অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অভ্যন্তরীণ বৈষম্য এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ—বিশ্বব্যাপী একটি অত্যন্ত কৌশলগত অঞ্চল হলেও এর অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা অনেকটাই কম। বিশাল জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৃহৎ বাজার থাকা সত্ত্বেও আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বলতে গেলে অনুল্লেখযোগ্য। এখন এই দেশগুলো নিজেদের মতো করে উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে ঝুঁকতে থাকলে সম্ভাব্য ঐক্য ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামগ্রিক বাণিজ্য মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার। এটি প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য ৬৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় খুবই কম, যেখানে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৩০ বিলিয়নের বেশি!
যদিও দক্ষিণ এশিয়া ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে ‘প্রাচীন এশিয়া’ বলা যেতে পারে। এই অঞ্চল খনিজ জ্বালানিসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই সম্পর্ক যতই কৌশলগত হোক না কেন, এই অঞ্চল অভ্যন্তরীণভাবে বেশ দুর্বল।
এই অঞ্চলে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র অঞ্চল নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
অর্থনৈতিক বিভাজন ও রাজনীতি
ভারত: দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মোট অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান রাখে ভারত, যা দেশটিকে অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ার মোট দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণ ২০১২ সালে ছিল ২২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, সেটি ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৪১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বিপুল ঋণের চাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের অর্থনীতি রীতিমতো খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। এই তিন দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি এবং উচ্চ বৈদেশিক ঋণের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক): ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের কারণে সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না। বাংলাদেশ বারবার সার্ককে সক্রিয় করার জন্য আহ্বান জানালেও মূলত ভারতের অনীহার কারণেই এই আঞ্চলিক জোট নিয়ে তেমন আশা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বিপরীতে সার্ককে নিষ্ক্রিয় রেখেই ভারত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করেছে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) দিকে। সার্ক যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ নিয়ে গঠিত, সেখানে বিমসটেক মূলত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত।
গণবিক্ষোভ ও পরিবর্তন
–বিপুল বৈদেশিক ঋণ ও বৈষম্যের কারণে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপক্ষের পতন ঘটে। পরে ৩ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ বেলআউট (অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার) নেওয়া হয়।
–বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও গণবিক্ষোভের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অব্যাহত।
এই সমস্যাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঐক্য ও সংহতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন
অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা ও ঐক্যের অভাবের কারণে দক্ষিণ এশিয়া উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গুরুত্ব দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে ১৭ মিলিয়নেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় কর্মী কর্মরত আছেন। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১৯০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে, যা দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৮০ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে, যা মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে আসে।
একই সঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তান খাদ্য সুরক্ষায় অবদান রাখে।
গত কয়েক দশকে ভারত উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারতের উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে এই সম্পর্কের প্রভাব কিছুটা কমেছে।
তবে ভারত উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শুধু বাণিজ্য নয়, বরং শক্তি, প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, খাদ্য ও মহাকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্নীতির কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেও উপসাগরীয় দেশগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
আর শ্রীলঙ্কা খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশ শ্রম রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ উপসাগরীয় দেশগুলোর থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
তবে একই সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও উচ্চ বৈদেশিক ঋণের চাপে রয়েছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি এসব দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার সক্ষমতাকে সীমিত করছে।
সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সংহতির দুর্বলতা এবং বৈদেশিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের চ্যালেঞ্জ এবং শ্রমবাজার, বিনিয়োগ ও জ্বালানি নিরাপত্তা—এসব দিক উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক লাভের দিকেই নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
দ্য আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট ইন ওয়াশিংটন–এ প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অভ্যন্তরীণ বৈষম্য এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ—বিশ্বব্যাপী একটি অত্যন্ত কৌশলগত অঞ্চল হলেও এর অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা অনেকটাই কম। বিশাল জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৃহৎ বাজার থাকা সত্ত্বেও আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বলতে গেলে অনুল্লেখযোগ্য। এখন এই দেশগুলো নিজেদের মতো করে উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে ঝুঁকতে থাকলে সম্ভাব্য ঐক্য ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামগ্রিক বাণিজ্য মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার। এটি প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য ৬৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় খুবই কম, যেখানে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৩০ বিলিয়নের বেশি!
যদিও দক্ষিণ এশিয়া ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে ‘প্রাচীন এশিয়া’ বলা যেতে পারে। এই অঞ্চল খনিজ জ্বালানিসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই সম্পর্ক যতই কৌশলগত হোক না কেন, এই অঞ্চল অভ্যন্তরীণভাবে বেশ দুর্বল।
এই অঞ্চলে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র অঞ্চল নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
অর্থনৈতিক বিভাজন ও রাজনীতি
ভারত: দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মোট অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান রাখে ভারত, যা দেশটিকে অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ার মোট দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণ ২০১২ সালে ছিল ২২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, সেটি ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৪১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বিপুল ঋণের চাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের অর্থনীতি রীতিমতো খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। এই তিন দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি এবং উচ্চ বৈদেশিক ঋণের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক): ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের কারণে সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না। বাংলাদেশ বারবার সার্ককে সক্রিয় করার জন্য আহ্বান জানালেও মূলত ভারতের অনীহার কারণেই এই আঞ্চলিক জোট নিয়ে তেমন আশা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বিপরীতে সার্ককে নিষ্ক্রিয় রেখেই ভারত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করেছে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) দিকে। সার্ক যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ নিয়ে গঠিত, সেখানে বিমসটেক মূলত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত।
গণবিক্ষোভ ও পরিবর্তন
–বিপুল বৈদেশিক ঋণ ও বৈষম্যের কারণে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপক্ষের পতন ঘটে। পরে ৩ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ বেলআউট (অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার) নেওয়া হয়।
–বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও গণবিক্ষোভের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অব্যাহত।
এই সমস্যাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঐক্য ও সংহতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন
অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা ও ঐক্যের অভাবের কারণে দক্ষিণ এশিয়া উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গুরুত্ব দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে ১৭ মিলিয়নেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় কর্মী কর্মরত আছেন। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১৯০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে, যা দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৮০ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে, যা মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে আসে।
একই সঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তান খাদ্য সুরক্ষায় অবদান রাখে।
গত কয়েক দশকে ভারত উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারতের উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে এই সম্পর্কের প্রভাব কিছুটা কমেছে।
তবে ভারত উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শুধু বাণিজ্য নয়, বরং শক্তি, প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, খাদ্য ও মহাকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্নীতির কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেও উপসাগরীয় দেশগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
আর শ্রীলঙ্কা খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশ শ্রম রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ উপসাগরীয় দেশগুলোর থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
তবে একই সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও উচ্চ বৈদেশিক ঋণের চাপে রয়েছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি এসব দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার সক্ষমতাকে সীমিত করছে।
সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সংহতির দুর্বলতা এবং বৈদেশিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের চ্যালেঞ্জ এবং শ্রমবাজার, বিনিয়োগ ও জ্বালানি নিরাপত্তা—এসব দিক উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক লাভের দিকেই নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
দ্য আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট ইন ওয়াশিংটন–এ প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে
ডিজিটাল যুগে আমরা কেবল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না—আমরা প্রযুক্তির কাছে নিজেদের মনোযোগ, অনুভূতি, এমনকি চিন্তার স্বাধীনতাও তুলে দিচ্ছি। অ্যালগরিদম এখন আমাদের সিদ্ধান্ত, সম্পর্ক ও চেতনার গভীর স্তরে হস্তক্ষেপ করছে। শোষণ আজ আর কেবল শ্রমের ওপর নির্ভরশীল নয়—এখন তা মন ও মনোযোগের বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে।
২ দিন আগেপুতিন যখন যুদ্ধে জয় নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখাচ্ছেন, ঠিক তখনই রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন। এগুলোর মধ্যে কিছু পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমানও ছিল।
৩ দিন আগেবিশ্বের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও ‘রুশ আগ্রাসনের নতুন যুগে’ প্রতিরক্ষা খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। গত সোমবার (২ জুন) প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় (এসডিআর) উঠে এসেছে পারমাণবিক অস্ত্র, সাবমেরিন ও গোলাবারুদ তৈরির নতুন কারখানায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা।
৩ দিন আগেসত্য কী? অধিকাংশ মানুষের কাছে সত্য মানে হলো, যা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মিলে। অবশ্য আজকাল ‘বিকল্প সত্য’ নামে নতুন এক ধারণা অনেকে হাজির করছেন। সে যাই হোক, অভিজ্ঞতা বলে, সত্য শুধু বস্তুনিষ্ঠ হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সত্য প্রকাশের উপযুক্ত লগ্ন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই জরুরি।
৩ দিন আগে