেই অগ্রভাগে ছিল ওয়াগনার। এর মধ্যে মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং সর্বশেষ সুদান অন্যতম। পশ্চিমা গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর কয়েদিদের বাহিনীতে নিতে প্রিগোশিনকে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে তাঁর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া অর্থ সংস্থান হয় নানাভাবে। ইয়েভজেনি প্রিগোশিন নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ জব্দ করেছে। তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি অডিও বার্তায় তিনি টাকা বোঝাই একটি ভ্যান এবং দুটি বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এই তহবিলগুলো নিহত ওয়াগনার যোদ্ধাদের ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য রাখা হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।
প্রিগোশিন বলেন, ওয়াগনার ১০ বছর ধরে শুধু নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ করছে। এই পদ্ধতি তিনি সব সময় মেনে চলেন।
তবে উদ্ধারকৃত অর্থের সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ দেননি প্রিগোশিন। যদিও রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলো বলেছে, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে প্রিগোশিনের অফিসে এফএসবি অভিযান চালিয়ে ৪০০ কোটি রুবল বা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করেছে।
এখন কোন ধরনের রসদ এবং সমর্থন পাচ্ছেন প্রিগোশিন?
প্রিগোশিনের আচার আচরণ এবং বাহিনী পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। চাপা উত্তেজনা বহুদিন ধরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধ আরও গভীর হয়েছে।
কয়েক মাস আগে থেকে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন বারবার বলে আসছেন, তাঁর সৈন্যরা গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহের সংকটে ভুগছে। অস্ত্র–শস্ত্রের অভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পড়ছে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের কয়েক ডজন মৃতদেহের একটি ভিডিও রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের দায়ী করে আসছেন প্রিগোশিন।
ইউক্রেনে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে বাখমুতের ভয়াবহ যুদ্ধ প্রমাণ করে এই গ্রুপের কাছে ভারী অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান রয়েছে।
গ্রুপের কেউ কেউ ছোট ছোট গ্রুপে মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। যদিও তারা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। অবশ্য ভূমি থেকে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে দেখা গেছে।
তা ছাড়া ওয়াগনারের যোদ্ধাদের যে অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলা, তাতে তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পূর্ণ শক্তির সামনে বেশি সময় টিকে থাকতে পারার কথা না। এরই মধ্যে অবশ্য মস্কো অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াগনার।
জানা যাচ্ছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পুতিনের মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সৈন্যদের থামিয়ে দিতে প্রিগোশিনকে রাজি করান লুকাশেঙ্কো।
বিদ্রোহের শুরুর দিকে প্রিগোশিন রুশ সামরিক বাহিনীর কিছু জেনারেল বিদ্রোহী হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেবে এমনটি আশা করেছিলেন হয়তো। যাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অন্যান্য ব্যর্থতার কারণে কোণঠাসা হয়ে আছেন তাঁদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার অপেক্ষায় হয়তো ছিলেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনারের এই আকস্মিক শোডাউন কীভাবে শেষ হবে তা হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে প্রিগোশিন জয়ী হোন বা ব্যর্থ হোন—বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই ঘটনায় লড়াইয়ের ময়দানে উপকৃত হবে ইউক্রেন।
রাশিয়ার দৃষ্টি, অস্ত্র এবং সৈন্য সবই ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ জোরদার করছে। প্রিগোশিন বলেছেন, তিনি যুদ্ধে এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না। তবে ওয়াগনারের বিদ্রোহ আপাতত ইউক্রেন অভিযান সীমিত করে রাশিয়ার জেনারেলদের ঘরের সমস্যা মেটাতে বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য বাধ্য করবে তাতে সন্দেহ নেই।
এদিকে অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা এরই মধ্যে রোস্তভ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখানেই ওয়াগনারের লোকেরা সামরিক সদর দপ্তর দখল করেছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে জীবন, অস্ত্র এবং সময়ের অপচয় হবে।
বিদ্রোহের শেষটা যা–ই হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি মস্কোকে নিজের ঘরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতেই হবে।
ইউক্রেনের জন্য বার্তা
ওয়াগনার প্রধান অবশ্যই ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ জেনারেলদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের অবস্থানকে তাঁর প্রতি ‘অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছেন প্রিগোশিন। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করছে বা যুদ্ধাপরাধ করছে বলে প্রিগোশিন তাঁদের সমালোচনা করছেন এমনটা নয়।
প্রিগোশিন সেনাবাহিনী এবং নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন এই কারণে যে, তাঁরা যথেষ্ট ‘ভালোভাবে’ যুদ্ধ করছেন না!
রাশিয়ার বাহিনীকে দখলিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে পিছু হটতে হয়েছে। প্রিগোশিন বলেছেন, রুশ সেনা কর্মকর্তারা দুর্বল। কারণ তাঁরা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নন।
তবে ইউক্রেন আক্রমণের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য মস্কোর প্রচারণার সঙ্গে সব সময়ই সুর মিলিয়েছেন প্রিগোশিন। তিনি বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের অধিবাসীরা ‘জিনগতভাবে রুশ’। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়ার জনগণকে যারা বিরক্ত করে এটি তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ।’
সুতরাং প্রিগোশিনকে অবশ্যই যুদ্ধবাজ হিসেবে দেখতে হবে। তিনি ইউক্রেনকে পরাজিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বর্তমান নেতৃত্ব সেটি করতে পারছেন না।
ইউক্রেনের বাইরে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি এবং শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগের একটি দরকারি হাতিয়ার। এর সৈন্যরা মিত্রদের সমর্থন করে এবং যারা মস্কোর বার্তায় কান দেয় না তাদের সতর্ক বার্তা দেয়।
এটি প্রায় অসম্ভব যে, পুতিন দ্রুতই এই ভাড়াটে বাহিনীকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। এমনকি এই বিদ্রোহের বার্তাগুলোকেও তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তবে যে নেতারা ওয়াগনারের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন তাঁরা সম্ভবত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত থাকবেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁরা তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মরতে বাধ্য করছেন। সামরিক নেতৃত্বের সাক্ষাৎ চেয়ে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রিগোশিনের এমন কর্মকাণ্ডকে হঠকারিতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ওয়াগনারের বিদ্রোহ নস্যাৎ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, ওয়াগনারের প্রিগোশিন দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরি মেরেছেন।
কে এই ইয়েভজেনি প্রিগোশিন?
ওয়াগনার গ্রুপ সারা বিশ্বে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা সবখানেই এই গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। পুতিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রুপের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। তিনি সাবেক দাগি আসামি। এক সময় হটডগ বিক্রি করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রুপটি নির্মমতা, সহিংসতা এবং নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত।
প্রিগোশিনের জন্ম ১৯৬১ সালে, সেন্ট পিটার্সবার্গে। একটি স্পোর্টিং একাডেমিতে গিয়ে ছিঁচকে অপরাধীদের পাল্লায় পড়েন। ১৯৮০ সালে বেশ কয়েকটি সহিংস ডাকাতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তরুণ বয়সের বেশির ভাগ সময়ই জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পতনের মুখে তখন মুক্তি পান প্রিগোশিন। একটি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে শুরু করেন। শিগগিরই একটি সুপারমার্কেট চেইনের অংশীদারত্ব অর্জন করেন। সেটি ছিল শহরের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। এরপর ক্রমেই ভ্লাদিমির পুতিনের আস্থাভাজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হন।
প্রিগোশিন এক দশকেরও বেশি সময় পুতিন সরকারের হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানগুলোতে ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে এসেছেন। সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়—বিদেশি অতিথিদের মধ্যে প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে ব্রিটেনের রাজা) এবং জর্জ বুশের জন্য খাবার পরিবেশন করছেন। সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসের চুক্তি এবং অন্য অনেক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার অলিগার্ক পর্যায়ের ধনীদের সমান সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন প্রিগোশিন।
বর্তমান বিদ্রোহের বীজ বোপিত হয়েছে বলতে গেলে প্রায় এক দশক আগে। যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে জবরদখল করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে প্রক্সি বাহিনী পাঠায়। প্রিগোশিন এরপরে ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রুপ পুতিনের হাতকে আরও শক্তিশালী করে। পুতিন আরও সক্রিয় সামরিক হস্তক্ষেপে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততা এড়িয়ে অনেক বেআইনি হস্তক্ষেপ অস্বীকার করার একটি হাতিয়ার পেয়ে যান।
প্রিগোশিন একটি সাইবার বাহিনীও গঠন করেছিলেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতে তাঁর ডিজিটাল যোদ্ধাদের মাঠে নামিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে এভাবেই।
গত বছর অবধি প্রিগোশিন সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছেন, যারা তাঁর কার্যকলাপের বিষয়ে কথা বলেছেন এবং কেবল ক্যাটারিং সার্ভিস এবং অতিথি সেবার কাজ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার বিষয়ে বারবার ইঙ্গিত করেছেন।
কীভাবে ব্যক্তিগত বাহিনী বানালেন প্রিগোশিন?
বেশ কয়েক বছর ধরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রিগোশিন ওয়াগনার গ্রুপকে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। সিরিয়া ছিল প্রথম কোনো যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রিগোশিনের বাহিনী নিজেকে শক্তিশালী যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি মস্কোর সমর্থন এখানে বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কাজের একটি ধরন অনুসরণ করে। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এটিই ওয়াগনারের কাজের শর্ত। ইউক্রেনেও সেটি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। অসংখ্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য এই গ্রুপটি অভিযুক্ত হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কমান্ডারদের অধীনে বাহিনীর সদস্যদের বলি দিতেও কোনো কসুর করে না।
ওয়াগনারের সেনারা আফ্রিকাজুড়ে যুদ্ধ করেছে এবং করছে। রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে প্রায় সব মিশনেই অগ্রভাগে ছিল ওয়াগনার। এর মধ্যে মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং সর্বশেষ সুদান অন্যতম। পশ্চিমা গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর কয়েদিদের বাহিনীতে নিতে প্রিগোশিনকে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে তাঁর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া অর্থ সংস্থান হয় নানাভাবে। ইয়েভজেনি প্রিগোশিন নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ জব্দ করেছে। তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি অডিও বার্তায় তিনি টাকা বোঝাই একটি ভ্যান এবং দুটি বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এই তহবিলগুলো নিহত ওয়াগনার যোদ্ধাদের ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য রাখা হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।
প্রিগোশিন বলেন, ওয়াগনার ১০ বছর ধরে শুধু নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ করছে। এই পদ্ধতি তিনি সব সময় মেনে চলেন।
তবে উদ্ধারকৃত অর্থের সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ দেননি প্রিগোশিন। যদিও রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলো বলেছে, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে প্রিগোশিনের অফিসে এফএসবি অভিযান চালিয়ে ৪০০ কোটি রুবল বা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করেছে।
এখন কোন ধরনের রসদ এবং সমর্থন পাচ্ছেন প্রিগোশিন?
প্রিগোশিনের আচার আচরণ এবং বাহিনী পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। চাপা উত্তেজনা বহুদিন ধরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধ আরও গভীর হয়েছে।
কয়েক মাস আগে থেকে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন বারবার বলে আসছেন, তাঁর সৈন্যরা গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহের সংকটে ভুগছে। অস্ত্র–শস্ত্রের অভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পড়ছে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের কয়েক ডজন মৃতদেহের একটি ভিডিও রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের দায়ী করে আসছেন প্রিগোশিন।
ইউক্রেনে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে বাখমুতের ভয়াবহ যুদ্ধ প্রমাণ করে এই গ্রুপের কাছে ভারী অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান রয়েছে।
গ্রুপের কেউ কেউ ছোট ছোট গ্রুপে মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। যদিও তারা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। অবশ্য ভূমি থেকে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে দেখা গেছে।
তা ছাড়া ওয়াগনারের যোদ্ধাদের যে অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলা, তাতে তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পূর্ণ শক্তির সামনে বেশি সময় টিকে থাকতে পারার কথা না। এরই মধ্যে অবশ্য মস্কো অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াগনার।
জানা যাচ্ছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পুতিনের মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সৈন্যদের থামিয়ে দিতে প্রিগোশিনকে রাজি করান লুকাশেঙ্কো।
বিদ্রোহের শুরুর দিকে প্রিগোশিন রুশ সামরিক বাহিনীর কিছু জেনারেল বিদ্রোহী হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেবে এমনটি আশা করেছিলেন হয়তো। যাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অন্যান্য ব্যর্থতার কারণে কোণঠাসা হয়ে আছেন তাঁদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার অপেক্ষায় হয়তো ছিলেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনারের এই আকস্মিক শোডাউন কীভাবে শেষ হবে তা হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে প্রিগোশিন জয়ী হোন বা ব্যর্থ হোন—বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই ঘটনায় লড়াইয়ের ময়দানে উপকৃত হবে ইউক্রেন।
রাশিয়ার দৃষ্টি, অস্ত্র এবং সৈন্য সবই ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ জোরদার করছে। প্রিগোশিন বলেছেন, তিনি যুদ্ধে এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না। তবে ওয়াগনারের বিদ্রোহ আপাতত ইউক্রেন অভিযান সীমিত করে রাশিয়ার জেনারেলদের ঘরের সমস্যা মেটাতে বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য বাধ্য করবে তাতে সন্দেহ নেই।
এদিকে অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা এরই মধ্যে রোস্তভ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখানেই ওয়াগনারের লোকেরা সামরিক সদর দপ্তর দখল করেছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে জীবন, অস্ত্র এবং সময়ের অপচয় হবে।
বিদ্রোহের শেষটা যা–ই হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি মস্কোকে নিজের ঘরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতেই হবে।
ইউক্রেনের জন্য বার্তা
ওয়াগনার প্রধান অবশ্যই ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ জেনারেলদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের অবস্থানকে তাঁর প্রতি ‘অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছেন প্রিগোশিন। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করছে বা যুদ্ধাপরাধ করছে বলে প্রিগোশিন তাঁদের সমালোচনা করছেন এমনটা নয়।
প্রিগোশিন সেনাবাহিনী এবং নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন এই কারণে যে, তাঁরা যথেষ্ট ‘ভালোভাবে’ যুদ্ধ করছেন না!
রাশিয়ার বাহিনীকে দখলিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে পিছু হটতে হয়েছে। প্রিগোশিন বলেছেন, রুশ সেনা কর্মকর্তারা দুর্বল। কারণ তাঁরা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নন।
তবে ইউক্রেন আক্রমণের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য মস্কোর প্রচারণার সঙ্গে সব সময়ই সুর মিলিয়েছেন প্রিগোশিন। তিনি বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের অধিবাসীরা ‘জিনগতভাবে রুশ’। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়ার জনগণকে যারা বিরক্ত করে এটি তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ।’
সুতরাং প্রিগোশিনকে অবশ্যই যুদ্ধবাজ হিসেবে দেখতে হবে। তিনি ইউক্রেনকে পরাজিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বর্তমান নেতৃত্ব সেটি করতে পারছেন না।
ইউক্রেনের বাইরে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি এবং শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগের একটি দরকারি হাতিয়ার। এর সৈন্যরা মিত্রদের সমর্থন করে এবং যারা মস্কোর বার্তায় কান দেয় না তাদের সতর্ক বার্তা দেয়।
এটি প্রায় অসম্ভব যে, পুতিন দ্রুতই এই ভাড়াটে বাহিনীকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। এমনকি এই বিদ্রোহের বার্তাগুলোকেও তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তবে যে নেতারা ওয়াগনারের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন তাঁরা সম্ভবত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত থাকবেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁরা তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মরতে বাধ্য করছেন। সামরিক নেতৃত্বের সাক্ষাৎ চেয়ে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রিগোশিনের এমন কর্মকাণ্ডকে হঠকারিতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ওয়াগনারের বিদ্রোহ নস্যাৎ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, ওয়াগনারের প্রিগোশিন দেশ ও জনগণের পিঠে ছুরি মেরেছেন।
কে এই ইয়েভজেনি প্রিগোশিন?
ওয়াগনার গ্রুপ সারা বিশ্বে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা সবখানেই এই গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। পুতিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রুপের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। তিনি সাবেক দাগি আসামি। এক সময় হটডগ বিক্রি করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রুপটি নির্মমতা, সহিংসতা এবং নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত।
প্রিগোশিনের জন্ম ১৯৬১ সালে, সেন্ট পিটার্সবার্গে। একটি স্পোর্টিং একাডেমিতে গিয়ে ছিঁচকে অপরাধীদের পাল্লায় পড়েন। ১৯৮০ সালে বেশ কয়েকটি সহিংস ডাকাতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তরুণ বয়সের বেশির ভাগ সময়ই জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পতনের মুখে তখন মুক্তি পান প্রিগোশিন। একটি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে শুরু করেন। শিগগিরই একটি সুপারমার্কেট চেইনের অংশীদারত্ব অর্জন করেন। সেটি ছিল শহরের সেরা রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। এরপর ক্রমেই ভ্লাদিমির পুতিনের আস্থাভাজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হন।
প্রিগোশিন এক দশকেরও বেশি সময় পুতিন সরকারের হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানগুলোতে ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে এসেছেন। সেই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়—বিদেশি অতিথিদের মধ্যে প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে ব্রিটেনের রাজা) এবং জর্জ বুশের জন্য খাবার পরিবেশন করছেন। সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসের চুক্তি এবং অন্য অনেক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার অলিগার্ক পর্যায়ের ধনীদের সমান সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন প্রিগোশিন।
বর্তমান বিদ্রোহের বীজ বোপিত হয়েছে বলতে গেলে প্রায় এক দশক আগে। যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে জবরদখল করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে প্রক্সি বাহিনী পাঠায়। প্রিগোশিন এরপরে ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রুপ পুতিনের হাতকে আরও শক্তিশালী করে। পুতিন আরও সক্রিয় সামরিক হস্তক্ষেপে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততা এড়িয়ে অনেক বেআইনি হস্তক্ষেপ অস্বীকার করার একটি হাতিয়ার পেয়ে যান।
প্রিগোশিন একটি সাইবার বাহিনীও গঠন করেছিলেন। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতে তাঁর ডিজিটাল যোদ্ধাদের মাঠে নামিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে এভাবেই।
গত বছর অবধি প্রিগোশিন সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেছেন, যারা তাঁর কার্যকলাপের বিষয়ে কথা বলেছেন এবং কেবল ক্যাটারিং সার্ভিস এবং অতিথি সেবার কাজ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার বিষয়ে বারবার ইঙ্গিত করেছেন।
কীভাবে ব্যক্তিগত বাহিনী বানালেন প্রিগোশিন?
বেশ কয়েক বছর ধরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রিগোশিন ওয়াগনার গ্রুপকে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। সিরিয়া ছিল প্রথম কোনো যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রিগোশিনের বাহিনী নিজেকে শক্তিশালী যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতি মস্কোর সমর্থন এখানে বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়।
এই ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কাজের একটি ধরন অনুসরণ করে। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এটিই ওয়াগনারের কাজের শর্ত। ইউক্রেনেও সেটি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। অসংখ্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য এই গ্রুপটি অভিযুক্ত হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপ তাদের কমান্ডারদের অধীনে বাহিনীর সদস্যদের বলি দিতেও কোনো কসুর করে না।
ওয়াগনারের সেনারা আফ্রিকাজুড়ে যুদ্ধ করেছে এবং করছে। রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে প্রায় সব মিশনেই অগ্রভাগে ছিল ওয়াগনার। এর মধ্যে মালি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং সর্বশেষ সুদান অন্যতম। পশ্চিমা গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর কয়েদিদের বাহিনীতে নিতে প্রিগোশিনকে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে তাঁর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া অর্থ সংস্থান হয় নানাভাবে। ইয়েভজেনি প্রিগোশিন নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস তাঁর অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ জব্দ করেছে। তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি অডিও বার্তায় তিনি টাকা বোঝাই একটি ভ্যান এবং দুটি বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এই তহবিলগুলো নিহত ওয়াগনার যোদ্ধাদের ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য রাখা হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।
প্রিগোশিন বলেন, ওয়াগনার ১০ বছর ধরে শুধু নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ করছে। এই পদ্ধতি তিনি সব সময় মেনে চলেন।
তবে উদ্ধারকৃত অর্থের সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ দেননি প্রিগোশিন। যদিও রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলো বলেছে, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে প্রিগোশিনের অফিসে এফএসবি অভিযান চালিয়ে ৪০০ কোটি রুবল বা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করেছে।
এখন কোন ধরনের রসদ এবং সমর্থন পাচ্ছেন প্রিগোশিন?
প্রিগোশিনের আচার আচরণ এবং বাহিনী পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। চাপা উত্তেজনা বহুদিন ধরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধ আরও গভীর হয়েছে।
কয়েক মাস আগে থেকে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিন বারবার বলে আসছেন, তাঁর সৈন্যরা গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহের সংকটে ভুগছে। অস্ত্র–শস্ত্রের অভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পড়ছে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের কয়েক ডজন মৃতদেহের একটি ভিডিও রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলদের দায়ী করে আসছেন প্রিগোশিন।
ইউক্রেনে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, বিশেষ করে বাখমুতের ভয়াবহ যুদ্ধ প্রমাণ করে এই গ্রুপের কাছে ভারী অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান রয়েছে।
গ্রুপের কেউ কেউ ছোট ছোট গ্রুপে মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। যদিও তারা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। অবশ্য ভূমি থেকে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে দেখা গেছে।
তা ছাড়া ওয়াগনারের যোদ্ধাদের যে অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলা, তাতে তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পূর্ণ শক্তির সামনে বেশি সময় টিকে থাকতে পারার কথা না। এরই মধ্যে অবশ্য মস্কো অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াগনার।
জানা যাচ্ছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পুতিনের মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সৈন্যদের থামিয়ে দিতে প্রিগোশিনকে রাজি করান লুকাশেঙ্কো।
বিদ্রোহের শুরুর দিকে প্রিগোশিন রুশ সামরিক বাহিনীর কিছু জেনারেল বিদ্রোহী হয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেবে এমনটি আশা করেছিলেন হয়তো। যাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অন্যান্য ব্যর্থতার কারণে কোণঠাসা হয়ে আছেন তাঁদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার অপেক্ষায় হয়তো ছিলেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনারের এই আকস্মিক শোডাউন কীভাবে শেষ হবে তা হয়তো জানা সম্ভব হবে না। তবে প্রিগোশিন জয়ী হোন বা ব্যর্থ হোন—বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই ঘটনায় লড়াইয়ের ময়দানে উপকৃত হবে ইউক্রেন।
রাশিয়ার দৃষ্টি, অস্ত্র এবং সৈন্য সবই ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ জোরদার করছে। প্রিগোশিন বলেছেন, তিনি যুদ্ধে এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না। তবে ওয়াগনারের বিদ্রোহ আপাতত ইউক্রেন অভিযান সীমিত করে রাশিয়ার জেনারেলদের ঘরের সমস্যা মেটাতে বেশি মনোযোগী হওয়ার জন্য বাধ্য করবে তাতে সন্দেহ নেই।
এদিকে অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা এরই মধ্যে রোস্তভ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখানেই ওয়াগনারের লোকেরা সামরিক সদর দপ্তর দখল করেছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে জীবন, অস্ত্র এবং সময়ের অপচয় হবে।
বিদ্রোহের শেষটা যা–ই হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি মস্কোকে নিজের ঘরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতেই হবে।
ইউক্রেনের জন্য বার্তা
ওয়াগনার প্রধান অবশ্যই ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ জেনারেলদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের অবস্থানকে তাঁর প্রতি ‘অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছেন প্রিগোশিন। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করছে বা যুদ্ধাপরাধ করছে বলে প্রিগোশিন তাঁদের সমালোচনা করছেন এমনটা নয়।
প্রিগোশিন সেনাবাহিনী এবং নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন এই কারণে যে, তাঁরা যথেষ্ট ‘ভালোভাবে’ যুদ্ধ করছেন না!
রাশিয়ার বাহিনীকে দখলিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে পিছু হটতে হয়েছে। প্রিগোশিন বলেছেন, রুশ সেনা কর্মকর্তারা দুর্বল। কারণ তাঁরা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নন।
তবে ইউক্রেন আক্রমণের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য মস্কোর প্রচারণার সঙ্গে সব সময়ই সুর মিলিয়েছেন প্রিগোশিন। তিনি বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের অধিবাসীরা ‘জিনগতভাবে রুশ’। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়ার জনগণকে যারা বিরক্ত করে এটি তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ।’
সুতরাং প্রিগোশিনকে অবশ্যই যুদ্ধবাজ হিসেবে দেখতে হবে। তিনি ইউক্রেনকে পরাজিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বর্তমান নেতৃত্ব সেটি করতে পারছেন না।
ইউক্রেনের বাইরে এর প্রভাব কী?
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি এবং শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগের একটি দরকারি হাতিয়ার। এর সৈন্যরা মিত্রদের সমর্থন করে এবং যারা মস্কোর বার্তায় কান দেয় না তাদের সতর্ক বার্তা দেয়।
এটি প্রায় অসম্ভব যে, পুতিন দ্রুতই এই ভাড়াটে বাহিনীকে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। এমনকি এই বিদ্রোহের বার্তাগুলোকেও তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তবে যে নেতারা ওয়াগনারের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন তাঁরা সম্ভবত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত থাকবেন।
দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
৬ ঘণ্টা আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
১৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২৫ জুন ২০২৩
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
১৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২৫ জুন ২০২৩
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
৬ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগেআবদুল বাছেদ, ঢাকা
তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২৫ জুন ২০২৩
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
৬ ঘণ্টা আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
১৭ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন হঠাৎ করেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলের দাবি করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২৫ জুন ২০২৩
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
৬ ঘণ্টা আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
১৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে