Ajker Patrika

ইসরায়েলের নিন্দা করায় জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ। ছবি: এএফপি
গাজায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ফ্রানচেসকা আলবানিজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন রুবিও লিখেছেন, ‘মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তা, কোম্পানি ও নির্বাহীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে (আইসিসি) পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন তিনি। এই অবৈধ ও লজ্জাজনক প্রচেষ্টার কারণেই তাঁর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’

এই পদক্ষেপটি গাজা যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগের সর্বশেষ উদাহরণ। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যার মাধ্যমে আইসিসির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানসহ আরও চারজন বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।

রুবিও জানান, আলবানিজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও ওই নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী কার্যকর করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়র পদটি জাতিসংঘের মহাসচিব নিয়োগ দেন না। বরং এটি একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব, যাকে নিযুক্ত করে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। তাঁর কাজ হলো অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং তা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন দেওয়া।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের পরই আলবানিজের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা এল। এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সাআর। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের প্রতি এটি একটি স্পষ্ট বার্তা। এখন জাতিসংঘের কিছু বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।’

জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যাননও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

এক বিবৃতিতে রুবিও বলেন, আলবানিজ সরাসরি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সঙ্গে মার্কিন ও ইসরায়েলি নাগরিকদের তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক ও বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কেউই আইসিসি গঠনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, ফলে এই পদক্ষেপ দুই দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর ‘মারাত্মক হস্তক্ষেপ।’

রুবিও আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বারবার আলবানিজের পক্ষপাতদুষ্ট ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে, যা তাঁকে একজন র‍্যাপোর্টিয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য করে তুলেছে।’ তিনি তাঁকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

রুবিও বলেন, এই পক্ষপাতমূলক আচরণ তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান, যার মধ্যে ছিল ‘কোনো বৈধ ভিত্তি ছাড়াই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসিকে উৎসাহিত করেছেন তিনি।’

উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় হামাসের তিন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আলবানিজের ম্যান্ডেট নবায়নের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানায় যেন তিনি ‘আলবানিজের কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য নিন্দা জানান এবং তাঁকে র‍্যাপোর্টিয়রের পদ থেকে অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত