Ajker Patrika

করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি দক্ষিণ এশীয়দের বেশি: গবেষণা 

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৫৮
করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি দক্ষিণ এশীয়দের বেশি: গবেষণা 

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায় একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যে জিনটি কোভিড সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বিকল হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। আর এই জিন দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে বেশি। সেই তুলনায় ইউরোপীয়দের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের শরীরে এই জিন আছে। দ্য নেচার জেনেটিকস নামে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। 

গবেষকেরা বলছেন, এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানোর উপায় হচ্ছে টিকা নেওয়া। 

ব্রিটেনে কোনো কোনো  জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কেন বেশি তার ব্যাখ্যা খুঁজতে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। জিনের ওপর চালানো গবেষণার ধারাবাহিকতামূলক পরীক্ষায়, সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন অণুসংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই নির্দিষ্ট জিনের সন্ধান পেয়েছেন। গবেষণায় বলা হয়, করোনার ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী এই জিনের নাম এলজেডিএফএল১। 

গবেষকেরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিন প্রায় ২ শতাংশ আফ্রিকান-ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষের শরীরে রয়েছে, এবং ১ দশিমক ৮ শতাংশ পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূতদের শরীরে রয়েছে। 

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জেমস ডেভিস জানান, এই ঝুঁকিপূর্ণ জিন সব ধরনের জনগোষ্ঠীর শরীরে সমান অনুপাতে না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে তিনি এটাও বলেছেন, কোনো মানুষের ঝুঁকি কম-বেশি হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণও থাকে, বিশেষ করে বয়সের বিষয়টি। 

জেমস ডেভিস বলেন, কিছু জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিডের ঝুঁকি বেশি থাকার পেছনে আর্থসামাজিক যে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোরও অবদান থাকা সম্ভব। আমরা তো চাইলে বংশগতভাবে পাওয়া শরীরের জিন বদলে ফেলতে পারব না। কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল এটা প্রমাণ করছে যে এই জিন যেহেতু একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ, তাই এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নেওয়াটা বিশেষভাবে ফলদায়ক হতে পারে। 

গবেষকেরা বলছেন, এই জিন যাদের শরীরে আছে, করোনাভাইরাসে তাদের ফুসফুস বেশি রকম আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

তাঁঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফুসফুসকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে কোষের আস্তরণ থাকে, যা কোভিড সংক্রমণ হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিন সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। 

ফুসফুসের এই কোষগুলো যখন করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে অন্যতম হলো কোষগুলো তখন চেহারা ও কার্যপদ্ধতি বদলে বিশেষ ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং ভাইরাসকে ঠেকাতে উদ্যোগী হয়। 

করোনাভাইরাস কোনো কোষের সঙ্গে আটকে থাকার জন্য যে প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে তার নাম এসিই-২। ফুসফুসের আবরণের কোষগুলো তাদের আচরণ বদলে ফেলে এই প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে এই প্রোটিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। 

কিন্তু যাদের শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ এলজেডিএফএল-১ জিন আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একেবারেই কাজ করে না। ফলে কোভিডের জীবাণু ঢুকলে তাদের ফুসফুসের কোনো সুরক্ষা শরীর দিতে পারে না। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের জিনটি ফুসফুসকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। তবে শরীরের অন্য রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে এই জিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। 

ফলে টিকা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ালে এই জিন সেটা নষ্ট করতে সক্ষম নয়। কাজেই টিকা কার্যকর থাকে বলে তাঁরা বলছেন। 

এই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে সুনির্দিষ্টভাবে ফুসফুস বাঁচানোর জন্য বিশেষ ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে যাবে। 

 যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাগিব আলী বলেন, `এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি যে কেন কিছু জাতিগত গোষ্ঠীর কোভিডে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। আর কেন তারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অবস্থা খারাপ হয়।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ