Ajker Patrika

নবাবগঞ্জে নৌকা তৈরির ধুম আসছে বর্ষা, বাড়ছে চাহিদা

শেখ আব্দুস সাকুর (উল্লাস), নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১৫: ৫৮
Thumbnail image

বর্ষায় নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা ছাড়া কোনোভাবেই পারাপার হওয়া যায় না। তাই জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কারিগর ও কাঠ ব্যবসায়ীরা। এখানে নতুন নৌকা তৈরির যেন ধুম পড়েছে! আবার অনেকেই পুরোনো নৌকা মেরামতে ব্যস্ত।

বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়ার পদ্মা তীরবর্তী এলাকা সবার আগে প্লাবিত হয়। এ ছাড়া কলাকোপা, বক্সনগর ও নয়নশ্রী ইউনিয়ন ইছামতীর তীরবর্তী হওয়ায় পদ্মা থেকে আসা পানি এসব অঞ্চলকে আংশিক প্লাবিত করে। তাই এই এলাকার মানুষের বর্ষায় চলাচলে নৌকাই একমাত্র ভরসা।

বাগমারা ফার্নিচার ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, ‘এই সময় কারিগরেরা দম ফেলার ফুরসত পায় না। আমার একজন কারিগর দিনে একটা নৌকা বানায়। খুচরা দু-একটা ছাড়া সব নৌকা বিক্রি হয় মুন্সিগঞ্জের শিবরামপুর হাটে। প্রতি বৃহস্পতিবার ওই হাটে আমার সব নৌকা বিক্রি হয়ে যায়।’

কলাকোপা ইউপি সদস্য বাবুলাল মোদক বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি আর আগের মতো বর্ষা না হওয়ার কারণে দিন দিন নৌকার চাহিদা কমছে। তবে বর্ষা মৌসুমজুড়ে নৌকার চাহিদা থাকে। আর নিচু অঞ্চলের মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই বর্ষার আগেই কেউ কেউ নৌকা কিনে রাখছেন। বর্ষায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে দামও বাড়ে। তাই ক্রেতারা এখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।’

এদিকে কেউ কেউ পুরোনো নৌকা মেরামত করতে শুরু করেছে। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বারুয়াখালী, জয়কৃষ্ণপুর ও শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষার আগে পুরোনো নৌকা মেরামত করা হয়। অন্যথায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের তিতপালদিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় নৌকা কিনতে আসা জেলে হরেরাম রাজবংশী বলেন, ‘গেছে বার যেই নৌকা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ছিল, এইবার সেই নৌকা ৪-৫ হাজার চায়। তবু দাম কইরা একটা নৌকা কিনোনই লাগব।’

একই এলাকার নৌকার কারিগর কার্তিক মিস্ত্রি বলেন, ‘প্রতিটি নৌকা তৈরিতে আমি মজুরি পাই ১ হাজার টাকা। আর এই নৌকা বিক্রি হয় ৪-৭ হাজার টাকায়। কখনো চাহিদা বেশি থাকলে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। তবে বেশি চাহিদা ছোট আকারের কোষা নৌকার।’

কলাকোপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী। এ নদীতে বন্ধুরা মিলে নৌকা চালাতাম। কোথাও যেতে হলে আমরা নৌকা নিয়েই যেতাম। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আমাদের নৌকার ওপর নির্ভরশীলতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। এ ইউনিয়নে যে কটি স্থান খেয়া পারাপার ছিল, তার অর্ধেকে সেতু হওয়ার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। নৌকার মাঝিরা নতুন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত