Ajker Patrika

লাতিন আমেরিকায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বহর, কী ঘটছে সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস জ্যাসন ডানহ্যাম। ছবি: মার্কিন নেভি
মার্কিন গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস জ্যাসন ডানহ্যাম। ছবি: মার্কিন নেভি

যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার মাদকচক্র মোকাবিলার অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার আশপাশে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এক অভিযানে ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে আসা ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাং পরিচালিত একটি নৌযানও ধ্বংস করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নৌকাটি মাদক বহন করছিল।

ভেনেজুয়েলার আশপাশে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটিতে কোনো ধরনের স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তারাও বলছেন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে ট্রাম্প গত সপ্তাহে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অভিযানের প্রশংসা করেছেন। ভেনেজুয়েলার মাদক পাচার গ্যাং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা খুবই খারাপ আচরণ করছে।’ পুরো আমেরিকা মহাদেশেই কোনো দেশের জলসীমায় অপর কোনো দেশের সামরিক অভিযানের এমন ঘটনা বিরল।

এদিকে, মার্কিন আক্রমণের শঙ্কা নিয়ে ভেনেজুয়েলার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত আলোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের জল্পনা ছড়িয়ে পড়ায় সরকারও সেটি কাজে লাগাচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষকে, বিশেষ করে সমর্থকদের মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। অপরদিকে বিরোধী দল যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসন শেষ হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে তুলে ধরছে।

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের পাশাপাশি ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও পুয়ের্তো রিকোতে মোতায়েন করছে। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য, এই যুদ্ধবিমানগুলো মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে ব্যবহৃত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি এই তথ্য জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র দুটি গাইডেড-মিসাইল বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ—ইউএসএস গ্রেভলি ও ইউএসএস জেসন ডানহাম মোতায়েন করেছে। লাতিন আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থান করছে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস স্যাম্পসন এবং ইউএসএস লেক এরি ক্রুজার।

এ ছাড়া তিনটি উভচর আক্রমণকারী জাহাজ—ইউএসএস ইও জিমা, ইউএসএস সান আন্তোনিও ও ইউএসএস ফোর্ট লডারডেলও ক্যারিবিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এসব যুদ্ধজাহাজে ৪ হাজারের বেশি নাবিক ও মেরিন সেনা আছে। তবে এই জাহাজগুলো ঠিক কোথায় যাচ্ছে তা প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল ড্যারিল কডল জানিয়েছেন, মার্কিন জাহাজগুলো দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা-সংক্রান্ত মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে সহায়তা দিতে। তবে তিনি এসব যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সামরিক লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।

এই মোতায়েন এমন সময়ে হলো, যখন ট্রাম্প ক্রমশ মাদকচক্র দমনে মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যবহার সমর্থন করছেন। তিনি ফেন্টানিলসহ অন্যান্য অবৈধ মাদককে যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করছেন। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ত্রেন দে আরাগুয়া, এল সালভাদরের এমএস-১৩ এবং মেক্সিকোভিত্তিক ছয়টি গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এরা মাদক পাচার, অভিবাসী চোরাচালান ও সহিংসতা ছড়িয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে জড়িত।

লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের গবেষক ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেছেন, এ ধরনের মোতায়েন, ত্রেন দে আরাগুয়াকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার পদক্ষেপ এবং মাদুরোর মাথার দাম দ্বিগুণ করার ঘোষণা আসলে হোয়াইট হাউসের কৌশল। এর লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের খুশি করা ও সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভয়ে ভীত করে দলছুট করা। তবে তিনি মনে করেন, বাস্তবে ভেনেজুয়েলায় আক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক মাদুরোকে প্রশ্ন করেছিলেন, মার্কিন ‘মেরিন বাহিনী এসে আপনার সরকার পতন ঘটাবে’–এমন শঙ্কা নিয়ে তাঁর মত কী। জবাবে মাদুরো বলেন, ভেনেজুয়েলার ৯০ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হুমকি প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেনেজুয়েলাবাসী আমাদের আইন মেনে চলি, এই ভূমিকে কেউ ছুঁতে পারবে না।’

মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদক পাচারের অভিযোগও নাকচ করেছেন। তিনি দাবি করেন, প্রতিবেশী কলম্বিয়ার মতো ভেনেজুয়েলায় কোকা চাষ বা কোকেন উৎপাদন নেই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা এখন ধ্বংস করতে চাওয়া দেশগুলোকে আর কমিউনিস্ট বলে না। সোভিয়েত আমলে সেটাই ছিল অভিযোগ। পরে তারা ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়াকে সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করেছিল। এখন নতুন অদ্ভুত অভিযোগ হলো মাদক পাচার।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাদা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অনুরোধ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সব ধরনের বৈরী পদক্ষেপ ও হুমকি বন্ধ করার আহ্বান জানাতে।

ভেনেজুয়েলার সরকারি দল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে মিলিশিয়ার সদস্য সংখ্যা ৪৫ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক কম। কারণ, মাদুরো সরকারের ওপর জনসমর্থন ভেঙে পড়েছে। মাদুরোর সমর্থকসহ লাখো মানুষ ভালো জীবনযাত্রার খোঁজে দেশ ছেড়েছে।

মিলিশিয়ার এই সদস্য সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে বেমানান। নির্বাচনে মাদুরো জয়ী হয়েছেন বলে সরকারি কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও বিরোধী শিবিরের বিস্তারিত হিসাব বলছে, তিনি হেরেছেন। সরকারি ফলাফলে মাদুরো ৬৪ লাখ ভোট পেয়েছেন বলা হলেও বিরোধীদের প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী তিনি ৩৪ লাখ ভোটে হেরে যান।

বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোর সমর্থিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেসকে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ বৈধ বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাচাদো ফক্স নিউজে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এখনই পরিবর্তনের সময়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে মাচাদো বলেন, ভেনেজুয়েলাবাসী সরকারের আহ্বান অমান্য করে মিলিশিয়ায় যোগ দিতে হাজির হয়নি। তিনি লিখেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার ফাঁকা চত্বরগুলো আজ যে ভবিষ্যতের আগমনবার্তা দিচ্ছে, তা খুব স্পষ্ট।’ তবে ভেনেজুয়েলাবাসীর কাছে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি নতুন কিছু নয়।

চ্যাথাম হাউসের সাবাতিনি বিরোধীদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, তারা জনগণের আশা নিয়ে খেলছে এবং আবারও ভেনেজুয়েলায় ‘আক্রমণ আসন্ন’ এই ফাঁদে আটকে পড়ছে বিরোধীরা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে বিরোধীরা সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা নতুন সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।’

তথ্যসূত্র: এপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

এলাকার খবর
Loading...