Ajker Patrika

সহায়তা দেওয়ার নামে আত্মসাৎ চার কোটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
Thumbnail image

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদেশি সহায়তা দেওয়ার নাম করে ৫০ পরিবারের চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, চক্রের হোতা সদর উপজেলার নামোশংকরবাটি নতুন হাট এলাকার রেজাউল ইসলাম রেজার ভাই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা।
একই এলাকার প্রতারণার শিকার দুরুল হোদার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এলাকায় থাকতে পারছি না।’

দুরুলের ছেলে আসমাউল বলেন, প্রতারক চক্রের হোতা রেজার ভাই পুলিশের এসপি। তাঁর প্রভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

মামলার বাদী মো. কালাম বলেন, আদালত থেকে জামিনে থাকা অভিযুক্ত প্রতারকেরা টাকা না দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ঢাকায় দুটি মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া ৬৪ জেলায় মামলা ও বিবস্ত্র করে মারধরের হুমকি দিচ্ছেন তাঁরা।

প্রতারণার মামলায় রেজাউলের স্ত্রী বিউটি কারাগারে আছেন। তিনি প্রতারণার কৌশল ও সংঘবদ্ধ চক্রের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, রেজাউলের বন্ধু ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তাঁকে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে এনজিওর মাধ্যমে ৩৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা আসছে। সেই এনজিওতে বিউটি মাঠকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি সহায়তার অর্থ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জনের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। বর্তমানে সেসব টাকা তাঁর স্বামী রেজাউল ও ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুরের কাছে আছে।

স্বীকারোক্তিতে বিউটি বলেন, এই কর্মকাণ্ড গোপন রাখতে টাকা দেওয়া ব্যক্তিদের মসজিদে শপথ পাঠ করানো হয়। এ সময় রেজাউল ও মিজানুর কখনো নিজেদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাতা সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি, কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দেন। রেজাউলের বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ– সবই প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকায় হয়েছে।

প্রতারণার মামলায় জামিনে আছেন বিউটির মা সেমালী বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে রেজা। আমার মেয়ে বিউটিকে দিয়ে মাঠপর্যায়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। রেজা বারবার বলে আসছে, আমার ভাই এসপি, আমি সব ম্যানেজ করে নেব। তোমাদের নামে কোনো মামলা থাকবে না। এসব বলে আমাদের সব জমিজমা বিক্রি করিয়ে মামলার পেছনে খরচ করিয়েছে।  আমার মেয়ে এখনো জেলে। আমাদের আবার জেলে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে রেজা।’

এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার প্রধান আসামি রেজাউলের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ব্যাংকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছিল তারা। ব্যাংক আমাকে শোকজ করে। আমি জবাব দিয়েছি। একটি মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। অন্য মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) কুতুব উদ্দীন  বলেন, মামলার বিষয় নিয়ে বাদী ও বিবাদী উভয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ মামলায় দুজন আসামি জামিনে আছে। শিগগির তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত