Ajker Patrika

গাজা কি সত্যিই একটি ‘অপ্রাকৃত ভূমি’

ড. আমিরা আবো আল ফেতুহ
গাজা কি সত্যিই একটি ‘অপ্রাকৃত ভূমি’

ফিলিস্তিনের তথাকথিত গাজা উপত্যকার আয়তন মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। একজন মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞ একে ‘অপ্রাকৃত ভূমি’ বলে বর্ণনা করেছেন। আমি এ রকম বর্ণনা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। আট মাস ধরে গাজার জনগণের দৃঢ়তা গোটা বিশ্বকে এবং সামরিক নেতাদের বিস্মিত করেছে। এমন নজির তাঁরা আগে কখনো দেখেননি বা শোনেননি, যেন এটি ওপর থেকে আসা একটি অলৌকিক ঘটনা। একজন ব্রিটিশ সামরিক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘গাজায় একটি গোপন শক্তি রয়েছে। যুদ্ধের এই ধারাবাহিকতা শুধু হামাস যোদ্ধাদের কারণে হতে পারে না।’

অধিকৃত ও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলের পরিস্থিতির প্রচুর বিশ্লেষণ পড়ার পাশাপাশি আমি টেলিভিশনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সামরিক বিশ্লেষকদের কথা শুনেছি। তাঁরা যা বলেছেন, তার কিছু অংশ নিচে দেওয়া হলো।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার জন্য অর্থায়ন করেছে, যা গাজার আয়তনের ১০ গুণ সমান এলাকা ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এটিও লক্ষ করা গেছে, অস্ত্রগুলো ছয়টি পারমাণবিক বোমার সমতুল্য, যা পৃথিবীকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট এবং সম্পূর্ণরূপে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্র একাই টনকে টন গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া নেগেভে মার্কিন গুদামগুলোয় যা ছিল সবই পাঠিয়েছে। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইতালি অস্ত্র দিয়েছে ইসরায়েলকে। গাজার আকাশে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি, সেই সঙ্গে ইসরায়েলের গুপ্তচর বিমানগুলো ভিড় করেছে, যা নিচের মাটিতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা সঠিকভাবে ধারণ করে।

তা সত্ত্বেও, প্রতিরোধ যোদ্ধারা হাজির। তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যানবাহন ধ্বংস করেছে এবং সৈন্যদের হত্যা করেছে; বিস্ফোরক স্থাপন করেছে। অতর্কিত হামলা চালিয়ে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ যানবাহন ধ্বংস করেছে। আর এ কারণে তাদের হাজার হাজার সদস্য নিহত বা আহত হয়েছে। গুপ্তচর বিমানগুলো তাদের একজনকেও শনাক্ত করতে পারেনি। গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এখানে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, স্থল ও সমুদ্র থেকে ছোড়া কামানের গোলা, যুদ্ধবিমান এফ-১৫, এফ-৩৫ জেট এবং অ্যাপাচি হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। হরেক রকমের অতিরিক্ত অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। তবুও আমি ফিলিস্তিনি শিশুদের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে খেলা করার একটি ভিডিও দেখেছি, যা বিস্ফোরিত হয়নি। ভিডিওটিতে বলা হয়েছে যে কমপক্ষে ৩০০টি অবিস্ফোরিত ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। একজন যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞ অবশ্য এটি অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, হাজার হাজার অবিস্ফোরিত অস্ত্র ছিল। কারণ গাজায় ফেলে দেওয়া সব ক্ষেপণাস্ত্রই যদি বিস্ফোরিত হতো, তাহলে আরও অনেকে মারা যেত এবং সে সংখ্যা হতো বিশাল।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে তারা দখলদার ইসরায়েলের কাছে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছে, তার তুলনায় নিহতের সংখ্যা খুবই কম।

তাই তারা ইসরায়েলকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব সেরেছে। যদিও তাদের বিশ্বাস থেকে সত্য অনেক দূরে।
ইসরায়েলের কথিত সামরিক বাহিনী সব সময় ইচ্ছা করেই বেসামরিক লোকজন ও অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছে, যাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা যায়। ইসরায়েল যা বলে যুক্তরাষ্ট্র তা প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নেয়। কিন্তু তারা জানে যে বাস্তবতা সহজ: ইসরায়েলের ব্যবহৃত সব ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা এবং গোলা যদি বিস্ফোরিত হতো, তাহলে একটি মানুষও অক্ষত থাকত না। 
অন্য একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গাজায় চোখের সামনে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটছে এবং সেখানে অবশ্যই এমন যোদ্ধা আছেন, যাঁদের আমরা দেখতে পাচ্ছি না এবং দেখতে পাচ্ছি না যে ওই জায়গায় ঐশ্বরিক সুরক্ষা বলে কিছু আছে। দেখুন, কীভাবে আমরা যোদ্ধাদের বর্মের সঙ্গে বোমা সংযুক্ত করে ট্যাংকের দিকে দৌড়াতে দেখি। এটি যেমন আশ্চর্যের, তেমনি ভয়ংকর। তারা সফল হবে—এই বিশ্বাসে দৃঢ় ইচ্ছার সঙ্গে লড়াই করে।

‘যদি আমাদের দেশে বা কোনো উন্নত দেশে নির্ভীক শিশুরা অবিস্ফোরিত বোমা নিয়ে খেলত, তাহলে তারা বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট বিশেষজ্ঞদের ডেকে পুরো জায়গা ঘিরে ফেলত। বলুন তো, গাজার এই শিশুদের রক্ষা করছে কে? এটা ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কী?’

প্রতিরোধ যোদ্ধারা এই অবিস্ফোরিত কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিজেরা ব্যবহার করেছে এবং তা দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অনেক যানবাহন ধ্বংস করেছে। তারা এই অতুলনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা কোথায় পেয়েছে? সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিমান হামলার ওপর নির্ভর করে এবং তবুও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানেন, শুধু বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না। এবং তারা ‘নির্ভুল’ আক্রমণ করা থেকে অনেক দূরে। ইসরায়েল বিমান হামলা চালায় এলোমেলোভাবে, কারণ তাদের কাছে প্রতিরোধের দুর্গ বা টানেলের বিন্যাস সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই এবং ইসরায়েলি সৈন্যরা শহরের ভেতরে লড়াইয়ে ভালো না।

এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল নিজেকে এমন একটি যুদ্ধে জড়িয়েছে, যেটা তারা জিততে পারবে না, যা তার সেনাবাহিনী ও বুদ্ধিমত্তার দুর্বলতা সম্পর্কে অনেক কিছু প্রকাশ করে। ইসরায়েলকে তার সেনাবাহিনী, বিশেষ করে তার সৈন্যদের মনস্তাত্ত্বিক পুনর্গঠনের জন্য, দৃঢ় মনোবলসহ একটি যুদ্ধ বাহিনী তৈরি করতে কয়েক দশক লাগবে। তারপরও গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মতো একই স্তরে পৌঁছাতে পারবে না।

এই সামরিক বিশেষজ্ঞরা যদি গাজায় যা ঘটছে, সেখানকার জনগণের দৃঢ়তা এবং এর যোদ্ধাদের অসাধারণ সাহসিকতা দেখে বিস্মিত হন, তবে বলব, তাঁদের বিস্মিত হওয়াটা আহাম্মকি। ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ন্যায়বিচার আছে তাদের পক্ষে; তারা তাদের ভূমি, তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ এবং তাদের ন্যায়সংগত অধিকার রক্ষা করার যোগ্যতা রাখে।

তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করে, যা সামান্যতমও নড়চড় হয় না। তিনিই তাদের সংখ্যা ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব সত্ত্বেও তাদের শারীরিক, নৈতিক এবং সামরিক শক্তি দান করেন, তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের অফুরন্ত সরবরাহ এবং অপরাজেয় হিসেবে দখলদার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করার ক্ষমতা দেন।

‘আল্লাহর ইচ্ছায় একটি ক্ষুদ্র বাহিনী কতবার একটি শক্তিশালী বাহিনীকে পরাজিত করেছে!’ আমাদের পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ সব সময় ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’

ড. আমিরা আবো আল ফেতুহ, মিসরীয় দন্তচিকিৎসক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার

(মিডল ইস্ট মনিটরের সৌজন্যে লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত