Ajker Patrika

নড়াইলে ৫৭ গ্রাহককে ‘অস্বাভাবিক’ জরিমানা

নড়াইল প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৪
Thumbnail image

নড়াইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ আঞ্চলিক অফিসের অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব গ্রাহককে মামলা এবং পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে তাঁরা গরু বিক্রি, জমি বন্দক রেখে ও সুদে টাকা নিয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অফিসের কর্মকর্তারা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ নড়াইল জোনাল অফিসের ৫৭ জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইল জোনাল অফিসের লাইন ম্যান আরিফ হোসেন গ্রাহকদের মিটার খুলে আনার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব গ্রাহক মিটারের সিল কেটে ফেলেছে আবার অনেকে গলিয়ে ফেলেছে। এতে মিটার ঠিকমতো ঘোরে না। অর্থাৎ অকেজো হয়ে গেছে। ফলে বিল কম আসে।

নড়াইল সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দিনমজুর মুরাদ মিয়া বলেন , গত ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে এসে দেখেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাঁর মিটার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে আমাকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোয় বাড়ির গরু বিক্রি করে ২৪ তারিখে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সেই জরিমানা পরিশোধ করি।

ষড়াতলা গ্রামের ৭০ বছরের দরিদ্র বিধবা সবেদা বেগম বলেন, দুটি-বাতি আর দুটি-ফ্যান ব্যবহার করি। প্রতি মাসে বিল আসে গড়ে ২০০ টাকা। অথচ মিটার টেম্পারিং করার বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে জরিমানা করা হয়েছে ৫১ হাজার টাকা। অফিস থেকে বলেছে, তিন দিনের মধ্যে টাকা না দিলে আমার বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা করা হবে।

শড়াতলা গ্রামের মো. রাসেল মিয়া জানান, তাঁর এলাকায় প্রায় অর্ধশত পরিবারের মিটার টেম্পারিং করার অভিযোগ এনে মিটার খুলে নেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে টেম্পারিং করার অভিযোগ করা হয়েছে তাঁদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল ২০০-২৫০ টাকার বেশি নয়। আর এক এলাকায় এত লোকের মিটার এক সঙ্গে কীভাবে নষ্ট বা টেম্পারিং করা হলো তা মাথায় আসছেনা।

এ ব্যাপারে আউড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নিয়ে ডিজিএমের কাছে গিয়েছিলাম। ঢালাওভাবে এদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আনা ঠিক নয়। আমার মনে হয় এখানে কোনো কুচক্রীমহল মহল কাজ করছে।

নড়াইল জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার সোহেলী সুলতানা শিলী বলেন, যে কোনো অভিযোগের আগে নোটিশ করা, সময় দেওয়া এবং আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। তা না করে সরাসরি এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করাটা বেআইনি।

জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. ইসমাইল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় মিটার টেম্পারিং হলে বিলে প্রভাব পড়ে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, টেম্পারিং হলে এক মাসের বিলের টাকার সঙ্গে অন্য মাসের বিলের মিল থাকে না। টাকার পরিমাণ অনেক কম-বেশি হয়। তাহলে জরিমানা করার ক্ষেত্রে বিলের ধারাবাহিকতা দেখা হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সবকিছু জানেন বলে জানান।

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইল জোনাল অফিসের সদ্য যোগদানকারী ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এসএম শাহিন আহসান জানান, গ্রাহক মিটার টেম্পারিং করলে একটি তারিখ দিয়ে তাঁদের উপস্থিতিতে মিটার খুলে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। জরিমানার জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়। তবে যদি কেউ আর আগে তাঁদের দোষ স্বীকার করে অর্থ জরিমানা দেয় তাহলে আমাদের সে অর্থ নিতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা এবং তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত