Ajker Patrika

ইরান ‘কয়েকটি’ দেশে অস্ত্র উৎপাদন করছে: প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে। ছবি: এএফপি
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে। ছবি: এএফপি

ইরান বিভিন্ন দেশে অস্ত্র উৎপাদন কারখানা গড়ে তুলেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে। তবে এসব দেশের নাম এখনই প্রকাশ করবেন না বলে তিনি স্পষ্ট করেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি দেশে অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছি। তবে আপাতত সেসব দেশের নাম ঘোষণা করব না।’

ইরানি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে—নাসিরজাদে জানান, গত এক বছরে ইরান নতুন ধরনের ওয়ারহেড পরীক্ষা করেছে। এগুলো আধুনিক ও চলাচলক্ষম, যা সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। তাঁর এই বক্তব্য এমন এক সময় এল, যখন ইরানের নৌবাহিনী বৃহৎ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে।

ওমান উপসাগর ও উত্তর ভারত মহাসাগরে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় ভূপৃষ্ঠে লক্ষ্যবস্তুতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানি নৌবাহিনী। এর আগে, গত মাসে কাস্পিয়ান সাগরে ইরান-রাশিয়ার যৌথ মহড়া ‘কাসারেক্স ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার কারণে আধুনিক অস্ত্র কেনায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় ইরানের জন্য। ফলে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে নির্ভর করেছে নিজস্ব প্রযুক্তি, স্থানীয় নকশা ও পুরোনো অস্ত্রব্যবস্থার অভিযোজিত সংস্করণের ওপর।

সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদে ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানের অবস্থান সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জুনের সংঘাত যদি ১৫ দিন পর্যন্ত চলত, তাহলে শেষ তিন দিনে ইসরায়েলি বাহিনী কোনো ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারত না। এ কারণেই ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধ যদি ১৫ দিন চলত, শেষ তিন দিনে ইসরায়েল আমাদের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পারত না।’

নাসিরজাদে আরও জানান, ইরান যুদ্ধে তাদের নতুন তৈরি কাসিম বাসির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। এটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা গত মে মাসে উন্মোচিত হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। উন্নত গতিপথ নির্দেশনা ব্যবস্থা ও প্রতিরোধ ভেদ করার সক্ষমতাসহ এটিকে ইরান সবচেয়ে নিখুঁত অস্ত্র বলে দাবি করছে।

ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যুক্তরাষ্ট্রনির্মিত থাড ও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, আয়রন ডোম ও অ্যারো সিস্টেম—বেশির ভাগ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর দাবি, যুদ্ধের শুরুর দিকে ইরানের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ দিকে ৯০ শতাংশ সরাসরি লক্ষ্যভেদ করেছে। এতে প্রমাণিত হয়, ইরানি বাহিনীর অভিজ্ঞতা বাড়ছিল, আর প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কমছিল। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ১২ দিনের যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করার হার ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ।

গত ১৩ জুন ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক স্থাপনাও। ইরানের হিসাবে, এ হামলায় মোট ১ হাজার ৬২ জন নিহত হন, এর মধ্যে ৭৮৬ জন সেনা সদস্য এবং ২৭৬ জন সাধারণ মানুষ। প্রতিশোধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে নিহত হন ৩১ সাধারণ মানুষ ও একজন ছুটিতে থাকা সেনা। প্রায় দুই সপ্তাহ স্থায়ী এ সংঘাতের অবসান ঘটে ২৪ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত