জাহীদ রেজা নূর

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।
সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।
সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:
‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’
১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।
সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর। যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।
স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?
সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।
এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।
মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’
প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।
গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।
রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’
১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’
বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’
বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’
লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।
২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’
`প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নতুন আবির্ভাবে
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।’
একটু বলেন, একটু থামেন।
‘বৎসর বৎসর চলে গেল
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়
কে তুমি?
পেল না উত্তর।’
এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।
নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’
৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—
তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জালে
হে ছলনাময়ী—
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভাণ্ডারে…।’
কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।
সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।
এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।
২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।
পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।
সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।
সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:
‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’
১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।
সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর। যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।
স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?
সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।
এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।
মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’
প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।
গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।
রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’
১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’
বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’
বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’
লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।
২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’
`প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নতুন আবির্ভাবে
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।’
একটু বলেন, একটু থামেন।
‘বৎসর বৎসর চলে গেল
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়
কে তুমি?
পেল না উত্তর।’
এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।
নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’
৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—
তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জালে
হে ছলনাময়ী—
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভাণ্ডারে…।’
কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।
সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।
এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।
২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।
পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’
জাহীদ রেজা নূর

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।
সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।
সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:
‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’
১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।
সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর। যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।
স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?
সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।
এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।
মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’
প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।
গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।
রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’
১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’
বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’
বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’
লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।
২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’
`প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নতুন আবির্ভাবে
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।’
একটু বলেন, একটু থামেন।
‘বৎসর বৎসর চলে গেল
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়
কে তুমি?
পেল না উত্তর।’
এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।
নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’
৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—
তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জালে
হে ছলনাময়ী—
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভাণ্ডারে…।’
কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।
সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।
এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।
২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।
পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।
সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।
সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:
‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’
১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।
সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর। যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।
স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?
সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।
এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।
মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’
প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।
১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।
গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।
রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’
১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’
বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’
বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’
লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।
২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’
`প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নতুন আবির্ভাবে
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।’
একটু বলেন, একটু থামেন।
‘বৎসর বৎসর চলে গেল
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়
কে তুমি?
পেল না উত্তর।’
এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।
নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’
৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—
তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জালে
হে ছলনাময়ী—
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভাণ্ডারে…।’
কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।
সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।
এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।
২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।
পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
০৮ মে ২০২৩
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
০৮ মে ২০২৩
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
০৮ মে ২০২৩
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?
০৮ মে ২০২৩
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে