অরুণ কর্মকার
আবহাওয়ার পূর্বাভাস আমরা প্রতিনিয়তই পেয়ে থাকি। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এক প্রকার পূর্বাভাসও নিয়মিতই পাওয়া যায়। আবহাওয়া অফিসের মতো বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতিদিনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা পূর্বাভাস তৈরি করে। তবে তা জনসম্মুখে আসে কদাচিৎ। তা ছাড়া বাস্তবে বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি মানুষ প্রত্যক্ষ করে, এর সঙ্গে ওই পূর্বাভাসের মিল কালেভদ্রে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসও যে বাস্তবের সঙ্গে সব সময় শতভাগ মিলে যায়, তা নয়। কারণ আবহাওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানের একটি শাখাভুক্ত (মিটিওরোলজি) হলেও সেখানে প্রকৃতির হাত অনেক বেশি প্রসারিত থাকে, যা আবহাওয়া পরিস্থিতিকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বদলে কিংবা উল্টে-পাল্টে দিতে পারে। এ জন্য পদার্থবিজ্ঞানের মতো অঙ্ক কষে একেবারে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া আবহাওয়াবিজ্ঞানের পক্ষে এখনো সম্ভব হয় না।
তবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া, অন্ততপক্ষে আবহাওয়ার তুলনায় আরও বাস্তবসম্মত পূর্বাভাস দেওয়া বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষে সম্ভব। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগ কিংবা বিপিডিবি অঙ্কের হিসাবেই জানে যে কোথায় কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র কী অবস্থায় আছে? কোন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা কত? বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোন দিন, কোন ধরনের জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল প্রভৃতি) কী পরিমাণে দরকার হবে? এর মধ্যে কোন ধরনের জ্বালানি কতটা পাওয়া যাবে? এসবই তাদের জানা।
এর সঙ্গে প্রতিদিন বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার একটা প্রাক্কলনও বিপিডিবি করে থাকে। যদিও সেই প্রাক্কলন কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে অতীতেও প্রশ্ন ছিল এবং এখনো আছে। এসব কারণে বিদ্যুতের যে পূর্বাভাস আমরা পেয়ে থাকি তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আভাস বলাই ভালো। এই আভাস থেকে নিজেদের উদ্যোগে খোঁজখবর নিয়ে এবং সারা দেশের গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে গণমাধ্যমকর্মী এবং গবেষকদের প্রকৃত অবস্থার সুলুকসন্ধান করতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী কয়েক দিনে গরম তীব্রতর হবে। ইতিমধ্যে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। আগামী কয়েক দিনে তা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ওপর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এবং ব্যবহারও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এই বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাড়তি জ্বালানি দরকার হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেই বাড়তি জ্বালানি সংস্থানের কোনো সুযোগ বাস্তবে নেই। কিন্তু বিপিডিবির প্রণীত দৈনিক পূর্বাভাসে (প্রকৃতপক্ষে আভাস) এর প্রতিফলন দেখা হয়তো দুরূহ ব্যাপার হতে পারে।
আরও একটা উদাহরণমতে, বিপিডিবির ওয়েবসাইটে ১৫ এপ্রিলের যে তথ্য উল্লিখিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, ওই দিন সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (ইভিনিং পিক আওয়ার) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কম-বেশি সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। আর দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (দুপুরবেলা) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু ওই দিন দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না; অর্থাৎ বিপিডিবির হিসাবে ওই দিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে, দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদাও ছিল সেই পরিমাণই। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কোথাও কোনো লোডশেডিং দিতে হয়নি।
বিষয়টি একটু ভেবে দেখা দরকার। ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের দীর্ঘ ছুটির পর ১৫ এপ্রিল ছিল প্রথম কর্মদিবস। যদিও তখন পর্যন্ত ছুটির আমেজ কাটেনি। তারপরও সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে। শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কাজ শুরু হয়েছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তার ওপর চলছে বোরো চাষে সেচের মৌসুম। প্রচণ্ড গরমে সারা দেশে চলছে হাঁসফাঁস অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মধ্য এপ্রিলে দেশে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য হতে পারে! কখনোই না। দেশের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন এবং টেলিভিশনের খবরাখবর পর্যবেক্ষণ করলেও বিপিডিবির ওই তথ্যের অসারতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৫ এপ্রিল দেশের অনেক মফস্বল শহর ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের খবর ওই সব মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
তা ছাড়া এ বছর গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিপিডিবিই এই প্রাক্কলন করেছে। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগে গ্রীষ্মের এই সময়টায়, যখন প্রচণ্ড দাবদাহের সঙ্গে যুক্ত হয় বোরো ধান চাষের মৌসুম, তখনই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ বছর সেই সময়ে যতই ছুটির আমেজ থাক না কেন, বিদ্যুতের চাহিদা মোটেই ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে না। তারপরও যদি ধরে নিই যে ওইটাই আসলে প্রকৃত চাহিদা, তাহলে এ বছর গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, সেটাও ভুল। সেটা ১০-১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হতে পারে না। আসলে বিপিডিবির এই ধরনের হিসাব-নিকাশসংবলিত তথ্য নতুন কিছু নয়। সে জন্যই এসব তথ্য বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। তাদের পূর্বাভাসও এই একই কারণে আভাস মাত্র।
প্রকৃত ঘটনা হলো, ঈদ ও নববর্ষের ছুটির এই সময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। এ জন্য ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ ছিল। ফলে প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ এলএনজিসহ দেশের গ্যাসের মোট সরবরাহ দাঁড়িয়েছিল দৈনিক দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাই ছিল না। এখনো দেশের শতকরা ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় গ্যাস জ্বালিয়ে। ১৭ এপ্রিল থেকে বিবিয়ানা উৎপাদনে এসে গেছে। এলএনজিও আনা হচ্ছে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ। ফলে সব খাতেই গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার চাহিদাও বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। তাই লোডশেডিং বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে পূর্ণ ক্ষমতায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন গ্যাস দরকার প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু পেট্রোবাংলা সরবরাহ করবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন। সুতরাং অন্যান্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো সম্ভব
হলেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো কঠিন হবে। ফলে লোডশেডিং অবধারিত। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেই আভাস স্পষ্ট। হয়তো এবারও লোডশেডিংয়ের সেই ধাক্কা শহর-নগর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলের ওপরই পড়বে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আবহাওয়ার পূর্বাভাস আমরা প্রতিনিয়তই পেয়ে থাকি। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এক প্রকার পূর্বাভাসও নিয়মিতই পাওয়া যায়। আবহাওয়া অফিসের মতো বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতিদিনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা পূর্বাভাস তৈরি করে। তবে তা জনসম্মুখে আসে কদাচিৎ। তা ছাড়া বাস্তবে বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি মানুষ প্রত্যক্ষ করে, এর সঙ্গে ওই পূর্বাভাসের মিল কালেভদ্রে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসও যে বাস্তবের সঙ্গে সব সময় শতভাগ মিলে যায়, তা নয়। কারণ আবহাওয়ার বিষয়টি বিজ্ঞানের একটি শাখাভুক্ত (মিটিওরোলজি) হলেও সেখানে প্রকৃতির হাত অনেক বেশি প্রসারিত থাকে, যা আবহাওয়া পরিস্থিতিকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ বদলে কিংবা উল্টে-পাল্টে দিতে পারে। এ জন্য পদার্থবিজ্ঞানের মতো অঙ্ক কষে একেবারে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া আবহাওয়াবিজ্ঞানের পক্ষে এখনো সম্ভব হয় না।
তবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া, অন্ততপক্ষে আবহাওয়ার তুলনায় আরও বাস্তবসম্মত পূর্বাভাস দেওয়া বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষে সম্ভব। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগ কিংবা বিপিডিবি অঙ্কের হিসাবেই জানে যে কোথায় কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র কী অবস্থায় আছে? কোন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা কত? বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোন দিন, কোন ধরনের জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল প্রভৃতি) কী পরিমাণে দরকার হবে? এর মধ্যে কোন ধরনের জ্বালানি কতটা পাওয়া যাবে? এসবই তাদের জানা।
এর সঙ্গে প্রতিদিন বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার একটা প্রাক্কলনও বিপিডিবি করে থাকে। যদিও সেই প্রাক্কলন কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে অতীতেও প্রশ্ন ছিল এবং এখনো আছে। এসব কারণে বিদ্যুতের যে পূর্বাভাস আমরা পেয়ে থাকি তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আভাস বলাই ভালো। এই আভাস থেকে নিজেদের উদ্যোগে খোঁজখবর নিয়ে এবং সারা দেশের গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে গণমাধ্যমকর্মী এবং গবেষকদের প্রকৃত অবস্থার সুলুকসন্ধান করতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী কয়েক দিনে গরম তীব্রতর হবে। ইতিমধ্যে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। আগামী কয়েক দিনে তা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ওপর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এবং ব্যবহারও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এই বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাড়তি জ্বালানি দরকার হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেই বাড়তি জ্বালানি সংস্থানের কোনো সুযোগ বাস্তবে নেই। কিন্তু বিপিডিবির প্রণীত দৈনিক পূর্বাভাসে (প্রকৃতপক্ষে আভাস) এর প্রতিফলন দেখা হয়তো দুরূহ ব্যাপার হতে পারে।
আরও একটা উদাহরণমতে, বিপিডিবির ওয়েবসাইটে ১৫ এপ্রিলের যে তথ্য উল্লিখিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, ওই দিন সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (ইভিনিং পিক আওয়ার) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কম-বেশি সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। আর দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (দুপুরবেলা) সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু ওই দিন দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না; অর্থাৎ বিপিডিবির হিসাবে ওই দিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে, দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদাও ছিল সেই পরিমাণই। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কোথাও কোনো লোডশেডিং দিতে হয়নি।
বিষয়টি একটু ভেবে দেখা দরকার। ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের দীর্ঘ ছুটির পর ১৫ এপ্রিল ছিল প্রথম কর্মদিবস। যদিও তখন পর্যন্ত ছুটির আমেজ কাটেনি। তারপরও সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে। শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কাজ শুরু হয়েছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তার ওপর চলছে বোরো চাষে সেচের মৌসুম। প্রচণ্ড গরমে সারা দেশে চলছে হাঁসফাঁস অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মধ্য এপ্রিলে দেশে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য হতে পারে! কখনোই না। দেশের গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন এবং টেলিভিশনের খবরাখবর পর্যবেক্ষণ করলেও বিপিডিবির ওই তথ্যের অসারতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৫ এপ্রিল দেশের অনেক মফস্বল শহর ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের খবর ওই সব মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
তা ছাড়া এ বছর গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিপিডিবিই এই প্রাক্কলন করেছে। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগে গ্রীষ্মের এই সময়টায়, যখন প্রচণ্ড দাবদাহের সঙ্গে যুক্ত হয় বোরো ধান চাষের মৌসুম, তখনই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ বছর সেই সময়ে যতই ছুটির আমেজ থাক না কেন, বিদ্যুতের চাহিদা মোটেই ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে না। তারপরও যদি ধরে নিই যে ওইটাই আসলে প্রকৃত চাহিদা, তাহলে এ বছর গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, সেটাও ভুল। সেটা ১০-১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হতে পারে না। আসলে বিপিডিবির এই ধরনের হিসাব-নিকাশসংবলিত তথ্য নতুন কিছু নয়। সে জন্যই এসব তথ্য বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। তাদের পূর্বাভাসও এই একই কারণে আভাস মাত্র।
প্রকৃত ঘটনা হলো, ঈদ ও নববর্ষের ছুটির এই সময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। এ জন্য ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ ছিল। ফলে প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ এলএনজিসহ দেশের গ্যাসের মোট সরবরাহ দাঁড়িয়েছিল দৈনিক দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাই ছিল না। এখনো দেশের শতকরা ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় গ্যাস জ্বালিয়ে। ১৭ এপ্রিল থেকে বিবিয়ানা উৎপাদনে এসে গেছে। এলএনজিও আনা হচ্ছে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ। ফলে সব খাতেই গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার চাহিদাও বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। তাই লোডশেডিং বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে পূর্ণ ক্ষমতায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন গ্যাস দরকার প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু পেট্রোবাংলা সরবরাহ করবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন। সুতরাং অন্যান্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো সম্ভব
হলেও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো কঠিন হবে। ফলে লোডশেডিং অবধারিত। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেই আভাস স্পষ্ট। হয়তো এবারও লোডশেডিংয়ের সেই ধাক্কা শহর-নগর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলের ওপরই পড়বে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪