
অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। আছে ফ্রস্টবাইটের (অস্বাভাবিক ঠান্ডায় শরীরে সৃষ্টি হওয়া জখম) ঝুঁকি। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
উপকূল ধরে অ্যান্টার্কটিকার শেষ মাথায় পৌঁছার সিদ্ধান্ত নেন আওসলন। বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয়ের সংকল্প নিয়ে তাঁর যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, বার্কনার দ্বীপ থেকে।
আওসলনের মতে এ ধরনের অভিযানের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোটা অভিযানে সবচেয়ে কঠিন অংশগুলির একটি এটি। বরফরাজ্যে প্রথম কিছুটা পথ এগোনো খুব কঠিন। মোটামুটি ১০ থেকে ১৪ দিন লাগে বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি দেখে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের একটি সম্ভাব্য পথ ঠিক করেন আওলসন। এটি তাঁকে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার পেনসাকোলা পর্বতমালার ডুফেক ম্যাসিফ ধরে নিয়ে যাবে।
সামনে ধীরে ধীরে উঠে যাওয়া বরফের এলাকা দেখে তাঁর মনে হলো পথের কোনো শেষ নেই। ধীরে ধীরে বরফরাজ্যে ওপরের দিকে উঠছিলেন। প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস শরীরের হাড়মজ্জা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো গাছ বা স্থাপনা নেই। আদিগন্ত চলে যাওয়া এই ভূপ্রকৃতিতে ব্যতিক্রম বলতে তুষার স্তূপ। এগুলোর কোনো কোনোটা উচ্চতায় ছয় ফুট। বাতাসের সঙ্গে ধেয়ে আসা তুষারে জন্ম এগুলোর।
দক্ষিণ মেরুর বেস ক্যাম্প তাঁর জন্য একটি লোভনীয় ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেখানে না থামার সিদ্ধান্ত নিলেন আওসলন। কারণ একবার ভেতরে ঢুকে আরাম পেয়ে গেলে এগিয়ে যাওয়াটি কঠিন হয়ে পড়বে।
দক্ষিণ মেরুর চারপাশের মালভূমি শীতল, উচ্চতাও বেশি। তবে বাতাস তুলনামূলক কম। পর্বত এলাকার কাছাকাছি এলে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঝড়ো বাতাসের মোকাবিলা করতে হয়। অবশ্য বোর্গে আওসলনের জন্য এই বাতাস শাপে বর হয়ে ওঠে। এক ধরনের ঘুড়ির সাহায্যে বাতাসের সহায়তা নিয়ে দ্রুতগতিতে মাইলের পর মাইল স্কি করে যান তিনি। অবশ্য বাধা সৃষ্টি করে পথে জমা বরফের স্তূপগুলো।
প্রবল গতিতে চলার সময় আচমকা কোনো একটায় হোঁচট খেলেই কম্ম সারা। পা ভাঙার আশঙ্কা প্রবল। আর একাকী এই অভিযানে এমন দুর্ঘটনার একটাই অর্থ—নিশ্চিত মৃত্যু।
দুপাশের পর্বতরাজ্যের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার জন্য এক্সেল হোইবার্গ হিমবাহের পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর ধরবেন বায়েরডমোর হিমবাহের পথ। কিছু ফাটল থাকলেও তুলনামূলক নিরাপদ পথটি। ১৯১১ সালে বিখ্যাত অভিযাত্রী অ্যামুন্ডসেন এই পথ ধরেছিলেন।
এক্সেল হেইবার্গ হিমবাহের পাদদেশে বরফের বিশাল একটি তাক আছে। এটি রস আইস শেলফ নামে পরিচিত। এখান থেকে ম্যাকমার্ডো যাওয়ার পথে রস দ্বীপের ঠিক নাকের ডগায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। সেখানে পৌঁছাতে ফাটলে ভরা একটি বিপজ্জনক এলাকা পেরোতে হয়। বড় সমস্যা, বরফরাজ্যের এই ফাটল বা চিড়গুলো কখনো কখনো চোখ এড়িয়ে যায়। খুব পাতলা বরফের পর্দা দিয়ে আবৃত থাকায় সতর্ক থাকতে হয়।
তবে বোর্গে আওসলন সঙ্গে বারো ফুটি কয়েকটি টাইটেনিয়ামের দণ্ড নিয়েছিলেন। এগুলো রেখেছিলেন স্লেজগাড়ি ও নিজের মাঝখানে। বারকনার দ্বীপে একবার টাইটেনিয়ামের এই দণ্ড তাঁর জীবন বাঁচায়। বরফের একটা পাতলা আবরণ অতিক্রমের সময় ধসে পড়ে সেটি। তবে এই দণ্ডগুলো বরফে আটকে কোনোভাবে রেহাই পান।
অ্যান্টার্কটিকার শেষ প্রান্ত স্কট বেসে আওসলন পৌঁছান ১৯৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। আগের বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু করা ওই যাত্রায় তিনি পেরোন ১ হাজার ৮৬৪ মাইল। সৌভাগ্যক্রমে স্কট বেসের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় জায়গাটিতে পৌঁছান তিনি। প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারিও এ আয়োজনে অংশ নিতে সেখানে ছিলেন। হিলারির সঙ্গেই হেলিকপ্টারে চেপে দক্ষিণ মেরু যান আওসলন। পরে আওসলন বলেন, ‘যে দূরত্ব পেরোতে আমার এক মাসের বেশি লাগল, সেটা উড়ে গেলাম আড়াই ঘণ্টায়।
অবশ্য আওসলন যাত্রা ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়, নাকি ১৭ জানুয়ারি—এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও অনেক গণমাধ্যম যাত্রাটি ১৮ জানুয়ারি শেষ হয় বলে উল্লেখ করলেও গার্ডিয়ানের এক লেখায় আওসলন তারিখটা ১৭ জানুয়ারি বলে উল্লেখ করেন।
আওসলন ওই অভিযানকে দেখা হয় কোনো সাহায্য ছাড়া প্রথম একাকী কারও অ্যান্টার্কটিকা বিজয় হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কলিন ও’ব্রেড ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের পর দাবি করেন, তিনিই প্রথম মানুষ হিসেবে কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন। অনেকে তাঁর দাবিটাকে গুরুত্বও দেন। কারণ তিনি তাঁর স্লেজটা নিজেই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন গোটা যাত্রাপথে। অন্যদিকে আওসলন একটি ঘুড়ি ব্যবহার করে বাতাসের সাহায্যে এগিয়েছিলেন।
অবশ্য আরও নানা ধরনের রেকর্ড আছে রোমাঞ্চপ্রেমী এই মানুষটির ঝুলিতে। ১৯৯০ সালের ৪ মে আর্লিং কগে ও আওলসন বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে উত্তর মেরু পৌঁছান। কানাডার এলেসমেরে দ্বীপ থেকে ৮০০ মাইল পথ স্কিইং করে ৫৮ দিনে উত্তর মেরুতে পৌঁছান তাঁরা।
এমন মানুষের বিয়েটা তো অন্যদের মতো হতে পারে না, কি বলেন? ২০১২ সালে বিয়ে করেন তিনি, উত্তর মেরুতে। অবশ্য এ যাত্রায় ২০-৩০ জন সঙ্গী-সাথিও ও কনে হেগে আওসলেনসহ উত্তর মেরু পৌঁছেছিলেন হেলিকপ্টারে।
সূত্র: গার্ডিয়ান, ডিসকভারি. কম, উইকিপিডিয়া

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। আছে ফ্রস্টবাইটের (অস্বাভাবিক ঠান্ডায় শরীরে সৃষ্টি হওয়া জখম) ঝুঁকি। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
উপকূল ধরে অ্যান্টার্কটিকার শেষ মাথায় পৌঁছার সিদ্ধান্ত নেন আওসলন। বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয়ের সংকল্প নিয়ে তাঁর যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, বার্কনার দ্বীপ থেকে।
আওসলনের মতে এ ধরনের অভিযানের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোটা অভিযানে সবচেয়ে কঠিন অংশগুলির একটি এটি। বরফরাজ্যে প্রথম কিছুটা পথ এগোনো খুব কঠিন। মোটামুটি ১০ থেকে ১৪ দিন লাগে বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি দেখে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের একটি সম্ভাব্য পথ ঠিক করেন আওলসন। এটি তাঁকে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার পেনসাকোলা পর্বতমালার ডুফেক ম্যাসিফ ধরে নিয়ে যাবে।
সামনে ধীরে ধীরে উঠে যাওয়া বরফের এলাকা দেখে তাঁর মনে হলো পথের কোনো শেষ নেই। ধীরে ধীরে বরফরাজ্যে ওপরের দিকে উঠছিলেন। প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস শরীরের হাড়মজ্জা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো গাছ বা স্থাপনা নেই। আদিগন্ত চলে যাওয়া এই ভূপ্রকৃতিতে ব্যতিক্রম বলতে তুষার স্তূপ। এগুলোর কোনো কোনোটা উচ্চতায় ছয় ফুট। বাতাসের সঙ্গে ধেয়ে আসা তুষারে জন্ম এগুলোর।
দক্ষিণ মেরুর বেস ক্যাম্প তাঁর জন্য একটি লোভনীয় ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেখানে না থামার সিদ্ধান্ত নিলেন আওসলন। কারণ একবার ভেতরে ঢুকে আরাম পেয়ে গেলে এগিয়ে যাওয়াটি কঠিন হয়ে পড়বে।
দক্ষিণ মেরুর চারপাশের মালভূমি শীতল, উচ্চতাও বেশি। তবে বাতাস তুলনামূলক কম। পর্বত এলাকার কাছাকাছি এলে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঝড়ো বাতাসের মোকাবিলা করতে হয়। অবশ্য বোর্গে আওসলনের জন্য এই বাতাস শাপে বর হয়ে ওঠে। এক ধরনের ঘুড়ির সাহায্যে বাতাসের সহায়তা নিয়ে দ্রুতগতিতে মাইলের পর মাইল স্কি করে যান তিনি। অবশ্য বাধা সৃষ্টি করে পথে জমা বরফের স্তূপগুলো।
প্রবল গতিতে চলার সময় আচমকা কোনো একটায় হোঁচট খেলেই কম্ম সারা। পা ভাঙার আশঙ্কা প্রবল। আর একাকী এই অভিযানে এমন দুর্ঘটনার একটাই অর্থ—নিশ্চিত মৃত্যু।
দুপাশের পর্বতরাজ্যের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার জন্য এক্সেল হোইবার্গ হিমবাহের পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর ধরবেন বায়েরডমোর হিমবাহের পথ। কিছু ফাটল থাকলেও তুলনামূলক নিরাপদ পথটি। ১৯১১ সালে বিখ্যাত অভিযাত্রী অ্যামুন্ডসেন এই পথ ধরেছিলেন।
এক্সেল হেইবার্গ হিমবাহের পাদদেশে বরফের বিশাল একটি তাক আছে। এটি রস আইস শেলফ নামে পরিচিত। এখান থেকে ম্যাকমার্ডো যাওয়ার পথে রস দ্বীপের ঠিক নাকের ডগায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। সেখানে পৌঁছাতে ফাটলে ভরা একটি বিপজ্জনক এলাকা পেরোতে হয়। বড় সমস্যা, বরফরাজ্যের এই ফাটল বা চিড়গুলো কখনো কখনো চোখ এড়িয়ে যায়। খুব পাতলা বরফের পর্দা দিয়ে আবৃত থাকায় সতর্ক থাকতে হয়।
তবে বোর্গে আওসলন সঙ্গে বারো ফুটি কয়েকটি টাইটেনিয়ামের দণ্ড নিয়েছিলেন। এগুলো রেখেছিলেন স্লেজগাড়ি ও নিজের মাঝখানে। বারকনার দ্বীপে একবার টাইটেনিয়ামের এই দণ্ড তাঁর জীবন বাঁচায়। বরফের একটা পাতলা আবরণ অতিক্রমের সময় ধসে পড়ে সেটি। তবে এই দণ্ডগুলো বরফে আটকে কোনোভাবে রেহাই পান।
অ্যান্টার্কটিকার শেষ প্রান্ত স্কট বেসে আওসলন পৌঁছান ১৯৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। আগের বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু করা ওই যাত্রায় তিনি পেরোন ১ হাজার ৮৬৪ মাইল। সৌভাগ্যক্রমে স্কট বেসের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় জায়গাটিতে পৌঁছান তিনি। প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারিও এ আয়োজনে অংশ নিতে সেখানে ছিলেন। হিলারির সঙ্গেই হেলিকপ্টারে চেপে দক্ষিণ মেরু যান আওসলন। পরে আওসলন বলেন, ‘যে দূরত্ব পেরোতে আমার এক মাসের বেশি লাগল, সেটা উড়ে গেলাম আড়াই ঘণ্টায়।
অবশ্য আওসলন যাত্রা ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়, নাকি ১৭ জানুয়ারি—এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও অনেক গণমাধ্যম যাত্রাটি ১৮ জানুয়ারি শেষ হয় বলে উল্লেখ করলেও গার্ডিয়ানের এক লেখায় আওসলন তারিখটা ১৭ জানুয়ারি বলে উল্লেখ করেন।
আওসলন ওই অভিযানকে দেখা হয় কোনো সাহায্য ছাড়া প্রথম একাকী কারও অ্যান্টার্কটিকা বিজয় হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কলিন ও’ব্রেড ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের পর দাবি করেন, তিনিই প্রথম মানুষ হিসেবে কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন। অনেকে তাঁর দাবিটাকে গুরুত্বও দেন। কারণ তিনি তাঁর স্লেজটা নিজেই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন গোটা যাত্রাপথে। অন্যদিকে আওসলন একটি ঘুড়ি ব্যবহার করে বাতাসের সাহায্যে এগিয়েছিলেন।
অবশ্য আরও নানা ধরনের রেকর্ড আছে রোমাঞ্চপ্রেমী এই মানুষটির ঝুলিতে। ১৯৯০ সালের ৪ মে আর্লিং কগে ও আওলসন বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে উত্তর মেরু পৌঁছান। কানাডার এলেসমেরে দ্বীপ থেকে ৮০০ মাইল পথ স্কিইং করে ৫৮ দিনে উত্তর মেরুতে পৌঁছান তাঁরা।
এমন মানুষের বিয়েটা তো অন্যদের মতো হতে পারে না, কি বলেন? ২০১২ সালে বিয়ে করেন তিনি, উত্তর মেরুতে। অবশ্য এ যাত্রায় ২০-৩০ জন সঙ্গী-সাথিও ও কনে হেগে আওসলেনসহ উত্তর মেরু পৌঁছেছিলেন হেলিকপ্টারে।
সূত্র: গার্ডিয়ান, ডিসকভারি. কম, উইকিপিডিয়া

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। আছে ফ্রস্টবাইটের (অস্বাভাবিক ঠান্ডায় শরীরে সৃষ্টি হওয়া জখম) ঝুঁকি। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
উপকূল ধরে অ্যান্টার্কটিকার শেষ মাথায় পৌঁছার সিদ্ধান্ত নেন আওসলন। বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয়ের সংকল্প নিয়ে তাঁর যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, বার্কনার দ্বীপ থেকে।
আওসলনের মতে এ ধরনের অভিযানের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোটা অভিযানে সবচেয়ে কঠিন অংশগুলির একটি এটি। বরফরাজ্যে প্রথম কিছুটা পথ এগোনো খুব কঠিন। মোটামুটি ১০ থেকে ১৪ দিন লাগে বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি দেখে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের একটি সম্ভাব্য পথ ঠিক করেন আওলসন। এটি তাঁকে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার পেনসাকোলা পর্বতমালার ডুফেক ম্যাসিফ ধরে নিয়ে যাবে।
সামনে ধীরে ধীরে উঠে যাওয়া বরফের এলাকা দেখে তাঁর মনে হলো পথের কোনো শেষ নেই। ধীরে ধীরে বরফরাজ্যে ওপরের দিকে উঠছিলেন। প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস শরীরের হাড়মজ্জা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো গাছ বা স্থাপনা নেই। আদিগন্ত চলে যাওয়া এই ভূপ্রকৃতিতে ব্যতিক্রম বলতে তুষার স্তূপ। এগুলোর কোনো কোনোটা উচ্চতায় ছয় ফুট। বাতাসের সঙ্গে ধেয়ে আসা তুষারে জন্ম এগুলোর।
দক্ষিণ মেরুর বেস ক্যাম্প তাঁর জন্য একটি লোভনীয় ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেখানে না থামার সিদ্ধান্ত নিলেন আওসলন। কারণ একবার ভেতরে ঢুকে আরাম পেয়ে গেলে এগিয়ে যাওয়াটি কঠিন হয়ে পড়বে।
দক্ষিণ মেরুর চারপাশের মালভূমি শীতল, উচ্চতাও বেশি। তবে বাতাস তুলনামূলক কম। পর্বত এলাকার কাছাকাছি এলে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঝড়ো বাতাসের মোকাবিলা করতে হয়। অবশ্য বোর্গে আওসলনের জন্য এই বাতাস শাপে বর হয়ে ওঠে। এক ধরনের ঘুড়ির সাহায্যে বাতাসের সহায়তা নিয়ে দ্রুতগতিতে মাইলের পর মাইল স্কি করে যান তিনি। অবশ্য বাধা সৃষ্টি করে পথে জমা বরফের স্তূপগুলো।
প্রবল গতিতে চলার সময় আচমকা কোনো একটায় হোঁচট খেলেই কম্ম সারা। পা ভাঙার আশঙ্কা প্রবল। আর একাকী এই অভিযানে এমন দুর্ঘটনার একটাই অর্থ—নিশ্চিত মৃত্যু।
দুপাশের পর্বতরাজ্যের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার জন্য এক্সেল হোইবার্গ হিমবাহের পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর ধরবেন বায়েরডমোর হিমবাহের পথ। কিছু ফাটল থাকলেও তুলনামূলক নিরাপদ পথটি। ১৯১১ সালে বিখ্যাত অভিযাত্রী অ্যামুন্ডসেন এই পথ ধরেছিলেন।
এক্সেল হেইবার্গ হিমবাহের পাদদেশে বরফের বিশাল একটি তাক আছে। এটি রস আইস শেলফ নামে পরিচিত। এখান থেকে ম্যাকমার্ডো যাওয়ার পথে রস দ্বীপের ঠিক নাকের ডগায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। সেখানে পৌঁছাতে ফাটলে ভরা একটি বিপজ্জনক এলাকা পেরোতে হয়। বড় সমস্যা, বরফরাজ্যের এই ফাটল বা চিড়গুলো কখনো কখনো চোখ এড়িয়ে যায়। খুব পাতলা বরফের পর্দা দিয়ে আবৃত থাকায় সতর্ক থাকতে হয়।
তবে বোর্গে আওসলন সঙ্গে বারো ফুটি কয়েকটি টাইটেনিয়ামের দণ্ড নিয়েছিলেন। এগুলো রেখেছিলেন স্লেজগাড়ি ও নিজের মাঝখানে। বারকনার দ্বীপে একবার টাইটেনিয়ামের এই দণ্ড তাঁর জীবন বাঁচায়। বরফের একটা পাতলা আবরণ অতিক্রমের সময় ধসে পড়ে সেটি। তবে এই দণ্ডগুলো বরফে আটকে কোনোভাবে রেহাই পান।
অ্যান্টার্কটিকার শেষ প্রান্ত স্কট বেসে আওসলন পৌঁছান ১৯৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। আগের বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু করা ওই যাত্রায় তিনি পেরোন ১ হাজার ৮৬৪ মাইল। সৌভাগ্যক্রমে স্কট বেসের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় জায়গাটিতে পৌঁছান তিনি। প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারিও এ আয়োজনে অংশ নিতে সেখানে ছিলেন। হিলারির সঙ্গেই হেলিকপ্টারে চেপে দক্ষিণ মেরু যান আওসলন। পরে আওসলন বলেন, ‘যে দূরত্ব পেরোতে আমার এক মাসের বেশি লাগল, সেটা উড়ে গেলাম আড়াই ঘণ্টায়।
অবশ্য আওসলন যাত্রা ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়, নাকি ১৭ জানুয়ারি—এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও অনেক গণমাধ্যম যাত্রাটি ১৮ জানুয়ারি শেষ হয় বলে উল্লেখ করলেও গার্ডিয়ানের এক লেখায় আওসলন তারিখটা ১৭ জানুয়ারি বলে উল্লেখ করেন।
আওসলন ওই অভিযানকে দেখা হয় কোনো সাহায্য ছাড়া প্রথম একাকী কারও অ্যান্টার্কটিকা বিজয় হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কলিন ও’ব্রেড ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের পর দাবি করেন, তিনিই প্রথম মানুষ হিসেবে কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন। অনেকে তাঁর দাবিটাকে গুরুত্বও দেন। কারণ তিনি তাঁর স্লেজটা নিজেই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন গোটা যাত্রাপথে। অন্যদিকে আওসলন একটি ঘুড়ি ব্যবহার করে বাতাসের সাহায্যে এগিয়েছিলেন।
অবশ্য আরও নানা ধরনের রেকর্ড আছে রোমাঞ্চপ্রেমী এই মানুষটির ঝুলিতে। ১৯৯০ সালের ৪ মে আর্লিং কগে ও আওলসন বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে উত্তর মেরু পৌঁছান। কানাডার এলেসমেরে দ্বীপ থেকে ৮০০ মাইল পথ স্কিইং করে ৫৮ দিনে উত্তর মেরুতে পৌঁছান তাঁরা।
এমন মানুষের বিয়েটা তো অন্যদের মতো হতে পারে না, কি বলেন? ২০১২ সালে বিয়ে করেন তিনি, উত্তর মেরুতে। অবশ্য এ যাত্রায় ২০-৩০ জন সঙ্গী-সাথিও ও কনে হেগে আওসলেনসহ উত্তর মেরু পৌঁছেছিলেন হেলিকপ্টারে।
সূত্র: গার্ডিয়ান, ডিসকভারি. কম, উইকিপিডিয়া

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। আছে ফ্রস্টবাইটের (অস্বাভাবিক ঠান্ডায় শরীরে সৃষ্টি হওয়া জখম) ঝুঁকি। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
উপকূল ধরে অ্যান্টার্কটিকার শেষ মাথায় পৌঁছার সিদ্ধান্ত নেন আওসলন। বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয়ের সংকল্প নিয়ে তাঁর যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, বার্কনার দ্বীপ থেকে।
আওসলনের মতে এ ধরনের অভিযানের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোটা অভিযানে সবচেয়ে কঠিন অংশগুলির একটি এটি। বরফরাজ্যে প্রথম কিছুটা পথ এগোনো খুব কঠিন। মোটামুটি ১০ থেকে ১৪ দিন লাগে বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি দেখে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের একটি সম্ভাব্য পথ ঠিক করেন আওলসন। এটি তাঁকে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার পেনসাকোলা পর্বতমালার ডুফেক ম্যাসিফ ধরে নিয়ে যাবে।
সামনে ধীরে ধীরে উঠে যাওয়া বরফের এলাকা দেখে তাঁর মনে হলো পথের কোনো শেষ নেই। ধীরে ধীরে বরফরাজ্যে ওপরের দিকে উঠছিলেন। প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস শরীরের হাড়মজ্জা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো গাছ বা স্থাপনা নেই। আদিগন্ত চলে যাওয়া এই ভূপ্রকৃতিতে ব্যতিক্রম বলতে তুষার স্তূপ। এগুলোর কোনো কোনোটা উচ্চতায় ছয় ফুট। বাতাসের সঙ্গে ধেয়ে আসা তুষারে জন্ম এগুলোর।
দক্ষিণ মেরুর বেস ক্যাম্প তাঁর জন্য একটি লোভনীয় ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেখানে না থামার সিদ্ধান্ত নিলেন আওসলন। কারণ একবার ভেতরে ঢুকে আরাম পেয়ে গেলে এগিয়ে যাওয়াটি কঠিন হয়ে পড়বে।
দক্ষিণ মেরুর চারপাশের মালভূমি শীতল, উচ্চতাও বেশি। তবে বাতাস তুলনামূলক কম। পর্বত এলাকার কাছাকাছি এলে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঝড়ো বাতাসের মোকাবিলা করতে হয়। অবশ্য বোর্গে আওসলনের জন্য এই বাতাস শাপে বর হয়ে ওঠে। এক ধরনের ঘুড়ির সাহায্যে বাতাসের সহায়তা নিয়ে দ্রুতগতিতে মাইলের পর মাইল স্কি করে যান তিনি। অবশ্য বাধা সৃষ্টি করে পথে জমা বরফের স্তূপগুলো।
প্রবল গতিতে চলার সময় আচমকা কোনো একটায় হোঁচট খেলেই কম্ম সারা। পা ভাঙার আশঙ্কা প্রবল। আর একাকী এই অভিযানে এমন দুর্ঘটনার একটাই অর্থ—নিশ্চিত মৃত্যু।
দুপাশের পর্বতরাজ্যের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার জন্য এক্সেল হোইবার্গ হিমবাহের পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপর ধরবেন বায়েরডমোর হিমবাহের পথ। কিছু ফাটল থাকলেও তুলনামূলক নিরাপদ পথটি। ১৯১১ সালে বিখ্যাত অভিযাত্রী অ্যামুন্ডসেন এই পথ ধরেছিলেন।
এক্সেল হেইবার্গ হিমবাহের পাদদেশে বরফের বিশাল একটি তাক আছে। এটি রস আইস শেলফ নামে পরিচিত। এখান থেকে ম্যাকমার্ডো যাওয়ার পথে রস দ্বীপের ঠিক নাকের ডগায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। সেখানে পৌঁছাতে ফাটলে ভরা একটি বিপজ্জনক এলাকা পেরোতে হয়। বড় সমস্যা, বরফরাজ্যের এই ফাটল বা চিড়গুলো কখনো কখনো চোখ এড়িয়ে যায়। খুব পাতলা বরফের পর্দা দিয়ে আবৃত থাকায় সতর্ক থাকতে হয়।
তবে বোর্গে আওসলন সঙ্গে বারো ফুটি কয়েকটি টাইটেনিয়ামের দণ্ড নিয়েছিলেন। এগুলো রেখেছিলেন স্লেজগাড়ি ও নিজের মাঝখানে। বারকনার দ্বীপে একবার টাইটেনিয়ামের এই দণ্ড তাঁর জীবন বাঁচায়। বরফের একটা পাতলা আবরণ অতিক্রমের সময় ধসে পড়ে সেটি। তবে এই দণ্ডগুলো বরফে আটকে কোনোভাবে রেহাই পান।
অ্যান্টার্কটিকার শেষ প্রান্ত স্কট বেসে আওসলন পৌঁছান ১৯৯৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। আগের বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু করা ওই যাত্রায় তিনি পেরোন ১ হাজার ৮৬৪ মাইল। সৌভাগ্যক্রমে স্কট বেসের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় জায়গাটিতে পৌঁছান তিনি। প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী স্যার এডমন্ড হিলারিও এ আয়োজনে অংশ নিতে সেখানে ছিলেন। হিলারির সঙ্গেই হেলিকপ্টারে চেপে দক্ষিণ মেরু যান আওসলন। পরে আওসলন বলেন, ‘যে দূরত্ব পেরোতে আমার এক মাসের বেশি লাগল, সেটা উড়ে গেলাম আড়াই ঘণ্টায়।
অবশ্য আওসলন যাত্রা ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়, নাকি ১৭ জানুয়ারি—এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও অনেক গণমাধ্যম যাত্রাটি ১৮ জানুয়ারি শেষ হয় বলে উল্লেখ করলেও গার্ডিয়ানের এক লেখায় আওসলন তারিখটা ১৭ জানুয়ারি বলে উল্লেখ করেন।
আওসলন ওই অভিযানকে দেখা হয় কোনো সাহায্য ছাড়া প্রথম একাকী কারও অ্যান্টার্কটিকা বিজয় হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কলিন ও’ব্রেড ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টার্কটিকা জয়ের পর দাবি করেন, তিনিই প্রথম মানুষ হিসেবে কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া একাকী অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন। অনেকে তাঁর দাবিটাকে গুরুত্বও দেন। কারণ তিনি তাঁর স্লেজটা নিজেই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন গোটা যাত্রাপথে। অন্যদিকে আওসলন একটি ঘুড়ি ব্যবহার করে বাতাসের সাহায্যে এগিয়েছিলেন।
অবশ্য আরও নানা ধরনের রেকর্ড আছে রোমাঞ্চপ্রেমী এই মানুষটির ঝুলিতে। ১৯৯০ সালের ৪ মে আর্লিং কগে ও আওলসন বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে উত্তর মেরু পৌঁছান। কানাডার এলেসমেরে দ্বীপ থেকে ৮০০ মাইল পথ স্কিইং করে ৫৮ দিনে উত্তর মেরুতে পৌঁছান তাঁরা।
এমন মানুষের বিয়েটা তো অন্যদের মতো হতে পারে না, কি বলেন? ২০১২ সালে বিয়ে করেন তিনি, উত্তর মেরুতে। অবশ্য এ যাত্রায় ২০-৩০ জন সঙ্গী-সাথিও ও কনে হেগে আওসলেনসহ উত্তর মেরু পৌঁছেছিলেন হেলিকপ্টারে।
সূত্র: গার্ডিয়ান, ডিসকভারি. কম, উইকিপিডিয়া

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। পদে পদে মুখোমুখি হতে হয় তুষার ঝড়, কনকনে হাওয়াসহ আবহাওয়ার নানা বৈরিতার। তারপর যদি যাত্রাটা হয় একাকী, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি একাকী কারও সাহায্য ছাড়া প্রথম মানুষ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা জয় করেন নরওয়ের বোর্গে আওসলন।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে