Ajker Patrika

সোনা রঙের সোনাপাতি

চয়ন বিকাশ ভদ্র
সোনা রঙের সোনাপাতি

দৃষ্টিবিভ্রমের ফলে নামটি ‘সেনাপতি’ পড়লেও এ ফুলের নাম সোনাপাতি। এ ফুলের আরেক নাম চন্দ্রপ্রভা। চাঁদের নরম হলুদ আলোর সঙ্গে মিলিয়ে কি রাখা হয়েছিল এই নাম? হয়তো। চন্দ্রপ্রভা হিসেবেই এর বিশেষ পরিচিতি আছে। সোনাপাতি বা চন্দ্রপ্রভা দেশি নাম হলেও ফুলটির আদি নিবাস আমেরিকা। দেশটির ভার্জিন আইল্যান্ডের অফিশিয়াল ফুল এটি। আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজের লুকায়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ বাহামার জাতীয় ফুল ইয়েলো এলডার বা সোনাপাতি অথবা চন্দ্রপ্রভা। দেশটির প্রায় সবখানে পুরো মৌসুমজুড়ে থরে থরে এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। সে জন্যই ইয়েলো এলডার বা চন্দ্রপ্রভা দেশটির জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।

সোনাপাতি ঝোপালো বা চিরসবুজ ছোট বৃক্ষ। এ গাছ ৩ থেকে ৫ মিটার লম্বা হয়। মাথা কিছুটা ছড়ানো। এর বৈজ্ঞানিক নাম টেকোমা স্ট্যানস, এটি বিগনোনিয়েসী পরিবারের একটি উদ্ভিদ। সোনাপাতি ফুলের ইংরেজি নামের মধ্যে ইয়েলো বেলস, ইয়েলো ট্রামপেট, ইয়েলো এলডার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ এর আরও অনেক নাম আছে। হলুদ রঙের অসম্ভব সুন্দর এই ফুল অনেকের দৃষ্টিতে হলুদ নয় বরং এর রং কাঁচা সোনার মতো। সোনাপাতি নামকরণের এটিও একটি কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়।

সোনাপাতির পাতা যৌগপত্র এক পক্ষল, পত্রক ভল্লাকার, কিনারা খাঁজকাটা। ডালের আগায় থোকায় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ধরে। দল ফানেলের আকার, ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। ফল শুকনো, বিদারী, ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা, বীজ ছোট ও পক্ষল। সোনাপাতি ফুল এখন আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। ঢাকায় তো বটেই। ঢাকার বাইরেও এখন প্রচুর পরিমাণে সোনাপাতি ফুল দেখতে পাওয়া যায়। স্কুল-কলেজ, শখের বাগান আর রোড আইল্যান্ডে বোনার উপযোগী হলুদ রঙের এই ফুল থোকায় থোকায় ফোটে গ্রীষ্ম থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত।

ডালের আগায় বড় বড় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ফোটে। দেখতে অনেকটা হলুদ ঘণ্টার মতো। গাছ দ্রুত বাড়ে। বাড়তে দিলে গাছ বেশ বড় হয় এবং কয়েক বছর বাঁচে। গাছে বেশ ডালপালা হয়, ডালপালা এলোমেলোভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুলের ভারে ডালপালা নুয়ে পড়ে। প্রথমে ডালের আগায় ফুল ফোটে, ধীরে ধীরে ডালের পাতার কোল থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ডালের উজ্জ্বল সবুজ রঙের ঝোপের মধ্যে থোকা ধরা কলকের মতো উজ্জ্বল ফুলগুলোকে খুব সুন্দর দেখায়।

বীজ ও কলম থেকে চারা তৈরি করা যায়। দুই থেকে তিন মাস বয়সী চারা বাগানে লাগানো যায়। তবে তা না করে প্রধানত ডাল কেটে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। টবে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, পার্কে, রাস্তার ধারে, সড়কদ্বীপে, স্কুল-কলেজের আঙিনায় চন্দ্রপ্রভা ফুল লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যায়। বর্ষা, শরতে ডালের আগায় বড় বড় থোকায় দেখা যায় হলুদ রঙের এই ফুল।

ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে, টাউন হলের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে এবং সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ পাশে এক বাসার সামনে সোনাপাতিগাছে হলুদ ফুলের বন্যা বইছে। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত