Ajker Patrika

‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’: জন্মদিনে মৃত্যুদিনের গান ও কবিতা

জাহীদ রেজা নূর
‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’: জন্মদিনে মৃত্যুদিনের গান ও কবিতা

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?

কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।

সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।

সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:

‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’

১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।

সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর।  যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।

কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।

স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?

সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।

রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।

এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর  কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।

মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’

প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।

১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।

গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।

রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’

১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’

বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’

বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’

লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।

২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’

`প্রথম দিনের সূর্য

প্রশ্ন করেছিল

সত্তার নতুন আবির্ভাবে

কে তুমি?

মেলে নি উত্তর।’

একটু বলেন, একটু থামেন।

‘বৎসর বৎসর চলে গেল

দিবসের শেষ সূর্য

শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল

পশ্চিম সাগর তীরে

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়

কে তুমি?

পেল না উত্তর।’

এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।

নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’

৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—

তোমার সৃষ্টির পথ

রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনা জালে

হে ছলনাময়ী—

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে

আপন ভাণ্ডারে…।’

কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।

সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।

এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।

২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।

পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,

‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে

তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত