Ajker Patrika

সবুজের লীলাভূমি পাঁচপাড়া

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৮
সবুজের লীলাভূমি পাঁচপাড়া

নদী আর সবুজের সঙ্গে বাংলার মানুষের মিতালি বহুকাল আগে থেকেই। নদীতীরে এখনো রয়েছে কত বাজার। গড়ে উঠেছে একেকটা গ্রাম। আর সবুজের ছোঁয়া নেই এমন গ্রাম তো খুঁজে পাওয়াই যায় না। নদী আর সবুজের মেলায় কবিমন খুঁজে পায় তীরে বসে কয়েক ছত্র লেখার আবহ। আকাশের নীল এসে মিশে কচুরিপানা ফুলের বাহারে।

তবে হুবহু এমন দৃশ্য পাওয়া না গেলেও ব্যতিক্রম নয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত ‘পাঁচপাড়া’। গ্রামের আশপাশে নেই কোনো নদী কিংবা খাল। তবে রয়েছে একটি বিল আর অসংখ্য পুকুর। এ গ্রামের মানুষ মজে থাকে সবুজের সমারোহে। দক্ষিণ ও পশ্চিমে মাঠজোড়া বিস্তীর্ণ এলাকায় সবুজের ছড়াছড়ি। দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। এসবের ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা ঘর। আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, সুপারি, নারকেলসহ ফলজ ও বনজ গাছগাছালিতে ভরপুর গ্রাম পাঁচপাড়া।

উপজেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে হলেও জেলা শহর থেকে দূরত্ব মাত্র ৭-৮ কিলোমিটার। পাঁচটি পাড়া নিয়ে গঠিত বলে নাম পাঁচপাড়া। সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের ত্রিশমাইল নামক স্থান থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত এ গ্রামে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী। নারীরাও জমিতে কাজ করেন। সাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ।

এককালে গ্রামের লোকজন ছিলেন অনেক অভাবী। গৃহস্থ বাড়ির রান্নাঘরে কেউ খেতে বসলে ছোট ছেলেমেয়েরা ভাতের জন্য হাত পাতত। বিলে লাটিশাইল আর পাটনাই ধান ফলত। বিঘাপ্রতি ফলন ছিল মাত্র ৫ থেকে সাড়ে ৭ মণ। সারা বছর একটি ফসলই ফলত। অবশ্য যাদের উঁচু জমি ছিল, বেলে-দোআঁশ মাটিতে শাকসবজি ফলত প্রচুর। সাতক্ষীরা থেকে ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যেতেন। এখন গ্রামেই ‘মৌলভীবাজার’ নামে একটি হাট বসেছে। জেলার শাক-সবজির চাহিদার বড় একটি অংশ জোগান হয় এই হাট থেকে। এমনকি এলাকার সবজি ট্রাকে করে যায় খুলনাতে। এখন প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার কেনা-বেচা হয় এই হাটে। প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন ২০-৩০ মণ। মাঠের জমিতে বছরে উৎপাদিত হয় তিনটি ফসল।

জেলা শহরে স্থায়ীভাবে বাস করলেও নাড়ির টানে প্রায়ই ছুটে যাই এ গ্রামে। আঁকিবুঁকি কাটে ছেলেবেলার কত স্মৃতি। চিতা পিঠা (চিতই) ও পাকান পিঠা খাওয়ার কথা বেশ মনে পড়ে। খেজুরের রসে চিতা পিঠা ভিজিয়ে খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। এ ছাড়া সন্ধ্যারাতে খেজুরগাছে উঠে পাটকাঠির নল দিয়ে রস খাওয়ার কথা কখনো ভোলার নয়। বৃষ্টির মধ্যে পুকুরে লাফ দেওয়ার আনন্দটা এখনো অনুভব করি। আজও শরীরে লেগে আছে চাঁদনি রাতে বিচালির মধ্যে লুকিয়ে চোর-পুলিশ খেলার শিহরণ।

এ গ্রামে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি উল্লেখ করার মতো। গ্রামের পাশেই দুটো হিন্দু গ্রাম—ঝড়গাছা ও দৌলতপুর। কখনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে তা শোনা যায়নি। পাঁচগ্রামে এখন শিক্ষিতের হার বেড়েছে। প্রত্যেক পাড়ায় ১৫-২০ জন গ্র্যাজুয়েট। একজন মেডিকেল অফিসার হয়েছেন। একজন পড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এ ছাড়া অসংখ্য চাকরিজীবী রয়েছেন এ গ্রামে। তবে সবার স্মৃতিতে আজীবন গেঁথে থাকবে আমাদের গ্রাম। স্মৃতিতে ভিড় করবে একেকটা মুহূর্ত।

অদৃশ্য চিত্রকরের নিপুণ তুলিতে আঁকা আমার চোখে দেশের সেরা গ্রাম ‘পাঁচপাড়া’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত