Ajker Patrika

খানসামা সেটেলমেন্ট অফিস: ১০০ টাকার পরচা ৬০০

এস এম রকি, খানসামা (দিনাজপুর)
Thumbnail image

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সেবা নিয়ে নাখোশ স্থানীয়রা। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, এই অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবাই মেলে না। আর এই অনিয়মের সঙ্গে অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এ ছাড়া রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য।

সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা যায়, জমির রেকর্ড, পরচা, মৌজার নকশাসহ জমি-সংক্রান্ত সব সেবার ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত টাকা লাগে। আর এর যোগসূত্র দালাল। খানসামা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাশ চন্দ্র রায় দালালদের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অনিয়ম করছেন।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, ভূমিমালিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি নিয়ে পরচার নকল, খতিয়ান ও নকশা দেওয়ার কথা সেটেলমেন্ট অফিসগুলোর। আবার ফি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু খানসামায় বাড়তি টাকা ছাড়া সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সিটিজেন চার্টারের সঙ্গে এখানে মিল নেই সেবা প্রদানে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ-সংক্রান্ত সেবায় সরকারনির্ধারিত ফি ছাড়াও বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না জমির পরচা আর মৌজার নকশাও। বাড়তি টাকা ছাড়া সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে কাজ না হওয়ার ভয়ে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।

ওই অফিসের সামনে অবস্থানকালে দালালদের আনাগোনাও চোখ পড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দেওয়ার কথা বলে সেবা নিতে আসা মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। তবে সাংবাদিকের অবস্থানের বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন দ্রুত অফিস এলাকা ত্যাগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ পরচার জন্য ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং অনুলিপি বাবদ ডিসিআরের মাধ্যমে ১০০ টাকা আদায় করে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না খানসামায়। এখানে পরচাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়ার সত্যতা মিলছে।

উপজেলার আংগারপাড়া মৌজার জমির পরচা নিতে আসা আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এক যুবক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরচা নিতে গেলে কর্মচারীরা ৫০০ টাকা ছাড়া দেবেন না বলে জানান। তাও আবার কয়েক দিন ঘুরেও পাইনি। সামনের সপ্তাহে আসতে বলেছেন।’

সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হোসেনপুর মৌজার সুধীর সেন বলেন, এই অফিসের মাটিতে পা দিলেই টাকা ছাড়া কেউ আসতে পারেন না। সর্বোচ্চ দুর্নীতির জায়গায় পরিণত হয়েছে সেটেলমেন্ট অফিস।

ভুক্তভোগী এক নারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘১০০ টাকার পরচা ৫০০ টাকা ছাড়া দেছেই না বাহে। সেটা নিবার জন্যও কয়েক দিন ধরে ঘুরতে হচ্ছে অফিসে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, ‘সারা দিন অফিসে ঘুরেও কাজ না হওয়ায় ফেরত যেতে হচ্ছে। ভ্যান চালালেও তো কিছু টাকা উপার্জিত হইত, এত ভোগান্তি!’

তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাশ চন্দ্র রায়। তাঁদের দাবি, সরকারনির্ধারিত ফির চেয়ে কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা তাঁরা নেন না।

সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মির্জা জিকরুল হক বেগ মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারনির্ধারিত ফির বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কয়েকটি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় ওই অফিসে আমি নিয়মিত যেতে পারি না, তাই এ সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মারুফ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শামছুল আজম বলেন, সেবা দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত