Ajker Patrika

পাহাড়ের তেঁতুল সারা দেশে

রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১২: ৩৮
Thumbnail image

কয়েক বছর আগেও পাহাড়ের গাছে পচে যেত তেঁতুল। এখন তা নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যাচ্ছে এই তেঁতুল। দামও ভালো। তাই তেঁতুলবাগান করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে। খাগড়াছড়ির পানছড়ির মানুষের আয়ের নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে পাহাড়ের তেঁতুল সংগ্রহ ও বিক্রি। প্রতিবছর এই উপজেলা থেকে ৯০-১০০ টন তেঁতুল কিনে নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

তেঁতুল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধুদুকছড়া, তারাবন ছড়া, ত্রিপুরা টিলা, লোগাং, পুজগাং, কানুনগো পাড়ায় তেঁতুলগাছ বেশি। ব্যবসায়ীরা আগাম ও গাছের পাকা ভিত্তিতে তেঁতুল কেনেন। মাঘ-ফাল্গুনে পাকা শুরু হয়ে চৈত্রে শেষ হয়। তেঁতুল পাকলে তা পাড়ার পর নারীদের দিয়ে খোসা ফেলে বাজারে বিক্রি করা হয়।

উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম ধুদুকছড়া এলাকা থেকে ২০ কেজি পাকা তেঁতুল সংগ্রহ করেন সুরবালা চাকমা। পানছড়ি বাজারের পৌঁছানোর ১ কিলোমিটার আগেই ইসলামপুর রাস্তায় বিক্রি হয়ে যায় তাঁর তেঁতুল।

সুরবালা চাকমা বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও তেঁতুল গাছেই পচে যেত। তখন কার তেঁতুল কে খায়! এখন সেই তেঁতুল বাজারে ও রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিকে তেঁতুল বাজারে আনতে লজ্জা পেতাম। তেঁতুলগাছও কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পাঁচ-ছয় বছর আগে এক বাঙালির তেঁতুলের খোঁজ করায় তাঁর কাছে গাছের সব তেঁতুল সস্তায় বিক্রি করে দিই। পরের বছর তিনি আগের তুলনায় বেশি দাম দেন। এখন দেখি বাজারে তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা।’

পাহাড়ের এই কৃষক বলেন, সড়ক যোগাযোগ ও ব্যবসায়ী বৃদ্ধি পাওয়া একসময় ফেলে দেওয়া ফল তেঁতুল থেকে ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা। আগে একটি তেঁতুল গাছ ছিল, এখন তাঁর পাঁচটি গাছ আছে। প্রতিবছর অনেক তেঁতুল পান। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেকে তেঁতুলগাছ লাগিয়েছেন। অনেকে বাগানও করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

জেলার মাটিরাঙ্গা থেকে তেঁতুল কিনতে পানছড়িতে আসেন মৌসুমি ফলের পাইকারি ক্রেতা শাহিন মিয়া। গত ১০ বছর ধরে তিনি ফলের ব্যবসা করছেন। তাঁর মতো আরও ৪-৫ জন মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী আছেন। জেলার পানছড়ি, খাগড়াছড়ি, মাইসছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, ভাইবোনছড়া থেকে মৌসুমি ফল কিনে মাটিরাঙ্গা বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন তাঁরা।

শাহিন মিয়া বলেন, ‘মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই টন কেজি তেঁতুল পাই। তা বিক্রি করে খরচ বাদে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। তা ছাড়া আমার সঙ্গে কয়েকজনের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’

মৌসুমি ফলের স্থানীয় পাইকারি ক্রেতা আব্দুস সামাদ, শাহিনুর মিয়া, মিজানুর রহমান জানান, ৬-৭ বছর আগে তেঁতুলের চাহিদা ছিল না। এখন চাহিদা থাকায় নতুন আয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ব্যাপারীরা অনেক সময় গাছেই আগাম তেঁতুল কিনে রাখেন। এ ছাড়া লোগাং বাজার, পানছড়ি বাজার থেকে সাপ্তাহিক হাট থেকে তেঁতুল কিনে থাকেন। পরে মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার ব্যাপারীদের কাছে নিয়ে বিক্রি করেন তাঁরা।

পানছড়ির ফল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুর্গম পাহাড়ি পাড়া থেকে প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকায় কিনে শহরে আনতে পরিবহন ও সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা ব্যয় হয়। পরে মাটিরাঙ্গার ব্যবসায়ীদের কাছে ৯৫-১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ১০৫-১১০ টাকা দরে তেঁতুল কিনে নেন।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুণাংকর চাকমা জানান, বাজারে তেঁতুল বিক্রি হওয়ায় এখন অনেকে গাছ লাগাচ্ছে। তেঁতুলগাছ লাগানোর পর তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। বড় তেঁতুলগাছ থেকে প্রতিবছর কয়েক শ মণ ফল পাওয়া যায়। এ কারণে অনেকেই তেঁতুলবাগান করার পরামর্শ চাইছেন। পানছড়ি কৃষি বিভাগ বাগানিদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত