Ajker Patrika

সাংবাদিকের জীবন

সম্পাদকীয়
সাংবাদিকের জীবন

ইদানীং দেখা যায় কেউ কেউ সংবাদপত্রে চাকরি করে গাড়ি-বাড়ি করে ফেলেছেন। কোনো কোনো সংবাদপত্র সাংবাদিকদের 
জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করে। তবে সাধারণ সাংবাদিকেরা সচ্ছল জীবনযাপনের সুযোগ কমই পান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম খুব দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে খাদ্যাভাবও দেখা গেল। জাপানিরা এসে যেন এ দেশটা দখল করে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে বিদেশি সৈন্য ভাড়া করল ব্রিটিশরা। তাদের জন্য খাদ্য মজুত করা হলো। আবার জাপানি সৈন্যরা বার্মা পর্যন্ত পৌঁছে গেলে ব্রিটিশ সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে বাংলায় উৎপন্ন ধান, চাল নষ্ট করে ফেলল। এ সময় যে দুর্ভিক্ষ হয়, তা ছিল ভয়াবহ। একেই বলে পঞ্চাশের (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) মন্বন্তর।

আবুল কালাম শামসুদ্দীন সে সময় দৈনিক আজাদে বেতন পেতেন এক শ টাকা। খাবার জন্য চাল কিনতেই সে টাকা ফুরিয়ে যেত। অন্য পত্রিকাগুলো তাদের কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিলেও আজাদ পত্রিকায় সে লক্ষণ দেখা গেল না। বেতন বাড়ানোর আবেদন-নিবেদন করতে হবে, সেটাও মাথায় আসেনি আবুল কালাম শামসুদ্দীনের। মুজিবুর রহমান খাঁ তখন বেতন পেতেন আশি টাকা। ১৯৪৩ সালে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটাই চরমে উঠেছিল যে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ল। তখন আবুল কালাম শামসুদ্দীন আর মুজিবুর রহমান খাঁ যুক্তি করে ঠিক করলেন, কর্তৃপক্ষের যখন এদিকে নজর নেই, তখন স্ত্রী-পুত্র নিয়ে অনাহারে না মরে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাওয়াই ভালো। দুজনে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখলেন, ‘১ জানুয়ারি থেকে আমরা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাচ্ছি। আমাদের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়োগ দিন।’

মালিকপক্ষের খায়রুল আনাম খাঁ এসে বললেন, ‘এ কী কথা! আপনাদের এত অভাব, আমাকে বলেননি কেন?’
বলে দুজনের পকেটে পঞ্চাশটা করে টাকা গুঁজে দিলেন। বললেন, এরপর থেকে প্রতি মাসে বাড়তি পঞ্চাশ টাকা করে তাঁরা পাবেন। 

সূত্র: আবুল কালাম শামসুদ্দীন, অতীত দিনের স্মৃতি, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত